somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাবুলিয়ালার কথা : মাজার-ই-শরীফের পথে

১৪ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[হিন্দুকুশ পর্বত মালার সালাংগ চুড়ায়। ভূপৃষ্ট থেকে প্রায় ৩৮০০ মিটার উচ্চতায়!!!]



[ই নফর ডেরাইবার ই মটর এ মান আসত; মানে হল গিয়ে এই ভদ্রমহোদয় আমাদের গাড়ির চালক!!! ]





মাজার-ই-শরীফকে বলা হয় সমস্ত আফগানিস্তনের মাঝে সবচেয়ে নিরাপদ রাজ্য। বিদেশীরাই বলে, নিরাপত্তা জনিত উপমা। আর সাধারন আফগানদের জন্য মাজার হচ্ছে রোম্যান্টিক শহর, আফগানের প্যারিস যেন। এটাই আমার প্রথম মাজার যাত্রা। প্রায় ৬০০ কি.মি. পথ ঘুরে ৩টি সাইটের প্যাট হবে, শেষ হবে মাজারে। আমি, কবির ভাই, এক জন রিগার, ড্রাইভার আর সিকিউরিটি কমান্ডার। যদিও এই পথে তালেবানের কোন নাম গন্ধ নাই, কিন্তু পুলিশ চেকিংয়ের ঝামেলা সামাল দেয়ার জন্য কমান্ডারকে (আসলে সিকিউরিটি ম্যনেজার) যেতে হল।

সকাল ন'টার পর আমাদের যাত্রা শুরু। কবুল পেরিয়ে হাইওয়েতে উঠে একটু অপেক্ষা করতে হল এমটিএনের গাডির জন্য। তার পর শুরু হল পাল্লা-পাল্লি, ছুটে চলা। ঘন্টা দুয়ের পরই হিন্দুকুশ পর্বতমালার চডাই-উৎরাইর গহীণে। শাই করে পরিয়ে এলাম জাবুল-শিরাজ, এখানে এক রেষ্টুরেন্টে এক সন্ধায় 'ভয়ঙ্কর' খাওয়া দাওয়া করেছিলাম, একগাদা টমেটো দিয়ে ডিমের আজব রেসিপি, নান দিয়ে। এরা দুম্বা/পাঠা ছাড়া অন্য মাংস, এমন কি মুরগি পর্যন্ত করে না, ডিম অনেক দূরের কথা! আমাদের পই পই করে বুঝিয়ে দিয়েছিল আমরা নিতান্তই মেহমান বলে আমাদের জন্য এই ঝামেলা করেছে। এই ডিম কষ্ট কর, কিন্তু কি করা, এরা এটাই জানে কেবল! কিন্তু কাবুলি পাঠর গন্ধ? অসম্ভব!
পর্বতারোহনের সাথে সাথে দূরের সাদা বরফ চারদিকে ঘিরে ধরা শুরু করল। শুরু হল একের পর এক টানেল। টানেল গুলো বানানো হয় রাস্তাকে বরফ মুক্ত রাখতে, যেন হিমবাহের মত নেমে এসে রাস্তা ভরিয়ে না ফেলে। আরো উপরে উঠার পর দেখি রাস্তার পাশে ট্রাক থামিয়ে চাকায় চেন লাগানো হচ্ছে, বরফে যেন পিছলে না যায়। ডানে অতল খাদ আর বয়ে দুইমানুষ সমান বরফের পাহাড়। বরফ সামান ভাবে কেটে রাস্তা পরিষ্কার রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বড় টলেনটা ৩.৫ কিমি লম্বা, রাশিয়ানদের করে যাওয়া।
ভেতরে প্যাচ প্যচে কাদা জমে বরফ হবার চেষ্টা করছে। টানেলের ভেতরে কোথাও ইন্জিন বন্ধ হয়ে ট্রাক দাড়িয়ে আছে। ভয়ংকর ঠান্ডায় দরদর করে ঘামছে ড্রাইভার, ইন্জিনের উপর ঝুকে।

আস্তে আস্তে বরফ কমে গেল, ঠান্ডাও কমে এল। বেলা দেড়টা-দুটার পর মোটামুটি নিম্নাঞ্চলে এলাম, বরফ নাই এখানে। একটা পাহাড়ি রেস্টুরেন্টে মাছ পাওয়া যাচ্ছে দেখে খাওয়া সেরে নেয়া গেল। পাহাড়ি নদীর মাছ, বাষ্পে সেদ্ধ করা। খেতে যেমনই হোক, মাংসের চেয়ে ঢের ভাল।
বিকেল নাগাদ চারপাশের চেহারা বদলে যেতে লাগল। চার-পাশ হয়ে গেছে অনেক কোমল, অনেক সবুজ। কগার সাইটের পথে বেশ খোলতাই হয়ে একে বেকে যাচ্ছে নদী। চার পাশে সবুজ ঘাসের চাদর। এখানেও পাহাড, কিন্তু অনেক আপন লাগে। কাবুলের মত রুক্ষনা। মনে হয় বুঝি বাংলাদেশই! কেবল মোটা গুডির আম-জাম-বটের কোমল ছায়া নেই, নেই পাখির ডাক।

অপারেটরের ইন্জিনিয়ার দুটো সাইটেই কাজ দেখে খুশি। মাথা নেডে কালকের সময় বাৎলে দিয়ে শাই করে চলে গেল। আমরা চা নিয়ে বসলাম। ছবি তুলে নিতে ভুললাম না।

মাজারের পথ আরোও মশৃণ, এদেশের তুলনায় খুবই ভাল, বাংলাদেশের চেয়ে ভাল। গেল বার বিকাশদা এখানে অনেক বাঙালীর দেখা পেয়েছেন। ইন্জিনিয়ার থেকে শুরু করে লেবার, পাঁচক, এক এলাহি কারবার। রাস্তার কাজ চলছিল তখন। সেই রাস্তা তীরের মত সোজা হয়ে ছলে গেছে মাজার। ড্রাইভার পচাগুল এই গাডি আর এই রাস্তা পেলে ১৭০ ছাডা কথাই বলতো না। এই জন একটু সাবধানী, রয়ে সয়ে চালাচ্ছে।

চারপাশের সবুজ ভাব আরও সবুজ, আরও বেশি কোমল হয়ে মনটা একেবারে ভরিয়ে দিল। চারদিকে দেখি সাদা সাদা ফুলের গছ। কমান্ডারের কথা মত জানালা খুলে দিলম, একরাস সুবাতাস ছুটে এসে প্রাণ জুড়িয়ে দিল। আহ! কি সুন্দর গন্ধ! যাকে বলে একেবারে মন মাতাল করা। সবাই লহমায় নেমে ছুটে গেলাম নাম না জানা সারি সারি বাদাম গাছের দিকে। গাছে কোন পাতা নাই, শুধু নিষ্কলঙ্ক সাদা ফুল। আর তার সে কি রূপ। মাস পেরিয়েছে ছুটি থেকে এসেছি, একমাস পর হাত দিয়ে ছুয়ে দিলাম ঘাসের কোমল দেহ। সবুজ ঘাস আর সাদা ফুলের মিলিত সৌরভে মাথা ঝিম ধরে উঠে। মনে হয় ''Perfume: The Story of a Murderer'' এ যেমন বলা হয়েছে, এ যেন সুগন্ধের সেই দূর্লভ ১৩তম নোড। যেন পাগলা হাওয়ায় আলতো ভাবে স্মৃতীর পাতায় ভেসে আসে হাজার মাইল দূরে ফেলে আসা কোন প্রিয় মুখ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:০৪
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×