ফয়সাল আর তার স্ত্রী রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কথা বলছে,
- তোমায় একটা কথা বলার ছিল ফয়সাল।
- কি কথা সুমনা?
- এটা দেখ।
কথাটা বলেই একটা কাগজ ফয়সালের হাতে ধরিয়ে দেয় সুমনা।
- কি এটা?
- দেখোই না!
ফয়সাল কাগজটা পড়ার জন্য টেবিল ল্যাম্পের সুইচটা অন করে। কাগজটা পড়ার পর ফয়সাল কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। কাগজটা একটা বৃদ্ধাশ্রমের ফর্ম। তারপর নিরবতা ভেঙ্গে সে বলে,
- এটা কেন?
- তোমাকে না কতদিন ধরে বলছি তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসতে, সেখানেই উনি ভাল থাকবেন, এখানে সারাটাদিন আমার সাথে ঝগড়া করা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন, বৃদ্ধাশ্রমে গেলে উনার মত অনেককেই পাবেন। আর মাসে মাসে তো আমরা টাকা পাঠাবই।
- তাই বলে ওখানে পাঠাতে হবে কেন? এখানেই একজন কাজের লোক রেখে দিলে হয় না?
- না, হয় না। আমি প্রতিদিন এত কথা শুনতে পারব না। এখন বল ফর্মে সাইন করবে কি না?
- আচ্ছা দেখি।
- দেখি টেখি না, সাইন করে রেখে যাবে সকালে, মনে থাকবে তো?
- হুম
ফয়সাল অফিস থেকে বাসায় ফিরেই দেখে সুমনা ফয়সালের মায়ের কাপড়-চোপড় একটা ব্যাগে ঢুকাচ্ছে। ফয়সাল সুমনাকে ডেকে বলে,
- কি করছ?
- দেখছ না তোমার মায়ের কাপড়গুলো ব্যাগে গুছিয়ে রাখছি? কাল উনাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না?
- এটা না করলে হয় না?
- উহু ফয়সাল, আমি কিন্তু কাল রাতেই বলেছি। আমি এটা নিয়ে আর তর্ক চাচ্ছি না। আর উনার যে অসুখের বাহানা, দুইদিন পর পর অসুস্থ হওয়ার ভাণ করে বিছানাতে শুয়ে থাকেন। পানিটাও নিয়ে খেতে চান না। আমি পারব না এত ঝামেলা পোহাতে।
ফয়সাল সুমনার কথাগুলো বোকার মত শুনতে থাকে। ভার্সিটিতে পড়ার সময় একটা মেয়েকে ফয়সাল খুব পছন্দ করত। কিন্তু মা-বাবার অমতে যেতে চায় নি সে, তাই উনাদের ইচ্ছেতে আজ থেকে চার বছর আগে বিশাল ধনাঢ্যের মেয়ে সুমনাকে বিয়ে করে ফয়সাল। বিয়ের সময় ফয়সালের মা-বাবা গ্রামেই থাকতেন। বিয়ের ৬ মাসের মাথাতেই ফয়সালের বাবা মারা যান। তারপর থেকে তার মা তাদের সাথেই থাকেন। প্রথম প্রথম তেমন কোন কিছু না হলেও ফয়সালের মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সুমনার এই রকম চিৎকার-চেঁচামেচি বেড়ে যায়।
"কি হল, কিছু বলছ না যে?" স্মৃতির পাতা হাতরে বেড়াচ্ছিল ফয়সাল। সুমনার কথাতে তার সম্ভিত ফিরে আসে।
- কি হল? তুমি কি কালকে তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাবে না?
- না।
- এটাই তোমার শেষ সিদ্ধান্ত?
- কিসের সিদ্ধান্ত? আমি মাকে নিয়ে যাব না বলেছি, তুমি শুনতে পাওনি? তোমার থাকতে ভাল না লাগলে তুমি চলে যাও।
অনেকটা ধমকের সুরে কথাগুলো বলে ফয়সাল। তার ধমক শুনে কিছুটা থকে যায় সুমনা। হঠাৎ ফয়সালের সুমনার কিছু সময় আগে বলা একটা কথা মনে পড়ে, তার মা কিছুদিন যাবত অসুস্থ। ফয়সাল দ্রুত তার রুম থেকে বেরিয়ে তার মায়ের রুমের কাছে যায়। মা গায়ে একটা কাথা জড়িয়ে শুয়ে আছেন। ফয়সাল তার পাশে গিয়ে খাটে আস্তে করে বসে। ছেলের অস্তিত্ব টের পেয়েই কি না মা নড়েচড়ে উঠেন।
- কে?
- মা, আমি!
- ও, তুই? কখন আসলি অফিস থেকে?
- এইতো কিছুক্ষণ আগে। তোমার কি খুব খারাপ লাগছে মা?
- না রে বাবা, বুকের ব্যাথাটা একটু বেড়েছে শুধু, ঠিক হয়ে যাবে, তুই ভাবিস না।
- বললেই হল ঠিক হয়ে যাবে?
- আরে তুই এত চিন্তা করছিস কেন?
- এমনি, কাল আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে।
- কাল? তোর অফিস আছে না?
- হ্যাঁ আছে, তবে একদিন অফিসে না গেলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।
ছেলের কথায় মা মুচকি হেসে ফেলেন। হাসতে হাসতে বলেন, "আচ্ছা বাবা, নিয়ে যাস, এখন একটু আমাকে পানি এনে দে তো বাবা, পানির তেষ্টা পেয়েছে খুব।"
ফয়সাল উঠতেই যাচ্ছিল, পেছন থেকে সুমনা ফয়সালের কাধে হাত রাখে। নিচু গলায় সুমনা বলে উঠে, "তুমি মায়ের কাছেই বস, আমি পানি নিয়ে আসছি।" ফয়সাল তার মায়ের পাশে বসতেই যাচ্ছিল, কি ভেবে যেন আবার সুমনার পিছু পিছু ড্রয়িং রুমে আসে। এসে সুমনার পাশে দাড়ায়, সে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তাকে বাধা দিয়ে সুমনা কিছুটা অশ্রুমাখা কন্ঠে বলে উঠে,
- আমাকে ক্ষমা করে দিও ফয়সাল, আমি আর কখনই এ রকম বলব না, প্রমিজ।
- এই সুমনা, কাঁদছ কেন পাগলি? আমার মা তো তোমারও মা, তাই না?
- হুম......
লেখকঃ Mustafa Anwar (স্বপ্নবাজ শাওন)
লেখকের ফেইসবুক আইডিঃ http://www.facebook.com/nabeel.sjc
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০০