১.
ঘুম থেকে উঠার পর পরই গোসলের অভ্যাস জালালুদ্দিনের। কিন্তু কয়দিন ধইরা সেই অভ্যাস মত চলা যাইতেছে না। কয়দিন? এই ধরেন এক সপ্তাহ। সপ্তাহখানেক আগে কোন এক শুক্রবার সন্ধার পর পর বাংলাদেশের খেলা দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে সে খুব উত্তেজিত বোধ করে। উত্তেজনার এক পর্যায়ে, যখন কিনা ছয় বলে আর মাত্র তিন রানের দরকার, সেই সময়ে শেষের আগের উইকেট বোল্ড হইয়া গেলে জালাউদ্দিনের মাইনর হার্ট এটাকের মত কিছু একটা ঘটে। ফলে, সে টের পায়, যে তেমন কিছু না, শুধু তার বাম হাতটা ঠিক মত কাজ করতেছে না। এই ঘটনার পর থেকা ঘুম থেকা উইঠা তার আর গোসলে যাওয়া হইতেছে না। সে বিছানায় ঝিম মাইরা বইসা থাকে। এরে তারে খামাখাই ডাকাডাকি করতে করতে কিছুক্ষন সময় সে ব্যয় করে। তারপর আস্তে ধীরে উইঠা গিয়া সবার খোজ খবর করতে থাকে সে। এই সময়, চোখের সামনে যারে সে পায়, তারে শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশ পরামর্শ দেওয়া তার নতুন অভ্যাসে পরিনত হয়। অতপর, এইভাবেই কাটতে থাকবে সৈয়দ জালালুদ্দিন বখশীর অলস সময়।
২.
গলির মোড়ে দেখা গেলো জীবন পাগলা বইসা বইসা গভীর মনোযোগের সাথে কি জানি কি করতেছে। এই জীবন পাগলারে যারা চিনে, তারা ঠিকই জানে সে কি করতেছে। সে আসলে একটা তালা খুলনের চেষ্টা করতেছে। প্রায় দেড় যুগ আগে সে পাগল হইছে না জানি পাগলামীর ভাব ধরছে; ফলে সে তখন থেকা হাতে কইরা একটা কাল্পনিক তালা আর তার চাবি নিয়া ঘুইড়া বেড়ায়। কিন্তু, তালা তো আর খুলে না! পেটে খিদা লাগলে মহল্লার হোটেলে গিয়া সে বলে, ভাইরে, তালা তো খুলে না। হোটেলওলা তখন তারে আদর কইরা খাইতে দেয়। মহল্লার বদ পোলাপাইন আছে যারা যারা, জীবন পাগলার সামনে দিয়া হাইটা যাওনের সময় তারাও তালা খুলনের ভঙ্গি কইরা থাকে। এলাকার মুরুব্বীরা মাঝে সাঝে তার খোজ খবর করে, তারে জিগায়, কিরে জীবন, তর তালা কি খুলছে? সে বিষন্ন মুখে কোন দিকে না তাকাইয়া মাথা এদিক ওদিক দুলাইতে থাকে। তার তালা তো আর খুলেই না!
৩.
তো, সেই জালালুদ্দিনের হাত তো আর নড়ে না। এই কথা শুইনা তার শ্বশুর তারে দেখতে আসার সময় দুই হাতে কইরা নাশপাতি আর মালটা কিনা নিয়া আসে। তারপর তারে বলে, এইসব ডাক্তার হাসপাতালে কোনো ফায়দা নাই। বেশী কইরা আমলকী খাও। আমলকী, হরিতকী আর বহেরা- এই তিনটা হইছে মহৌষধ। সব রোগের শত্র“। ফলে, জালালুদ্দিন ভার ভগ্নিপতির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমান মহৌষদ যোগার কইরা সকাল বিকাল খাইতে থাকে। তো, দেখা যায়, মহৌষধে ফল দিছে। তার হাত তো এখন নড়ে।
কিন্তু বিপদ হইছে অন্যখানে। জালালুদ্দিন দেখে যে, মানে টের পায় আর কি, যে, তার হাত তো আর তার কথায় নড়ে না! সে যদি ভাবে উত্তর, তো তার হাত চলে দক্ষিনে! সে ডাইনে গেলে তার হাত যায় বায়ে। ফলে, যেইদিন, তার শ্বশুর যখন আবার দুই হাত ভইরা নাশপাতি আর মালটা নিয়া তারে দেখতে আসে, তখন ডাইন হাতে তারে সালাম দিতে গিয়া বাম হাতে সে প্রচন্ড চড় দিয়া বসে। তো, এই ঘটনার জন্য তাদের কারো কোন পুর্বপ্রস্তুতি না থাকায় তারা দুইজন দুইদিকে ছিটকায় পড়ে।
৪.
তো, এই খবর পাইলো টিভি চ্যানেল, এই ঘটনা দেখতে আসলো মুছা ইব্রাহীম। এই ঘটনা মানে জীবন পাগলার তালাচাবির ঘটনা। ফলে, জীবন পাগলা দিনে দিনে জনপ্রিয় হইতে থাকে বেশী মানুষের কাছে, দেশী মানুষের কাছে। ফলে, তারা একদিন টক শো চালায়া দেয় জীবন পাগলারে নিয়া। উপস্থাপনায় উপস্থাপিকা। সঞ্চালনায় মূছা ইব্রাহীম। লগে থাকবে জালালুদ্দিন। সে হাত হাত বিষয়ক কারনে লোকজনের নজরে আসছে। সাথে আরো থাকতে পারে ব্লগ কইরা নাম কামাইছে এমন এক সুন্দরী যার নিক নেম 'নারী নই আমিও মানুষ'। আলোচনার বিষয়- চলতি বাজেটে ঢাকা চিড়িয়াখানায় সরকারী বরাদ্দ এবং শেয়ার মার্কেট। তো, জীবন পাগলা তার তালার চাবিটা হারায়া ফেলছে; তো, অনুষ্ঠান শুরু করতে সামান্য দেরী হবে বইলা উপস্থাপক তখন দুঃখ প্রকাশ করতে থাকবে।
৫.
তো, তথাকথিত দ্বিতীয় দশকের এক কবিরে দেখি টিএসসিতে বইসা বইসা তার জালালুদ্দিনের ছোট মেয়ের কামিজের পাসওয়ার্ড হ্যাক করার ধান্দায় ব্যাস্ত। সেইখানে আমি, কাছেই তো, অথচ যেন আমারে সে চিনেই না!
-শোয়েব সর্বনাম