somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সার্ভিস ও কিছু কথা -প্রথম পর্ব

২০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস থেকে বের হব, তখন আমার কলিগ বললো, আপনি কি সরাসরি বাসায় যাবেন?
আমি বললাম, হ্যা যাবো।

শুনে তার মুখ হাসিতে ভরে গেলো, বললো, আর কোন কাজ আছে জরুরী?
তার কথার ভাব ভঙ্গি দেখে আমার মনে সন্দেহ হল। কাহিনী কি!
ভয়ে ভয়ে বললাম, হ্যা সরাসরি বাসায় যাবো।
শুনে সে আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিলো। বললো, কষ্ট করে রাজলক্ষীর এসসিবি তে জমা করে দেবেন।

আমি বললাম, ভাই আমারে মাফ করেন, এইটা পারবো না। এই জিনিস আমি আগে জমা দিই নাই।

শুনে সে বললো, কোন সমস্যা নাই। আমি আপনাকে ভালোমতো প্রসেস বুঝিয়ে দিচ্ছি। প্রথমে ব্যংকে ঢুকবেন। গার্ডের কাছে বলবেন, ক্রেডিট কার্ডের বিল চেকে জমা দেব। আপনাকে দুই পাতার একটা ফর্ম দেবে। সেইটা ফিলআপ করে এটার সাথে করে কাউন্টারে জমা দেবেন। সো ইজি।
আমি বললাম, আচ্ছা দেন।

তারপর নামলাম বাস থেকে রাজলক্ষী। রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখি ভয়ানক অবস্থা, পারই হওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে এক বাস আরেক বাসের সাইড মিরর ভেঙে ফেললো ধাক্কাধাক্কি করে।

এসসিবির ইভিনিং ব্যাংকিং আছে। ঢুকলাম ব্যাংকে। গার্ডকে বললাম, ক্রেডিট কার্ডের বিল দেব চেক এ। ফর্ম কোনটা। সে আমাকে বাইরের এটিএম দেখিয়ে বললো, ওখানে জমা দেন।

আমি গেলাম এটিএম এ। গার্ডকে বললাম একই কথা। সে শুনে মাথা নাড়লো। বললো, এইটা তো এখানে না। ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
আবার ব্যাংকে গেলাম। গার্ডকে আবার বললাম। সে তখন বললো, ও ক্রেডিট কার্ডের বিল! আগে তো বলেন নাই। আমার হাতে সে একটা ফর্ম ধরিয়ে দিলো। আমি গার্ডেও দিকে তাকিয়ে বললাম, আগেই বলেছি। আপনি শোনেন নাই।

তারপর দেখলাম দুইটা লাইন। আবার জিজ্ঞেস করলাম, কোন লাইন এটা জমা দেবার জন্যে?
সে আমাকে দ্বিতীয় লাইনটা দেখিয়ে দিলো।

আমি দাড়ালাম কিউতে। প্রায় দশ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পর আমি গেলাম কাউন্টারে। অফিসার আর ফর্মটা দেখে বললো, এখানে কথায় লিখতে হবে। আর এটা জমা দেন ওই বক্সে।

আমি ভাবলাম নিয়ম সম্ভবত তাই। গেলাম বক্সের কাছে, কিন্তু ড্রপ করার আগে আবার ফোন করলাম কলিগকে। সে শুনে বললো, এটা তো হবার কথা না। আপনি আরেকবার খোঁজ নেন। কাউন্টারেই তো জমা নেয়।

আমি আবার কাউন্টার যেতেই আরেক গার্ড এগিয়ে এলো এক্সকিউজ মি বলে। তাকে বললাম, যে আমি অফিসারের সাথে আরেকবার কথা বলবো। কাউন্টার খালি, সে তখন ডেস্ক থেকে উঠে গেছে।

আমার হাতের কাগজ দেখে ব্যাংকেরই আরেকজন এগিয়ে এলো। বললো, হ্যা এইটা তো কাউন্টারে জমা দিতে হবে। গার্ড বললো, না এইটা বক্সে ফেলতে হবে। আজিব ব্যাপার!

