somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরিয়ানা ফালাচির সাথে শেখ মুজিবের সাক্ষাৎকার, একটি নির্বাচিত অংশ

০২ রা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবিবার সন্ধ্যা : আমি কলকাতা হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করেছি। সত্যি বলতে কি, ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তাদের বেয়নেট দিয়ে যে যজ্ঞ চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার পর পৃথিবীতে আমার অন্তিম ইচ্ছা এটাই ছিল যে, এই ঘৃণ্য নগরীতে আমি আর পা ফেলবো না। এ রকম সিদ্ধান্ত আমি নিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার সম্পাদকের ইচ্ছা যে, আমি মুজিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। ভুট্টো তাকে মুক্তি দেয়ার পর আমার সম্পাদকের এই সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল। তিনি কি ধরনের মানুষ? আমার সহকর্মীরা স্বীকৃতি দিল, তিনি মহান ব্যক্তি, সুপারম্যান। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেশকে সমস্যামুক্ত করে গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতে পারেন।

আমার স্মরণ হলো, ১৮ ডিসেম্বর আমি যখন ঢাকায় ছিলাম, তখন লোকজন বলছিল, মুজিব থাকলে সেই নির্মম, ভয়ঙ্কর ঘটনা কখনোই ঘটতো না। মুজিব প্রত্যাবর্তন করলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। কিন্তু গতকাল মুক্তিবাহিনী কেন আরো ৫০ জন নিরীহ বিহারিকে হত্যা করেছে? টাইম ম্যাগাজিন কেন তাকে নিয়ে বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে হেডলাইন করেছে? আমি বিস্মিত হয়েছি, এই ব্যক্তিটি ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে সাংবাদিক অ্যালডো শানতিনিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমার দেশে আমি সবচেয়ে সাহসী এবং নির্ভীক মানুষ, আমি বাংলার বাঘ, দিকপাল ... এখানে যুক্তির কোনো স্থান নেই ...। আমি বুঝে উঠতে পারিনি, আমার কি ভাবা উচিত।......

...... আমরা রান্নাঘরে প্রবেশ করে দেখলাম, মুজিবের স্ত্রী খাচ্ছেন। সঙ্গে খাচ্ছে তার ভাগনে ও মামাতো ভাইবোনেরা। একটা গামলায় ভাত-তরকারি মাখিয়ে আঙ্গুল দিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছে সবাই। এ দেশে খাওয়ার পদ্ধতি এ রকমই। মুজিবের স্ত্রী আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ঠিক তখনই মুজিব এলেন। সহসা রান্নাঘরের মুখে তার আবির্ভাব হলো। তার পরনে এক ধরনের সাদা পোশাক, যাতে আমার কাছে তাকে মনে হয়েছিল একজন প্রাচীন রোমান হিসেবে। পোশাকের কারণে তাকে দীর্ঘ ও ঋজু মনে হচ্ছিল। তার বয়স একান্ন হলেও তিনি সুপুরুষ। ককেশীয় ধরনের সুন্দর চেহারা। চশমা ও গোফে সে চেহারা হয়েছে আরো বুদ্ধিদীপ্ত। যে কারো মনে হবে, তিনি বিপুল জনতাকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি স্বাস্থ্যের অধিকারী।

আমি সোজা তার কাছে গিয়ে পরিচয় পেশ করলাম এবং আমার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলাম। মি. সরকার ভূমিতে পতিত হয়ে মুজিবের পদচুম্বন করলেন। আমি মুজিবের হাতটা আমার হাতে নিয়ে বললাম, এই নগরীতে আপনি ফিরে এসেছেন দেখে আমি আনন্দিত, যে নগরী আশঙ্কা করছিল যে আপনি আর কোনোদিন এখানে ফিরবেন না। তিনি আমার দিকে তাকালেন একটু উষ্মার সঙ্গে। একটু অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, আমার সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলো।

