somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গপ্পো- দুর্ভাগ্য কথন

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কপাল ভয়াবহ রকমের খারাপ। হ্যা সত্যি বলছি। মিথ্যা বলে আমার কি বা লাভ থাকতে পারে। তো যেটা বলছিলাম, আমার কপাল বা ভাগ্য খুব বেশি খারাপ। চাইলে এর কিছু প্রমাণও আমি আপনাদের দিতে পারি।
যদিও দুর্ভাগ্যের কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। তারপরেও ছোট্ট একটা উদাহরন দেই। বা বলতে পারেন আমার ফাটা কপালের গল্প।
এইতো মাত্র কয়েক মাস আগের কথা, ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হল। কিছুদিন ইনবক্সে হাই হ্যালো। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাটিং। একসময় ফোন নম্বর আদান-প্রদান। রাত জেগে ফোনে কথা, তারপর সারারাত কথা আর কথা। আমার মনে প্রেম প্রেম ভাব। মনে হল তার মনেও তাই। একসময় সাহস করে বলেই ফেললাম দেখা করার কথা। এবং সে রাজিও হয়ে গেলো। আমিতো মহা খুশি। মনে মনে কতো কিছু চিন্তা করে ফেললাম!
তারপর তার সাথে দেখা করার দিন ক্ষণ ঠিক করলাম। এবং সময় মতো রওনা দিলাম তার সাথে দেখা করার মানে ডেটিং এর উদ্দেশ্যে। আমার বাসা থেকে ডেটিং এর স্পটে যাইতে স্বাভাবিক ভাবে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। আর জ্যাম বাধলে ২ ঘণ্টাও লাগতে পারে। তো আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট আগেই রওনা দিলাম। আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন আমি চরম জ্যামে পড়ে পুরা ১ ঘণ্টা লেটে পৌছেছিলাম। কিন্তু না, সেটা হয়নাই। আমি সেদিন একটাও সিগন্যালে না আটকিয়ে মাত্র ৩০ মিনিটেই স্পটে হাজির। তারমানে নির্ধারিত সময়ের চাইতে ১ ঘণ্টা আগেই আমি পৌঁছিয়ে গেছি। তখন আমি ভাবলাম, ‘একঘণ্টা কি আর এমন, চা-সিগারেট খাইতেই তো ৩০ মিনিট মতো লাইগা যাবে’। এরপর আমি তারে মানে আমার গার্লফ্রেন্ডরে ফোন দিয়া বললাম, ‘জানু আমি চইলা আসছি, পারলে তুমিও জলদি আইসা পড়’।
সে কোথায় আমার কথা শুইনা খুশি হবে তা’না, সে উলটা আমারে ঝাড়ি দেয়া শুরু করলো! সে আমাকে বলল, ‘তোমাকে কে এতো তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে, এসেছ ভালো করেছো এখন বসে থাকো। আমার এখনও সাজগোজের কিছুই হয়নাই। আমি আরও ১ ঘণ্টা পর বের হবো’।
বলেই সে কট করে লাইনটা কেটে দিল।
আমি হিসাব করে দেখলাম তার আসতে কমপক্ষে আরও ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। কি আর করা, আমার কপাল খারাপ! অথচ আমি নিশ্চিত যদি আমি পাঁচ মিনিটও দেরি করে আসতাম তাহলে দেখা যেত সে সময়ের আগে থেকেই এসে বসে আছে। এবং আমি তখনও ঝাড়ি খেতাম। আমি ভাবতে শুরু করলাম কি করা যায় এই দুই ঘণ্টায়। পার্কের বেঞ্চে বসে কারো জন্য দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করা যেমন তেমন কথা না।
কিন্তু কিছুই করার নাই। তাই শেষমেশ ঠিক করলাম পার্কের বেঞ্চে বসে গান শুনে আর সিগারেট টেনেই দুই ঘণ্টা পার করে দিবো। মনে মনে নিজের কপালকে একচোট গালি দিয়ে কানে এয়ারফোন গুজে দিয়ে গানে মগ্ন হলাম। ধীরে ধীরে সময় গড়াল। একঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা, এভাবেই একসময় দুই ঘণ্টা পূর্ণ হল। আমি খুশি মনে তাকে ফোন দিলাম, সে জানালো তার আর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে।
ঠিক সেই সময়, হ্যা ঠিক সেই সময় গাছের উপর থেকে একটা কাক আমার মাথায় এবং আমার শার্টে তার ইয়ে ঢেলে দিল! টাইমিং টা খেয়াল করেছেন!
আরে কাক তুই তোর কাজ করবি একটা ঘণ্টা আগেই কর, আমি তো পুরা দুই ঘণ্টা ধরে এক জায়গায় বসে আছি।
কাকের কাজ কাক করেছে, এখন এই অবস্থায় তো আর ডেটিং হয়না। তাই আমি ছুটলাম ওয়াসরুমের খোঁজে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় কিছুই খুইজা পাওয়া যায়না। যাইহোক শেষপর্যন্ত আমি ওয়াসরুম খুঁজে পেলাম। আর এদিকে আমার সে বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে! আরে বাবা কয়েকটা মিনিট ওয়েট কর। আমি যেখানে পুরা দুই ঘণ্টা ওয়েট করলাম সেখানে মাত্র দশ টা মিনিটে কি এমন হবে। আমি কোনমতে মাথা, শার্ট পরিস্কার করেই দিলাম ঝাইড়া দৌড়।
দৌড়াইয়া জায়গামতো গিয়ে দেখি তিনি রেগে একেবারে অগ্নিশর্মা! কিছুতেই আমার কোন কথা তিনি কানে তুলবেন না। তার ধারনা আমি তাকে মিথ্যা বলেছি। আমি এতক্ষন বসে ছিলাম এটা পুরাই মিথ্যা কথা। আসলে আমি কেবল মাত্র এসে পৌছালাম। অথবা আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে এতক্ষন টাংকি মারছিলাম!
এখন তাকে আমি ক্যামনে বোঝাই কাক আমার কি সর্বনাশটাই না করেছে!
শেষপর্যন্ত সে আমার কোন কথাই শুনল না। তার ভাষ্যমতে, ‘যে ছেলে প্রথম দিনেই মিথ্যা বলতে পারে তার সাথে আর যাই হোক প্রেম করা সম্ভবনা’।
এবং সে আমাকে পার্মানেন্টলি বিদায় জানিয়ে চলেও গেলো! এবং সে যাবার আগে বলে গেলো, আমার মতো একটা ছেলেকে সে সময় দিয়েছে এটা তার জীবনের অন্যতম বড় ভুল!
আর আমি, আমি বোকার মতো পুরাটা সন্ধ্যা ঐ বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দিলাম। এবং সেদিনের পর থেকে তার সাথে আমার আর দেখা তো দুরের কথা কথাও হয়নাই। ফেসবুকেও তাকে আমি আর খুঁজে পাইনি। সম্ভবত আমাকে সে ব্লক করে দিয়েছিল।
এখন আপনারাই বলেন, আমার কি কোন দোষ ছিল? নাকি সবই আমার ফাটা কপালের দোষ!
কপাল, কপালরে ভাই, সবই আমার কপালের দোষ।


( ছবি- গুগল মামার কাছ থেকে ধার করা। )
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×