somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনয় মজুমদার-- কী দারুণ প্রসারণশীল চিন্তা এবং জীবিত ডালপালা

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৈফিয়ত

আলোচনায় প্রবেশিবার পূর্বেই কিছু কৈফিয়ত জরুরি মনে করিলাম। প্রিয় কবি বিনয় মজুমদারকে আমার মতোন আবিষ্কারের কথকতা এই ছত্রসমূহ। কোন একাডেমিশিয়ান তোকমাধারী পণ্ডিত নই, নই কোন তাত্ত্বিক এমনকি গুঢ় পাঠকও। ভালোলাগা হইতে উৎসারিত কিছু অনুধাবন, অনুধ্যান আর অভিজ্ঞতার বয়ান হিসেবেই পাঠককে প্রণামপূর্বক এই দুর্বল মুগ্ধতা-অনুধ্যান পাঠ করিতে বলি, ভদ্দরনোকের মতোন যবণিকায় ক্ষমাও চাহিয়া লইবো।

আরো এক আলো

এবার গল্প হউক। একাকী মুগ্ধ বালকের চোখে দিগ্বিজয়ী যুবরাজের গল্প। যুবরাজ জঙধরা গ্রন্থাগারের আলমিরার হাজারো পুস্তক-পরতের ভিতরে লুকাইয়া ছিলেন সমুদ্রবেলায় হারাইয়া যাওয়া সূচের মতোন। ২০০০ সালের কোন এক বিকেল বেলায় বিনয় মজুমদারের এক ভক্তের সহিত সাক্ষাৎ ঘটিয়াছিলো। তিনি কবি হিসেবে পরিচিত এবং কবির ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে কট্টর বিশ্বাসী। সেইদিনের পড়ন্ত বিকেলে তিনি বুঁদ হইয়াছিলেন আসক্তি-আরকধারী কিছুর নেশাঘোরে। চোখ দুইটাকে যতটা দেখনসম্ভব বুজে, বাঁ-হাতের তর্জনিতে আর মধ্যমায় জ্বলন্ত সিগারেটটিকে নাড়িতে নাড়িতে তিনি অপ্রকৃতিস্থের মতো পড়িতেছিলেন-- বিড়ি তো ফুরোলো প্রায়। দুটি বিড়ি আছে।/শালপাতা দিয়ে এই বিড়ি বানায়। এ পর্যন্ত লিখে/ মনে এলো রেললাইনের পাশে লম্বা এক শালবন/ বানিয়েছে। শালগাছগুলির সেই শাদা শাদা ফুল।/ গন্ধ আছে নাকি এই শালফুলে, ঘ্রাণ যদি না থাকে/ এ শালফুলে তবে শালফুল অঘ্রাণ।/ এবং এই শালফুলের মানে শালফুলের মনের অনুভূতি/ ধরা আছে আমাদের পৃথিবীর ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালায়’/ (বিড়ি তো ফুরোল প্রায়) মনে হইলো... এ কাহার কবিতা! জিজ্ঞেস করিতে জানা গেল আবৃত্তিকারের নহে। এ কবির নাম বিনয় মজুমদার। পড়িতে বসিলাম অঘ্রাণের অনুভূতিমালা। জীবন্ত সব ডালপালা সমেত যেন দাঁড়িয়ে থাকা অন্ধকারে একটি মৃত গাছ আমার জানালায় নড়িয়া উঠিল। মৃত গাছ, তথাপি প্রসারণশীল তার ডালপালা। জীবন্ত। নির্লিপ্ত দাঁড়িয়ে কথা কইছে যেনো। মুগ্ধ বালক এবার যেন রাজপূত্রের খুঁজিয়া পাইলো আচ্ছাদন, পরিচয়, ঠিকানাসাকিন। তাক থাকিয়া নামাইলো। আর শিরস্ত্রাণ পরিয়া নিল মাথায়। রাজপুত্রের নাম কিন্তু বিনয় মজুমদার।

ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?

অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’র সেই ঘোর বাধ্য করিল বিনয়ে আসক্ত হইতে, বিনয় কে ভয় পাইতে, বিনয় নিয়া পড়াশুনা আর চিন্তা করিতে। দেখিলাম, বিনয় পণ্ডিতেরা বিবৃত করেছেন বিনয় মানসিক অসুস্থতা(!)’র কারণে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রহিয়াছিলেন। দীর্ঘ সময়। কিন্তু সেই-সময়ে লিখিত এক পক্তির দুইশত একটা কবিতার ভিতর দিয়া খেয়া-নাও পারি দিতে দিতে এ অধমের কখনো মনেই হয় নাই সেই মেদুর কবিতাপঙক্তিসমূহের কোন একটাও পাগলপ্রলাপ। বিনয়ের এ কবিতাগুলো যেন এক ভিন্নতর দর্শনের আয়না, জন্মশেকড় হইয়া দেখা দিল আমার কাছে। কল্পনা, তাঁহার পরিচিত দৃশ্যকল্পজগত-এ কল্পনার কোন স্থান বিনয়ের এ কবিতাগুলোতে নাই। যেনোবা এক জীবনের প্রতি অনাসক্ত দ্রষ্টা বিপরীত আয়নায় দেখিতেছেন জগতকে। কবিতার সবকটি লাইন জুড়িয়াই রহিয়াছে অনন্য সব বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আর অনুধাবন। কেবল কবিতা কেনো, বিনয় গদ্যসাহিত্যও সাজান পরতে পরতে, তাকে-তাকে, থাকে-থাকে, গণিত প্রভাবিত দার্শনিকতায়। পড়িতে পড়িতে কেমন খটকা লাগে, এ কি কোন অঙ্কের প্রফেসর করিডোরে হাঁটিতে হাঁটিতে আনমনে বলিতেছেন কথা, নাকি স্যানাটোরিয়ামের ঝুলপড়া জানালায় মাকড়সার জালে তাকাইয়া তাকাইয়া একজন গাঁথিয়া চলিয়াছেন তাঁহার প্রতি সমাজের অবহেলা আর অনাদরের বোঝাপড়া! বিনয়ের মনোজগতে একসাথে যে গণিত আর কবিতা যুগপৎ ধারায় বহিয়া চলিয়াছে তাহা নিশ্চিত করে প্রতিটি পঙক্তি, পঙক্তিমালা। প্রতিভা ও মেধার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা জানিনা আমি। কোনো লেখক বা কবিকে আমাদিগের জগতে চড়িয়া খাওয়া তথাকথিত একাডেমিশিয়ানরা যেসকল অভিধায় ভূষিত করিয়া থাকেন, তা-ও করা যায় কিনা এ লইয়া রহিয়াছে পক্ষে বিপক্ষে প্রভূত বিতর্ক। তবে, বিনয়ের কবিতা-তামাকে ডুবিয়া গিয়া যেমন তেমনি বিনয়কে শত্রু ধরিয়া নিয়াও নিঃসন্দেহে বলা যায়, কোনো গণিত, কোনো ভূগোলেই কোন কবি-লেখক-সৃষ্টিশীল স্বত্ত্বাকে আটক করিয়া রাখা যায় না। অভিজ্ঞতা, নিষ্ক্রিয়তা (জীবনের প্রতি), স্মৃতি, বিস্মরণ, ঘোর, বিজ্ঞানমনস্কতা- এই-সমস্ত চিরায়ত অনুষঙ্গ একজন মানুষের মস্তিষ্কে সক্রিয় থাকে সবসময়। এইসব ভাবাবেগ ওই সৃষ্টিকর্তা কে, কোন দিকে, কোন ঈশ্বরীর সন্ধানে চালিত করে কে বা জানে! একজন স্রষ্টা, যিনি যে কেউ হতে পারেন, তাঁর অপার বোধ-বুদ্ধি, মনন,চেতনা, শিল্পের প্রতি অনুরাগ-আনুগত্য, সাধনা, নিজস্ব দর্শন, সামগ্রিকভাবে জীবনের প্রতি তাহার দৃষ্টিভঙ্গি, শিল্পের প্রতি তাহার আন্তরিকতা তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে। সময় কোথা জীবনদৌঁড়ে ছুটিয়া চলিবার! আসক্তি আর অনাসক্তি নির্ধারণের ইঁদুর দৌড়ে হাত হইতে ব্যাটন তো তাহার পড়িয়া যাইবেই; যায়ও! দৃশ্যত, এমনই এক অতিবাস্তব-অধিবাস্তব অনুধাবনের মাঝখানে নির্লিপ্ত দাঁড়াইয়া সৃষ্টি করিয়া গিয়াছেন একের পর এক। হইয়া উঠিয়াছেন রাজা। ঘোর আর প্রবণতার। আর শব্দ, ব্যঞ্জনা, উপমায় উপমিত করিয়াছেন কবিতার ঘরগেরস্থালি, শিথান-পৈঠা-উঠান। নিজস্ব ডায়েরীর মতো সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র আঙ্গিকের কাব্যে হয়ে উঠিয়াছেন দৃশ্য আর বলিবার মতোন নিরাসক্ত, নির্মেদ, সাবলীল, বহমান, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ষোলঘুটির ঘরের প্রবাদপুরুষ।

কতদূর? শিমুলপুর!

