গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম পূবালী ব্যাংকে, আমার একটা এফডিআর ছিলো সেটা ম্যাচিওর হয়েছে সেটা ভাঙাতে। আসাদ এভিনিউতে ব্রাঞ্চটা। ব্যাংকে ঢুকে এক জনকে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলো কোনের ডেস্কটা। এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। গিয়ে বললাম কি জন্যে এসেছি। আমাকে বসতে বললেন। তারপর হাতের কাজটা সেরে আমার কাগজটা নিয়ে কাজ শুরু করলেন।
দেখতে দেখতে সময় কাটতে লাগলো। আমি ভেবেছিলাম কতণই আর লাগবে কিন্তু যখন আধাঘন্টা হয়ে গেলো তখন টনক নড়লো আরে কাহিনী কি! আমাকে তো আরেকটা ব্যাংকে যেতে হবে। এখানেই ব্যাংকিং আওয়ার শেষ হয়ে গেলে চলবে কেমনে।
যতটুকু বুঝলাম তাদের কাজের কোন প্রসেস নেই। পুরনো সব ফাইল বের করতে লাগলেন, সবগুলোতেই পুরো ধুলো জমে আছে। মাঝে আমাকে আরেকটা ডেস্কে পাঠালেন। কাহিনী কি! আমার সাইন ভ্যারিফাই করার জন্যে। গেলাম, সাইন ভ্যারিফাই করে আবার তার ডেস্কে ফিরে এলাম। তিনি কাজ করেই যাচ্ছেন। সময় কেটেই যাচ্ছে। এক ঘন্টার মাথায় তার কাজ মোটামুটি শেষ হলো। আমাকে বললেন, পাঁচ টাকার একটা স্ট্যাম্প লাগবে। বললাম, কোথায় পাবো?
ক্যাশে পাবেন। নিয়ে আসেন।
গেলাম।
ক্যাশে অনেক ভীড়, কোনমতো কাছাকাছি পৌছে বললাম, আমার পাঁচ টাকার একটা স্ট্যাম্প লাগবে। দশটাকা বের করে দিলাম। বাজখাই গলায় লোকটা বলে উঠলো, পাঁচ টাকাই দিতে হবে। ওয়ালেট চেক করে পাঁচটাকা পেলাম না শেষে কয়েন বের করে দিলাম। তারপর তিনি যে কাজটা করলেন তাতে আমি পুরো থমকে গেলাম। কোথায় আছি আমরা, আমার দিকে স্ট্যম্পটা ছুড়ে দিলো লোকটা। যদিও সেটা পড়লো কাউন্টারেই, কিন্তু এ কি রকম সার্ভিস !
কিছু না বলে চলে এলাম। স্ট্যাম্পটা দিয়ে আবার ওয়েট করছি। শেষে আর বিশ মিনিট যাবার পর ভদ্রমহিলা বললেন, হয়ে গেছে। এইটা জমা দিয়ে ক্যাশ থেকে টাকা তুলে নেন।
গেলাম আরেক কাউন্টারে। চেকটা জমা দিলাম। আমাকে সে একটা টোকেন দিলো। তারপর ক্যাশের সামনে গিয়ে ওয়েট করছি। অনেকগুলো মহিলা জটলার মতো করে দাড়িয়ে আছে ক্যাশের সামনে।
আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরেক কাহিনী দেখতে লাগলাম। মহিলাগুলো অশিতি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। ক্যাশের লোকটা টাকা দিচ্ছে গুনে গুনে। এক মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো, কত টাকা? মহিলা বললো, তিরিশ হাজার। তখন সে চমকে যাবার মতো আরেক প্রশ্ন করলো। এত টাকা কেন?
মহিলা বোকার মতো হাসলো। ... এই তো আমার টাকা। লোকটা তিরিশ হাজার টাকা ছুড়ে দিলো মহিলার দিকে কাউন্টারে। সে টাকা নিয়ে চলেও গেলো।
তারপর আরেক লোক, টাকা তুললো প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মতো। তাকে দেওয়া হলো সব এক হাজার টাকার নোট। লোকটা অনেক অনুনয় করে বললো, ভাই একশো টাকার নোট দেন। দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে... ক্যাশের লোকটা অনেকটা দয়া করেই তাকে কিছু ভাঙতি দিলো।
আরেক লোক টাকা তুললো। তাতেও আরেক কাহিনী। সে তুললো এক লাখ। তাকে দুটো পাঁচশো টাকার বান্ডল ধরিয়ে দেয়া হলো না কাউন্ট করে। লোকটা বললো, আপনার তো মেশিন আছে একটু গুনে দেন, তাহলে তো আর আমাকে গুনতে হয়না। ক্যাশের লোকটা বললো, টাকা গুনাই আছে। নিয়ে যায়। আরেকবার রিকোয়েস্ট করাতে সে দয়া করে মেশিনে দিয়ে কাউন্ট করে দিলো।
শেষে আমি গেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কত টাকা? আমি বললাম, ৩৫৪০০। শুনে সে তাই বের করে দিলো। অবশ্য কাউন্টও করে দিলো। টাকা পেয়ে আমার মনে হলো, আমার তো পাবার কথা ৩৫৪০৯ টাকা। আবার সেই ভদ্রমহিলার কাছে গেলাম। বললাম, আমার মোট টাকার পরিমাণ টা আরেকবার বলবেন। তিনি দেখলেন, তারপর বললেন ৩৫৪০৯। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে তো ক্যাশ থেকে বাকী ৯ টাকা দেয়নি। কেন?
মহিলা উত্তর দিতে পারলেন না। ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো। নয় টাকা বড় ব্যাপার না, কিন্তু ইচ্ছে করে কম কেন দেবে?
আমি আবার কাউন্টারে গেলাম। তাকালাম ক্যাশের লোকটার দিকে। বাবার বয়েসি দাড়িওয়ালা একজন মানুষ। তাকে বললাম, আপনি আমাকে নয়টাকা কম দিয়েছেন।
শুনে তার কোন ভাবান্তর হলো না। বললো, ও তাই! তারপর আমাকে নয়টাকা বের করে দিলো। আমি আর কিছু বললাম না। সরে এলাম কাউন্টার থেকে।
বাংলাদেশে সার্ভিস এবং ভালো সার্ভিস পাওয়া খুবই কষ্টকর। ভালো সার্ভিস দেওয়াকে লোকজন হয়তো একস্ট্রা প্রিভিলেজ দেওয়া হলো ভাবে। কি আজিব।
শেষে ওখান থেকে গেলাম ব্রাক ব্যাংকে। যে ডেস্কে গিয়ে বসলাম সেখান থেকেই কাজটা শেষ হয়ে গেলো, সময় লাগলো দশ মিনিট। উজ্জ্বল লাইটিং পুরো অফিসে, বেটার সার্ভিস। আমি মনে মনে কমপেয়ার করলাম ব্যাংক দুটোকে। কি অদ্ভুত পার্থক্য এদের!