somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর মনে যারা শিশু পোষেন নিজেকে, কিংবা ইতিমধ্যে যারা শিশুর বাবা-মা, তাদের জন্য : ছড়া-কাহিনী/চিত্রনাট্য, তিথিমনির বনরাজ্যে সবার নিমন্ত্রন

২৪ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডিসক্লেইমার: এটি একটি সম্পূর্ণ শিশুতোষ রচনা। মূল উদ্দেশ্য এনিমেশান করার উপযোগী একটা শিশুতোষ ছড়া-কাহিনী লেখা। মনে সাধ, ডিজনীর মতো বাংলাদেশেও শিশু-কিশোরদের জন্য একদিন নিটোল বিনোদনের এনিমেশান জেনারের মুভি তৈরী হবে। তবে এটাকে অন্য মাধ্যমে রূপদান করা যাবে বলেও মনে হয়। পড়ার সুবিধার্থে বনর্ণা যতদূর সম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করেছি। শুধু যেটুকু নাহলেই নয়, তাই যোগ করা হয়েছে। লিখেছি চিত্রনাট্য লিখার ভঙ্গিতে। তাই পড়তে যে কষ্ট, তা স্বীকার করে নেবার বিনীত অনুরোধ জানাই। দৈর্ঘ্যে বড় বলে কয়েক খন্ডে ধারাবাহিক ভাবে দিতে হবে। লিখাটি লিখার সময় যে অকল্পনীয় আনন্দ আমি পেয়েছি, যদি তার সিকি ভাগও পড়তে গিয়ে পাঠক পান, কৃতার্থ হবো ভীষন।।
.....................তিথিমনির বনরাজ্যে সবার নিমন্ত্রন..................................
প্রথম দৃশ্য:
দৃশ্য বনর্ণা: কোন এক বন। বড় বড় গাছ , লতা-পাতায় ঘেরা বনের মাঝখানে একটু খালি জায়গা জুড়ে একটা খাট। খাটে ঘুমিয়ে আছে ফুলের মতো ছোট্ট মেয়ে। নাম তিথি। তিথিমনির খাট ঘিরে বনের সব পশু-পাখীর জটলা।

ঘটনা বর্ণনা: বনে কোন রাজা বা রানী নেই বহুদিন ধরে। কিন্তু রাজা-রানী ছাড়া কি আর বনরাজ্য হয়। আজ হঠাৎ বনের মাঝখানে তিথি এসে পড়েছে, কিভাবে সেটা থাক আপাতত, বনের পন্ডিত শেয়াল এটাকে ঐশ্বরিক বলতে চাচ্ছে। সে বলছে , তার শাস্ত্রে লিখা আছে, এমন একজন মানুষ আসবে তাদের দেশের রানী হবার জন্য। সে বিভিন্ন শাস্ত্র উদ্ধৃতি দিয়ে বনের সহজ পশু-পাখীদের কে সে কথাই বুঝাচ্ছে। বিভিন্ন পশুরা সন্দেহ প্রকাশ করছে, আবার পন্ডিতের কথা ফেলেও দিতে পারছেনা। এই নিয়েই কথা বার্তা বাদানুবাদ হচ্ছে এ পর্বে।।

চরিত্র সমূহ:
তিথি (ছোট্ট মেয়ে, একমাত্র মানুষ চরিত্র),
শেয়াল ( বনের পন্ডিত, চশমা চোখে, পুঁথি বগলে)
দুই ইঁদুর ( আরো অনেক ইঁদুরের ভীড়ে এই দুজনের চরিত্র প্রধান, তারা শেয়াল পন্ডিতের ছাত্র এবং চামচা)
বানর ( আরো অনেক বানরের ভীড়ে তাকেই কথা বলতে দেখা যাবে। একটু খুঁতখুঁতে খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস, সব কথায় বাগড়া দেবার অভ্যাস)
ভালুক ( ভোলাভোলা টাইপ)
সিংহ ( বনের মুরুব্বী)
হরিণ (লাজুক, সহজ সরল)
হাতি ( গম্ভীর প্রকৃতির)
বাঘ ( বনের মুরুব্বী, বয়স্ক)
ময়ূর ( সুন্দরী, সাজুগুজু করা টাইপ)
এছাড়া আছে আরো নানাবিধ প্রাণী, উপরোক্তদের মুখে সংলাপ শোনা যাবে বলে তাদেরকে আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে।

