শিপলু ভাই গ্রেফতার হয়েছেন। নাহ! ইনি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন। নন কোন রাজাকারের সন্তানও। সামান্য একজন বেসরকারি চাকুরিজীবির বড় ছেলে। বয়স আনুমানিক ২৯ বছর। শিপলু ভাই আমার বন্ধুর বড় ভাই। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনতাম নিরীহ ও গোবেচারা হিসেবে। পাড়ার মসজিদে নামাজ পড়তে যেয়ে তিনি গ্রেফতার হলেন। সেখান থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে জনা দশেক মুসল্লিকে। তাদের সাথে সাথে শিপলু ভাইকেও গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। শিপলু ভাই প্রাণপণে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করিছিলেন তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নন এবং এ মসজিদেই তিনি সব সময় নামাজ পড়েন। এলাকার কিছু মানুষ এগিয়ে এসে পুলিশকে জানায়, শিপলু এ পাড়ার ছেলে এবং সে কোন ধরনের রাজনৈতিক দলাদলিতে সম্পৃক্ত নয়। কে শোনে কার কথা।
শিপলু ভাইয়ের বাবা অসুস্থ শরীর নিয়ে থানায় দৌড়ালেন, গেলেন জেল খানাতেও। কর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তার চৌদ্দ পুরুষদেরও কেউ রাজনীতির সাথে সক্রিয় নয়।
কাজ হয় নি। তারা ছাড়েনি শিপলু ভাইকে। কোর্টে চালান দেয়া হচ্ছে। জানা গেল, কমপক্ষে ১৫ দিনের রিমাণ্ডে নেয়া হচ্ছে অন্য গ্রেফতারকৃতদের সাথে।
শিপলু ভাইয়ের পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। তার চাকুরির উপর চলে পুরো পরিবারের ভরণ-পোষণ। ছোট বোনটির বিয়ের কথা চলছিল। সম্ভবত আগামী মার্চেই। তাঁর অসুস্থ মা ছেলের গ্রেফতারের খবরে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাদের একটাই আশংকা এই নিরীহ ছেলেটাকে রিমাণ্ডের নামে কী নির্যাতন চালানো হবে। একজন সাধারণ মানুষের গ্রেফতার যে একটা পরিবারকে কী পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে তার উদাহরণ দেখলাম আজ।
ব্যক্তিগতভাবে টুকটাক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমার ছিল। আমি যোগাযোগ করেছি স্থানীয় আ'লীগের জনৈক নেতার সাথে। তিনি অবাক হলেন শিপলু ভাইয়ের গ্রেফতারে। নানাদিকে ছোটাছুটি করে তিনি যা জানালেন তা' ভয়াবহ খবর আমাদের জন্য। সরকারের উপর মহল থেকে নির্দেশ আছে, আগামী কিছুদিন যাদের গ্রেফতার করা হবে তাদের কোন জামিন হবে না। কৌশলে তাদের জামিন না মঞ্জুর করা হবে। পুলিশের উপর নির্দেশ আছে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে যাকেই সন্দেহ হবে গ্রেফতারের পর রিমাণ্ড। তদবির করতে যিনি যাবেন তাকে যুদ্ধাপরাধী মামলায় গ্রেফতার করা হবে। সে যে দলেরই হোক।
আমি গিয়েছিলাম তার সাথে দেখা করতে। অনেক অনুনয়, ঘুষ, দেন-দরবার করে দেখা করতে হলো। অবাক হয়ে গেলাম শিপলু ভাইকে দেখে। ইতিমধ্যে তাকে শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছে তা' দেখেই বোঝা যায়। সদা হাস্যালাপী শিপলু ভাই আজ কথা বলেন নি। একটি অক্ষরও না। তাকিয়ে ছিলেন শূণ্য দেয়ালের দিকে। তার চেহারা বলে দিচ্ছিল মানসিকভাবে কতোটা আঘাত পেলে মানুষ এভাবে বদলে যায়। আমি চোখে জল ধরে রাখতে পারি নি। জীবনে কাউকে একটা চড় দেননি যে শিপলু ভাই, পড়াশোনা আর ঘর সামলাতে গিয়ে যিনি গলধগর্ম হয়েছেন সারা জীবন তিনি আজ শুধুই সন্দেহের শিকার হয়ে মানবেতর জেলজীবন কাটাচ্ছেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা, এ কোন প্রক্রিয়ার গণতন্ত্র? এ কোন ধরনের শাস্তি আপনি নিরীহ মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশের জনগণ চায়। তার মানে এই নয় যে, সাধারণ মানুষকেও আপনি একই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ফেলবেন।
এসব ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, শুধু জামায়াত নয়, আ'লীগ করে না এমন সব মানুষই রাজাকার, দেশদ্রোহী।
এমন কতো হাজারো শিপলু আজ গ্রেফতার হয়ে রিমাণ্ড কিংবা কয়েদি জীবনের শিকার হচ্ছে। এ কি দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে ? আজ একজন শিপলু বিনা কারণে শাস্তি ভোগ করছে। তিনি ছাড়া পাবেন আজ হোক কাল হোক। কিন্তু তার এ ক্ষত কি সারবে? তার পরিবারের যে ক্ষতি আগামী ১৫ দিনে হবে তা' কি কখনো মেটানো যাবে? সামাজিকভাবে শিপলু ভাইয়ের এ ক্ষতি কখনই মেটবার নয়। পুরো জীবন তার মনে এ ক্ষত থাকবে দগদগে ঘা' এর মতো।
ইতিমধ্যে আমরা বন্ধুরা সব শিপলু ভাইয়ের জামিনের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার এক বন্ধুর বাবার বন্ধু জনৈক উকিল নিয়োগ করা হয়েছে। রোববার আরেকদফা চেষ্টা চালাবো। ব্লগার বন্ধুরা দোয়া করবেন, যেনো অন্তত একজন শিপলুকে আমরা বাঁচাতে পারি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



