যেভাবে আমার সারাদিনের পরিশ্রম জলে গেল -
গাপ্পী মাছ নিজেদের গরু ছাগল মনে করে, হাস মুরগী মনে করেনা, তাই তারা ডিম না পেড়ে বাচ্চা দেয়। পোলাও চালের দানার সমান, ওয়াটার কালার, কালো চোখের ইয়া পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চাগুলোকে চোখে দেখাই মুশকিল। জন্মের পরেই তারা যে কাজটি করে তা হচ্ছে পলায়ন। মা'র পেট থেকে পড়া মাত্র এরা একুইরিয়ামের পাথরের নীচে পলায়ন করে। "মাছের মা" বলে একটা বাগধারা আছে, এর অর্থ "ভয়াবহ নিষ্ঠুর"। সেই নামের সার্থকতা প্রমাণ করতে গাপ্পী মা'ও তার নিজের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে। যা হোক, সেই শিশু গাপ্পীরা ঘন্টা দুই পাথরের নীচে লুকিয়ে থেকে খাবারের খোঁজে উপরে উঠে আসে, আর ওর মা, বাবা অথবা আঙ্কেল আন্টিদের দ্বারা মারা পরে। তাই, গাপ্পীর বাচ্চা বাঁচানোর জন্য বিশেষ ধরনের নার্সারী বা ডে-নাইট কেয়ার সেন্টার তৈরী করা হয়েছে। আয়োজন বেশী কিছু না, একটা চারকোণা প্লাস্টিকের বাক্স, মশারীর মত খুব ছোট ফাঁকা যুক্ত নেট দিয়ে ঘেরা। এটা গলা পর্যন্ত পানিতে ডোবানো থাকে, এর ভেতর বাচ্চাগুলোকে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে দেয়া হয়, যাতে এরা বের হয়ে অন্য মাছের খাদ্য হতে না পারে। মোটামুটি চার সপ্তাহ পরেই এরা যথেস্ট বড় হয়ে যায়, পালিয়ে যায় অন্য মাছ এদের কিস (kiss) করতে এলে।
গত দুই তিনদিনে আমার দুইজন প্রেগন্যান্ট গাপ্পী মাছ আবার মা হয়েছেন। তাই আজকে সকাল থেকে শুরু করেছিলাম শিশু গাপ্পী উদ্ধার অভিযান। সারা দিনে ৭/৮ বার অভিযান চালিয়ে ১৫/২০টা বাচ্চা ধরতে পেরেছিলাম, তারা সুখে শান্তিতে নিরাপদে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে খেলাধুলা করছিল। কিছুক্ষন আগে শেষ বার আতিপাতি করে খুঁজে আরও ৪/৫টা ছানা ধরে নার্সারীতে দিলাম।
এদিকে, গতকাল একুইরিয়ামের দোকানে মাছের খাবার আনতে গিয়ে ভয়াবহ রকম কিউট সেলস গার্লটার সাথে আরও কিছুক্ষন কথা বলার লোভ সামলাতে না পেরে বিনা কারণে চারটা কদাকার শামুকের বাচ্চা কিনে ফেলেছি। সেগুলো গতকাল থেকেই একুইরিয়ামে পরিস্কার পরিচ্ছন্যতা অভিযান চালু করে দিয়েছে। তো, সেই শামুক বাহিনীর একজন অতি অনুসন্ধিৎসু সদস্য একুইরিয়ামের পানি পরিস্কার করার ফিল্টারের পানি টেনে নেয়ার পাইপের মুখটি ইনভেস্টিগেট করতে গিয়ে সেখানে আটকা পড়েন। মাছেরা সাতার কাটে বলে সেখানে ধরা খায় না, শামুক তো শামুক, হাটাচলা করে শামুকী চালে, তাই উনি ধরা পড়ে গেছেন ফিল্টারের রঙ্গিলা জালে। বাচ্চা মাছগুলোকে নার্সারীতে রেখে খাবার দিয়ে আমি গেছি সেই শামিকটিকে উদ্ধার করতে। কাজের সুবিধার জন্য কাঁচের সাথে সাকশন কাপে লাগানো নার্সারীটা দিলাম খানিকটা সরিয়ে। সাফল্যজনক ভাবে শামুক মহাশয়কে উদ্ধার করার পরে দেখি আমার নার্সারী পুরোটাই পানির নীচে
ফলে যা হবার তাই হলো। নার্সারীতে বন্দী বাচ্চারা স্কুলের সদর দরজা খোলা পেয়ে এক দৌড়ে চলে গেছে বাইরে, আর তাদের কয়েকজন আন্টি আঙ্কেল ও বড়ো ভাই বোন এই সুযোগে ঢুকে বসে আছেন নার্সারীতে। কিছুক্ষন এই বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখবার পর নার্সারী আবার আগের উচ্চতায় ফিরিয়ে এনে নতুন করে বাবুদের ধরে ধরে খাঁচায় পুড়লাম, আর বুড়ো গুলোকে বের করে দিলাম। সবগুলো বাচ্চাকে খুঁজে পাইনি, ধৈর্য্য কুলায়নি আর। যারা নিজ দায়িত্বে পালিয়ে গেছে, বেঁচে থাকলে তাদের সাথে আগামীকাল দেখা হবে। তবে সুখের বিষয় এই যে, তাদের সংখ্যা খুব বেশী না। আর তারা যথেষ্ট চালাক চতুর। আমার হাত থেকে যখন পালাতে পেরেছে, তখন তাদের ধরা অন্য মাছদের জন্যেও কঠিন হবে
-
১৬/০৬/২০১৩
রাত একটা বেজে ৭ মিনিট