somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ : ধেয়ান। বইয়ের মলাটে আবদ্ধ প্রথম কাফকা সাহিত্য

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গথিক সংস্কৃতির স্বর্গভূমি চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগের লেখক ফ্রানৎস কাফকার প্রথম প্রকাশিত বই ধেয়ান। বইটিতে স্থান পেয়েছে মোট ১৮ টি গদ্য রচনা বা স্কেচ। এই স্কেচগুলো লেখা হয়েছে ১৯০৪ থেকে ১৯১২ সালের মাঝে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১২-র ডিসেম্বরে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা আরনস্ট রোভোল্ট থেকে এবং ১৯১৫ সালে দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয় জার্মানির আরেক বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কুরট ভোলফ্‌ থেকে। বইটির মূল জার্মান নাম- Betrachtung ইংরেজি নাম : Meditation , Contemplation বা looking for see.

এই বইয়ের প্রথম ৮ টি গদ্য-স্কেচ প্রথম ছাপা হয় বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা হুইপেরিয়ান এর প্রথম সংখায়। এবং এইভাবেই ছাপার হরফে কাফকার প্রথম প্রকাশ। নতুন একটি লেখা সহ এই ৮ টির মাঝে ৪ টি লেখা পরবর্তীতে বোহেমিয়া পত্রিকাতে ছাপা হয়েছিল। বাকি ৯ টি লেখা বইয়ের ভেতরেই প্রথম ছাপা হয়।

বইটির মোট ১৮ টি স্কেচগুলো-
১. গাঁয়ের রাস্তায় বাচ্চারা (Children on a county road)
২. সাধু-সাজা এক ফেরেববাজের মুখোশ উন্মোচন (Unmasking of a confidence trickster)
৩. হঠাৎ হাঁটতে বেরোনো (The sudden walk)
৪. সংকল্পগুলো (Resolutions)
৫. পাহাড়ে দল বেঁধে বেড়ান (Excursion on a mountain)
৬. ব্যাচেলরের নিয়তি ( Bachelor’s ill luck)
৭. ব্যবসায়ী (The Tradesman)
৮. জানালা থেকে আনমনা বাইরে তাকিয়ে (Absent minded window gazing)
৯. বাড়ির পথে (The way home)
১০. পাশদিয়ে দৌড়ে যাওয়া মানুষ (The men passers by)
১১. যাত্রী (The passenger)
১২. পোশাক (Clothes)
১৩. রূঢ় প্রত্যাখ্যান (Rejection)
১৪. সৌখিন ঘোড়সওয়ারদের বিবেচনার জন্য (Reflection for gentleman jockey)
১৫. রাস্তার ধারের জানালা ( The street window )
১৬. রেড ইন্ডিয়ান হওয়ার বাসনা (Wish to become a Red Indian)
১৭. গাছ (Tree)
১৮. বিমর্ষতা (Unhappiness)

স্কেচগুলো নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি নিচে তুলে ধরা হল-

গাঁয়ের রাস্তায় বাচ্চারাঃ

ধেয়ান বইয়ের এই প্রথম গল্পটি লেখা হয়েছিল ১৯০৯ থেকে ১৯১০ এর কোনও এক সময় যা ‘একটি সংগ্রামের বিবরণ’ নামক নভেলার পান্দুলিপির একাংশ। গল্পটি আমরা দেখতে পাই গল্প কথক চলে যান তার শৈশবে , শিশু চোখে এক অদৃশ্য বাঁধার ওপাশের জীবন দেখেন। শিশুদের সাথে তার দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। শেষে আমরা দেখি একটি মিথিক্যাল শহর, যেখানে শিশুরা ঘুমায়না। আর দেখতে পাই কথক গল্পের শিশুদের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ। এতে করে কাফকার নিজ জীবনের একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা। গল্পে যেমন তিনি সেই শিশুদের ছেড়ে চলে আসেন একা।

সাধু-সাজা এক ফেরেববাজের মুখোশ উন্মোচনঃ

এটি ধেয়ান বইয়ের দ্বিতীয় স্কেচ, লেখা হয়েছিল সম্ভবত ১৯১১ সালে। এখানে দেখি এক ভবঘুরে কথককে শহরের রাস্তায় এলোমেলো ঘুরতে। যে কিনা এই শহরে নতুন, এবং তার সাথেই একজন বাটপারের দেখা হয়ে যায় যার কাজ মানুষকে ঠকানো। কিন্তু কখকের দাবি ছাড়া আর কোথাও প্রমান নেই যে দ্বিতীয় লোকটি ঠগ। হতে পারে এটি কেবল কথকের নিরাপত্তাহীনতা থেকে তৈরি হওয়া চিন্তা। পরে আমরা দেখি কথক তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পরিচিত লোকজনের কাছে পৌছায়। এবং তখন তার অবস্থান থাকে সিঁড়ির উপরে। এবং চাকরেরা কথকের জুতা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। এখানে সমাজের অস্বস্তিকর সম্পর্কগুলোই কাফকা তুলে ধরেছেন।

