somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরোনো দিন অথবা রূপকথার গল্প

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারপাশের পৃথিবীটা অনেক পাল্টে যাচ্ছে। দিন বদলাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে রাতগুলোর চিত্রও। আর সময়? সে তো সদা ধাবমান।বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ, যেখানে কেজি স্কুল থেকে ফিরে আসার পরের সময়গুলো দৌড়ে কাটাতাম সেখানে এখন দুনম্বরী ইট আর বালুসিমেন্টের বেহিসেবী মিশ্রণে উঠে দাঁড়াচ্ছে আস্তরবিহীন চার দেওয়াল। আমার প্রিয় সেই বহুতল ভবনের ছাদে এখন কোন এক টেলিকম কোম্পানির বিশাল টাওয়ার। ইচ্ছেখুশী মতোন যে প্লটের দেওয়াল টপকে ভেতর থেকে সাদা কাশফুল ছিঁড়তাম সেখানে আজ সেমিপাকা ঘরের ভাড়া গুনছে কোন এক সওদাগরেরর ছেলে। বিলের মাঝখানে দশ বাই আট ফুটের গর্ত করে বানানো পুকুরগুলো এখন কেমন আছে?

নতুন নতুন বছরের আসা যাওয়াতে বুঝতেই পারলাম না কখন বাড়ির মাটির দ্বিতল ঘর আমার ভেংগে পড়ল। নানুবাড়ির যে সুউচ্চ জাম্বুরা গাছ থেকে আঠার ফুটের কোন্ডা(ফল পাড়তে ব্যবহৃত) দিয়ে প্রথম জামবুরা পেড়েছিলাম, সে গাছের কাটাটুকরোগুলো এখন গড়াগড়ি খাচ্ছে কোনো এক ফার্নিচারের কারখানায়।

ফেলে আসা সময়ের আবহাওয়া আমি আর খুঁজে পাই না। তখনকার কোরবানির ঈদগুলো ছিল কনকনে ঠান্ডার সময়। যখন গরুর গায়ে দেবার ছালার আয়োজন করতে হত, মাঠে জ্বলত নাড়ার আগুন। প্রত্যেকটা উতসবের আলাদা স্বাদ ছিল, ছিল আলাদা গন্ধ। বছরের প্রত্যেক মাসের ছিল নিজস্ব আমেজ। আমাদের বার্ষিক পরবর্তী সময়গুলো ছিল প্রচন্ড শীতের।

অনেক বয়স হয়ে যাচ্ছে আমাদের সবার। সমবয়সীদের দেখছি একেকজনের বয়স সতের-আঠার-উনিশ...... সংখ্যা বাড়ছেই...............

চাচা চৌধুরী-সাবু এবং আরো অনেক কমিক্সের দিনগুলোকে মিস করি। এসব কমিক্সের জমজমাট বইএর দোকানগুলোর জীর্ণ দশা দেখে হাহাকার জাগে। এখনকার ছেলেরা কি কমিক্স পড়ে না? মুগলি, সিন্দাবাদ কিংবা লেপের নিচে টর্চ জ্বালিয়ে ঘেমে নেয়ে রাত দুটো প‍র্যন্ত তিন গোয়েন্দায় সাথে এডভেঞ্চার। কোরবানির সময় গরু নিয়ে বিশাল মাঠে সকাল সন্ধ্যা দৌড়োদৌড়ি; খুব মিস করি বিকেল বেলায় ফুটবল, ক্রিকেট নিয়ে বিল্ডিং এর ছাদে, বিভিন্ন মাঠে কাটানো সময়কে।

আমরা এমন এক সময়কে দেখতে পেয়েছি একটুর জন্য হলেও যে সময় চিঠি লেখা হত, গলির মাথার দোকানে পাওয়া যেত দুই টাকারস্ট্যাম্প। যখন বিলাসী কালির কলম ব্যবহার করা হত। যখন দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গুটিকয়েক বাসায় ছিল ল্যান্ডফোন। যখন মানুষের সাথে যোগাযোগ ছিল কম। কিন্তু যখন দেখা হত সে নিবিড় আনন্দে কোন কৃত্রিমতা থাকত না। এমন এক সময় চলে গিয়েছে, যখন চিরাচরিত দাদী-নানীরা ছিল একদমই অনাধুনিক, একদম তাদের মতই। আমরা গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত দেখেছি। নতুন যেই প্রজন্মগুলো আসছে, তারা কি কখনো জানবে, সেপ্টেম্বরের এই সময় হতেই শুরু হত শীতের রাতগুলোর আনাগোনা। তারা কি এখনকার ছমাসের গ্রীষ্ম দেখে বুঝবে, আগে গ্রীষ্ম ছিল সর্বোচ্চ তিন মাসের। যখন মানুষ ঝড় আর কালবৈশাখীর আগমন প্রেডিক্ট করতে পারত। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা টাংস্টেন এর হলুদ আলো, চেরাগ-হ্যারিকেন আর ডোবাইওয়ালার ছয় ব্যাটারির টর্চ লাইটে গ্রামের রাতগুলোকে আলোকিত হতে দেখেছিলাম।

এখনকার সবকিছুই কেমন কেমন। পাল্টে যাওয়া সবকিছুই। কটকটিওয়ালার কাছ থেকে পুরোনো বইখাতার বিনিময়ে কটকটি খাওয়া হয় না। বলপেনের বলগুলোও এখন আর খুলে পড়ে হারিয়ে যায় না। পেন্সিলের ভাংগা নিপে বা পুরোনো ডায়েরীতে নোট করা 'গরু' কিংবা 'আমাদের ছোট নদী-গ্রাম' রচনাতেই তখনকার দুরন্তপনা খুঁজতে হয়। আমার রোলটানা বাংলা ইংরেজি খাতার কথা মনে পড়ে। মনে পরে কেজি-প্রাইমারি স্কুলের সামনের চালতা আর বস্তা আইস্ক্রিমের কথা। মনে পরে চারটে পঁচিশ পয়সা জমিয়ে একটাকা করতে পারার দুর্নিবার আনন্দকে। ফেলে আসা ঘরগুলোর কথা ভাবি, মনে পরে ফেলে আসা মানুষগুলোর কথা।

আমি ছয় বছরের হাফপ্যান্ট পরা এক বালককে এখনো দেখতে পাই, যে বিকেলের মিষ্টি রোদে বেরিয়ে পড়ত ষড়ভুজের সাদা-কালোয় ফুটবল অথবা ছোট ব্যাট প্লাস্টিকের বল নিয়ে।

আমার শহর আগের মত নেই। এখনের সময়ও আর আগের মত নেই। এখনকার শহর আর এই সময়ের গন্ধ আমি চিনি না। রুপকথার দিনগুলো শেষ। এখন আছে শুধু হীরন্ময় স্মৃতি।

এখনকার রাতগুলোতে আসলেই কোন রুপকথা নেই।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×