অফিস থেকে বের হব, তখন আমার কলিগ বললো, আপনি কি সরাসরি বাসায় যাবেন?
আমি বললাম, হ্যা যাবো।
শুনে তার মুখ হাসিতে ভরে গেলো, বললো, আর কোন কাজ আছে জরুরী?
তার কথার ভাব ভঙ্গি দেখে আমার মনে সন্দেহ হল। কাহিনী কি!
ভয়ে ভয়ে বললাম, হ্যা সরাসরি বাসায় যাবো।
শুনে সে আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিলো। বললো, কষ্ট করে রাজলক্ষীর এসসিবি তে জমা করে দেবেন।
আমি বললাম, ভাই আমারে মাফ করেন, এইটা পারবো না। এই জিনিস আমি আগে জমা দিই নাই।
শুনে সে বললো, কোন সমস্যা নাই। আমি আপনাকে ভালোমতো প্রসেস বুঝিয়ে দিচ্ছি। প্রথমে ব্যংকে ঢুকবেন। গার্ডের কাছে বলবেন, ক্রেডিট কার্ডের বিল চেকে জমা দেব। আপনাকে দুই পাতার একটা ফর্ম দেবে। সেইটা ফিলআপ করে এটার সাথে করে কাউন্টারে জমা দেবেন। সো ইজি।
আমি বললাম, আচ্ছা দেন।
তারপর নামলাম বাস থেকে রাজলক্ষী। রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখি ভয়ানক অবস্থা, পারই হওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে এক বাস আরেক বাসের সাইড মিরর ভেঙে ফেললো ধাক্কাধাক্কি করে।
এসসিবির ইভিনিং ব্যাংকিং আছে। ঢুকলাম ব্যাংকে। গার্ডকে বললাম, ক্রেডিট কার্ডের বিল দেব চেক এ। ফর্ম কোনটা। সে আমাকে বাইরের এটিএম দেখিয়ে বললো, ওখানে জমা দেন।
আমি গেলাম এটিএম এ। গার্ডকে বললাম একই কথা। সে শুনে মাথা নাড়লো। বললো, এইটা তো এখানে না। ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
আবার ব্যাংকে গেলাম। গার্ডকে আবার বললাম। সে তখন বললো, ও ক্রেডিট কার্ডের বিল! আগে তো বলেন নাই। আমার হাতে সে একটা ফর্ম ধরিয়ে দিলো। আমি গার্ডেও দিকে তাকিয়ে বললাম, আগেই বলেছি। আপনি শোনেন নাই।
তারপর দেখলাম দুইটা লাইন। আবার জিজ্ঞেস করলাম, কোন লাইন এটা জমা দেবার জন্যে?
সে আমাকে দ্বিতীয় লাইনটা দেখিয়ে দিলো।
আমি দাড়ালাম কিউতে। প্রায় দশ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পর আমি গেলাম কাউন্টারে। অফিসার আর ফর্মটা দেখে বললো, এখানে কথায় লিখতে হবে। আর এটা জমা দেন ওই বক্সে।
আমি ভাবলাম নিয়ম সম্ভবত তাই। গেলাম বক্সের কাছে, কিন্তু ড্রপ করার আগে আবার ফোন করলাম কলিগকে। সে শুনে বললো, এটা তো হবার কথা না। আপনি আরেকবার খোঁজ নেন। কাউন্টারেই তো জমা নেয়।
আমি আবার কাউন্টার যেতেই আরেক গার্ড এগিয়ে এলো এক্সকিউজ মি বলে। তাকে বললাম, যে আমি অফিসারের সাথে আরেকবার কথা বলবো। কাউন্টার খালি, সে তখন ডেস্ক থেকে উঠে গেছে।
আমার হাতের কাগজ দেখে ব্যাংকেরই আরেকজন এগিয়ে এলো। বললো, হ্যা এইটা তো কাউন্টারে জমা দিতে হবে। গার্ড বললো, না এইটা বক্সে ফেলতে হবে। আজিব ব্যাপার!
কয়েকমিনিট পর অফিসার আবার এলো। আমি তাকে বললাম, এটার নিয়ম কি?