হঠাৎ হাঁটতে বেরোনোঃ

ছোট এই স্কেচটি পাওয়া যায় কাফকার ডাইরিতে। যা লেখা হয়েছিল ১৯০৫ সালের জানুয়ারিতে। লেখাটির একটি বিশেষত্ব হচ্ছে লেখাটিতে প্রথমে কিছু প্রশ্নবোধক বাক্য ‘যদি’ দিয়ে শুরু হয় যা পাঠকের মনে আশা জাগায় এবং পরে সেই আশার পূরণ ‘তাহলে’ বা ‘তখন’ দিয়ে পূরণ হয়না। এবং কাফকা আমাদের নিয়ে যান নতুন এক চমৎকার পরিবেশে। এই ছোট গদ্যে কাফকা দেখিয়েছেন রাতে শোবার বদলে যদি আমরা রাস্তায় হাঁটতে পবের হই তাহলে কী কী ঘটতে পারে, ইত্তাদি। লেখাটিতে কাফকার আত্মমগ্নতার ছাপ পাওয়া যায় প্রগাঢ়ভাবে।

সংকল্পগুলোঃ

কাফকার অনেকগুলো লেখার সমাপ্তি আমরা বিভিন্ন শারীরিক ভঙ্গিমা দ্বারা দেখতে পাই। এই লেখাটিও তেমন একটি। এই লেখায় তিনি প্রথম দুটি অনুচ্ছেদে দুটি আলাদা ও ভিন্নধর্মী থিসিস উপস্থাপন করেন এবং ৩য় অনুচ্ছেদে করেন ১ম অনুচ্ছেদের থিসিসের অ্যান্টিথিসিস। ৪র্থ অনুচ্ছেদে এগুলোর কোনটির সমাধান না দিয়েই তিনি সমাপ্তি টানেন একটি শারীরিক ভঙ্গী দ্বারা। যেমন এই লেখাটিতে দুর্দশার মুখোমুখি হয়ে কী করনীয় তার দুটি বিকল্প থিসিস- সেটির মোকাবিলা করবেন আর দুর্দশার দিকে দৃষ্টিপাত না করে বুড়ো আঙুল দেখাবেন। শেষোক্ত বিকল্পটির দিকেই কাফকার পক্ষপাত কারন এখানে একটি শারীরিক ভঙ্গিমা দেখতে পাই।

পাহাড়ে দল বেঁধে বেড়ানঃ

ধেয়ান বইয়ের পঞ্চম এই গদ্য লিখেছিলেন ১৯১০ এর মার্চে। লেখাটিতে কাফকার আত্মবিষণ্ণতা ও একাকীত্ব ফুটে ওঠে। এখানে আমরা দেখতে পাই কথক এক পাহাড়ে বেড়াতে যান যেটিতে কাফকা এক সময়ে ঘুরতে যেতেন। কিন্তু কথক এখানে সেই পাহাড়ে ঘুরতে গেছেন একদল পরিচয়হীন কল্পিত চরিত্রের সাথে। একদল ‘কেউনা’ কে সাথে নিয়ে। এতে করে কাফকার একাকীত্ব বেশ ফুটে উঠেছে স্কেচে।

ব্যাচেলরের নিয়তিঃ

ধেয়ান গল্পসংকলনের ৬ষ্ঠ এই লেখাটি কাফকা লিখেছেন ১৯১১ সালে। লেখাটিতে কাফকার নিজ স্বপ্ন ও পরিণতির গল্প ফুটে উঠেছে খুব ভালভাবেই। কাফকা নিজেও একজন চিরকুমার ও বিয়ে না করে তিনি জীবনকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন সাহিত্যে। তাই বলে বিয়ে করে সংসারী হয়াবার যে স্বপ্ন তার ছিলো সেটি ছিলো অনেক বড় যা এই লেখায় আমরা দেখতে পাই। তিনি দ্বিমুখী দ্বন্দ্বতে কাটিয়েছেন জীবন। আবার লেখার শেষে আমরা একটি শারীরিক ভঙ্গী- হাতের তালু দিয়ে কপাল চাপড়ানো দেখতে পাই। যা শারীরিক ভঙ্গী দিয়ে সমাপ্তি কাফকার লেখার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই কপাল চাপড়ানোকে নিজের অবিবাহিত জীবন , নিঃসঙ্গতা ও অসুখী জীবনের প্রতি প্রতিবাদ সরূপে কল্পনা করা যায়।