আমার দ্বিধা ও সন্দেহের কারণ উপলব্ধি করা সহজ। মুজিবকে আমি জেনে এসেছি একজন গণতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রী হিসেবে। যখন আমি দম নিচ্ছিলাম, একজন যুবক আমার কাছে এসে বললো, সে ভাইস সেক্রেটারি। বিনয়ের সঙ্গে সে প্রতিশ্রুতি দিল, বিকাল চারটার সময় আমি সরকারি বাসভবনে হাজির থাকতে পারলে আমাকে দশ মিনিট সময় দেয়া হবে।...
সেই সময়ের ঢাকা নগরীকে তিনি এই ভাবে তুলে ধরেছেন- ......বিকাল সাড়ে তিনটায় নগরী ক্লান্ত, নিস্তব্ধ, ঘুমন্ত মধ্যাহ্নের বিশ্রাম নিচ্ছে। রাস্তায় কাধে রাইফেল ঝুলানো মুক্তিবাহিনী টহল দিচ্ছে। যুদ্ধ শেষ হয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনো তাদের হাতে অস্ত্র আছে। তারা রাত-দিন টহল দেয়। এলোপাতাড়ি বাতাসে গুলি ছোড়ে এবং মানুষ হত্যা করে। হত্যা না করলে দোকানপাট লুট করে। কেউ তাদের থামাতে পারে না, এমনকি মুজিবও না। সম্ভবত তিনি তাদের থামাতে সক্ষম নন। তিনি সন্তুষ্ট এজন্য যে, নগরীর প্রাচীর তার পোস্টার সাইজের ছবিতে একাকার। মুজিবকে আমি আগে যেভাবে জেনেছিলাম, তার সঙ্গে আমার দেখা মুজিবকে মেলাতে পারছি না।...

ফেল্লাচি মুজিবের চারিত্রিক এবং ব্যক্তিত্যের বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করেছেন এইভাবে... সোমবার সন্ধ্যা : আমি যে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি এটা ছিল একটা দুর্বিপাক। তার মানসিক যোগ্যতা সম্পর্কে আমার সন্দেহ ছিল। এমনকি হতে পারে যে, কারাগার এবং মৃত্যু সম্পর্কে ভীতি তার মস্তিষ্ককে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে? তার ভারসাম্যহীনতাকে আমি আর কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারি না। একই সময়ে আমি বলতে চাচ্ছি, কারাগার এবং মৃত্যুর ভয় ইত্যাদি... সম্পর্কে কাহিনীগুলো... আমার কাছে এখনো খুব স্পষ্ট নয়। এটা কি করে হতে পারে যে, তাকে যে রাতে গ্রেফতার করা হলো, সে রাতে সব পর্যায়ের লোককে হত্যা করা হলো? কি করে কি করে এটা হতে পারে যে, তাকে কারাগারের একটি প্রকোষ্ঠ থেকে পলায়ন করতে দেয়া হলো, যেটি তার সমাধিসৌধ হতো? তিনি কি গোপনে ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন? আমি যতো তাকে পর্যবেক্ষণ করেছি, ততো মনে হয়েছে, তিনি (মুজিব) কিছু একটা লুকাচ্ছেন।...

এরপর ফেল্লাচি মুজিবের অফিসে যায় এবং তার সাথে কথা বলার বিবরন দিতে গিয়ে বলেন মুজিব তারসাথে খুব একটা ভালো ব্যবহার করেননি।তিনি সাক্ষাতকারটি এইভাবে নিয়েছেন- কেউ আমাকে অভ্যর্থনা জানালো না। কেউ আমার উপস্থিতিকে গ্রাহ্য করলো না। মুজিব আমাকে বসতে বলার সৌজন্য প্রদর্শন না করা পর্যন্ত সুদীর্ঘক্ষণ নীরবতা বিরাজ করছিল। আমি সোফার ক্ষুদ্র প্রান্তে বসে টেপ রেকর্ডার খুলে প্রথম প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু আমার সে সময়ও ছিল না। মুজিব চিৎকার শুরু করলেন, হারি আপ, কুইক, আন্ডারস্ট্যান্ড? নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?... পাকিস্তানিরা ত্রিশ লক্ষ লোক হত্যা করেছে, ইজ দ্যাট কিয়ার... আমি বললাম, মি. প্রাইম মিনিস্টার...। মুজিব আবার চিৎকার শুরু করলেন, ওরা আমার নারীদেরকে তাদের স্বামী ও সন্তানদের সামনে হত্যা করেছে। স্বামীদের হত্যা করেছে তাদের ছেলে ও স্ত্রীর সামনে। মা-বাপের সামনে ছেলেকে, ভাইবোনের সামনে ভাইবোনকে ... মি. প্রাইম মিনিস্টার... আমি বলতে চাই...