শিয়াল-পন্ডিত।। ( হাতে একখানি প্রাচীন পুঁথি, নাকের ডগায় চশমা পড়ো পড়ো, মেঘমনির খাটের চারপাশে ঘুরে ঘুরে পুঁথি দেখতে দেখতে)
তাইতো, তাইতো, শাস্ত্র বলে কথা
বুঝিতে পারে শুধু পন্ডিতের মাথা।
উ-কারে গিলি গিলি, গিলি গিলি গিলি
অংকার ঝংকার অনুস্বরে মিলি।
দেখো দেখো বর্ণে বর্ণে মিলে যায় সব
( প্রাণীদের মধ্যে একটুখানি গোলমালের আভাস)
আহা! আহা! থাম সবে , চুপ কলরব।
ভাবিতে দাও সবে, ভাবনা বড়ো সূক্ষ্ম

দুই-ইঁদুর।। (সমস্বরে) ভাবনা ছাড়া মিথ্যা জগত, ভাবনাটাই মুখ্য।।

শিয়াল-পন্ডিত।। শাস্ত্রের বাঁধনে বাঁধা জগতের রীতি
শাস্ত্র বিনা সুখ নাই, নাই ন্যায় নীতি।
শাস্ত্রের চক্রে ঘুরে চন্দ্র আর তারা
ছত্রে ছত্রে কঠিন নিয়ম কঠোর বোঝাপড়া।
এই দেখো লেখা আছে, তেরে কেটে হিং
আ-কার অ-কার তাক ধিনা ধিং।
বুঝিতে পেরেছো তো, ওহো মূর্খের দল-

বানর ।। বলিতে পারি মশায়, যদি দেন বল।।

দুই-ইঁদুর।। ঐ দেখ শাস্ত্র অজ্ঞ কি বলিতে কি বলে
মূল কথা যাবে মারা মূর্খামীর ফলে।।

ভালুক।। তা, ইয়ে, শাস্ত্রের কথা, সে বড়ো মিষ্ট
আহা আহা কি যে মধুর নিদারুন সৃষ্ট।
বুঝতে পারি, বুঝতে পারি , বুঝবারিতো কথা
তবে কিনা কচু খেয়ে গলায় কেমন ব্যথা।
তাই বলি, শেয়াল ভায়া, বরং থাকি চুপ
জানোইতো , নিস্তদ্ধতা বড়ই অপরূপ।।

শিয়াল-পন্ডিত।। হুঁ হুঁ শাস্ত্রে শুধু মিষ্ট নয় হে , মুরগীর মতই পুষ্ট
শাস্ত্র বিনা আর কথা নাই, শাস্ত্র নিয়াই তুষ্ট।।

সিংহ।। বাপু এবার শাস্ত্র রাখো, অনেক বেলা হলো
কি মানে এর , বিত্তান্ত কি, অল্প কথায় বলো।।

শিয়াল-পন্ডিত।। কি মানে আর, এই তো লিখা চিরকি-মিরকি-কার

দুই-ইঁদুর ।। জলের মতো বুঝা গেল, দারুন পরিস্কার।।

শিয়াল-পন্ডিত।। তাইতো বলি, ভাব, ভাব, ভাবনা বড়ো সূক্ষ্ম

দুই-ইঁদুর।। ভাবনা ছাড়া মিথ্যে জগত, ভাবনাটাই মুখ্য।।

বাঘ।। ভাগ্নে, বাপু, আর বলিসনে, শাস্ত্রের ঐসব বাক্য
আমি বুড়ো, নড় বড়ে দাঁত, সিংহ মামাই সাক্ষ্য।।