ব্যবসায়ীঃ

কাফকা কবে এই গল্পটি লিখেছিলেন সেটা সঠিক বলা যায়না। কারন এই গল্পের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি। এই গল্পে তিন দেখিয়েছে একজন ব্যবসায়ীকে যিনি সারাদিন কাজ করেও পুর ব্যাপারটি একান্তই নিজ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন না। তাকে নির্ভর করতে হয় কর্মচারীর উপরে। আর প্রতিদিন বাড়ি ফেরেন বিধ্বস্ত মানসিক অবস্থায়। কেবল লিফট এর ভেতরেই যে শান্তি খুঁজে পায়। এর সাথে কাফকার জীবনের ও তুলনা করা যায় কাফকা ছিলেন অফিসের কাজে বিরক্ত ও কাজের চাপে পিষ্ট আবার অপর দিকে নিজের সাহিত্যর ভুবনে ছিলেন কল্পনাপ্রবন যেমনটি লিফটে চড়া ব্যবসায়ীকে আমরা দেখ ফ্যান্টাসির জগতে। লিফট এখানে একটি কাল্পনিক মুক্তির রূপক।

জানালা থেকে আনমনা বাইরে তাকিয়েঃ

কাফকার ধেয়ান বইয়ের ৮ম স্কেচ। লেখা হয়েছিল ১৯০৭ সালে। ধেয়ান গল্পসংকলনের সবাচাইতে ইম্প্রেশনিস্টিক লেখাগুলোর একটি এই ছোট স্কেচ। গল্প কথক একটি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। হেঁটে যাওয়া রমণী , তার গালে পড়া সূর্যের আলো। পরক্ষনেই এক লোকের ছায়া এসে ধেকে দিয়ে যায় সেই আলো। যা অশুভ লক্ষন বা ইংগিত বহন করে। এর পর পাশ কাটিয়ে লোকটি চলে গেলে আবার আলো ফুটে ওঠে মুক্তিপায় নারী-বাচ্চা- রমণী। আর জানা এখানে একটি রূপক হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। বাইরের জগতের দিকে চোখ রাখার পর অংশগ্রহণে অক্ষমতাকে জানালা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা।

বাড়ির পথেঃ

ধেয়ান বইয়ের নবম স্কেচ, এটি সম্ভবত ১৯০৭ সালের শেষ ভাগে লেখা। কাফকার সাহিত্য জীবনে এটি একটি বিরল লেখা। কারন আশাবাদী লেখা কাফকা খুব কমই লিখেছেন। এই স্কেচটি একটি আশাবাদী লেখা। এতে তিনিই আবার ভাগ্যবিধাতার অন্যায় বলেছেন। তিনি শেষে দেখিয়েছেন একটি দ্বিমুখী ঘোর। জানালা খুলে দিয়েছেন। যা বাইরের জগতকে আপন করে নেয়ার জন্য , সেই খোলা জানালা দিয়ে গান ভেসে আসে কিন্তু তিনি আবার বলেন গানটি কোনও কাজে আসেনা। এতে করে কাফকার লেখার চিরচরিত দ্বন্দ্ব মূর্তমান।

পাশদিয়ে দৌড়ে যাওয়া মানুষঃ

কাফকা কবে এই স্কেচটি লিখেছিলেন সেটি সঠিক বলা যায়না। তবে এতি তার শুরুর দিকের ধ্যানী লেখাগুলোর একটি। লেখাটিতে আমরা দেখি পাই একজন পায়ে হাঁটা মানুষকে যে তার পাশ দিয়ে দৌড়ে যাওয়া এক লোকের ব্যাপারে অনেকগুলো কল্পনার ছবি একেছেন। অনেকগুলো ‘হতে পারে’ দিয়ে লেখক অনেকগুলো সম্ভবনাকেই ইঙ্গিত করছেন। দৌড়ে যাওয়া লোকটিকে একবার খুনের শিকার , একবার অপরাধি বা খারাপ কেউ হসেবে বিবেচনা করেছেন। আবার শেষে গিয়ে কাফকা বলেছেন হতে পারে লোকটি ঘুমের মাঝে হাঁটা নিরপরাধ কেউ। কল্পনার জগতে এখক নিজেকে ভাসিয়ে দেন এই লেখাটিতে। কল্পনা যেন বাস্তবতা থেকে পালানর বাহন।

