somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেউ কি জানবেন আমাদের জন্য আম্বিয়া আপা কে?

১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম্বিয়া আপার সম্মান রক্ষা করা গেল না! আপার মত মানুষ শেষ পর্যন্ত এই নোংরা ঘোর প্যাচে পড়ে গেলেন? কালকে আপাকে যখন অভিবাদন দিচ্ছি আপা বলছিলেন, "আমি তো এইসব চাটুকারিতা পারি না!" আমি বললাম, "আপা আপনি যেমন আছেন, ঠিক তেমনি আমাদের আপনাকে দরকার!" এত বছর ধরে আপাকে বলা হয়েছে, কখনো আপা এই পদে আসতে চান নাই । সেই আপা আমাদের জন্য দায়িত্ব নিয়ে আজকে আবার আমাদেরই জন্য ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন...

কি কারন?? আম্বিয়া আপাকে জামায়াতী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে! ভিকারুন্নিসার প্রতিটা মেয়ে ক্ষোভে বাকরুদ্ধ! আপা আল্লাহভীরু একজন স্বচ্ছ চিন্তার মানুষ, যিনি তার দৃঢ় মনোবল এবং অসাধারন ব্যক্তিত্বের জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে প্রিয়। তিনি আমাদের শিক্ষকদের শিক্ষক, ১৯৭৭ সাল থেকে ভিকারুন্নিসার সাথে জড়িত যে মানুষটি তাকে আজকে এত সহজেই একটা ঘৃণ্য রাজনৈতিক দলের বলে আখ্যায়িত করা হল?? একজন মানুষ হিজাব পড়লেই দেশদ্রোহী হয়ে যাবেন??
আমি নিজে পারলে দুই চারটা রাজাকার খুন করে আসি, সেই আমি বলছি, আম্বিয়া আপা কোন দলের না, তিনি কেবলমাত্র আমাদের স্কুলের, তিনি আমাদের , আমাদের আদর্শ!!

কেউ কি জানতে চেয়েছেন আমাদের কাছে, আম্বিয়া আপা কে? তিনি আমাদের জন্য কি ভূমিকা রাখেন??

আমি প্রথম যখন কলেজে যাই, অঙ্ক কিছুই বুঝতাম না, যাই দেখি মাথার উপর দিয়ে যায়! আম্বিয়া আপার ক্লাস এ বসে হু হু করে কাপি! আপা যদি কিছু জিগেশ করেন, আর আমি যদি না পারি?? কি দুর্দান্ত মানুষরে বাবা! একটা ঝাড়ি দিলে তো আগে পিছে যা জানি তাও ভুলে যাব!
আত্মা কাপাকাপি দশা নিয়ে আপার কাছে পড়তে গেলাম!

এক দুইদিন ক্লাস করেই হতবাক! আরে এই আপা কি সেই আপা?? ক্লাস ছেড়ে করিডোরে দৌড়ে ছুটে যিনি ক্লাস bunk করা মেয়েদের ধরে নিয়ে আসেন, তার সাথে এই মানুষটাকে মিলানো যায়? কি ভাবে আসলাম, সন্ধ্যায় বাসায় কিভাবে যাব, দুপুরে খেয়ে ক্লাস করতে গেলাম কিনা - এত গুলো ছাত্রির প্রতিটা বিষয়ে বার বার খোজ খবর রাখছেন!
"আমি আম্বিয়া খাতুন! আল্লাহ ছাড়া কাউরে ভয় পাই না, বুঝস?? "
আপার এই শক্ত খোলসটার ভিতরে কি অসাধারন মমতাময় একটা মানুষ লুকিয়ে আছে, সেটা ক্লাস এর বাইরে যারা আপাকে দেখে নাই, তাদের খুব কম অংশ জানে।

বুয়েটে চান্স পেয়ে আপার বাসায় মিষ্টি নিয়ে গেলাম যেদিন আপা এত খুশি। সালাম করতে দিলেন না, জড়ায়ে ধরলেন, "আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নিচু করবা না!" কি মনে হয় আপনার, কেউ নিজের সামনে মানুষের মাথা নিচু দেখার সুযোগ এত সহজে ছেড়ে দেয়?? সারাজীবন শুনে আসছি, সালাম করলে মুরুব্বিরা নাকি খুশি হন। একী আলামত??
খাবার টেবিলে বসে নিজের হাতে আপা কমলালেবু ছিলে খাওয়ালেন! আমরা ঘণ্টাখানেক ভিকারুন্নিসার পড়াশুনা discipline নিয়ে আলোচনা করলাম! আপার সাথে মনে হয় এই একটা বিষয়ে সব সময় একমত হইতাম, discipline মানতেই হবে, আমি নিজেও সারা স্কুল জীবন মেয়েদের জ্বালায়ে আসছি!

সেই আম্বিয়া আপাকে তো ভুলেই গেসিলাম! ভার্সিটি লাইফে ঝাঝরা হয়ে যাচ্ছি প্রতিটা দিন! এর মধ্যে শুনি সেই ভয়ঙ্কর খবর! আমাদের ক্যাম্পাস পর্যন্ত এখন মেয়েদের জন্য safe না! হাজার হাজার মেয়েরা রাস্তায় নেমে আসল, একটা মেয়ের সম্মান আদায়ের আন্দোলনে!সবাই চায় জন্তুটার ফাসি হোক, তাকে ছায়া দিয়ে রাখা মহিলা অধ্যক্ষ পদ থেকে বিদায় হোক! একটা মেয়ের সম্মান যে বুঝে না, সে ১৬০০০ মেয়েকে কি protection দিবে? আমাদের টিচাররা ছাড়া আমাদের মেয়েদের কে বুঝবে? যারা ১২ টা বছর নিজের মেয়ে মনে করে আমাদের লালন পালন করে আসছেন, তারা ছাড়া আমাদের আপন কে আছে?

