somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ত্রের চাইতে মস্তিষ্কের জোর কত বেশি সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি এই ধর্মান্ধ শ্রেণীগুলো

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বব্যাপী আইএস জঙ্গীবাদের উত্থানকে প্রধানত দুইটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথমত ইনভেস্টমেন্ট এবং দ্বিতীয়ত আফটারম্যাথ। বিশ্বব্যাপী এই জঙ্গীবাদের উত্থান একেবারে নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গীবাদকে পশ্চিমা মদদপুষ্ট একটি প্রোপাগান্ডা হিসেবে দাবী করার দিনটি সম্ভবত শেষ হয়ে আসছে। কারণটা হচ্ছে, আমাদের স্বার্থগত। জঙ্গীবাদ এখন বিশ্বের সাধারণ মানুষের স্বার্থের একটা বড় অংশ দখল করে বসে আছে। স্পষ্টতই, আইএস বা সমগোত্রীয় জঙ্গীদের মূলধন হচ্ছে ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা যা অনেকটা কারেন্ট জালের মত কাজ করে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী গুলোতে। সম্প্রতি শুনলাম বাংলাদেশের অন্তত তিন শতাধিক তরুণ তরুণী আইএসে যোগ দেয়ার জন্য সিরিয়া যেতে প্রস্তুত। মস্তিষ্কের অনুন্নত ব্যবহার এবং সেই সাথে ধর্মীয় আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা এর অন্যতম প্রধান কারণ বলেই মনে হয়। অস্ত্রের চাইতে মস্তিষ্কের জোর কত বেশি সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি এই ধর্মান্ধ শ্রেণীগুলো। আর এই ইনভেস্টমেন্ট কে বিশ্বব্যাপী কাজে লাগিয়ে আইএস যে আফটারম্যাথ পাচ্ছে সেটা যতটা না পারলৌকিক তার চেয়ে বেশি ইহজাগতিক এবং রাজনৈতিক শক্তিমত্তা। একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায় যে,এদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী এতটাই নিচু মানের যে, বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক মুক্তির একটা জোয়ার চলছে, আর এই অর্থনীতিকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে সামগ্রিক সামাজিক মতবাদ কিংবা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড, সেখানে এই জঙ্গীদের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতি বিন্দুমাত্র সদিচ্ছা নেই। ক্ষমতা এবং অস্ত্রের লড়াইটা সবচেয়ে বেশি চাক্ষুস।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে প্রফেসর নোয়াম চমস্কি। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত পলিটিকাল ক্রিটিক তিনি। যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গেছে, ক্ষমতার দাপটে কেউ তাদের সাথে হয়তো পারবেনা, কিন্তু আমেরিকাতে বসেই এই প্রফেসর আমেরিকান গভমেন্ট এমনকি পশ্চিমাদের সম্পূর্ণ বৈশ্বিক অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন, সেটার প্রভাব কতটা পশ্চিমারা সেটা ঠিকই বুঝে গেছে। পলিটিকালি তিনি একজন অ্যানার্কো- সিন্ডিকালিস্ট। স্রেফ তার মস্তিষ্কের জোরে আমেরিকার মত পরাশক্তি সর্বক্ষণ তটস্থ থাকে। অন্যদিকে অস্ত্রের প্রভাব আমেরিকাকে কতটাই বা নাড়াতে পারতো? হয়তো সেই হুমকিটা সাময়িক, যেমনটা বিন লাদেনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, কিন্তু পতন অনিবার্য। জলে নেমে কুমিরের সাথে খেলা করবেন? একটা অস্ত্র নিয়ে জলে নেমে কিছু করতে পারবেন কুমিরের? কিন্তু একটু বুদ্ধি করে যদি কুমিরের চোখে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করতে পারেন, সেই যাত্রায় আহত হলেও অন্তত প্রাণে বেঁচে যাবেন। কুমির ছেড়ে দেবে আপনাকে। এই বুদ্ধিটা তো থাকা চাই। তাইনা? একটা পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নামবেন, অন্যদিকে সেই পরাশক্তির দূর্বলতম দিকটির সন্ধানই আপনি জানেন না। সেটা আবিষ্কারের চেষ্টাও করবেন না। শুধু চাইবেন অস্ত্রের অহমিকা, তাহলে কি লাভটা হবে এই যুদ্ধ করে? একটা রেভুলুশান করবেন? কি দিয়ে? ধর্মবাদ? আপনার নিজের বিশ্বাস মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার তথাকথিত সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি দিয়ে ওদেরকে কাবু করতে চান। এরচেয়ে হাস্যকর কিছু হয়?