যাত্রীঃ

এগারোতম স্কেচ ধেয়ান বইয়ের। কাফকা এই স্কেচটি লেখেন ১৯০৭ সালে। লেখাটির প্রথম অনুচ্ছেদে আমরা দেখতে পাই ট্রামে করে ঘুরতে থাকা কথকের বিষণ্ণতা আর একাকিত্ত ও অস্তিত্ব নিয়ে সংসয়। তিই এই পৃথিবীতে তার স্থান খুঁজে পাচ্ছেন না। এর পরেই কথক ট্রামের একজন নারীকে লক্ষ্য করেন। এবং বুঝতে পারেন হয়ত তিনি তার অবস্থান খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু কথক যেমন নিজেকে নিয়ে ভাবছে মেয়েটি হয়ত নিজেকে নিয়ে এতোটা ভাবছেনা। হয়ত তাকে নিয়েও ভাবছেনা। তাই কখক আবারো সংসয়ে পড়ে যান। এই লেখাটি এই ধেয়ান বইয়ের ‘বাড়ির পথে’ স্কেচটির বিপরীত।

পোশাকঃ

কাফকার নভেলা ‘একটি সংগ্রামের গল্প’ এর পান্ডুলিপিতে কাফকা এই স্কেচটি লিখেন ১৯০৭ সালে। এই স্কেচটিতে কাফকার ব্যঙ্গাত্মক ঘরানার লেখনির প্রকাশ দেখতে পাই। প্রথমে দিকে ফ্যাশনেবল মেয়েদের পোশাকের সুন্দর বর্ণনা দিয়ে থাকেন। এর পরেই তিনি আবার কথকের মাধ্যমে বলে নেন একই পোশাক তারা প্রতিদিন পড়ে। এতে করে তাদের ফ্যাশন সচেতনতার ভড়ং খুলে যায়। কথক আবার মেয়েদের শারীরিক গড়ন নিয়েও বর্ননা করেন। তবে সেই বর্বণার আড়ালে ব্যাঙ্গ ও খোঁচার সুর বিদ্যমান। সমসাময়িক মেয়েদের অন্তঃসার শূন্যতা নিয়ে তরুণ বয়সে মনকষ্টে ছিলেন বলে ধারনা করা হয়।

রূঢ় প্রত্যাখ্যানঃ

রসবোধে পূর্ণ এই স্কেচটি কাফকা প্রথমে লিখেন ১৯০৭ সালে তার এক নারী বন্ধুকে চিঠিতে। স্কেচের ছেলে কথক একটি মেয়েকে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিলে মেয়েটি তা প্রত্যাখ্যান করে। এর পরেই পুরুষ কথকের মাঝে প্রতিহিংসা জ্বলে উঠতে দেখি আমরা। ছেলেতি মেয়েটিকে সামাজিক ও শারীরিক ভাবে খুঁতে ভরা বলে মন্তব্য করেন এবং আরো ভয়ংকর ভবে তিনি মেয়েটির অবস্থান তুলে ধরেন। এমন অবস্থায় মেয়েটি বলে এর চাইতে ভালো আমরা দুজএ দুজনের পছে চলে যাই। ফলে আর সম্পর্ক গড়ে ওঠেনা। প্রেমিকার সাহে কাফকার মানিয়ে নেয়ার মধ্যে যে সংসয় কাজ করত তা এই লেখায় আমরা দেখতে পাই। ও কাফকার এই কমিক্যাল লেখার মাঝে এক ধরনের কষ্টও দেখতে পাই।

সৌখিন ঘোড়সওয়ারদের বিবেচনার জন্যঃ

ধেয়ান বইয়ের চৌদ্দতম এই স্কেচটি কাফকা কবে লিখেছিলেন তা জানা জায়নি। তবে এতি একটি দুর্বোধ্য স্কেচ। এখানে ঘোড়দৌড়ে বিজয়ী একজন ঘোড়সওয়ারের কথা বলা হয়েছে যার জন্য কোনও পুরস্কার নেই, কিন্তু আছে অসুবিধার তালিকা। এতে দেখি আমারা চিরাচরিত নিরাশাবাদী ও বিষণ্ণ কাফকাকে। হয়ত জীবনের উপর ক্ষোভ থেকে এই স্কেচটি তিনি লেখাছিলেন।