তোমার কোনো কিছু চাওয়ার অধিকার নেই, ইজ দ্যাট রাইট?
আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো। কিন্তু একটা বিষয় সম্পর্কে আমি আরো কিছু জানতে চাই। বিষয়টা আমি বুঝতে পারছিলাম না। মি. প্রাইম মিনিস্টার, গ্রেফতারের সময় কি আপনার ওপর নির্যাতন করা হয়েছিল।
নো, ম্যাডাম নো। তারা জানতো, ওতে কিছু হবে না। তারা আমার বৈশিষ্ট্য, আমার শক্তি, আমার সম্মান, আমার মূল্য, বীরত্ব সম্পর্কে জানতো, আন্ডারস্ট্যান্ড?
তা বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন যে তারা আপনাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে? ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়?
নো, নো ডেথ সেনটেন্স।
এই পর্যায়ে তাকে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হলো এবং তিনি গল্প বলতে শুরু করলেন, আমি এটা জানতাম। কারণ ১৫ ডিসেম্বর ওরা আমাকে কবর দেয়ার জন্য একটা গর্ত খনন করে।
কোথায় খনন করা হয়েছিল সেটা?
আমার সেলের ভেতরে।
আমাকে কি বুঝে নিতে হবে যে গর্তটা ছিল আপনার সেলের ভেতরে?
ইউ মিস আন্ডারস্ট্যান্ড।
আপনার প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছে মি. প্রাইম মিনিস্টার?
আমাকে একটা নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছিল। এমনকি আমাকে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেয়া হতো না, সংবাদপত্র পাঠ করতে বা চিঠিপত্রও দেয়া হতো না, আন্ডারস্ট্যান্ড?
তাহলে আপনি কি করেছেন?
আমি অনেক চিন্তা করেছি, পড়াশোনা করেছি।
আপনি কি পড়েছেন?
বই এবং অন্যান্য জিনিস।
তাহলে আপনি কিছু পড়েছেন।
হ্যা, কিছু পড়েছি।
কিন্তু আমার ধারণা হয়েছিল, আপনাকে কোনো কিছুই পড়তে দেয়া হয়নি।
ইউ মিস আন্ডারস্টুড।
তা বটে মি. প্রাইম মিনিস্টার। কিন্তু এটা কি করে হলো যে, শেষ পর্যন্ত ওরা আপনাকে ফাঁসিতে ঝোলালো না।
জেলার আমাকে সেল থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন এবং তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন।
কেন, তিনি কি কোনো নির্দেশ পেয়েছিলেন?
আমি জানি না। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আমি কোনো কথা বলিনি এবং তিনিও আমার সঙ্গে কিছু বলেননি।
নীরবতা সত্ত্বেও কি আপনারা বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন?
হ্যা, আমাদের মধ্যে বহু আলোচনা হয়েছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে সাহায্য করতে চান।
তাহলে আপনি তার সঙ্গে কথা বলেছেন?
হ্যা, আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি।
আমি ভেবেছিলাম, আপনি কারো সঙ্গেই কথা বলেননি।
ইউ মিস আন্ডারস্টুড।
তা হবে মি. প্রাইম মিনিস্টার। যে লোকটি আপনার জীবন রক্ষা করলো আপনি কি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন না?
এটা ছিল ভাগ্য। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।...
এরপর ফেল্লাচি মুজিবের সাথে নানা প্রসঙ্গে জানতে চান কিন্তু শেখ মুজিব তাকে ডমিনেট করে কথা বলতে থাকে।মুজিবের ব্যক্তিগত সম্পত্তির দুঃখ যে তার মনকস্টের কারন হয়ে আছে সেটা ফেল্লাচির কাছে অবাক করেছে।ফেল্লাচি বিষয়টিকে এভাবে লিখেছে-
... আমার বাড়ি, জমি, সম্পত্তি ধ্বংস করেছে, আমার...(মুজিব)।

