ছোট বেলার সেই শিবপুরের বিলের কথা মনে পরছে। বড় আপার হাত ধরে গোসল করতে যাওয়া, সাঁতার শিখতে গিয়ে বিলের পানি খেয়ে ফেলা। বিলটা আমাদের পাশের গ্রামের এক্কেবারে শেষ মাথায় ছিল। যাত্রাপথে নরেণ বাবুর বাড়ি পরত। তার কংকালসার দেহ নিয়ে বাইরে বসে থাকা আর ভিতর থেকে মিতাদির চিল্লা ফাল্লা আমার নিত্যদিনের সজ্ঞী হয়ে গেছিল। প্রায় শুনতে পেতাম "ভগবান, কি এমন পাপ করেছিলাম যে এই জনমে এমন শাস্তি দিলে গো... "। উনুনের ধোয়া আর মিতাদির আক্ষেপ সব ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ভগবানের দিকে যেতো ঠিকই কিন্তু... থাক কিন্তুর কথা আর না বাড়াই।
অনেক দিন মানে দিন পঞ্জিকার হিসাব হইত ঠিক হবেনা তবে প্রায় ২০বছর পরে আবার শিবপুর বিলে গেছিলাম শীত পাখি দেখব বলে। বড় আপা বলত শীত পাখিরা নাকি অনেক দুরের এক দেশ থেকে আসতো আবার নিজে নিজে চলেও যেতো। তারা যখন যে দেশে ইচ্ছা চলে যেতে পারে কেউ তাদের বাধা দেয়না। যাত্রাপথে এবার নরেণ বাবুর বাড়িটা দেখতে পেলাম না। সেই ভিটের উপর ক্লাব ঘরের মত একটা টিনের চালা, উঠতি বয়সী কিছু ছেলের ক্যারাম খেলা সাথে সিগারেটের ধোয়া আর চালার উপরে মাঝারী আকারের সাইন বোর্ড। তাতে লেখা "ইসলামাবাদ যুব কল্যাণ সংঘ"।পাশেই চা দোকানের মালিককে নরেণ বাবুর কথা জিজ্ঞেস করে যা শুনলাম তার সারমর্ম এই কোন এক নির্বাচনের পর কোন এক শীতের রাতে তারা দুজনে অনেক দুরের কোন এক দেশে চলে গেছে। শীত পাখির মত গেছে ঠিকই কিন্তু শীত পাখির মত তারা আর ফিরবেনা। হঠাত করেই মনটা উদাস হয়ে গেল। পকেট থেকে একটা বেনসন বের করে তার ধোয়া ঊর্ধ্বপানে ছেড়ে ভাবলাম এই জনমে যদি আর কোন পাপ না করি তাহলে পরজনমে যেন শীত পাখি হয়ে জন্মাই। যখন যে দেশে ইচ্ছা উড়ে চলে যাব আর নরেণ বাবু মিতাদির কাছে চলে যেতে পারব। তখন শিবপুরের নাম ইসলামাবাদ বা ইসলামাবাদের নাম শিবপুর হবেনা। হলেও আমি জানবো না কারন তখন তো আমি শীত পাখি শুধুই শীত পাখি। যার কোন দেশ নাই। সব দেশের আকাশ আমার।