somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৈনিক জনকন্ঠে পতন ও র্প্রাথনা নিয়ে মামুন রশীদ-এর একটি আলোচনা

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৩১.১০.২০০৮ তারিখ দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় সুমন প্রবাহনের কাব্যগ্রন্থ "পতন ও র্প্রাথনা" নিয়ে মামুন রশীদ এর একটি আলোচনা প্রকাশিত হয়।বই আলোচনাটি নীচে দেয়া হলো।
সময়ের চেয়ে এগিয়ে 'পতন
ও প্রার্থনার' ভাষা


একবার কাছাকাছি দাড়াঁতে পারলে/ আর দূরত্বের ভয় থাকতো না। সুমন প্রবাহনের এই কবিতার মতোই পাঠকের কাছাকাছি দাঁড়ানোর আকুলতা সব কবিরই। তবে তা সবার কপালে জোটে কী-না, এ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। পাঠককে নিজের অন্তর্বেদনা অন্তগর্ত বোধ অনূভূতি জানানোর তাগিদ থেকেই শিল্পকর্ম সৃষ্টির প্রয়াস। নিজেকে ব্যক্ত করার তাগিদ থেকে নিজের কথাকে অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্য নিয়েই শিল্পকর্ম। তবে সবার লক্ষ্য যেমন এক নয় তেমনি সবার জানানোর মাধ্যমও এক নয়। আর ভিন্নতা নিয়েই শিল্পকর্মের ভূবন। এ ভূবনেরই বাসিন্দা কবি সুমন প্রবাহন। যদিও শরীরী অবস্থান তথা পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন তিনি স্বেচ্ছায়। পৃথিবীতে স্বল্পকালীন সময় অবস্থান করে তিনি জীবনের যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, জীবনের জটিলতা মানবীয় ইতিহাসের যে বৈচিত্র্যময়তা খুঁজে পেয়েছেন আর সেগুলোর বহির্প্রকাশ যেভাবে কবিতায় তুলে এনেছেন তাতে করে তাঁকে কবি বলতে দ্বিধা থাকবে না কারও। তাঁর কবিতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিজের ভেতরের এককিত্ব সমাজের চলমানতা ফুটিয়ে তুলেছেন অসম্ভব শৈল্পিক মমতায়।সর্বমোট ৬৪ টি কবিতায় সাজানো সুমন প্রবাহনের প্রথম এবং শেষ কাব্যগ্রন্থ নতুন কোন কবিতা। আর আলোর মুখ দেখবে না। লেখার টেবিলের কাগজ কলম নতুন কোন কবিতা রচনায় কাব্যর যন্ত্রনাকাতরতা অথবা পরিতৃপ্তির ভাষা পড়তে পারবে না। সুমনের প্রতিটি কবিতায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর একাকিত্ব। নিজের ভেতরে ক্রমশ একা হয়ে যাওয়া অন্য এক সুমন প্রবাহন। তাই তাঁর কবিতায় বারে বারে ফিরে এসেছে অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধাচরণ, মৃত্যু চেতনা, নগর জীবনের অসংলগ্ন, ব্যক্তি মানুষের অভিঘাত এসব কিছুই তাঁর কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে একজন শক্তিমান কাব্যর মতো। তাই কবি বলে ওঠেন, ‘যে আমার রোদ বিকেলের/শান্তি কেড়ে নেয়/ যে আমার বিচ্ছিন্ন করে/ ভাই থেকে বোন থেকে/ এমনকি পিতা / দোযখের কসম/ আমার কিরিচে অগ্নিময়/ হবে কিছু মানুষের লাশ/ আর আমি হাসতে হাসতে/ পৃথিবীর/ কাছে নিজেকে/ খুনি প্রমাণ করে/ বলবো গুডবাই পৃথিবী।’ (চলে যাবো দূর বলয়ে)। সুমন প্রবাহনের কাব্যতায় এই অন্তরঙ্গতা তাঁর এই জ্বলে ওঠার প্রয়াস হতাশা ক্রমশ একা হয়ে যাওয়াই কি তবে তাঁকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিয়েছিল? তবে যে হতাশ বোধ রাজনীতি ও সমাজ সচেতনা সুমন প্রবাহনকে বিচ্ছিন্ন করেছে সেই সব অনুষঙ্গই তাঁকে তাঁর সময় থেকে এগিয়ে দিয়েছে। শূন্য দশকের কবিতার যে ভাষা বিষয় ও বক্তব্য তাঁর থেকে অনেকটাই এগিয়ে সুমন। তাই শুধু কল্পনার রঙিন পাখা নয় বাস্তবতার জমিনে নেমে এসে বলতে পারেন, জেরুজালেমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে/ পৃথিবিতে শান্তি ফিরবে কিনা/ এ নিয়ে আমি কোন কর্তকে যাবো না/ শুধু জানি/ জেরুজালেমে ইতিহাস চিরকালে অশান্ত/ যেন চিরকাল কান্না/ সেই ঢেউ পৌছে যায় পৃথিবির কানায় কানায়...।(ইমাম)। সুমন প্রবাহনের কাব্যভাষা কাব্যবোধই তাকেঁ এগিয়ে দিয়েছে সময়ের থেকে। তাই শূন্য দশকের কবি হয়েও সুমন পাঠক বিচ্ছিন্ন নন পাঠককে কাছে টানার মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন তাঁর সাথীদের। এই অগ্রগামিতাই সুমন প্রবাহনকে পাঠাকপ্রিয় করে তুলবে এই আশা।
পতন ও প্রার্থনা: সুমন প্রবাহন, প্রকাশক : সুমন প্রবাহন স্মরণ প্রয়াস, প্রকাশকাল: জুন ২০০৮, প্রচ্ছদ: সুমন প্রবাহনের ড্রইং অবলম্বনে, মূল্য: ১০০ টাকা।
মামুন রশীদ

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×