somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়েব লগ: ছুটি, সত্যিকারের ছুটি

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বই, বই, বই
সারা বছর এত বেশি যান্ত্রিক থাকি যে ছুটিতে চূড়ান্ত রকমের নিয়ম ভঙ্গ করছি। সারাদিন বই পড়ছি। নয়টা বই পড়া হয়েছে এক মাসে। বেশির ভাগই ইংলিশ ক্ল্যাসিক। আমি শরতের ভক্ত, এখন জেইন অস্টেনের লেখায় আমি বাড়াবাড়ি রকমের শরতের স্পর্শ পাই। জরজিট হেয়ের, নতুন এক লেখকের সন্ধান পেয়েছি। উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে লিখতেন আঠারশ শতাব্দীর ইংল্যান্ড নিয়ে। জেইন অস্টেন কিংবা এমিলি বন্টের লেখায় তৎকালীন সমাজের সব সত্য উঠে আসে না। নারী লেখক ছিলেন তাঁরা। লেখকেরা কিছু নিয়ম ভঙ্গ করে, কিন্তু তবু, তখনকার সমাজের পুরুষদের মদাসক্তি, জুয়া এবং আরও অসংখ্য ব্যাপার যা আইন ফাঁকি দিয়ে চলতো, সমাজের উঁচু তলার প্রতিটা পুরুষ এগুলোতে জড়িয়ে থাকতেন, সেসব নিয়ে নারী লেখকেরা কখনও কিছু লিখতেন না। ওদের লেখা পড়ে তখনকার সমাজের পূর্ণ চিত্র পাওয়া তাই অসম্ভব। জরজিট হেয়ের অনেক পরে, তখনকার বাস্তবতাকে কলমে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন, প্রচেষ্টাটা অনেকটা সুনীলের পূর্ব পশ্চিম, রানু ও ভানু, প্রথম আলো ওগুলোর মত ঐতিহাসিক উপন্যাসের স্টাইলে মনে হয়েছে। ভীষণ ভালো লেগেছে। সুনীলের সবগুলো ঐতিহাসিক উপন্যাস আমি পড়েছি ক্লাস নাইনে (কি পাগলাটে সময় যে ছিল!), এখন ভালো লাগাটা নতুন করে ফিরে পাচ্ছি। আরেকটা বোধ খুব তীব্র করে ফিরে আসছে। পৃথিবীর প্রতিটা দেশে মানুষের চেহারা একদম এক!

ঘুরাঘুরি, উড়াউড়ি

ঘুরে বেড়াচ্ছি। বন্ধুদের সাথে। বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে রাতে রেখে দিচ্ছি। বন্ধুদের বাসায় গিয়ে থাকছি। প্রচুর দাওয়াতের আদান প্রদান চলছে। ঘুরে বেড়াচ্ছি, বাসার সবার সাথে। সেদিন মাত্র আসলাম কিয়ামার ওদিক থেকে, প্ল্যান করছিলাম মেলবোর্নে যাব। কিন্তু, যে কয়দিনে যেতে চাচ্ছিলাম, সে কয়দিন ওদিকে ৪০ ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রা থাকবে! এত তাপমাত্রায় যাওয়া মানে জেনে শুনে জাহান্নামের দরজায় বসে থাকে। কিন্তু না যাওয়া মানে... যাওয়ার আর সময় কই? সিদ্ধান্ত নিতে বাসায় একটা গোপন ব্যালটে ভোট হলো। দুইটা টিক, দুইটা ক্রস, আর একটা টিক ক্রস আসলো। ড্র হলো ভোট। সবাই জানত কে কি ভোট দিবে, কিন্তু গিয়ে ভোগা অথবা না গিয়ে পস্তানো, কোনটার দায়-ই কেউ নিজ ঘাড়ে নিতে চায় না! তাই যার ভোটে সিদ্ধান্ত হতো, সে টিক ক্রস দুইটাই এঁকে দিয়েছে। ভোট বাতিল করতে হলো! শেষ মেশ তুমুল হাসাহাসি তক্ক বিতক্কের পরে সিদ্ধান্ত হলো, আপাতত মেলবোর্ন যাওয়া হবে না। কিন্তু সিডনীর আশে পাশেই আমরা ঘুরে বেড়াবো। কারও কাছে সিডনীর খুব সৌন্দর্য কোন কোস্টাল রিজনের সন্ধান থাকলে, জানিয়ে যাবেন প্লীজ! যেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকা যায় সেখানে। চার দিনের জন্য চারটা জায়গার নাম দরকার আমার। আমার রক্তে মনে হয় যাযাবর রক্ত আছে, ঘুরাঘুরির জন্য খুব প্রান ছটফট করে!

মেয়েলী কাজ
সেলাই করছি। দুইটা কামিজ আর আরও কিছু হাবিজাবি বানিয়ে ফেলেছি। আরও কিছু হাবিজাবি বানানোর তালে আছি। বানাচ্ছি, আর ভাবছি, সেলাই জিনিসটা আমাদের সমাজে বড়ই অবহেলিত। 'মেয়েলী কাজ' তাই নিশ্চয় সহজ হবে! অথচ, এতে এত্ত হিসাব নিকাশ, কমন সেন্স আর ধৈর্যের ব্যাপার, ক্রিয়েটিভিটির ব্যাপার, প্রিসিশনের ব্যাপার... এক এক জন নানী দাদী, চাচী খালারা রীতিমত ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। কেউ বুঝল না!

"নেট=দি গ্রেইট এস্কেইপ"
সেমিস্টারের মাঝখানে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আরও দুইটা ব্রাউজারে সব সময় জিমেইল আর ব্লগ খোলা থাকত। এখন ছুটি অথচ, কম্পিউটারের ধারে কাছে আসছি না, তাই সব মিলিয়ে অনেকগুলো ইলেকট্রিসিটি আর গাছগাছালি বেঁচে যাচ্ছে মনে হয়! নতুন করে বোধ হচ্ছে--ইন্টারনেট না থাকলে মানুষের কাজ করার সময় দশগুণ বেড়ে যেত! কোথাও পালিয়ে যাওয়ার দরকার হলে আগে নেটের জানালায় উঁকি দিতাম। এখন পালানোর প্রয়োজন পড়ছে না!

এবং বই...
এবং অবশ্যই বই পড়ছি! দুপুরে হাতে বই নিয়ে, বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বই পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখ লেগে আসে... ওই যে, অক্ষরগুলো আস্তে আস্তে কেমন জড়িয়ে আসে, চোখগুলো ভারি হয়ে আসে। শুধু মনে হয়, আরেকটু পড়ে তারপরে ঘুমাবো। কিন্তু শরীর জুড়ে এত আলিস্য এসে ভর করে যে এক সময় হাতের বইটা খসে পড়ে... কিছু বুঝার আগেই স্বপ্নরাজ্যে উধাও। স্টাইল নিয়ে ঘুমানোর এই বিলাসিতাটুকু ভুলতে বসেছিলাম। কিংবা সারারাত বই পড়ে একবারে ফজর পড়ে ঘুমানো! ফাঁকিবাজির অপরাধবোধ ছাড়া, এতটা বেহিসেবী বই পড়ি নি কতদিন! ছুটি, ভালোই যাচ্ছে কেটে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:২২
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×