পরিমাণগত দিক হইতে বিবেচনা করিলে বিনয় মজুমদারের সাহিত্য খুব একটা বেশি নহে, তবে তিনি শুধু কবিতায়ই নয়, কাজ করিয়াছেন ছোটগল্প লইয়াও। সমালোচনা লিখিয়াছেন, অনুবাদ করিয়াছেন কবিতা, গল্প ও চিঠি। জানা যায়, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়িবার সময় তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য রাশিয়ায় যাওয়ার কথাও ভাবিয়াছিলেন। এই সময়ে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশভাষা বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা নাদান ওল্গা গুসতেভার নিকট রুশ ভাষা শিক্ষা করিয়াছিলেন। মার্কসের মতবাদে নাকি প্রত্যয়ী আর বিনয়ী ছিলেন বিনয়, এমনতরো শুনিতে পাওয়া যায়। সত্যিও হইতে পারে এই ধারণা- এমতো প্রত্যয় ঘটে তার অনুবাদের তালিকাখানাতে চোখ বোলাইলে। পুশকিন, লেনন্তেভ, এলভব ও ইয়েসিন মায়াকোভস্কি। বিনয় মজুমদারের তেত্রিশটি প্রকাশিত পুস্তকের কথা জানি। এর-ই মধ্যে অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা ছয়, কবিতাগ্রন্থ একুশখানা এবং গদ্যরচনা ছয়খানা। এ-ই ছাড়া অপ্রকাশিত রচনা তো ছড়াইয়া ছিটাইয়া রহিয়াছেই। শুরু করিয়াছিলাম আমার বিনয় আবিষ্কারের গল্প দিয়া, কিন্তু বিনয়ের আবিষ্কৃত হইবার কথাটিও চলুন জানিয়া লওয়া যাক। নব্বই দশকের তথাকথিত খ্যাতিমান কবি সমর চক্রবর্তী, কবি বিনয় মজুমদারের দুর্লভ সাহচর্য-সান্নিধ্যে আসিয়াছিলেন। তিনি কলিকাতার ঠাকুরনগরের শিমুলপুর গ্রামে নির্জনে লোকচক্ষুর অন্তরালে বসিয়া সাহিত্য কিংবা গণিতচর্চায় রত এই নিরাসক্ত মানুষটিকে যন্ত্রণা করিতে থাকেন। তাঁহার যন্ত্রণায় কবি মোটেও বাঁকিয়া যান নাই। অবশেষে সমর চক্রবর্তী নিজেই বাংলাদেশের দৈনিক আজকের কাগজ ও দৈনিক জনকণ্ঠে পরপর কয়েকখানা প্রবন্ধে বিনয় মজুমদারকে পরিচিত করাইলে বাংলাদেশের পাদপ্রদীপের আলোয় থাকা লেখক(!), বুদ্ধিজীবিদের(!) মীন-নয়নে পড়েন বিনয় মজুমদার। এরপর বঙ্গসন্তানরা অনেকেই তাঁহার খোঁজখবর করিতে শুরু করেন এবং তাঁহাকে পুঁজি করিয়া লিখিতে থাকেন, তন্মধ্যে আবার একজন যাহা বলেন আরেকজন তাহার চাইতে বেশি অথেনটিসিটি লইয়া তাহার ঠিক উল্টা বলিতে রহিলেন। আখেরে লাভ হইলো এই তাহাতে এইদেশে বিনয় পঠিত হইতে লাগিল এবং আমাদের নব্বই এবং শূন্য দশকের প্রথম দিকের কবিকূল বেদমভাবে বিনয়ের পাতিয়া রাখা অনাসক্তি কিংবা আসক্তির ভয়ঙ্কর ফাঁদে জড়াইয়া গেলেন। কবি সুমন রহমানের ফিরিস্তিতে জানাই- সে সময়ের অনেক প্রতিষ্ঠিত কবি (বঙ্গদেশের গোষ্ঠীপ্রবণ লিটলম্যাগ ও দৈনিকের পাতায়) তো নাকি, বিনয় দিয়া শুরু করিয়া বিনয়েই কবিজীবন সাঙ্গ করিয়াছেন। বিনয়ের মোহজাল হইতে বাহির হইতে পারেন নাই। (মাঝে মাঝে খুব মনে হয়, আহা! যদি পাওয়া যেত এমন নির্জনে একটা শিমুলপুর!)

