ঘুম থেকে উঠে প্রথম আলোর "স্বপ্ন নিয়ে" ক্রোড়পত্রে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের "একটি ছোট প্রশ্ন" লেখাটি পড়লাম। এই লেখাটির কিছু কথা ভালো লেগেছে আর কিছু বিষয় আমার মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
প্রথমত: স্যার বলেছেন, "একসঙ্গে ৬০ টি মোমবাতি জ্বালালে দিনের মতো আলো হয়ে যায়।"
স্যারকে বলছি যদি ৬০টি মোমবাতির মধ্যে একটি মোমবাতিও আলো দেয়ার পরিবর্তে বাতাস দেয় তাহলে কি দিনের মতো আলো থাকবে নাকি আলো নিভে যাবে?
দ্বিতীয়ত: আপনি বলেছেন, "ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে একসঙ্গে অনেকো যে সঠিক হতে পারে, সেটা যেদিন আমি আবিষ্কার করেছিলাম, আমি তখন খুব অবাক হয়েছিলাম।"
স্যার আপনি কবে আবিষ্কার করেছিলেন আমি জানি না। তবে আপনার মতো একজন বিজ্ঞ মানুষ অন্যের ভিন্ন মত ও বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দিতে অনেক সময় নিয়েছেন এটা কি অবাক হবার বিষয় নয়?
তৃতীয়ত: আপনি বলেছেন, " মানুষ যখন ভাবে নিজের ধর্মটাই একমাত্র সঠিক ধর্ম, তখন বিষয়টা অনেক বিপজ্জনক হতে পারে।" কিন্তু আপনিই বলেছেন, "একটা বয়সে আমার মনে হতো আমার নিজের সবকিছু বুঝি সঠিক।"
আপনাকে বলছি স্যার, আপনি নিজে কি তখন বিপজ্জনক ছিলেন?
চতুর্থত: আপনি ধর্মীয় বিশ্বসের কথা বলে রামুর ঘটনার উদাহরণ দিলেন। এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি রামুর ঘটনার জন্য ধর্মীয় বিশ্বাসকে দায়ী করছেন। কিন্তু রামুর ঘটনার সাথে যে আরো অনেক কিছু জড়িত ছিল সেটা আপনি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
আপনাকে বলছি স্যার, নিজের ধর্মকে সঠিক মনে না করলে ধর্মীয় বিশ্বাসই টিকে না। আর নিজের ধর্মকে সঠিক মনে করলে তা কখনো বিপজ্জনক হতে পারে না। কেননা ধর্ম মানুষকে সহনশীলতা শিখায়।
পঞ্চমত: আপনি বলেছেন, রামুর ঘটনার "যেভাবে প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল, সেভাবে কি প্রতিবাদ হয়েছে?
আপনাকে বলছি, যখন কোরআনকে অপমান কিংবা কোরআন পোড়ানো হয় তখন কি আপনি প্রতিবাদের কথা বলেছেন?
স্যার আপনার লেখাগুলোতে আপনাকে কেন যেন মনে হয় আপনি ইসলাম বিদ্বেষী। ধর্মের প্রতি আপনার বিশ্বাস না থাকতে পারে, কিন্তু ধর্মকেতো আপনি ভুল কিংবা মিথ্যা মনে করতে পারেন না। তা না হলেতো আপনার কথা মতো আপনিও বিপজ্জনক হতে পারেন।
স্যার তারপরও আপনার এই লেখার যে বিষয়গুলো ভালো লেগেছে:
১. ৬০টা মোমবাতি যদি ভালোভাবে আলো দেয় আসলেই দিনের মতো আলো হয়ে যায়।
২. জীবনটা আসলেই গণিত নয়। জীবনের প্রশ্নের অনেক সঠিক উত্তর থাকতে পারে।
৩. স্যার আপনি বলেছেন, "কোনো তরুণ ছাত্র বা ছাত্রী, যে আমার এই লেখাটি পড়ছে, তাকে আমি জিজ্ঞেস করি , তুমি কি রামুর ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলে?" স্যার আপনার মতো আমারো বলতে ইচ্ছে করে, কেন আমরা প্রতিবাদ করি না? কেন বাংলাদেশের প্রতিটা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করে না?
@আপনার মতো বলতে ইচ্ছে করে যখন, সাগর রুনি হত্যাকান্ড ঘটে কয়জন ছাত্র এর প্রতিবাদ করেছে?
@বাংলাদেশের সীমান্তে যখন নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটে কয়জন ছাত্র এর প্রতিবাদ করেছে?
@বিরোধী দল যখন হরতালের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে কয়জন ছাত্র-ছাত্রী এর প্রতিবাদ করেছে?
@পুলিশের সহায়তায় যখন বামদল হরতাল পালন করে তখন বিসিএস পরীক্ষা পেছানো হয়, যখন ইসলামী দল হরতাল ডাকলো তখন বিসিএস পরীক্ষা পেছানো হলো না। কয়জন বিসিএস পরীক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করেছে?
@প্রযুক্তি আইনের দোহাই দিয়ে যখন সংবাদপ্রত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয় তখন কয়জন ছাত্র এর প্রতিবাদ করেছে?
@যখন বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হলো কয়জন ছাত্র এর প্রতিবাদ করেছে?
স্যার তাহলে কি বলতে হয় আমরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। স্যার আমি মনে করি প্রতিবাদ করার পূর্বশর্ত হলো অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা। কিন্তু আমরা কি অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি? যখন আমার ভাই অন্যায় করে তখন তাকে আমরা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করি। আর যখন বিরোধী কেউ করে তখন তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগি।
স্যার আসুন আমরা সকল অন্যায় ও জঘন্য কাজকে অন্যায় ও জঘন্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত করি। সেই কাজটা আমার ভাই কিংবা আমার শত্রু যেই করুক না কেন। তাহলেই আমাদের পক্ষে প্রতিবাদ করা সম্ভব।