somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজান এলো বলে... (১)

২৫ শে আগস্ট, ২০০৭ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর মোটামোটি দু'সপ্তার মাথায় রোজা শুরু। রমজান। সেই পিচ্চিকাল থেকে আমার খুবই প্রিয় সময়টুকু। প্রথম রোজা রেখেছি বোধ হয় পাঁচ বছর বয়সে। মধ্যরাতে, বাইরে অন্ধকার থাকতে উঠে খেয়ে দেয়ে আবার ঘুমিয়ে যাওয়া, তারপর সারা দিন না খেয়ে থাকা, সন্ধ্যার সময় প্লেইট ভর্তি খাবার আর শরবতের গ্লাস সামনে নিয়েও শুকনো ঠোঁটে বসে উৎকর্ণ হয়ে আজানের জন্য অপেক্ষা করা--পুরা ব্যাপারটায় এক ধরণের হিরোইজম ছিল, বড় বড় ভাব ছিল। রোজা রাখতে চাওয়ার পরেও না রাখতে দিলে তো হয়েছে, আগুনই জ্বালিয়ে দিতাম।

মাসটা আবার আসছে। এখনও খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছি রমজানের জন্য। তবে আমার এখনকার আগ্রহ আর পিচ্চিকালের আগ্রহের কারণে আকাশ পাতাল তফাৎ।

রোজা মানে যে আমার কাছে কি সেটা কেউ নিজে উপলব্ধি করলে বুঝিয়ে বলা সত্যিই কঠিন। এখন তো আর সেই পিচ্চিকাল নেই, রোজা রাখায় কোন হিরোইজম নেই। আবার 'রোজা রাখতেই হবে' কেউ বলে দিবে, সেই বয়সটাতেও নেই। বরং সারাদিনই হয়তো ইউনিতে থাকব, পরীক্ষার জন্য চিন্তিত থাকব, লেকচারের ফাঁকে ফাঁকে এক কাপ কফি বা হট চিপস গিলে নিয়ে ব্রেইনটাকে চালু রাখাই সুবিধাজনক। সারাদিন বন্ধুদের কেউ হয়তো টেরও পাবে না আমি রোজা। তবু, রোজার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি, করছি।

মাঝে মাঝে হয় না, মনে হয় খুব বেশি হাঁটছি, চলছি, ছুটছি, কোন দিকে, কোন লক্ষ্যে, কিভাবে, কেন চলছি, ছুটছি না জেনেই এই ছুটাছুটি, বা মাঝপথে গিয়ে ভুলে যাওয়া ছুটাছুটির কারণ... টাকার জন্য জীবন না জীবনের জন্য টাকা--এই টাইপের প্রশ্নগুলো তাই তখন ধাক্কা দিতে পারে। মানুষ বলেই আমাদের সময়গুলো আসে। এই মাসটা একটা সময় যেসময় নিজেস্ব সত্ত্বার খুব কাছাকাছি যেমন আসি, স্রষ্টার সত্ত্বারও খুব কাছাকাছি চলে আসি। নিজের সত্ত্বার কাছাকাছি কথাটা অনেকের কাছেই কনফিউজিং লাগতে পারে। নিজের সত্ত্বার কাছাকাছিই তো... নিজেকে আরেকটু চেনা, চিন্তা ভাবনার স্পষ্টতা পাওয়া। পড়াশোনা, অর্থ উপার্জনের চিন্তা, কিংবা নেহায়ত বিনোদনের জন্য ব্লগ কিংবা টিভি ছেড়ে বসে থাকাটাই সার হয় অনেক সময়... কেমন যেন নিজের সত্ত্বা থেকেই দূরে সরে যাওয়া হয়। যন্ত্র যন্ত্র একটা ভাব চলে আসে নিজের মধ্যে। রমজান এমন একটা মাস যখন নিজের আর 'নিজের' মধ্যের পর্দাটা আমার একটু একটু করে উঠে যায়। সারা দিন একটা 'সচেতন' অবস্থার মধ্যে কাটে, ঘোর লাগা যন্ত্র জীবন না। এই যে সচেতন হয়ে না খেয়ে থাকা সারাটা দিন, কারও সম্পর্কে হালকা বিরক্তি আসলেও সাথে সাথে ভেবে বসা, আচ্ছা, এই চিন্তাটা আল্লাহর অপছন্দ হবে না তো? প্রচন্ড রাগের সময়ও ক্ষোভের কথাটা টুপ করে গিলে ঝগড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজ ঘরে চলে যাওয়া। কিংবা কোন সুযোগে নিজের জমানো টাকার একটু অংশে কাউকে খাওয়ানোর ব্যবস্থার আত্মতৃপ্তি পাওয়া আর সারা বছর চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করা। কিংবা মাঝ রাতে খুব আরামের ঘুমটুকু ফেলে আল্লাহর সাথে কথা বলা, সুনসান নিরবতায়, সব তুচ্ছ চিন্তা থেকে অনেক দূরে... সমস্ত সত্ত্বায় যেই প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে বিধাতার ভালোবাসার দৃষ্টিতে, সেটা সেই উপলব্ধিতে সত্যিকারের অর্থপূর্ণ দিন কাটানো, সারাটা মাস। গত রমজানে সারা রমজানে টিভি চলে নি একদিনও, খবর শুনেছি হয়তো কয়েক দিন। তারপরে মনে হয়েছিল, জীবন থেকে এই ইডিওট বক্সটা উঠিয়ে দিতে পারলে অনেক সময় বেঁচে যেত। একটা রুটিনের মধ্যে চলা পুরা একটা মাস, আমার মত অগোছালো আর আলসে মানুষের জন্য এই রুটিনের অভ্যাসটা খুব বেশি দরকার!

আমি সত্যিকার অর্থে এখন বুঝি রমজান পরিশুদ্ধি কোন অর্থে। আর তীব্র ভাবে কামনা করি সেই বাৎসরিক পরিশুদ্ধি। নিজের আরেকটু কাছে এসে, যন্ত্র জীবনের আরেকটু দূরে গিয়ে সত্যিকার ভাবে সব কিছুতে স্পষ্টতা পাওয়া। আল্লাহকে স্পষ্টভাবে টের পাওয়া।

রমজানকে ঠিক সেভাবে পেতে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। আমি নিজে পারফেক্ট না মোটেই, প্রচুর দুর্বলতা, ভুলে ভরা মানুষ। তারপরেও, যেভাবে আগালে আমার নিজের উপকার হয়, রমজানকে সত্যিকার ভাবে উপভোগ করি, সেগুলোই একটু একটু করে তুলে ধরার চেষ্টা করব এই সিরিজের পর্বগুলোতে।

(চলবে হয়তো...)

-----------------------------
ছবিটা ফ্লীকার থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১৭
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×