সবচেয়ে ভালো জ্যামিতি ময়ূরের পেখমে

বিনয় মজুমদারকে কবিতার শহীদ বলিয়াছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। বিনয় ভালোবাসাই দিতে চাহিয়াছিলেন যে, তাহা তো স্পষ্ট তাঁহার লেখাপত্রেই। এমন নিরিহ, শীতল, নির্মম ভয়ঙ্কর আর কোথা বা আছে। মৃতপ্রায় রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনদাসের মদরসের পর গত দুইযুগ তো বাঙলাকবিতাসাহিত্য বিনয় বিনয় ঘোরেই আটকে থাকিলো। এই বিষাক্ত নিঃশ্বাস ভালোবাসাইতো প্রমাণ করে সর্বদা। আমি কথা বলিয়া দেখিয়াছি অনেক সতীর্থকবির সহিত, তাহারা বিনয়কে ভয় পান, শত্রুজ্ঞান করেন, কখন কোন অবচেতন প্রকোষ্ঠের গলি-অলিন্দ না ঘুরিয়া তিনি আবার চলিয়া আসেন বিনয়পাঠক-কবির রক্তকলমস্রোতে। তবু এই নাদানের বলিতে চাওয়া- সক্ষমতা হয় না পুরুষ্ট চোখে দেখিবার সাহস না হইলে। বিনয়ের ভালোবাসা সত্যিই কি লইতে সক্ষম আমরা? আমাদিগের ময়ূরের পেখমগুলো কি বর্ণময় অতোটা?

ভুল > অজানা ঈশ্বর

চিন্তাক্ষমদের মনে চিন্তাগুলি আবির্ভূত হয়/ শব্দ বা বাক্যাংশ কিম্বা বাক্যের আকারে, প্রিয়তমা।/ চিন্তার মাধ্যম নয়, ভাষা হলো চিন্তাই স্বয়ং।/ - যেনো জরথুস্ত্র বললেন এর ফ্রেডরিখ নিটশে কথা বলিতেছেন ঈশ্বরের কাতারে দাঁড়াইয়া। চিন্তাই কি ঈশ্বর তবে? চিন্তাই কি স্রষ্টা? তবু, অবয়ব মুক্ত হলে সরল শূন্যতা পড়ে থাকে,/ নিশ্চিন্ততা পড়ে থাকে- অবয়ব অস্বীকার করে,/ ঈশ্বরী, যেমন পাই আগুনের পরিবর্তে অগ্নিহীনতাকে।/ অথবা “আমিই গণিত-এর শূন্য। গণিত বইতে শূন্য/ছাপা হয় এইভাবে ০- এই ছাপা শূন্য আমি।/ আমার সন্তানদল, এসেছো? খোঁজ করে দেখুন/ পাঠকপাঠিকাগণ ০ বিষয়ক যত তত্ত্ব পৃথিবীর/ লোকে শুনেছে ও জেনেছে তার সব তত্ত্বই/ একজন মাত্র লোক আমি বলেছি।/ - এ-যেন ০ আর ১ এর মানসাঙ্ক। পার্থক্য কিংবা পার্থক্যহীনতা। আছে ও নেই। নেই ও আছে। ঈশ্বর >অজানা ঈশ্বর > ভুল > না > হ্যাঁ > এরপর কি জানা ঈশ্বর, অথবা ঈশ্বর কিংবা ঈশ্বরীরা অজানাই থাকে। বিনয় এ কোন গোলকধাঁধায় ফেলিলেন? এ যেনো লালডেঙ্গা বাজাইতেছে তাহার সমরভেঁপু... ন্যাংটো কবিরা দুই হাঁটু মুড়িয়া মাথাসমেত তিন মাথা হইয়া ভাবিতেছেন বসিয়া- হা ঈশ^র! কি লিখিব আমি এই রাতে!

আর্ট বিনয় ভেতরে লুকায়

“বলতো কী নেই অথচ তার মালিক আছে- আকাশ” বিনয়ের এইমতো কবিতা, স্মরণ-এ পশায় লুঙ্গিনাসের সেই পুরণো কথাটা। আর্ট বা শিল্প নিজের ভেতরে লুকায়। বিনয় হয়তো না জেনেই, নিজের শিল্পবোধ বা শিল্পচৈতন্য যাই বলি না কেন আমরা তার ভেতরে মেনেছেন এই কথাটি। কিন্তু, কিভাবে লুকায়? সে অমোঘ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই পড়তে হয়, ডুব দিতে হয় বিনয়ের কবিতায়, বিনয়ের কবিতার শরীরে, অলি-গলি-ঘুঁপচিতে। তখনই মনে হয়, মানুষ নিয়ে বলার চেয়ে, মানুষের শরীর সংস্থান নিয়ে বলা সহজ, যেমন সহজ কবিতার ক্ষেত্রে।



