পলাতকদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে সরকার
মিলটন আনোয়ার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পদক্ষেপ হিসেবে আগামীকাল গঠন করা হবে তদন্তকারী সংস্থা। আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই দফা বৈঠক শেষে গত রোববার আইন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন ৮ এপ্রিল তদন্তকারী সংস্থা গঠন করা হবে।
এদিকে গতকাল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিদেশে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তদন্তকারী সংস্থা গঠিত হবে সিআইডি, ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বাছাই করা ব্যক্তিদের নিয়ে। এদের তদন্তের পরেই মামলা দায়ের করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট অনুযায়ি প্রথমে এক থেকে তিনটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে এবং এসব ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েকমাস সময় লাগবে বলেও জানা গেছে।
তদন্তকারী সংস্থার কাছে যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকা দেবে সরকার। ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এবং ওয়্যার ক্রাইম ফ্যাক্টস এন্ড ফাইন্ডিং কমিটি সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের ভিন্ন ভিন্ন তালিকা পেশ করেছে। এ দু’টি তালিকার ভিত্তিতেই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করছে।
ইতোমধ্যে ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ১৭ হাজার ৭৫ জনের একটি তালিকা সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। কমিটি এদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে দালাল আইনে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদেরও তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই সময় দালাল আইনে গ্রেফতারকৃত ১১ হাজার ৪৭৭ জনের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেরই শাস্তি হয়ে গিয়েছিল। আবার অনেকের বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল। জিয়াউর রহমানের সরকার দালাল আইন বাতিল করে দিয়ে এদের মুক্ত করে দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার একাত্তরের দালালদের বিচারের লক্ষ্যে ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল। এর মধ্যে ঢাকায় গঠন করা হয় ১১টি ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ অনুযায়ী এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের এই আইনের সুযোগে একাত্তরের নিহতদের পরিবার পরিজনরা ৪২টি মামলা দায়ের করেন। ১৯৭৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় কয়েক হাজারে।
বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে দালাল আইনে গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৪৭৭ জন। এরমধ্যে ২৬ হাজার ব্যক্তিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাকি ১১ হাজার ৪৭৭ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তারা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়েনি। ’৭৫ সালের আগ পর্যন্ত এদেরই বিচার চলছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এখন ট্রাইব্যুনাল গঠন সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জানিয়েছেন, প্রথমে তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করবে। তদন্তের পর মামলা দায়ের করা হবে। তিন থেকে পাঁচ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। এই ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের চেয়ারম্যান করা হতে পারে। আইনে বলা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি অথবা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি এই ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান হবেন। এছাড়া জেনারেল কোর্ট মার্শালের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরা এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হতে পারবেন। সম্পাদনা: জুলফিকার রাসেল