অদ্ভুত একটা আলো দেখতে পাচ্ছি! প্রথমে সবকিছু একদম সাদা তারপর অনেক রকম রঙ, আর এখন মনে হচ্ছে সূর্যটা ঠিক আমার সামনেই প্রচণ্ড আলো ছড়াচ্ছে। এতো আলো অথচ সেটাতে একদমই তাপ নেই, বরং অদ্ভুত একটা কোমল, স্নিগ্ধ অনুভূতি!
আমি কোথায় বা আমি কি করছিলাম তার কিছুই আমার মনে নেই। আসলে আমি হয়তো কিছুই মনে করতে চাইছিনা। এখন ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মনে হয় এটা কোন একটা ব্যস্ত সড়ক। আসে পাশে অনেক অনেক মানুষ।
এখন আমার মনে পড়েছে। মনে পড়েছে আমি কি করছিলাম। আমি হাঁটছিলাম, রাস্তাটা পার হবার জন্যে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নামলাম। তারপর, তারপর সম্ভবত একটা বাস দ্রুত গতিতে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল! আমার তো আর কিছুই মনে পরছেনা! একটা বাস আমাকে ধাক্কা দিলে তো আমার দাড়িয়ে থাকতে পারার কথা না। কিন্তু, আমিতো দিব্যি দাড়িয়ে আছি। এমনকি আমার শরীরে কোথাও বিন্দুমাত্র ব্যাথা নেই! এটা কিভাবে সম্ভব? বাসের সাথে ধাক্কাটা লাগার পরের কোন কিছুই আমার মনে নেই কেন?
আচ্ছা, সামনে এতো ভিড় কিসের?
হটাত করে এখন আমার নিজেকে একদম মুক্ত একটা পাখির মত মনে হচ্ছে। আমি এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি মৃত একটা মানুষ। আমার ঠিক সামনেই আমার শরীর মানে আমার লাশ পড়ে আছে! রাস্তায় অনেক রক্ত। আমার লাশটাকে ঘিরে অনেক মানুষ। আমি তাদের কাউকেই চিনিনা। আমার মনে হচ্ছে আমি সবকিছুতেই বেশ মজা পাচ্ছি। আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছি অথচ আমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছেনা! আমার কাছে মৃত্যু বিষয়টা বেশ সহজ আর মজার মনে হচ্ছে। মানুষ একবার মারা যায়, এবং মৃত্যুর পর সে আর মরতে পারেনা। আর তার মানে আমি আর কোনদিনও মরব না!
কিন্তু মৃত্যুর পরও আমার কাছে কোন কিছুই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা। সবকিছুই আগের মতই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
আমাকে মানে আমার লাশটাকে এখন আমার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি ঘুরে ঘুরে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি। সবাই আছে বাড়িতে। এমনকি এর মধ্যেই অনেক দূর থেকেও অনেকে চলে এসেছে। সবাই হাস্যকর ভাবে গম্ভীর হয়ে আছে। অনেকে কাঁদছে।
আমি চেষ্টা করছি আম্মু, আব্বু আর আমার ছোট বোনটার দিকে না তাকাতে। ওদের দিকে তাকালে আমার একটু একটু কষ্ট হচ্ছে!
বাড়ি ভর্তি মানুষজন। সবাই মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বেশ স্পষ্ট বুঝতে পারছি কে সত্যি সত্যি কষ্ট পাচ্ছে আর কে কষ্ট পাবার ভান করছে! এসব দেখে আমি বেশ মজা পাচ্ছি!
হটাত করেই আমার সাদিয়ার কথা মনে পড়ল। ও কি জানে আমি মরে গেছি? কি করছে এখন ও? ঠিক করেছিলাম সামনের বছর আমরা বিয়ে করবো। সাদিয়া জানতে পারলে নিশ্চয় একদম ভেঙে পড়বে। ওর জন্যে আমারও কষ্ট হচ্ছে! আচ্ছা আমি কি চাইলেই এখন সাদিয়াকে দেখে আসতে পারবো?
সবার আলোচনা শুনে বুঝতে পারলাম আমাকে মানে আমার লাশটাকে কবর দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যেই গোসল দেয়া হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার শরীরটাকে কাফন নামক সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে। আমি সব কিছু বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছি।
কিছুক্ষন আগে সাদিয়া এসেছে। ও আর আমার মা এখন দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। দেখে মনে হচ্ছে ওরা কতইনা আপনজন! অথচ আজকের আগে কেউ কাউকে কখনও দেখেইনি!
আমাকে কাফন পরানো হয়ে গেছে। এখন নিয়ে যাওয়া হবে জানাজা পড়ার জন্যে। আর তারপরেই কবর দেবার জন্য গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে আমাকে। তারমানে আমি মানে আমার লাশটা এখন শেষ বারের মতো বাড়ি থেকে বের হবে!
জানাজায় অনেক মানুষ হয়েছিল। যাদের বেশিরভাগকেই আমি চিনিনা। এখন আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোরস্থানে। সবার সামনে খাটিয়া ঘাড়ে নিয়ে হাঁটছে কয়েকজন। আর তার পেছনে সারিবদ্ধ ভাবে হাঁটছে অন্য সবাই। আমার বাবা কেমন যেন বোকার মতো চারপাশে তাকাচ্ছে। যেন কি হচ্ছে সে ঠিক বুঝতে পারছেনা!
অবশেষে আমার অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। আমাকে কবরে শোয়ানো হয়েছে। আর অল্প কিছুক্ষন পরেই আমাকে মাটি চাপা দেয়া হবে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে এর পর কি ঘটবে! আমি কি এভাবেই সব কিছু দেখতে পারবো? নাকি অন্য কিছু ঘটবে?
আর অল্প সময় পরেই আমি জানতে পারবো এর সব কিছুই। কিন্তু আমার চারপাশে এতো আলো কেন? সবকিছু একটা অদ্ভুত সাদা আলোয় ঢেকে যাচ্ছে। অদ্ভুত রকম কোমল একটা আলো!
আলোচিত ব্লগ
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন