-এই তুমি কোথায়? এত দেরি হচ্ছে কেন তোমার আসতে?
-আরে আসছি বাবা, একটু অপেক্ষা কর। বাসা থেকে বের হতে হতেই তো দেরি হয়ে গেল। আর রাস্তায়ও যে জ্যাম!
-আচ্ছা সাবধানে এসো।
-হুম, আসছি।
তন্নি ফোনটা রেখে দেয়ার আরও ২০ মিনিট পর রমনা পার্কে পৌঁছাল। হাসান প্রায় ১ ঘণ্টা যাবত এখানে অপেক্ষা করছে তন্নির জন্য। দুজনেরই বয়স খুব বেশি না। হাসান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে, আর তন্নি মাত্রই মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করে কলেজে উঠেছে। আজ প্রায় ৬ মাস হল ওদের সম্পর্কের। ফেসবুকের মাধ্যমেই তাদের ১ম পরিচয়, প্রায় ১০ মাস আগে, সেখানেই না দেখেই প্রেমের সূত্রপাত। ৩ মাস বন্ধুসুলভ চ্যাট করার পর হাসানই প্রথম প্রেম নিবেদন করে তন্নিকে, প্রথমে তন্নি রাজী না হলেও ১ মাস পরে সেও রাজী হয়ে যায়। সেবারই তাদের প্রথম দেখা, এই রমনা পার্কেই। এই পর্যন্ত প্রায় ১৫-১৬ দেখা করেছে দুজন, এই মাসেই এটা তাদের ৩য় সাক্ষাত। তন্নিকে পার্কের গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে হাসান এগিয়ে যায়। তন্নিকে সাথে নিয়ে পার্কের ভেতরে নির্জন জায়গাতে দুজন বসে পরে। হাসান তার ঝুলিয়ে রাখা কাধব্যাগ থেকে একটা গিফট প্যাক বের করে তন্নির দিকে বাড়িয়ে দেয়। তন্নি বলল...
-কি এটা?
-তোমার জন্য
-হঠাত গিফট আনতে গেলে কেন?
-আজ তোমাকে আমার প্রপোজ করার ৬ মাস পূর্তি, তাই এটা তোমার জন্য
-৬ মাস হয়েছে বলে এগুলো আনতে হবে? টাকা কই পেলে?
-আরে আমার ইচ্ছে হয়েছে, তাই এনেছি। আর টাকা আমি জমিয়েছি আমার হাত খরচের টাকা থেকে।
তন্নি প্যাকটা খুলে দেখে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের পাশাপাশি বসা খুব সুন্দর একটা শোপিস।
-পছন্দ হয়েছে?
-হুম, খুউব।
পার্কে প্রায় ২ ঘণ্টা হাতে হাত রেখে কথা বলে চলে দুজন। এই ২ ঘন্টা তারা পুরো জগত থেকে বিছিন্ন থাকে, যেন শুধু ২ জন দুজনার। ২ ঘন্টা পর তন্নি হাতঘড়ি দেখে বলে,
-অনেক সময় হয়ে গেছে, চল এবার উঠা যাক।
-আরও কিছুক্ষণ থাকো না!
-না, আরও কিছুক্ষণ থাকলে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যাবে, আম্মু টেনশন করবে।
-ওহ, আচ্ছা চল তোমাকে একটা রিকশায় তুলে দেই।
-হুম চল।
তন্নিকে রিকশা করে দিয়ে তন্নির রিকশা ভাড়াটা হাসান মিটিয়ে দেয়। তন্নি দিতে মানা করছিল, হাসান এক রকম জোর করেই দেয়।
তন্নি বাসায় ঢুকতেই তার মা জিজ্ঞেস করেন,
-কোথায় ছিলি?
-প্রাইভেটে ছিলাম মা!
-আজ বন্ধের দিনেও প্রাইভেট?
-হ্যা মা, পরীক্ষা ছিল।
-ওহ, যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।
-আচ্ছা, যাচ্ছি।
বন্ধের দিন বলে হাসানের বাবা বাসাতেই ছিলেন। ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন তিনি, হাসানকে বাসার গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে তাকে ডাক দেন। হাসান তার বাবার পাশের সোফাতে বসে,
-কিরে বাবা, কই ছিলি?
-এইতো এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম বাবা, কিছু নোট আনতে।
-তা তোর পড়াশুনা কেমন চলছে?
-ভালই বাবা। বাবা একটা কথা ছিল।
-বল।
-নতুন যে টিচারের কাছে কেমিস্ট্রি পড়তে গিয়েছিলাম গত মাসে, এই মাস থেকে উনার কাছে পড়ব না আর। আজ উনার বেতন দিয়ে দিয়েছি।
-কেন? পড়বি না কেন?
-উনি তেমন ভাল পড়ান না। আমি আগের টিচারের কাছেই যাব কাল থেকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। তুই যা ভাল বুঝিস।
(হাসান কোন কেমিস্ট্রি টিচারের কাছেই পড়ে নি, সে তার বাবার কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিল তা দিয়ে তিন্নির জন্য গিফট কিনে নিয়ে গিয়েছিল। হাসান আর তিন্নি দুজনই তাদের পরিবারকে ধোঁকা দিচ্ছে একটা ৬ মাসের সম্পর্কের জন্য, হাসান তো তিন্নিকেও মিথ্যে বলছিল, এ ধরণের সম্পর্ক কয়দিন টিকে থাকতে পারে বলতে পারেন? মা-বাবাকে ধোঁকায় রেখে কেউ কি সুখে থাকতে অথবা সুখি হতে পারে?)
লেখকঃ Mustafa Anwar (স্বপ্নবাজ শাওন)
লেখকের ফেইসবুক আইডিঃ http://www.facebook.com/nabeel.sjc
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