ওই আসলেন আমাদের টিচাররা, ১১ তারিখ সব টিচাররা আমাদের আন্দোলনে যোগ দিলেন। ১২ তারিখের সমাবেশে অনেকদিন পর সবাইকে দেখলাম! ওই যে আম্বিয়া আপা! কি দৃঢ়ভাবে বলছেন আমাদের মনের কথাগুলো! আচ্ছা আপা কি এখন আমাকে চিনবেন??
মগ্ন হয়ে ছবি তুলছি! হঠাত হাতের মধ্যে একটা থাপ্পড়! বিষম বিরক্ত হয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি আম্বিয়া আপা! "এই মেয়ে! কি খবর তোমার?? এত মোটা হয়ে গেস কেন??"
এতটাই অভিভূত হয়ে গেলাম, কত কিছু বলতে চাইলাম! সব একসাথে ভুলে গেলাম!!

১৩ জুলাই! সকাল বেলা হঠাত খবর! আম্বিয়া আপা নতুন প্রিন্সিপাল! পরের পরীক্ষার জন্য পড়তে বসব বসব করছি, যাব কি যাব না?? ৭মিনিট চিন্তা করলাম!আমি না গেলেই কি? আচ্ছা, যাই, বাসায় তো কত ঘন্টাই নষ্ট হয়!!
সব ছেড়ে ছুড়ে এক দৌড়! কেউ কলেজ যাইতে চায় না! তাইলে? তাইলে হাটি! হেটে হেটে কলেজে গেলাম! আপার রুমে বিশাল ভীড়! সবাই লাফাচ্ছে! চিল্লাচ্ছে! আপা বলছেন, "মেয়েরা, সবাই কিন্তু control এ থাকবা! সহিংসতার যাবা না, আমরা তোমাদের সাথে আছি।"
কেউ কাউরে যায়গা দেয় না! আমি তো সিভিল ড্রেস এ, হাতে dslr, সবাই ফটোগ্রাফার মনে করেই কিনা জানি না, আমাকে জায়গা ছেড়ে দিল! পুরা রুমে তখন আমি একমাত্র সিভিল ড্রেস এ! তার মানে পুরানো মেয়েরা কেউ তখনো পৌছায় নাই! আপা আমাকে দেখেই একটা অসাধারন হাসি দিলেন, "তুমি আসছ?" সেই মুহূর্তে আমার মনে হল, যদি আমি না যেতাম, হয়ত বিশাল একটা জিনিস হারাইতাম!
পা ভর্তি ব্যাথা আর মন ভর্তি তৃপ্তি নিয়ে ফেরত আসলাম! এইবার আমার কলেজ একটা শক্ত, নীতিবান হাতে পড়সে, আমরা আবার হারানো গৌরব ফিরে পাব!
মনের আনন্দে ঘুম দিলাম! বিকালে উঠে পড়তে বসব!
সন্ধার সময় শুনি আম্বিয়া আপার অপ্সারনের দাবি তুলছে হোস্নে আরা! এই মহিলার কি লজ্জা নাই??
অভিভাবক এবং ছাত্রীদের "এক অংশের" দাবিতে নাকি আপাকে প্রিন্সিপাল করা হইসে! এক অংশ, হা, আসলেই! যদি সংখ্যাটাই এক হয় তাহলে সেই এক এর এক অংশের দাবিতেই আপা প্রিন্সিপাল!

১৪ জুলাই সারাটা দিন অশান্তি! মেয়েরা ক্যাম্পাসের সমস্ত গেটে তালা দিয়ে রাখসে, হোস্নে আরাকে ঢুকতে দিবে না! এরপরও কেউ বুঝে না, আম্বিয়া আপা আমাদের জন্য কি??
আপাকে শিক্ষা বোর্ডে খবর দেয়া হল, আপা গিয়ে বলে আসলেন, নাহ আমি অধ্যক্ষ না! জানেন কি মনে করে?? শুধু মাত্র আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে!অধ্যক্ষ পদের প্রস্তাবকে বার বার ফিরিয়ে দেয়ার এত বছরের সাধনা, আপা কাল ধুলিস্যাত করেছিলেন আমাদের একটা নিরাপদ ভবিষ্যতের সূচনা করার জন্য! আজকে আবার সেই আপাই আমাদের জন্য সবকিছু ফিরিয়ে দিলেন, একবার নিজের উপর আসা ঝড়টার সাথে যুদ্ধও করলেন না!


কেউ কি এরপরেও বুঝবেন আপা আমাদের জন্য কি??
বুঝার দরকার নাই থাক!

খালি আপসোস, সামনে গিয়ে আপাকে বলতে পারলাম না,
আপা আমরা আপনার অযোগ্য সন্তান! আমাদের ক্ষমা করে দিন

[ এই ব্লগটা অনেকদিনের জন্য সরিয়ে দিয়েছিল সামু থেকে। পরে ফেরত পেয়ে ড্রাফট করে রাখি। আজ আবার পোস্ট করলাম! ]


------------------
আরো কিছু মেয়েদের লেখা
Click This Link
Click This Link
Click This Link

এবং কালকের ঘটনার সত্যতা
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

মেয়েটার অভিযোগের চিঠি
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৫৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×