রাত প্রায় সাড়ে এগারটা। বাইরে শুনশান নীরবতা। ল্যাম্প পোস্টের বাতিগুলো নির্জন গলিকে আলোকিত করে রেখেছে। পথ ধরে দু’একজন লোকজন চলাফেরা করছে। কেউ সারাদিন পরিশ্রম করে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরছে শান্তির নীড় বাড়ির উদ্দেশে, কেউবা আবার এক কাপ চা, একটা সিগারেট খেতে ছুটছে চায়ের দোকানে। এরই মাঝে একটি ছেলে ছয়তলার জানালার পাশে বসে বিষণ্ন চিত্তে রাস্তার দিকে তাকিয়ে একজনের চলে যাওয়া দেখছে। মায়া নামক শব্দটি তাকে আরেকবার তাড়িত করছে। অনেক স্মৃতি বারবার আবির্ভূত হচ্ছে তার হৃদয়ের মানসপটে। ব্যথায় ক্লিষ্ট হচ্ছে তার মন। আক্রান্ত হচ্ছে সে অতীত স্মৃতির দ্বারা। আট বছর আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা, কলেজ জীবন শেষ হলে হল ছাড়া, বিভিন্ন মেসে অবস্থান কালে নানা রকম বিড়ম্বণা ও হাস্যকর ঘটনাসহ নানা ঘটনা তার মনে বারবার উঁকি দিয়ে যাচ্ছে।
মায়ার জাল ভেদ করে বেরিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। এই সত্যটা সে নতুন করে আরেকবার অনুভব করলো। কর্মজীবনে্র নানা ব্যস্ততার মাঝে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে ঠুনকো মনে হলেও আসলে তা নয়।
দীর্ঘ ছয়মাসের বেশি সময় একসাথে থাকার পর আজ তার খুব কাছের একজন মানুষ তার সঙ্গ ছেড়ে নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন । বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে নতুন বাসায় উঠতে হবে। তাই তিনদিন আগেই নতুন বাসার উদ্দেশ্যে তার এই শুভযাত্রা। ঘর গোছানোর কিছু কাজ তো থাকে।
ছেলেটির গুনগুন করছে ছেলেবেলায় স্কুল থেকে শেখা একটা গান।
'চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিড়ে, কাঁদিস কেন মন...
ভাঙা গড়া এই জীবনে আছে সর্বক্ষণ...'
স্মৃতিকাতরতায় বিভোর হয়ে সাধের ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট রেখে সে এখন জানালার ধারে বসে আছে। হঠাৎ মনে হলো একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলে কেমন হয়! আর কিছু না হোক অন্তত খোলা ডায়েরির কাজতো চলবে। বয়স বেড়ে যখন সে অনেক বুড়ো হয়ে যাবে তখন অতীতের কিছু স্মৃতি অন্তত আওড়াতে পারবে। আর তা নিশ্চয়ই ভালো লাগা ও প্রশান্তি বয়ে আনবে হৃদয়ে।
নাইবা আনুক সুন্দর কোনো সুখস্মৃতি, অন্তত সোনালী যৌবনের লেখা ও আবেগের সাথে আরেকবার নতুন করে পরিচিত হতেতো পারবে। অনুভব করতে পারবে সেই উদ্যাম লাগামহীন যৌবনের চিন্তা, চেতনা, দুরন্তপনার মাঝেও কত মায়া ছিলো হৃদয়ে।
সেই ক্ষুদ্র প্রয়াস থেকেই এই প্রচেষ্টা ও লেখনী।।
এ পর্যন্ত লিখে ছেলেটি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস পোস্ট করে দিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছেলেটি তার মনের কথাগুলো লিখে রাখলো বাইনারী এক ডায়েরীর পাতায়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:১৪