somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

❑ কর্মের গুরুত্ব

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাকিবের মনটা আজ বেশ ফুরফুরে, হবে না কেন? আজ যে তার চাকুরীর প্রথম দিন। খুব বড় এক ব্যবসায়ীর পার্সোনাল এসিসট্যান্ট হিসেবে চাকরী পেয়েছে সে, বেতনও খুব ভাল। গ্রামে এইচ.এস.সি পাশ করে মফস্বল শহরে সাধারণ এক কলেজে অনার্স পাশ করে। শহরে আসার পর অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করেছে সে। তার বাবার এত টাকা ছিল না যে ছেলেকে শহরে পড়াশুনা করাবেন, কারণ সে ছাড়াও তার পরিবারে আরও দুই ভাই-বোন আছে যাদের পড়ার খরচ তাদের বাবাকেই জোগাড় করতে হয়। তাই টিউশনি করে, ছোটখাট পার্ট-টাইম চাকরী করেই নাকিব তার পড়ার এবং থাকা-খাওয়ার খরচ যোগাত। অনার্স পাশ করেই ঢাকায় আসে নাকিব, ভাল এক চাকরীর সন্ধানে। কিন্তু ঢাকা শহরে ভাল চাকরি পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া, দুটো একই কথা। তাই এতদিন এক বন্ধুর সাথে মেসে এক খাটে থেকে, কিছু টুকটাক টিউশনি করে যে টাকা জোগাড় করত, তা দিয়ে নানান জায়গাতে হয় সিভি দিত, আর না হয় ইন্টারভিউ দিত। শেষমেশ এক বড় কোম্পানির বসের পার্সোনাল এসিসট্যান্টের চাকরীর বিজ্ঞাপন দেখে এখানে ইন্টারভিউ দিতেই চাকরীটা হয়ে যায়। নাকিব এখনো তার বসকে দেখেনি, ইন্টারভিউ নিয়েছিল মালিকের বড় ছেলে। তার কাজ হল সকালে বাসা থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় মালিক বাসায় যাওয়া পর্যন্ত উনার সাথেই থাকতে হবে। প্রথমে নাকিব কিছুটা ইতস্তত করলেও বেতনের কথা শুনে আর না করে নি।

নাকিব সকাল সকাল অফিস থেকে দেয়া ঠিকানাতে পৌছে গেল। সুবিশাল দোতলা বাড়ি, গেট থেকে বাসার দুরত্বই হবে প্রায় আধা কিলোমিটার। নাকিব দারোয়ানকে তার পরিচয় দিতেই দারোয়ান গেট খুলে দিল। বাড়ির সামনে পুরো এলাকা জুড়ে বিশাল বাগান। নাকিব তার কাজের প্রথম দিন বলেই নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেভাগেই এসে পড়েছে। বাসার দিকে এগোতে এগোতে বাগানের দিকে চোখ পড়ল তার, দেখল এক বয়স্ক লোক বাগানে ফুলের গাছে পানই দিচ্ছেন। পড়নে উনার খুব ঢিলেঢালা পোশাক, সারা পোশাক জুড়ে মাটির ছোপ। নাকিবের বুড়ো মানুষটাকে কাজ করতে দেখে কিছুটা খারাপই লাগল। সে কি ভেবে যেন লোকটার কাছে গেল। গিয়ে বলল,
- আসসালামু আলাইকুম, চাচা।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- কেমন আছেন চাচা?
- ভাল, কে তুমি?
- চাচা, আমি আপনাদের মালিকের নতুন কর্মচারী, নাকিব।
- ওহ আচ্ছা, তা এখানে এলে যে?
- এমনি চাচা, আমার কাজ তো আরও দেরিতে শুরু। তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু কথা বলে সময়টা পাড় করি।
- হুম, তা কি বলবে বল?
- তা এখানে কতদিন ধরে কাজ করছেন চাচা?
- এই বাড়ি যখন থেকে তৈরি হয়েছে, তখন থেকেই।
- ওহ, আপনি তো তাহলে স্যারের অনেক পুরাতন লোক?
- হুম।
- এত বয়স হয়ে গেছে আপনার, তবুও মালীর কাজ করছেন, কষ্ট হয় না?
- কষ্ট কিসের? কর্ম করে খেতে আবার কষ্ট লাগে?
- তা ঠিক বলেছেন। তা আপনার ছেলেমেয়ে নেই?
- আছে, তবু আমি তাদের টাকা নেই না, নিজের কামাই-রুজিতে নিজে খাই।
- ওহ, ভাল। আচ্ছা চাচা যাই, দোয়া করবেন আমার জন্য, কাজের প্রথম দিন কিনা!
- আচ্ছা যাও।

নাকিব চলেই আসছিল, তবুও আবার উনার কাছে গিয়ে বলল,
- একটা কথা বলব চাচা?
- বল!
- আমার বাবা যদি এখন এখানে থাকতেন তবে আমি কাজে আসার আগে অবশ্যই উনার পা ছুঁয়ে সালাম করে কাজে আসতাম, উনিতো এখানে নেই। আমি যদি আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করি, আপনি কি রাগ করবেন?
বুড়ো মানুষটা একটু হাসি দিয়ে বললেন, “এতে রাগ করার কি আছে বাবা?”

নাকিব উনাকে পা ছুঁয়ে সালাম করল। মানুষটা নাকিবকে অনেক আশীর্বাদ করে দিল। নাকিবের মনটাই ভাল হয়ে গেল। সে বিশাল বাড়িটাতে ঢুকতেই কাজের মহিলা তাকে ড্রয়িং রুমে নিয়া বসাল। প্রায় ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর কাজের মহুলা এসে বলে গেল যে তার মালিক আসছেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। নাকিব সিঁড়ি দিয়ে তার মালিককে নামতে দেখে যারপরনাই অবাক হল, কিছুক্ষণ আগে নাকিব মালী ভেবে যার সাথে কথা বলেছে, উনিই হলেন তার বস। নাকিবের বস তার ফ্যাকাশে মুখখানা দেখে বলল,
- এভাবে হা করে কি দেখছ বাছা?
- না, মানে, আপনি না একটু আগে কাজ করছিলেন বাগানে?
- তো? তাতে কি হয়েছে? নিজের কাজ নিজে করাতে কিসের লজ্জা?
- না, আমি তা বলছি না, কিন্তু আপনি এত বড় কোম্পানির মালিক, এত সহায়-সম্পত্তি আপনার? তারপরও এভাবে বাগানে কাজ করছিলেন!
- শোন বাছা, কোন কাজকেই কখনো ছোট ভাবতে নেই। মানুষ বড় হয় তার কর্মে, তার ধন-সম্পদ অথবা বেশ-ভূষণে নয়।

লেখকঃ undefinedundefined Mustafa Anwar (স্বপ্নবাজ শাওন) undefinedundefined

লেখকের ফেইসবুক আইডিঃ undefinedundefined http://www.facebook.com/nabeel.sjc undefinedundefined

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×