somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তরুণ প্রজন্মের হ্যাকিং প্রীতি ও সাইবার আইন

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি র‌্যাবসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করে বেশ আলোচিত হয়েছেন বাংলাদেশের তরুন হ্যাকার শাহী মির্জা৷ বাংলাদেশে বড় পরিসরে হ্যাকিংয়ের ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম৷ যদিও বিশ্বের অনেক দেশে হ্যাকিং বেশ নিয়মিত ঘটনা

অনেকেই হ্যাকারদেরকে বুদ্ধিমান চোরও বলে থাকে৷ কারণ তারা কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কিং এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বেশ ভালোভাবেই জানে বলে তারা সহজেই খুঁজে বের করতে পারে একটি সিস্টেমের দুর্বল পথগুলো৷ আর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা ওই পথ দিয়েই ঢুকে পড়ে অন্যের সার্ভারে৷ একটি সার্ভারে প্রবেশ করে তার অ্যাডমিনিসট্রেটিভ ক্ষমতা হাতে নেওয়া মানেই ঐ সার্ভারের পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা হাতে পাওয়া৷ এভাবেই তারা অন্য ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হ্যাকিং বেশ সহজ বলেই মনে করছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা৷ এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে দুর্বল বা কম নিরাপত্তাসম্পন্ন ওয়েবসাইট তৈরিকে৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের আইএসপি বিডিকম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ সাবের বলেন, আমাদের এখানে যেসব ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই কিছু কমন ওপেনসোর্স ইউটিলিটি দিয়ে তৈরি৷ এসব সফটওয়্যারে কিছু সিকিউরিটি গ্যাপ আছে, যা অনেকেই জানে৷ এসব ওয়েবসাইটের যেসব ওয়েব মাষ্টার আছে তারা যদি এসব সিকিউরিটি গ্যাপ প্রতিরোধক প্যাচ ব্যবহার করে তাহলে কিন্তু সহজে আর এসব সাইট হ্যাক করা যাবে না৷ কিন্তু ওয়েব মাষ্টারদের অজ্ঞতার জন্যেই কিছু মানুষ হ্যাকিং এর সুযোগ নিচ্ছে৷ তবে হ্যাকাররা কিন্তু ধরাছোয়ার বাইরে থাকা কোন গোষ্ঠী নয়৷ যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি শাহী মির্জার কাছ থেকে৷ ছোট পরিসরে হলেও রেবের ওয়েবসাইট হ্যাক করে শাহী মির্জা ধরা পড়েছে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে৷ বিশেষ করে নবীন হ্যাকারদের ক্ষেত্রে ধরা পড়ার ঘটনা বেশ দ্রুতই ঘটে যায়৷ কারণ আমরা যখন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করি তখন প্রত্যেকটি সংযোগের পেছনেই কাজ করে একটি করে নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস৷ অর্থ্যাত্‌ যখনই আপনি ইন্টারনেটে সংযুক্ত হচ্ছেন তখন এই আইপি এড্রেসের মাধ্যমে একটি বিশেষ নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত আপনি৷ তাই ওই নেটওয়ার্কের পথ ধরে আপনাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব৷ আর হ্যাকারদের প্রধান হাতিয়ারই হলো ইন্টারনেট৷ তাই তারাও এই বিশেষ নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে নয়৷ ফলত তারাও ধরা পড়ে যায় নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞদের হাতে৷ তবে শুধু আইপিই নয়, আরো অনেকভাবে খুঁজে বের করা যায় হ্যাকারদের৷ দেশভেদে সেই প্রক্রিয়াও একেক রকম৷


কিন্তু হ্যাকারদের ধরা মানেই কি গ্রেফতার বা অর্থদন্ড৷ উন্নত বিশ্বে বোধহয় গ্রেফতার বা অর্থ দন্ডের বিষয়টি এত সহজ নয়৷ অন্তত কেভিন মিটনিখ-এর বিষয়টি তাই বলে৷ কেভিন মিটনিখ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যাকার৷ নব্বই দশকের মাঝামাঝির দিকে কেভিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক হ্যাক করেছেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে৷ মার্কিন মিডিয়ার মতে, একটিমাত্র ডিজিটাল টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে পেন্টাগনের নেটওয়ার্ক হ্যাক ও সেখান থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিজের ইচ্ছামত যেকোন জায়গায় নিক্ষেপের ক্ষমতা রাখে কেভিন৷ এতটাই শক্তিশালী হ্যাকার সে৷ তথাপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু কেভিনকে ব্যবহার করতে পেরেছে নিজেদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার কাজে৷ কিভাবে? জানতে চেয়েছিলাম জাকারিয়া স্বপনের কাছে, কেভিনের মতো এতোবড় হ্যাকারকেও কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমাবস্থায় শাস্তি দেয়নি৷ তাকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে, তাকে নেটওয়ার্ক সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এরপর তাকে শাস্তি হিসেবে ২১ বছর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে দুরে থাকতে বলা হয়েছে৷ তবে কেভিনকে কিন্তু কোন জেল-জরিমানা করা হয়নি৷
হ্যাকারদের কাছ থেকে নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখতে নিয়মিতই চলছে গবেষণা৷ অরিজিন্যাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করলে তা অনেকটাই হ্যাকারমুক্ত রাখা সম্ভব৷ তার উপর হ্যাকারদের আটকানোর জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও বেশ তত্‌পর৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ অনলাইন নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে হলে ভালোভাবে ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাতেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অনলাইন সিকিউরিটি টিম তৈরি করতে হবে৷ এই টিমকে কাজ করতে হবে অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে৷ আর এভাবেই বাংলাদেশে নিরাপদ অনলাইন জগত তৈরি করা সম্ভব৷ আর সেটা বেশ জরুরি৷ কারণ অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও চালু হতে পারে অনলাইন নির্ভর কেনাকাটা, বাণিজ্য৷ আর তখন নিরাপদ নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হবে সবচেয়ে বেশি৷
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×