somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প - আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম

১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন থেকেই এই ভাবনাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সারাক্ষন মনে হচ্ছে 'আমি পারিনা এবং কোনদিন পারবোনা'।
সেইদিন যখন জাহেদ ভাই আমার লেখাটা হাতে নিয়ে বিরক্তি ভরা চোখে তাকালেন, আমি তখনই বুঝে গেছিলাম "আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা"।
অথচ আমি বোকার মতো ভাবতাম অথবা বলাযায় ভাবতে ভালোবাসতাম 'আমি লিখতে পারি'।

আজ আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি আমি ভুল ছিলাম।
কতো কষ্ট করে, কতো রাত না ঘুমিয়ে আমি লিখেছি। বন্ধুরা সবাই সবসময় বলেছে আমি নাকি ভালই লিখি! ওরা তো আর জাহেদ ভাই এর মতো অতো কিছু বোঝেনা। আর তাই আমিও রাতের পর রাত লিখেই গেছি। লিখতে লিখতে কতো গুলো যে ছোট গল্পের পাণ্ডুলিপি জমে গেছিলো আজ তা আমার নিজেরও মনে নেই। যা ইচ্ছে হতো তাই লিখতাম। বন্ধুরা বলতো আমি ঠিকভাবে গুছিয়ে কথা বলতে না পারলেও লিখি দারুন।
দুই একটা গল্প দৈনিক পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল। আর সেগুলো দেখে সবার কি উচ্ছাস!

শারমিনকে খুব ভালো লাগতো কিন্তু কখনো সাহস করে কথা বলতে পারিনি ওর সাথে। একদিন সে নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলতে এসেছিল। পত্রিকায় নাকি আমার লেখা গল্প পড়ে তার খুব ভালো লেগেছে। তারপর মাঝে মাঝেই কথা হতো শারমিনের সাথে। আমার কাছ থেকে গল্প চেয়ে নিয়ে পড়তো। আর মাঝে মাঝেই বলতো, আমি নাকি অনেক বড় লেখক হবো।
শারমিনের কথা গুলো আমাকে স্বপ্ন দেখাতো আরও বেশি করে স্বপ্ন দেখাতো।
আমি স্বপ্ন দেখতাম আমাকে নিয়ে, শারমিনকে নিয়ে, আমাদের দুজনকে নিয়ে। কিন্তু কথা গুলো ওকে বলা হয়নি কোনদিন। একদিন হটাত করেই শারমিনের বিয়ে হয়ে গেল। কষ্ট পেয়েছিলাম খুব। তারপর একদিন কষ্টটাও মরে গেছে।

তারপর আমি আবার স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমার লেখা গুলোকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলাম। একসময় পড়ালেখা শেষ হল। বন্ধুরা সবাই যে যার মতো করে কাজ শুরু করলো। আমিও কাজ পেলাম। একটা নামকরা দৈনিক পত্রিকা অফিসে সাব-এডিটর এর চাকরি। নামেই এডিটর, কাজ প্রুফ দেখে দেয়া। কিন্তু তারপরও আমি আমার কাজটাকে ভালোবেসেছিলাম।

জাহেদ ভাই এই পত্রিকারই সম্পাদক। তিনি শুধু একজন সম্পাদকই নন, তিনি দেশের একজন নামকরা সাহিত্য সমালোচক। বাঘা বাঘা সব লেখক তাকে সম্মান করে। তিনি কোন লেখাকে ভালো বললে সেটা পাঠকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সব প্রকাশকরাও ওনাকে, ওনার কথার অনেক গুরুত্ব দেন।
আমি এই চাকরিটা পাবার পর থেকেই চেষ্টা করছিলাম জাহেদ ভাইকে আমার কিছু লেখা দেবার। হয়তো উনি বলে দিলেই আমার লেখা গুলো বই হিসেবে ছেপে দেবে কোন প্রকাশক!
আর তাই একদিন সুযোগ পেয়েই ওনাকে বলেছিলাম সে কথা। আর উনিও হেসে বলেছিলেন "আচ্ছা ঠিক আছে, নিয়ে এসো আমি দেখবো"।

আমার সেদিন মনে হয়েছিল আমি বিশ্ব জয় করে ফেলেছি। আর তারপরেইতো দুটো উপন্যাস আর ছোট গল্পের একটা পাণ্ডুলিপি নিয়ে গেছিলাম জাহেদ ভাই এর কাছে। তিনি পাণ্ডুলিপি গুলো হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখে আমার দিকে বিরক্তি ভরা চোখে তাকালেন । আমার তখনি মনে হয়েছিল জাহেদ ভাইয়ের হয়তো লেখা গুলো ভালো লাগবেনা।

কিন্তু তারপরো অনেক আশা নিয়ে ছিলাম। সপ্তাহ খানেক পর জাহেদ ভাইকে পাণ্ডুলিপি গুলোর কথা জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন "আমি পড়েছি তোমার লেখা, ওগুলো তো কিছুই হয়নি"। লজ্জায় আমার যেন মাথা কাটা যাচ্ছিল।

এখন আমি নিজেও বুঝতে পারছি, খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি ওগুলো আসলেই কিছুই হয়নি। আর জাহেদ ভাই ঠিক কথাই বলেছেন, আমাকে দিয়ে আমাকে দিয়ে লেখালেখি হবেনা।
আমাকে দিয়ে আসলে কিছুই হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৫
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×