তিনি যখন তার সম্পত্তির অংশে পৌছলেন, তার মধ্যে এমন একটা ভাব দেখা গেল, যা থেকে তাকে এ প্রশ্নটা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম যে, তিনি সত্যিই সমাজতন্ত্রী কি না? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যা...। তার কণ্ঠে দ্বিধা। তাকে আবার বললাম, সমাজতন্ত্র বলতে তিনি কি বোঝেন? তিনি উত্তর দিলেন, সমাজতন্ত্র। তাতে আমার মনে হলো, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তার যথার্থ ধারণা নেই।
এরপর ১৮ ডিসেম্বর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি রাগে ফেটে পড়লেন। নিচের অংশটুকু আমার টেপ থেকে নেয়া:
ম্যাসাকার? হোয়াট ম্যাসাকার?
ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ঘটনাটি।
ঢাকা স্টেডিয়ামে কোনো ম্যাসাকার হয়নি। তুমি মিথ্যে বলছো।
মি. প্রাইম মিনিস্টার, আমি মিথ্যেবাদী নই। সেখানে আরো সাংবাদিক ও পনেরো হাজার লোকের সঙ্গে আমি হত্যাকা- প্রত্যক্ষ করেছি। আপনি চাইলে আমি আপনাকে তার ছবিও দেখাবো। আমার পত্রিকায় সে ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
মিথ্যেবাদী, ওরা মুক্তিবাহিনী নয়।
মি. প্রাইম মিনিস্টার, দয়া করে মিথ্যেবাদী শব্দটি আর উচ্চারণ করবেন না। তারা মুক্তিবাহিনী। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং তারা ইউনিফর্ম পরা ছিল।
তাহলে হয়তো ওরা রাজাকার ছিল যারা প্রতিরোধের বিরোধিতা করেছিল এবং কাদের সিদ্দিকী তাদের নির্মূল করতে বাধ্য হয়েছে।
মি. প্রাইম মিনিস্টার, কেউ প্রমাণ করেনি যে, লোকগুলো রাজাকার ছিল এবং কেউই প্রতিরোধের বিরোধিতা করেনি। তারা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। হাত-পা বাধা থাকায় তারা নড়াচড়াও করতে পারছিল না।
মিথ্যেবাদী।
শেষবারের মতো বলছি, আমাকে মিথ্যেবাদী বলার অনুমতি আপনাকে দেবো না।
আচ্ছা সে অবস্থায় তুমি কি করতে?
আমি নিশ্চিত হতাম যে, ওরা রাজাকার ও অপরাধী। ফায়ারিং স্কোয়াডে দিতাম এবং এভাবেই এই ঘৃণ্য হত্যাকা- এড়াতাম।
ওরা ওভাবে করেনি। হয়তো আমার লোকদের কাছে বুলেট ছিল না।
হ্যা তাদের কাছে বুলেট ছিল। প্রচুর বুলেট ছিল। এখনো তাদের কাছে প্রচুর বুলেট রয়েছে। তা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুলি ছোড়ে। ওরা গাছে, মেঘে, আকাশে, মানুষের প্রতি গুলি ছোড়ে শুধু আনন্দ করার জন্য।...