আপনারা কাউন্টারে জমা নেননা নাকি এখন নেবেন না।
সে বললো, এটা বক্সেই ড্রপ করতে হবে। এটাই নিয়ম।
আমি শেষে বক্সে জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে এলাম। সময় লাগলো প্রায় পনেরো মিনিট।
এই প্রসঙ্গটা বলার পেছনে কারণ আছে। আমি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এই জিনিসটা দেখি। প্রথম কথা হচ্ছে, এসসিবি হচ্ছে বাংলাদেশের টপ মোস্ট একটা ব্যাংক। কিন্তু আপনি সেই ব্যাংকে গেলে কে আপনার কোয়ারী শোনে? একজন গার্ড। ইনফর্মেশন ডেস্ক থাকে ডে টাইমে, ইভিনিং এ মাত্র দুইজন বা তিনজন।
ঠিক আছে গার্ড থাকে। কিন্তু একজন গার্ড যখন ইনফর্মেশন প্রভাইড করে তখন তাকে অবশ্যই কিছু জানতে হবে। কারণ ইনফর্মেশন ডেস্কের বদলে এখন সে সার্ভিস দিচ্ছে। সে তো জানেই না কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয়! যাও ইনফর্মেশন দেয় সেটাও ভুল। যদি এই লোকটা প্রথমেই জানতো যে এটা এখানেই ড্রপ করতে হবে। কাউন্টারে যাবার দরকার নেই তাহলে কাজটা দু মিনিটে হয়ে যেতো।
তাছাড়া আমি যে কারণে বলছি, যে ব্যাংকে কত টাইপের কাজ হয় বলতে পারেন? শুধু ইনফর্মেশনের কথা বলছি। কেউ টাকা জমা দেবে, কেউ টাকা তুলবে, কেউ ইনকোয়ারী করবে, তাও কিন্তু একটা সংখ্যা আছে। হতে পারে জেনারেল একশটা কোয়ারী আছে। আর ধরে নিলাম গার্ডটা এখানে মিনিমাম পাঁচ মাস ধরে আছে। তার মানে হচ্ছে গত পাঁচ মাস ধরে সে একই ধরণের কাজ দেখছে প্রতিটি দিন। আমার ধারণা একটা গাধারও সেটা মুখস্থ হয়ে যাবার কথা। তার হয়নি কেন?
প্রথম কারণ হচ্ছে, সে ভালো মতো শোনেই নি যে আমি কি করতে চাই। তাহলে তো সমস্যা হবেই। এটা কি মনে করেন ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট জানেন না?
পরের দিন আমি অফিসে যাবার পর আমার কলিগ অনেকক্ষণ হাসলো। বললো, আমি গেলেই ভালো হতো। টাকাটা এখনও একাউন্টে জমা পড়ে নাই। আমি গিয়ে সরাসরি একাউন্ট হোল্ডারদের লাইনে দাড়াতাম। তারপর জমা দিয়ে ছাড়তাম।
কারণ হচ্ছে ব্যাংকে আপনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবেন, কোন কাজই হবেনা। ধাপকি দেবেন দেখবেন সব কাজ হচ্ছে।
আমি কয়েকদিন আগে গেলাম ব্যাংকে, গার্ডকে বললাম আমাকে দুইটা ফর্ম দাও।
গার্ড বললো, আপনি দুইটা ফর্ম দিয়ে কি করবেন?
আমি তখন চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম, সেটা দিয়ে তুই কি করবি? ফর্ম কি তুই ছাপাস নাকি তোর পকেট থেকে যায়? পঞ্চাশটা চাইলে পঞ্চাশটাই দিতে হবে। আমার লাগবে।
গার্ড তখন জি স্যার বলে দিয়ে দিলো দুইটা ফর্ম।
আমি চিন্তা করলাম, আসলেই কি হবে যে আমাদের। মানুষের সাথে খারাপ ব্যাবহার বা 'ধাপকি' দিয়ে কাজ আদায়ের চেষ্টা করিনা বলে কি আমরা সার্ভিস পাইনা?
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৫১