কয়েকমিনিট পর অফিসার আবার এলো। আমি তাকে বললাম, এটার নিয়ম কি?
আপনারা কাউন্টারে জমা নেননা নাকি এখন নেবেন না।
সে বললো, এটা বক্সেই ড্রপ করতে হবে। এটাই নিয়ম।
আমি শেষে বক্সে জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে এলাম। সময় লাগলো প্রায় পনেরো মিনিট।

এই প্রসঙ্গটা বলার পেছনে কারণ আছে। আমি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এই জিনিসটা দেখি। প্রথম কথা হচ্ছে, এসসিবি হচ্ছে বাংলাদেশের টপ মোস্ট একটা ব্যাংক। কিন্তু আপনি সেই ব্যাংকে গেলে কে আপনার কোয়ারী শোনে? একজন গার্ড। ইনফর্মেশন ডেস্ক থাকে ডে টাইমে, ইভিনিং এ মাত্র দুইজন বা তিনজন।

ঠিক আছে গার্ড থাকে। কিন্তু একজন গার্ড যখন ইনফর্মেশন প্রভাইড করে তখন তাকে অবশ্যই কিছু জানতে হবে। কারণ ইনফর্মেশন ডেস্কের বদলে এখন সে সার্ভিস দিচ্ছে। সে তো জানেই না কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয়! যাও ইনফর্মেশন দেয় সেটাও ভুল। যদি এই লোকটা প্রথমেই জানতো যে এটা এখানেই ড্রপ করতে হবে। কাউন্টারে যাবার দরকার নেই তাহলে কাজটা দু মিনিটে হয়ে যেতো।

তাছাড়া আমি যে কারণে বলছি, যে ব্যাংকে কত টাইপের কাজ হয় বলতে পারেন? শুধু ইনফর্মেশনের কথা বলছি। কেউ টাকা জমা দেবে, কেউ টাকা তুলবে, কেউ ইনকোয়ারী করবে, তাও কিন্তু একটা সংখ্যা আছে। হতে পারে জেনারেল একশটা কোয়ারী আছে। আর ধরে নিলাম গার্ডটা এখানে মিনিমাম পাঁচ মাস ধরে আছে। তার মানে হচ্ছে গত পাঁচ মাস ধরে সে একই ধরণের কাজ দেখছে প্রতিটি দিন। আমার ধারণা একটা গাধারও সেটা মুখস্থ হয়ে যাবার কথা। তার হয়নি কেন?

প্রথম কারণ হচ্ছে, সে ভালো মতো শোনেই নি যে আমি কি করতে চাই। তাহলে তো সমস্যা হবেই। এটা কি মনে করেন ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট জানেন না?

পরের দিন আমি অফিসে যাবার পর আমার কলিগ অনেকক্ষণ হাসলো। বললো, আমি গেলেই ভালো হতো। টাকাটা এখনও একাউন্টে জমা পড়ে নাই। আমি গিয়ে সরাসরি একাউন্ট হোল্ডারদের লাইনে দাড়াতাম। তারপর জমা দিয়ে ছাড়তাম।

কারণ হচ্ছে ব্যাংকে আপনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবেন, কোন কাজই হবেনা। ধাপকি দেবেন দেখবেন সব কাজ হচ্ছে।

আমি কয়েকদিন আগে গেলাম ব্যাংকে, গার্ডকে বললাম আমাকে দুইটা ফর্ম দাও।
গার্ড বললো, আপনি দুইটা ফর্ম দিয়ে কি করবেন?
আমি তখন চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম, সেটা দিয়ে তুই কি করবি? ফর্ম কি তুই ছাপাস নাকি তোর পকেট থেকে যায়? পঞ্চাশটা চাইলে পঞ্চাশটাই দিতে হবে। আমার লাগবে।
গার্ড তখন জি স্যার বলে দিয়ে দিলো দুইটা ফর্ম।

আমি চিন্তা করলাম, আসলেই কি হবে যে আমাদের। মানুষের সাথে খারাপ ব্যাবহার বা ‌'ধাপকি' দিয়ে কাজ আদায়ের চেষ্টা করিনা বলে কি আমরা সার্ভিস পাইনা?

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×