কবিতা লিখলেই মানুষ, গণিত আবিষ্কার করলেই বিশ্বের মালিক

বিনয় লিখিয়াছেন, কবিতা লিখলেই মানুষ বিনয় লিখিয়াছেন- শোনো মদ, শোনো ফুল, ঘুমের ভিতরে কাউকেই/ খোঁজা তো সম্ভব নয়, অতএব কাউকে খুঁজি না।/ ফলে ষড়রিপুগুলি চিৎকার করে ওঠে শুনি/তারা যেন সসম্মানে মৃত্যু অবধিই অঙ্গে রবে।/ চিৎকার ক'রে বলে তাড়াতাড়ি আফিম আনো তো,/ আনো মদ, আনো গাঁজা, আনো কফি, আনো সিগারেট।/ তৎপরিবর্তে আমি এখনো আনতে চাই ভাব.... যিনি সকল কিছুর বিনিময়ে ভাব চাহেন, মানুষ হইবার একমাত্র শর্ত জুড়িয়া দেন কবিতাকে, কবিতা হইয়া ওঠে ধ্যান ও জগতের অধিশ্বর, ঈশ্বরী তিনিই তো কবির মৌল প্রতিমা। শাসন করিয়া চলেন পরবর্তী কবিসময়ের মনন ও মগজ। পরবর্তী কবিগণ যে বিনয় বন্দনায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিবে তাহার একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ এইখানে হাজির করিলাম। জয় গোস্বামী লিখছেন হাসপাতাল কবিতাতে বৃষ্টি থেমে আসছে- এবার তরুণ সব ছেলে আসবে, এসে দেখবে সেই অবাক চমৎকার; সদ্য লেখা কবিতা আর সন্দেশের বাক্স পাশে ফেলে ঘুমোচ্ছেন, ছেলেমানুষ, বিনয় মজুমদার!

ছন্দ ও বিধেয়

বাঙলা সাহিত্যের যে যৎকিঞ্চিৎ কবিতা আমি পড়িয়াছি ও যুগবিভাগ করিয়াছি তাহাতে আমি একখানা অনুধ্যান করিতে পারি বিনয় মজুমদারকে লইয়া। একটা সময় বোধহয় ছিলো, বাংলা কবিতাতে এক সুঠাম গীতলতা আর প্রাচুর্যের অধিষ্ঠানে ভরপুর। মধ্যযুগের, প্রাচীন যুগের সাহিত্যে যা আমরা দেখিয়া থাকি। একইভাবে রবীঠাকুরও যাহা ধারণপূর্বক হাজির হন তাঁহার বিপুল ভাণ্ডার লইয়া আমাদিগের সামনে। ত্রিশের দশক আর তারপরবর্তী সময়ের কবিতা সেই গীতলতা সেলফের তাকে উঠাইয়া ঠং ঠং আওয়াজে বিপ¬ব আর প্রতিবিপ¬বের বয়ান লইয়া আসিলো আমাদিগের সামনে গদ্যকবিতা আর নতুনত্বের অজুহাতে। বিনয় মজুমদার সেইখানে আবার দৈনন্দিনের শব্দাবলীর ভিতর দিয়া সেই গীতলতাকে হাজির করিলেন। এ বিনয়ের সম্পুর্ণ নিজস্বতাকে উদ্ভাসিত করিয়া আর আমাদিগের কবিতার গোড়ার দিকের সহিত তৈয়ারি করে মেলবন্ধন। গদ্যছন্দেও এতো গীতলতা( ঈশ্বরীকে, অঘ্রাণের অনুভূতিমালা) আমাদের অভিভূত ও মোহিত করে। গল্পের ঢঙে শুরু করিয়াছিলাম। কিন্তু বিনয়ের এই গল্প, কাব্যকথকতা বাঙলা সাহিত্য যতদিন রহিয়াছে রহিবে, প্রতিবার বিনয়-পাঠক নতুন করিয়া আবিষ্কার করিবে তাহার কবিতা, তার ভেতরকার নতুন-নতুন-নতুনতরো গল্প, যেই গল্প শেষ হইবে না কখনো কোনোদিন। পাঠক, আপনার পঞ্চইন্দ্রিয়কে অসীম যন্ত্রণা দিবার অপরাধবোধ আমাকে তাড়াইবে। ক্ষমাপ্রার্থণাসহ অকিঞ্চিতকর ও সত্য এই মনোলীনার যবণিকা টানিলাম। শুভম সত্যম।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×