পারফিউমের খুব পরিচিত মিষ্টি একটা গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে অনু ভদ্র মহিলাকে প্রথম দেখল । ক্যাপসুল লিফটে ওর প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল । পরনে সরু পাড়ের সস্তা ধরণের মাড়হীন তাতের শাড়ি । চেহারায় কোন বিশেষত্ব নেই তবে জী বাংলায় আসক্ত অন্য দশটা সাধারণ বাঙালী রমণীর মত সুখী সুখী মধুবালা ধরণেরও নয় । নাট বল্টু দিয়ে জোড়া লাগানো ধাতব কাঠামোর ন্যয় ঋজু শরীর । লিফটের গায়ে জ্বলে ওঠা নম্বর গুলির দিকে ক্লান্ত চোখ দুটি নিবদ্ধ করে রেখেছিল । ভদ্রমহিলা সাত তলায় নেমে গেলে পারফিউমের নামটি আর অনুর জানা হয়নি।
দুদিন বাদেই বাংলা নববর্ষ । একটা দিন বাঙালী সাজার জন্য কয়েক মাস ধরে মানুষের প্রস্তুতি চলছে। বিপণী বিতানগুলি সুযোগ বুঝে তাদের পুরনো পসারে নতুন মুল্যের ট্যাগ ঝুলিয়ে দিয়েছে ।
এমনিতে টিশার্ট-জিন্স, পাকিস্তানী লন , ভারতীয় মনিপুরী, বা পশ্চিমার আঁটসাঁট টপস-লেঙ্গিসে অভ্যস্থ হলেও বাংলা নববর্ষে দেশীয় শাড়ি চুড়িতে একদিনের বাঙালী সাজা হালের ফ্যাশন ।
আজ ছুটি বার । আট তলা পর্যন্ত বিশাল মার্কেটে মানুষ গিজগিজ করছে বিশেষ করে লোকজ পোশাকে সমৃদ্ধ শোরুম গুলো নারী পুরুষে বোঝাই । অনু টাইডাইয়ের উপর সুতীর কাজ করা একটি শাড়ি দেখছিল । মুল্য ট্যাগ দেখে চোখ কপালে উঠল । কাজ ছাড়া টাঙ্গাইল শাড়িটার দাম বড় জোর আটশ টাকা হবে তাতে পাড় আর আঁচলে একটু সূচ ছুঁয়ে দাম হাঁকিয়েছে চার হাজার পাঁচশ ।
অনুর অত বড় বাজেট নেই । অনেক বিচার বিশ্লেষণ করে সে আড়াই হাজার টাকায় একটি শাড়ি কিনে কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালো । লম্বা কিউ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে । লিফটের সেই পারফিউমওয়ালি ভদ্র মহিলা অনুর ঠিক সামনে, হাতে একই রঙের বাচ্চাদের বেশ অনেকগুলো পোশাক । পারফিউমের গন্ধটা ওকে বিবশ করে ফেলছে । এত পরিচিত গন্ধ অথচ নাম মনে করতে পারছে না । নামটি জিজ্ঞেস করবে কিনা যখন সে ভাবছে তখন ভদ্র মহিলা নিজেই ঘুরে তাকায়,
অনুপমা আমাকে চিনতে পেরেছ ?
অনুর পুরো নাম অনুপমা নূর । তার স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর কিন্তু এই চেহারা কোথাও কখনো দেখেছে বলে স্মরণ করতে পারছে না ।
অনুর বিভ্রান্ত চেহারা দেখে ভদ্র মহিলার কপালে বিস্ময়ের ভাঁজ পড়ে ।
আমাকে ভুলে যাবার কথা নয়তো । মনে করে দেখ, বেনাপোল মহিলা কলেজ হোস্টেল । রুম নম্বর ১০৫ । মিলা,অনু,রিমা,রুবা ছাড়াও আর একজন ছিল ।
অনুর সামনে ঝুপ করে নব্বই দশকের দুটি বছর নেমে আসে । ওর মুখ থেকে সমস্ত রক্ত উধাও হয়ে গিয়েছে ।
লুবনা ...!!!!
( ছোট গল্পের অংশ বিশেষ )