শিয়াল-পন্ডিত।। গ্রহ-নক্ষত্র বিচার করি শাস্ত্র ছুঁয়ে ভালে
বলেছিলুম আগে ভাগে চৈত্র মাসের কালে।
বলেছিলুম আসবেন উনি, ইনিই হলেন তিনি
শাস্ত্র মতে বিচার করে নিয়েছি তবে চিনি।
চিকেনামৃত বইয়ের রোস্ট নামক খন্ডে
সহজ ভাষায় লিখা আছে, পড়ছি এক দন্ডে।
তিরিং বিরিং গিলটি পিলটি আলা গালা গোঁ
লোভা লোভা গিরমুরা সব ডাকছে কোঁকর কোঁ।।

দুই-ইঁদুর।। চিকেনামৃতের কথা বিস্কুটের সমান
শেয়ালপন্ডিতে ভনে, শুনে পূণ্যবান।।

হরিণ।। না না বাবা, আর পারিনা, শাস্ত্র বাক্য জোরে
নাজুক আমি, ছোট্ট মাথা, ভীষন রকম ঘোরে।
বুঝিয়ে বলেন পন্ডিত মশায়, বুঝিয়ে বলেন সবে

সকলে।। (সমস্বরে) না বুঝালে শাস্ত্র বাক্য মাঠেই মারা যাবে।।
বুঝিয়ে বলেন পন্ডিত মশায়, বুঝিয়ে বলেন সবে
না বুঝালে শাস্ত্র বাক্য মাঠেই মারা যাবে।।

শিয়াল-পন্ডিত।। আহা, আহা, বলছিইতো, ধৈর্য ধরে শোনো
চারদিকে মূর্খ সকল, আচ্ছা রকম বুনো।
চিকেন সংহিতা গ্রন্থে লিখাই আছে পষ্ট
বুঝতে পারি ধ্যানের বলে, একটুও নাই কষ্ট।
সব আলামত ঠিক মিলেছে, যেমন ছিলো বানী
ইনিই হলেন, আকাংখিত , মোদের দেশের রানী।।

দুই-ইঁদুর।। (আবেগে গদগদ) চিকেন সংহিতার কথা শুটকীর সমান
শিয়াল পন্ডিতে ভনে, শুনে পূণ্যবান।।

বানর।। এ্যাঁ এ্যাঁ বল্লেই হলো, রাজা কোথায় তবে?
রাজা ছাড়া রানী কোথাও আছে এই ভবে?

সকলে।। তাইতো তাইতো বলো দেখি কে শুনেছে কবে?
রাজা ছাড়া রানী কোথাও আছে এই ভবে?

শিয়াল-পন্ডিত।। যেমন তেমন রানী হলে এই অনুমান সত্য
এই খানেইতো শাস্ত্র মতো দিতে হবে তথ্য।
বলো দেখি লাল না হয়ে আকাশ কেন নীল
ভক্ষকে আর রক্ষকেতে হয়না কেন মিল?
আর থাকতে সব এত প্রাণী শেয়াল শুধু জ্ঞানী,
বেড়ে গেলে বয়স অতি, চোখেই পড়ে ছানী?
পেটটি ভরে উঠলে খেয়ে পায়না কেন খিদে,
বক্ররেখা বাঁকাই থাকে, সরল রেখা সিধে?
চক্ষে কেন কেউ দেখিনা বেজায় গেলে ঘুম
গরমকালে ভীষন গরম, শীতে শীতের ধুম?
আছে যারা জ্ঞানী গুনি জানে তো সব্বাই
অনন্য যে, এ জগতে তুলনা তার নাই।
চিকেনামৃত আর সংহিতার মতে
আমাদের যে রানী, তিনি অনন্য জগতে।।

দুই-ইঁদুর।। (ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে) চিকেনামৃতের কথা, বিস্কুটের সমান
শেয়াল পন্ডিতে ভনে, শুনে পূন্যবান।
চিকেন সংহিতার কথা, শুটকীর সমান
শেয়াল পন্ডিতে ভনে, শুনে পূন্যবান।।


ক্রমশঃ-----------------------------

ছবিসূত্র: ডিজনীর কার্টুন Winnie_the_Pooh, গুগল হতে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৩:৪৬
৫৯টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×