ফেল্লাচির প্রতি মুজিব যে দূর্ব্যবহার করেছে তার জন্য সেটি তিনি এভাবে বিবৃত করেছেন- ......সোমবার রাত : গোটা ঢাকা নগরী জেনে গেছে, মুজিব ও আমার মধ্যে কি ঘটেছে। শমশের ওয়াদুদ নামে একজন লোক ছাড়া আমার পক্ষে আর কেউ নেই। লোকটি মুজিবের বড় বোনের ছেলে। এই যুবক নিউ ইয়র্ক থেকে এসেছে তার মামার কাছে। তার মতে মুজিব ক্ষমতালোভী এবং নিজের সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণাসম্পন্ন অহঙ্কারী ব্যক্তি। তার মামা খুব মেধাসম্পন্ন নয়। বাইশ বছর বয়সে মুজিব হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির সচিব হিসেবে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এছাড়া আর কিছু করেননি তিনি। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, মুজিব একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন। ওয়াদুদের মতে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণ এটা নয়। আসলে একমাত্র ওয়াদুদের মাকেই মুজিব ভয় করেন। এই দুঃখজনক আচরণের জন্য তিনি পারিবারিকভাবে প্রতিবাদ জানাবেন।...
ফেল্লাচি ৭০ এর নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেছেন- কেউ কি জানে ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি কেন বিজয়ী হয়েছিলেন? কারণ সব মাওবাদী তাকে ভোট দিয়েছিল। সাইক্লোনে মাওবাদীদের অফিস বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং তাদের নেতা ভাসানী আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনগণকে যদি আবার ভোট দিতে বলা হয়, তাহলে মুজিবের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্নতর হবে, যদি তিনি বন্দুকের সাহায্যে তার ইচ্ছাকে চাপিয়ে দিতে না চান। সেজন্যই তিনি মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের নির্দেশ দিচ্ছেন না এবং আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, রক্তপিপাসু কসাই, যে ঢাকা স্টেডিয়ামে হত্যাযজ্ঞ করেছিল, সেই আবদুল কাদের সিদ্দিকী তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা।...

ফেল্লাচি দ্বিতীয়বারের মত মুজিবের সাথে সাক্ষাতের জন্য রাষ্ট্রপতির দ্বারস্ত হন এবং তিনি মুজিবকে অনুরোধ করতে গেলে উলটো ধমক খান।যাইহোক ফেল্লাচি আবার মুজিবের সাথে দেখা করার একটা ব্যবস্থা করেন।সময়মত তার কক্ষে প্রবেশ করতেই তাকে বের হয়ে যেতে বলে শেখ মুজিব।
আমিও অফিসে ঢুকলাম। আমার দিকে ফিরে তিনি উচ্চারণ করলেন, গেট আউট।...আমাকে এখনই বের হয়ে যেতে হবে এবং আবার আমি যেন এ দেশে পা না দিই।...

এই পর্যায়ে আমি নিজের ওপর সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম এবং আমার মাঝে উত্তেজনার যে স্তূপ গড়ে উঠেছিল তা বিস্ফোরিত হলো। আমি বললাম, তার সবকিছু মেকি, ভুয়া। তার পরিণতি হবে খুবই শোচনীয়। যখন তিনি মুখ ব্যাদান করে দাড়ালেন, আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম এবং রাস্তায় প্রথম রিকশাটায় চাপলাম। হোটেলে গিয়ে বিল পরিশোধ করলাম। স্যুটকেসটা হাতে নিয়ে যখন বেরুতে যাচ্ছি, তখন দেখলাম মুক্তিবাহিনী নিচে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা এ কথা বলতে বলতে আমার কাছে এলো যে, আমি দেশের পিতাকে অপমান করেছি এবং সেজন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হবে। তাদের এ গোলযোগের মধ্যে পাচজন অস্ট্রেলিয়ানের সাহায্যে পালাতে সক্ষম হলাম। (২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরী থেকে।

-সাংবাদিক এবং অনুবাদক আনোয়ার হোসাইন মঞ্জুর লেখা থেকে সম্পাদিত এবং সংকলিত।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×