somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শৈশবের কাজলাদিদি!

২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমরা সরকারী কোয়ার্টারে থাকতাম বাবা-মা’র চাকুরীর সুবাদে। স্কুলে যেতাম হেটে হেটে। বাসা থেকে প্রায় এক কিলো হবে। ফেরার পথে নাজু আপুদের বাসা থেকে দুধ নিয়ে আসতে হত। স্কুলে যাবার সময় পাত্র রেখে যেতাম।
নাজু আপু তখন সবে কলেজে উঠেছে। আপুর মত ইঁচড়েপাকা মেয়ে ঐ তল্লাট তো বটেই আশে-পাশের কয়েক গ্রামেও ছিল কিনা সন্দেহ!
দুধ আনার কাজটা আমার মোটেও পছন্দ হতনা। কারন টা নাজু আপু। এত জ্বালাতো!
এই করে দে-সেই করে দে, এটা এনে দে-ওটা এনে দে, পেয়ারা পেড়ে দে, অমুক গাছ থেকে তেতুল এনে দে... শুধু কি তাই! স্কুল থেকে কি পড়া দিয়েছে, খাতায় নোট নিয়েছি কিনা, হোমওয়ার্ক ঠিকমত করেছি কিনা সব চেক করা চাই প্রতিদিন ই! আর পরীক্ষা হলে তো কথাই নেই, প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিয়েছি সব বলতে হত! রীতিমত অত্যাচার। রাজি না হলে দুধ ফেলে দেবার হুমকী দিত।
অবশ্য এমন ব্লাকমেইলের কারন আছে। দুধ নিয়ে ফেরার পথে ক্যাঙ্গারুর মত লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটতাম বাসার দিকে। প্রায়ই দেখা যেত দুধ সব পড়ে গেছে কিংবা অল্প একটু অবশিষ্ট আছে। অল্প একটু থাকলে জানে পানি পেতাম। পানি মিশিয়ে ভর্তি করে তারপর বাসায় ঢুকতাম। বাসায় প্রায়ই বকা খেতে হত।
একদিন ওরকম ছুটতে গিয়ে দুধ সব ফেলে দিয়েছিলাম। খালি দুধের পাত্র নিয়ে বাসায় যাবার সাহস হচ্ছিল না। কি করবো ভেবে না পেয়ে চুপিচুপি নাজু আপুর কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। আপু পাত্র ভর্তি করে দিয়ে বললো, যেভাবে এসেছিস ওভাবেই চুপিচুপি বের হয়ে যা, আম্মা যেন না দেখে।
ব্যস! তারপর থেকে নাজু আপুর সাথে খাতির হয়ে গেল!
ঈদের আগে স্কুল ছুটি দিয়ে দিল। শেষ ক্লাস করে দুধ নিতে গিয়েছি। নাজু আপুকে দেখলাম শীলের উপর মেহেদীপাতা বাটছে। জিজ্ঞাসা করলাম মেহেদী কি ঈদের জন্য আপু? বলল না, আমার বিয়ের জন্য!
আমার তো মাথায় হাত! বললাম তাইলে এখন থেকে দুধ কার কাছ থেকে নিবো!
-কেন আম্মার কাছ থেকে নিবি। আম্মাকে ডরাস? হু করে মাথা নাড়লাম। উল্লেখ্য, নাজু আপুর আম্মা বেশ মোটাসোটা আর রাশভারী মহিলা ছিলেন। কথা খুব কম বলতেন। তাই পারতপক্ষে উনার সামনে খুব একটা স্বস্তিবোধ করতাম না।
মেহেদীপাতা বাটা শেষ হলে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো মেহেদী লাগাবো কিনা। বললাম আগে তুমি লাগাও, তারপর দিবো।
আপু মেহেদীর বাটি আর একটা ম্যাচের কাঠি দিয়ে বললো তুই লাগিয়ে দে। আমতা-আমতা করে বললাম আমি তো মেহেদী লাগাতে পারিনা।
-বলিস কি! তোর ঘরে তো বউ থাকবেনা!
মেহেদীর বাটি আমার হাতে দিয়ে বললো নে ধর, তোর যেভাবে খুশি মেহেদী লাগা। আমার খুশি দেখে কে! চক দিয়ে স্লেটের উপরে কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আঁকতাম, মেহেদী দিয়ে আপুর সুন্দর ফর্সা হাতেও তাই করলাম।
মেহেদী লাগানো শেষ হলে বললাম দুধ দাও চলে যাই।
দাড়া! এখনো কাজ বাকি আছে। আমার হাতের মেহেদীটা শুকাক, তারপর তোর হাতে লাগিয়ে দিবো।
ঘন্টাখানেক পরে আপু তেল দিয়ে মেহেদী উঠিয়ে ফেললো। টকটকে লাল হয়েছে! আপুর ফর্সা হাতে দারুন লাগছে!
মেহেদীর বাটিটা নিয়ে আসতে খুশিমনে হাত বাড়িয়ে দিলাম। আপু খুব সুন্দর করে লতা-পাতা একে মেহেদী লাগিয়ে দিল।
ওদিকে টেনশনে পড়ে গেলাম বাসায় যেতে দেরি হচ্ছে। বাসা থেকে চিন্তা করবে।
আপুকে বললাম দুধ দাও চলে যাবো।
-চলে যাবি মানে! বউরে একা রেখে কই যাবি!
বউ মানে! আমি অবাক হওয়ার সপ্তম স্কেলে!
বউ মানে এখনো বুঝিস নি? এই যে আমার হাতে তুই মেহেদী লাগিয়ে দিলি, তোর হাতে আমি দিলাম। এটা জামাই-বিবিতে করে। এখন থেকে তুই আমার বর, আর আমি তোর বউ, বুঝেছিস গাধা!
আমি ভয় আর টেনশনে কেঁদে ফেললাম। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললাম তাইলে শোভার কি হবে! শোভার কি হবে মানে! এইবার আপু অবাক।
বললাম পাশের বাসার শোভার সাথে বর-বৌ পাতিয়েছি। আমরা প্রতিদিন মাটির হাড়ি-কুড়ি দিয়ে বর-বৌ-বর-বৌ খেলি। আর তাছাড়া আব্বু যদি শুনে আমি তোমার মত ধামড়ি মেয়েরে বিয়ে করেছি, আমার হাড্ডি-গুড্ডি একটাও আস্ত থাকবেনা!
এবার আপুর হাঁসতে হাঁসতে হেঁচকি উঠে গেল!
আপুর হাঁসি দেখে আমার কান্না আরো বেড়ে গেলো।
শেষে অনেক কষ্টে আমারে বোঝালো এতক্ষন আমার সাথে ফাজলামি করেছে!
...নাজু আপু! তখন বুঝতাম না কি অসীম স্নেহ আর ভালবাসা লুকিয়ে ছিলো তোমার জ্বালাতনগুলির মাঝে.. আমার পিচ্চি বয়সের অবুঝ মনটা তখন না বুঝলেও এখন সবই বুঝে!
প্রায় এক যুগ পার হয়ে গেছে। এখনো তোমার কথা খুব মনে পড়ে।
খুব-খুউব ইচ্ছে করে আবার সেই ছোট্ট টি হয়ে হাড়জ্বালানী তোমার কাছে ফিরে যেতে!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১৬
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×