somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংক সার্ভিস

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম পূবালী ব্যাংকে, আমার একটা এফডিআর ছিলো সেটা ম্যাচিওর হয়েছে সেটা ভাঙাতে। আসাদ এভিনিউতে ব্রাঞ্চটা। ব্যাংকে ঢুকে এক জনকে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলো কোনের ডেস্কটা। এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। গিয়ে বললাম কি জন্যে এসেছি। আমাকে বসতে বললেন। তারপর হাতের কাজটা সেরে আমার কাগজটা নিয়ে কাজ শুরু করলেন।

দেখতে দেখতে সময় কাটতে লাগলো। আমি ভেবেছিলাম কতণই আর লাগবে কিন্তু যখন আধাঘন্টা হয়ে গেলো তখন টনক নড়লো আরে কাহিনী কি! আমাকে তো আরেকটা ব্যাংকে যেতে হবে। এখানেই ব্যাংকিং আওয়ার শেষ হয়ে গেলে চলবে কেমনে।

যতটুকু বুঝলাম তাদের কাজের কোন প্রসেস নেই। পুরনো সব ফাইল বের করতে লাগলেন, সবগুলোতেই পুরো ধুলো জমে আছে। মাঝে আমাকে আরেকটা ডেস্কে পাঠালেন। কাহিনী কি! আমার সাইন ভ্যারিফাই করার জন্যে। গেলাম, সাইন ভ্যারিফাই করে আবার তার ডেস্কে ফিরে এলাম। তিনি কাজ করেই যাচ্ছেন। সময় কেটেই যাচ্ছে। এক ঘন্টার মাথায় তার কাজ মোটামুটি শেষ হলো। আমাকে বললেন, পাঁচ টাকার একটা স্ট্যাম্প লাগবে। বললাম, কোথায় পাবো?
ক্যাশে পাবেন। নিয়ে আসেন।
গেলাম।

ক্যাশে অনেক ভীড়, কোনমতো কাছাকাছি পৌছে বললাম, আমার পাঁচ টাকার একটা স্ট্যাম্প লাগবে। দশটাকা বের করে দিলাম। বাজখাই গলায় লোকটা বলে উঠলো, পাঁচ টাকাই দিতে হবে। ওয়ালেট চেক করে পাঁচটাকা পেলাম না শেষে কয়েন বের করে দিলাম। তারপর তিনি যে কাজটা করলেন তাতে আমি পুরো থমকে গেলাম। কোথায় আছি আমরা, আমার দিকে স্ট্যম্পটা ছুড়ে দিলো লোকটা। যদিও সেটা পড়লো কাউন্টারেই, কিন্তু এ কি রকম সার্ভিস !

কিছু না বলে চলে এলাম। স্ট্যাম্পটা দিয়ে আবার ওয়েট করছি। শেষে আর বিশ মিনিট যাবার পর ভদ্রমহিলা বললেন, হয়ে গেছে। এইটা জমা দিয়ে ক্যাশ থেকে টাকা তুলে নেন।

গেলাম আরেক কাউন্টারে। চেকটা জমা দিলাম। আমাকে সে একটা টোকেন দিলো। তারপর ক্যাশের সামনে গিয়ে ওয়েট করছি। অনেকগুলো মহিলা জটলার মতো করে দাড়িয়ে আছে ক্যাশের সামনে।
আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরেক কাহিনী দেখতে লাগলাম। মহিলাগুলো অশিতি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। ক্যাশের লোকটা টাকা দিচ্ছে গুনে গুনে। এক মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো, কত টাকা? মহিলা বললো, তিরিশ হাজার। তখন সে চমকে যাবার মতো আরেক প্রশ্ন করলো। এত টাকা কেন?

মহিলা বোকার মতো হাসলো। ... এই তো আমার টাকা। লোকটা তিরিশ হাজার টাকা ছুড়ে দিলো মহিলার দিকে কাউন্টারে। সে টাকা নিয়ে চলেও গেলো।

তারপর আরেক লোক, টাকা তুললো প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মতো। তাকে দেওয়া হলো সব এক হাজার টাকার নোট। লোকটা অনেক অনুনয় করে বললো, ভাই একশো টাকার নোট দেন। দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে... ক্যাশের লোকটা অনেকটা দয়া করেই তাকে কিছু ভাঙতি দিলো।

আরেক লোক টাকা তুললো। তাতেও আরেক কাহিনী। সে তুললো এক লাখ। তাকে দুটো পাঁচশো টাকার বান্ডল ধরিয়ে দেয়া হলো না কাউন্ট করে। লোকটা বললো, আপনার তো মেশিন আছে একটু গুনে দেন, তাহলে তো আর আমাকে গুনতে হয়না। ক্যাশের লোকটা বললো, টাকা গুনাই আছে। নিয়ে যায়। আরেকবার রিকোয়েস্ট করাতে সে দয়া করে মেশিনে দিয়ে কাউন্ট করে দিলো।

শেষে আমি গেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কত টাকা? আমি বললাম, ৩৫৪০০। শুনে সে তাই বের করে দিলো। অবশ্য কাউন্টও করে দিলো। টাকা পেয়ে আমার মনে হলো, আমার তো পাবার কথা ৩৫৪০৯ টাকা। আবার সেই ভদ্রমহিলার কাছে গেলাম। বললাম, আমার মোট টাকার পরিমাণ টা আরেকবার বলবেন। তিনি দেখলেন, তারপর বললেন ৩৫৪০৯। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে তো ক্যাশ থেকে বাকী ৯ টাকা দেয়নি। কেন?

মহিলা উত্তর দিতে পারলেন না। ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো। নয় টাকা বড় ব্যাপার না, কিন্তু ইচ্ছে করে কম কেন দেবে?

আমি আবার কাউন্টারে গেলাম। তাকালাম ক্যাশের লোকটার দিকে। বাবার বয়েসি দাড়িওয়ালা একজন মানুষ। তাকে বললাম, আপনি আমাকে নয়টাকা কম দিয়েছেন।

শুনে তার কোন ভাবান্তর হলো না। বললো, ও তাই! তারপর আমাকে নয়টাকা বের করে দিলো। আমি আর কিছু বললাম না। সরে এলাম কাউন্টার থেকে।

বাংলাদেশে সার্ভিস এবং ভালো সার্ভিস পাওয়া খুবই কষ্টকর। ভালো সার্ভিস দেওয়াকে লোকজন হয়তো একস্ট্রা প্রিভিলেজ দেওয়া হলো ভাবে। কি আজিব।

শেষে ওখান থেকে গেলাম ব্রাক ব্যাংকে। যে ডেস্কে গিয়ে বসলাম সেখান থেকেই কাজটা শেষ হয়ে গেলো, সময় লাগলো দশ মিনিট। উজ্জ্বল লাইটিং পুরো অফিসে, বেটার সার্ভিস। আমি মনে মনে কমপেয়ার করলাম ব্যাংক দুটোকে। কি অদ্ভুত পার্থক্য এদের!
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×