তাহলে কেন? লড়াইটা কার সাথে? কিসের বিরুদ্ধে? বিরুদ্ধমতের সাথে লড়াই? অস্ত্র দিয়ে আপনি বিরুদ্ধমত দমন করবেন? কিভাবে সম্ভব? ব্যক্তির মৃত্যু মানেই কি মতবাদটির মৃত্যু? আপনি একটি মতাবলম্বী সকল ব্যক্তিকে হত্যা করলেন। কিন্তু মতবাদটিকে হত্যা করতে পেরেছেন? সেটা কি যে কোনো সময় ফিরে আসবেনা? তখন কি হবে? তাহলে লড়াইটা কেন? খুব সম্ভবত ঘৃণা, অস্তিত্ব সংকট, নিজেদের আক্রমিত ভাবা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে আমাদের ঘৃণার ইতিহাস। যেকোনো কিছুর চাইতে আমাদের এই ঘৃণার ইতিহাসটা সবচেয়ে সমৃদ্ধ। আমরা যুগ যুগ ধরে ঘৃণা করে যাই। ঘৃণিতকে সবচেয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে নিজেদের তৃষ্ণা মেটাই। প্রাচীন মৃত্যুদন্ডের বিচিত্র কৌশল গুলো জানলেই আপনি অবাক হবেন। এই বিষয়ে আপনার বিশ্বাস জন্মাবে যে ঘৃণা কিভাবে আমাদেরকে তাড়িত করেছে সভ্যতার একটি বিশাল অংশজুড়ে। আর এই ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতার ইতিহাসটাই নতুন করে গজিয়েছে হাজার বছর পরে। আগেই বলেছি, আপনি ব্যক্তিকে থামাতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তির মতবাদ থেমে থাকেনা। আর এটিও থেমে থাকেনি। মধ্যযুগীয় শিরশ্ছেদ, অঙ্গচ্ছেদ এখনো আমাদের এই আধুনিক সভ্যতায় বাহিত হচ্ছে। মানুষের একটা উগ্র শ্রেণী আবার এই নিয়ে গর্ববোধ করছে। সঙ্গত কারণেই বিশ্বের অন্যান্য শান্তিকামী মানুষ এর বিরোধীতা করছে, আর উগ্রবাদীরা এটি থেকে চিন্তার রস নিচ্ছেনা, নিচ্ছে ঘৃণার রসদ। নিজেদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন ভাবছে। ব্যাস! বিস্ফোরিত হচ্ছে ঘৃণা! নৃশংসতা! মধ্যযুগীয় বর্বরতা! আর তারা অস্তিত্ব সংকটের এই অনুভূতিকে কাউন্টার দিতে নেমে যাচ্ছে অস্ত্র হাতে। তারা যুদ্ধ করবে। কিসের সাথে, কি উদ্দেশ্য, কি লক্ষ্য তারা কিচ্ছু জানেনা। তারা জানে রক্ত! খুন! খুন! রক্ত!
