২০০৫ থেকে বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় ব্লগিং চর্চা শুরু হলেও এই ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ দেশের মানুষের মধ্যে ব্লগিং শব্দটি তেমন কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতো না। আরও পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে - অনেকেই জানতো না ব্লগিং কি এবং কেন। জামাতী ছাগুর দল এই সুযোগটাই গ্রহণ করেছিল। এখন অনেকেই জানে যে ব্লগিং নাস্তিকতা আর আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) কে গালিগালাজ করবার স্থান।
মানুষের এই ভুল ধারণাটা ভাঙ্গানোর সময় এখনই। আমাদের আশে পাশে যারা আছে, তাদের ব্লগিং সম্বন্ধে স্বচ্ছ একটা ধারণা দিতে হবে আমাদেরকেই।
না না কাজে আমাদের কম্পিউটার কম্পোজ করার প্রয়োজন পড়ে। এটা সবাই জানে। কম্পিউটার কম্পোজের পর কাগজে প্রিন্ট নিয়ে সেটা কাজে লাগানো হয়। সেই কম্পোজটা হতে পারে কোন চাকুরীর আবেদন পত্র, অথবা কোন নোটিশ। আমরা যে পত্রপত্রিকা বা বইগুলো পড়ি, সেগুলিও কম্পিউটার কম্পোজ করা। সোজা কথায় - কম্পিউটার কম্পোজ হাতে লেখার ডিজিটাল রূপ।
ব্লগিং হচ্ছে অনলাইনে ডায়েরি লেখার মত একটা ব্যাপার। এখানে হাতে না লিখে ডিজিটাল ভাবে কিছু কম্পোজ করে সেটা অনলাইনে অর্থাৎ ইন্টারনেটে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি সৃজনশীল মানুষই চাইবে তার সৃষ্টিকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে। বই লিখে, পত্র পত্রিকায় ছাপিয়ে মানুষের মাঝে সৃষ্টিশীল কাজগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা। পত্র পত্রিকায় সবার লেখা ছাপাবে না। নিজের একটা বই ছাপানো এবং তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াও অনেক ঝক্কির ব্যাপার। অনেক প্রস্তুতি আর টাকা পয়সার ব্যাপার আছে বই ছাপাতে গেলে। আবার যারা বই কিনবে, তাদেরকেও পয়সা খরচ করে কিনতে হবে।
ব্লগ এমন একটি জায়গা, যেখানে বিনে পয়সায় লেখা যায়, ছড়িয়ে দেয়া যায় অনেক অনেক মানুষের মাঝে। ব্লগে যে কেউ লিখতে পারে। সবাই তো আর সাহিত্যমনস্ক হয় না, অথবা সবার সেই মেধা থাকেনা। আবার মেধাবী মানুষদেরও পরিচিতির প্রয়োজন পড়ে। মূলত নিজের কথাগুলো মানুষকে জানানোর তাগিদেই ব্লগের জন্ম। আমাদের জীবনের ছোট্ট ছোট্ট সুখ দুঃখের কথা, তার সাথে গল্প কবিতা - যে যেমন পারে, ব্লগে লিখে যায়। সেই লেখাটা অনেকেই পড়ে, মন্তব্য করে। ভাল লাগা মন্দ লাগা জানায়। নিজেকে প্রকাশ করার সহজ মাধ্যম হিসেবে তাই ব্লগটা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এর সাথে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই। বাজারে থাকা হরেক ধরণের বইয়ের লেখকদের মতই হরেক ধরনের ব্লগার আছেন, অনেক রকম লেখা তারা প্রতি মুহূর্তে লিখছেন। সামাজিক বা ধর্মীয় ভাবে অগ্রহণযোগ্য লেখাগুলো কেউই সাপোর্ট করবে না, করে না। কেউ যদি এমন কোন লেখা দেয়, সেই লেখাকে খুব দ্রুত পাবলিক ব্লগ থেকে মুছে ফেলা হয়। ব্লগার হতে হলেই যে তাকে রোবট হয়ে যেতে হবে, এমন তো নয়। আমরা ব্লগাররা যেমন ধর্মের ব্যাপারে কোন নোংরা কথা সহ্য করি না, তেমনি দেশ, জাতি বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে বলা কথাও সহ্য করি না। আমরা তো আলাদা কেউ না, আপনি আমি মিলেই আমরা। যে সব কথা গুলো আপনার মাঝে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, সেগুলোই আমার মাঝেও করে। শরীরে রোগ হলে চিকিৎসা করতে হয়। রোগীকে মেরে ফেলা হয় না। তেমনি গুটিকয়েক নাস্তিকের বাজে কথা লেখার প্রতিবাদ করতে হয়, আমরা সবাই করি, আপনিও স্বাগতম। কিন্তু তাই বলে গোটা ব্লগার সমাজকে এই কারণে দায়ী করা, বা ব্লগিং সম্বন্ধে ভুল একটা ধারণা পুষে রাখা ঠিক না। ২০১৩ সালেও "কান নিয়েছে চিলে" শুনেই চিলের পেছনে ছুটবেন, এটা কেমন কথা? আসুন, দেখুন, ব্লগ পড়ুন, নিজে জানুন, অপরকে জানিয়ে দিন। গুটি কতক মানুষ আপনার অজান্তেই আপনার না জানাটাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করি - এই ধরণের ধর্ম বিদ্বেষই লেখা গত কয়েক বছরে অনেকেই লিখে গেছেন। এতদিন তো আমাদের তথাকথিত ইসলামের ধারক বাহকেরা কোন উচ্চবাচ্চ্য করেননি। প্রতিবাদ করেছি, লেখাটি মুছে দিয়েছি, ব্লগ বাতিল করিয়েছি আমরা ব্লগাররাই, যেন এমন লেখা আর সে পাবলিক ব্লগে লিখতে না পারে। তবে এখন কেন আপনার ক্রোধ বা ঘৃণা ব্লগারদের দিকে নির্দেশ করে? সত্যটা জানুন, সত্যটা ছড়িয়ে দিন।
ধর্মকে বর্ম করে যারা ফায়দা লুটতে চায়, সেই জামায়াত শিবিরের এই চালটা বুঝতে আপনার সচেতনতাই যথেষ্ট।
শাহবাগের আন্দোলনটা গন আন্দোলন। যদিও শুরুটা অনলাইন একটিভিষ্ট ও ব্লগাররাই করেছিলেন। আমাদের মূল দাবী ছিল রাজাকারদের ফাঁসির আদেশ নিশ্চিত করা। আপনি নিজেও এই দাবীর সাথে একমত। আপনার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে, আন্দোলনটাকে অন্য পথে চালিয়ে দিয়ে লাভটা কার হবে? যারা রাজাকারদের বাঁচাতে চায়, তাদের। ইসলামেও বলা আছে অপরাধের যৌক্তিক শাস্তি প্রদান করা। শত শত মানুষের মৃত্যুর সাথে যারা জড়িত, তাদের কোন যুক্তিতে আপনি বাঁচিয়ে রাখতে চাইবেন? তাদের কি বিচার হবেনা? বিচারে সর্বোচ্চ্য শাস্তি কি তাদের প্রাপ্য না? ইসলামের কথা বলে, মসজিদে আগুন দিয়ে, পতাকা পুড়িয়ে, মানুষ খুন করে জামায়াত শিবির যেটা চাইছে, সেটা অন্যায়। প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন, যারা ইসলামের নামে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। নিজের যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন। আমরা সব সময় মানুষের মাঝেই ছিলাম, মানুষের মাঝেই আছি, থাকবো।