রাস্তার ধারে জানালাঃ

ধেয়ান গল্প সংকলনের পনেরোতম এই স্কেচ কাফকা লিখেন সম্ভবত ১৯১০ সালের শেষের দিকে। এই স্কেচেও উঠে এসেছে একটি জানলা। যা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রিয় থিম- একাকীত্ব , নিঃসঙ্গতা এবং তার বিপরিতে সমাজে মিশে যাওয়ার স্বস্তি।

রেড ইন্ডিয়ান হয়ার বাসনাঃ

ধেয়ান বইয়ের ষোলোতম স্কেচ। লেখা হয়েছিল কবে সে হিসেব এখনো জানা যায়নি। ক্ষুদ্র একটি চকেচ যা একটি মাত্র বড় বাক্যে লেখা হয়েছে।। শুরুতে একজনকে রেড ইন্ডিয়ান হয়ে ঘোড়া ছুটতে দেখা যায়। এবং যতই যেতে থাকে ততই ইচ্ছার বিপরীত দিকে যেতে থাকে। এমন অদ্ভুত লজিক বেশ অনেকবারই দেখা গেছে কাফকার লেখায়। এর পর আমরা আবিষ্কার করি নতুন একটি অবস্থার, এবং পূর্বের রেড ইন্ডিয়ান হয়ার ইচ্ছা কেবল ইচ্ছাই থেকে যায়।

গাছঃ

ধেয়ান বইয়ের সতেরোতম স্কেচ এবং সবচাইতে ক্ষুদ্রতম স্কেচ। পাশাপাশি সবচাইতে আলোচিত স্কেচ। এটি একটি মেটাফফরিক স্কেচ। শুরুতে স্কেচটিএ বলা হয়, ‘আমরা হচ্ছি তুষারে শুয়ে থাকা গাছের গুড়ির মতো। এর পর যতই আগাতে থাকি ততই একটা প্যারাডক্সের সম্মুখীন হতে হয়। ফলে গাছের উপমাটি শেষে গিয়ে নাই হয়ে যায়। কয়েকবার পড়লে মনেহয় একটা ধাঁধা তৈরি হয়ে গেছে। হেয়ালী গোছের হলেও কয়েকবার পড়লে আর হেঁয়ালি মনে হবে না। বরং সত্যকে মেনে নেয়ার কষ্ট পরিলক্ষিত হবে।

বিমর্ষতাঃ

ধেয়ান বইয়ের শেষ গল্প এটি। এটি লেখা হয়েছিল ১৯০৯-১৯১১ এর কোনও এক সময়ে। লেখাটিতে বিমর্ষতা পরিলক্ষিত হয়েছে এর আগের কয়েকটি স্কেচের মতো নিঃসঙ্গতা ও বাহিরের পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়ার অক্ষমতার মাধ্যমে। এতে দুটি রূপক আয়না ও বাইরের রাস্তা দুটি আলাদা অবস্থা প্রকাশ করে। বাইরের রাস্তাটি সমাজের পরিবেশ যেখানে এক লোক মিশে যেতে চায় কিন্তু আয়না নামক রূপকটি তাকে বার বার টেনে ধরছে। একটি বাচ্চা ভূত যা কিনা নিজেরই প্রতিবিম্ব শেষে হাজির হয় তার সামনে যা তার একাকীত্বকে দূর করতে তৈরি। পরবর্তীতে লোকটির ঘর থেকে বের হয়ে যায় এবং সিঁড়িতে প্রতিবেশির সাথে অগোছালো একটি কথোপকথন লক্ষ্য করা যায়। এবং শেষ পর্যন্ত বাইরে ঘুরতে না বের হয়ে সে ফিরে আসে এবং একাকী বসে থাকে সমাজ থেকে বিচ্ছন্ন হবার দুঃখ নিয়ে।
-------

শৈলীর দিক দিয়ে ইম্প্রেশনিস্টিক ধারা এই বইটির লেখাগুলোতে আমরা দেখেতে পাই লেখক ও কথকের আবেগ ও মেজাজের মিলমিশ হয়ে যাওয়াকে।
-
বইটির অনুবাদ পাওয়া যাবেঃ পাঠকসমাবেশ এর আজিজ সুপার ও গুলশান আউটলেটে
অনুবাদকঃ মাসরুর আরেফিন
দামঃ ৩৫০ টাকা

---
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, কাফকা গল্পসমগ্র’র (১ম খন্ড) পাঠ পর্যালোচনা
ছবিঃ ইন্টারনেট।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×