কিন্তু ন্যূনতম এই চিন্তাভাবনাটা হয়তোবা উগ্রবাদী ধর্মান্ধদের নেই, কিন্তু অন্যরা? নিষ্ক্রিয় হয়ে সবাই যেন যাত্রা পালা দেখছে আর দাবী করছে, এসবের কিছুই শুদ্ধ নয়, সব ভুল ব্যাখ্যা। কিন্তু দাবী করেই চুপচাপ। মাথা তোলার ইচ্ছাটাও যেন নেই। আর এই সুযোগে জঙ্গীরা নিজেদের সমৃদ্ধ করছে, নিজেদের নৃশংসতা আর ঘৃণাকে নিয়ে যাচ্ছে ফিফথ গিয়ারে! সময় থাকতেই অন্যরা কিছুই বলছেনা, কিন্তু একদিন সময় চলে যাবে। সেদিন জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বললেই আপনাকেও হত্যা করা হবে, আর সেটাকে অন্তত নাজায়েজ করার জন্যও পাশে কাউকে পাওয়া যাবেনা! আপনার কথিত শত্রু আমেরিকা ইসরাঈল নিজেদের মতই থাকবে, কিন্তু জঙ্গীরা দখল করে নেবে এই আমাদেরকেই। আর এটাই সম্ভবত ওদের উদ্দেশ্য, সেটা হচ্ছে শক্তিবৃদ্ধি। আরো ভালো করে বললে- জনপদ বৃদ্ধি। ইতোমধ্যেই শুনেছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আইএস জঙ্গীরা ঢোকা শুরু করেছে। আপনি যদি এখনো ভেবে নিতে থাকেন, আপনার প্রিয় বিশ্বাসটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এত কাঠখড় পোড়াচ্ছে জঙ্গীরা, তাহলে অন্তত এই লিখাটা শুরু থেকে আরেকবার পড়ুন। আপনার বিশ্বাস, আপনার অস্তিত্ব, এসব রক্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব। সেটা একমাত্র তখনই সম্ভব যখন আপনি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিজের অধিকারটা বুঝে নিতে শিখবেন, আপনি সামাজিক হতে শিখবেন, পরমতকে সম্মান করতে শিখবেন। কিন্তু জঙ্গীদের মাঝে আপনি এর একটাও খুঁজে পাবেন না, বরং যা খুঁজে পাবেন তার যতটা না পারলৌকিক বাসনা, তারচেয়েও বেশি ইহলৌকিক কামনা। একটা মাথা খাটালেই সেটা বুঝাটা অসম্ভব নয়।
নিজেদের অস্তিত্ব প্রসারের এবং ঘৃণার সম্প্রচারের যে এক উন্মত্ত নেশায় নেমেছে জঙ্গীবাদ, সেটার শিকড় সমাজে কতটা ঢুকে গেছে সেটা নিজেদের দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়। আজকাল একটি হত্যার পর, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে অজ্ঞ ব্যক্তিটিও কিন্তু/যদি বসিয়ে হত্যাকে জায়েজ করা শিখেছেন। দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তপ্ত ইস্যুতে যাদের খুঁজেই পাওয়া যায়না, ওরাও উঁকি মেরে একটা ব্যু দেয়ার লোভ সামলাতে পারেন না। কিন্তু এভাবে আর কত? নিজেরাই অংক কষুন। খুব বেশি কঠিন নয়। সাম্প্রতিক বিশ্ব নিয়ে পর্যালোচনা করুন, নিজেকে আধুনিকদের সাথে তুলনা করে দেখুন, কতটা পিছিয়ে পড়ছেন। পিছাতে পিছাতে মধ্যযুগেই পা দিচ্ছেন না তো? অন্তত নিজের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে হলেও অংকটা করে ফেলুন। মানব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ভয়াবহ সিদ্ধান্তটা আমাদের এই প্রজন্মকেই নিতে হবে। আমাদের এই প্রজন্মের স্ট্যান্ডের উপরেই নির্ভর করবে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মটা কেমন হবে, কিংবা আমরা আসলেই আগামী প্রজন্মের জন্য “ভবিষ্যত” বলে কিছু রেখে যেতে চাই কিনা। ভাবুন। সময় থাকতেই ভাবুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×