somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

বুনো পশ্চিমের বিলি দ্য কিড ও অন্যান্য

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কৈশোরের একটা বড় সময় কেটেছে ওয়েষ্টার্ন গল্প পড়ে, পরে মুভি দেখে, তাই বুনো পশ্চিমের ওপর যাই পাইনা কেন এখনও হজম করি।



আমেরিকার বুনো পশ্চিম সন্মধ্যে বলতে গেলে চোখে ভাসে সব দূঃসাহসিক নায়কদের চেহারা যেমন জেমস বাঊয়ি যার নামে নামকরন করা হয়েছে বাউয়ি নাইফের। জেনারেল আর্মষ্ট্রং, কাষ্টার, স্যাম হিউজটন ও নীল জিন্সের উদ্ভাবক লেভাই ষ্ট্রসের কথা। আমার কাছে বুনো পশ্চিম কথাটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে বন্ধুকযুদ্ব, বর্বর পৌরুষোচিত জীবন মরনের সীমারেখা। এই বন্ধুক যুদ্বে যে কত মানুষ জীবন হারিয়েছে তার কোন ইয়াত্তা নাই। বুনো পশ্চিমের কাল ছিল উনিশ শতকের পুরোটাই। চোখের সামনে ভেসে আসে স্বল্পবাক নায়কের চেহারা, অভিযানের দুর্দান্ত কাহিনী, কাউবয়দের গরুর খামার, আউটলদের মাস্তানি ও মার্শালদের বীরত্বগাথা, ওই এলাকায় বসতি স্থাপন করা প্রথম দিকের বাসিন্দাদের ইন্ডিয়ান্ডের সাথে সংগ্রাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কোন ওয়েষ্টার্ন কাহিনী এযুগের কেউ পরেনি এটা আমার বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়। এখানে কতটুকু সত্যি কতটুকু কল্পনা তা বের করার জন্য বিভিন্ন পশ্চিমা সাহিত্যিক, গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। কিছুদিন আগে হাতে এসেছিল এ রকম একটি বই, “বেষ্ট অভ দ্য ওয়েষ্ট” লেখক টনি হিলারম্যান। চলুন দেখি ওখান থেকে কিছু উদ্বার করা যায় কিনা।



বিলি দ্য কিড যখন ধরা পড়ে তখন সে ২৪ বছরের এক টগবগে তরুন। চমৎকার পৌরুষোচিত চেহারা, চেহারায় আছে সাহসের ঝিলিক। ১৮৮০ সালের শীতের শেষ। বিলি দ্য কিড ও তার তিন সহযোগী ধরা পরে, সান্তা ফেতে তাকে বিচারের জন্য নিয়ে যাবার সময় লাসভেগাসে রাতে থামতে হয়। শহরে প্রচন্ড উত্তেজনা তৈরী হয় কারন কিছুদিন আগে তার এক সহযোগী ডেভ রুডাবাউ লাসভেগাসে শহরের জেলারকে হত্যা করে। বিলির দল লিঞ্চিং মবের সন্মূখীন হয়। শহরের মার্শালদের ভীষন বেগ পেতে হয় জনরোষ সামলানোর জন্য। এরপর হাওয়ার্ড ব্রাইয়ানের “ওয়াল্ডেষ্ট অভ দ্য ওয়াইল্ড ওয়েষ্টে” বর্নিত আছে বিলিকে যখন জানানো হয় তাকে স্থানীয় পত্রিকা গুলো তৎকালীন নৃসংশ ইন্ডিয়ান চীপ ভিক্টোরিয়ার সাথে তুলনা করেছে একটুও ভয় না পেয়ে সে বলে আসলে পত্রিকা গুলো বাড়াবাড়ি লিখছে তার সাথে কখনও ভিক্টোরিয়ার মত অনেক লোক থাকত না, আর যাদের তার সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা নাকি কোন র্যা ঞ্চে কাজ করত।



শেরিফের মূল খুনী রুডাবাউ উদ্ভিগ্ন হয়ে জানতে চায় কমিউনিটিতে তার সন্মধ্যে ধারনা কি? যখন তাকে জানান হয় যে লোকজনের ধারনা খুব খারাপ তখন রুডবাউ বেশ ভয় পেয়ে যায়। সে আরো বলে পত্রিকায় তাদের নামে যা লেখা হয়েছে তা অতিরঞ্জিত।



রুডাবাউ ছাড়া বিলির দলের অন্য সদস্য টম যে কিনা একসময় পশ্চিম লাসভেগাসের ডেপুটি শেরিফ হিসাবে কাজ করত। পিকেট এর বাবা ডেকাটুর আইন সভার একজন সদস্য ছিল, সে ওয়াইজ কাউন্টি টেক্সাস বাস করত। আদালতে জেরার সময় পিকেটকে জেলের বাইরে রাখার জন্য তার মা তাদের সমস্ত সম্পত্তি বন্ধক রাখে। পিকেট জামিনে বের হয়ে এসে তার পরিবারের বিশ্বাস ভঙ্গ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়।



পশ্চিমে এটা স্বতঃসিদ্ব ধারনা যে, খারাপ লোকেরা যদি সাধারন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সমর্থ হয় তবে সত্যিকার অর্থে তারা কখনো মারা যায়না। হাড় নষ্ট হবার আগেই তার নাম ধরে আর এক ভন্ড এসে হাজির হয়। ১৯৪৯ সালে ওক্লাহোমা লটনে এক বুড়ো লোক নিজেকে জেসি জেমস হিসাবে ঘোষনা করে। বেলি ষ্টার আপাত দৃষ্টিতে আবার ফিরে আসে। টম হর্ন, জন উইল্কিস বুথ, বুচ ক্যসিডি এদের বেলায় ও একই ব্যাপার ঘটে। ইতিহাস বলে শেরিফ ফ্যাট গ্যারেট বিলি দ্য কিড কে ১৮৮১ সালে নিউ মেক্সিকোতে পুরানো ফোর্ট সামলোরে গুলি করে হত্যা করে। অথচ পশ্চিমের সবচেয়ে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ সি এল সনিসচেনের বর্ননায় জানা যায় ১৯৪৯ সালে একলোক নিজেকে বিলি দ্য কিড নামে দাবী করে।



রবার্ট রেডফোর্ড ও পল নিউম্যান দুই অনন্য সাধারন অভিনেতা অভিনয় করছেন বুনো পশ্চিমের কিংবদন্তী পরিনত হওয়া দুই চরিত্র বুচ ক্যসিডি ও সাদান্স কিড। চলচিত্রের শেষ দৃশ্যটা যেভাবে দেখান হয়েছে তাতে সবারই ধিদ্বা থেকে যায় – তাদের কি হলো? এমনকি পুলিশ ও নিশ্চিন্ত বলতে পারে না তারা কি মারা গিয়েছিল? আর এ ধিদ্বাই তাদের কিংবদন্তীতে পরিনত করেছে। ১৯০০ সালের ২৯ শে অগষ্ট বুচ ক্যসিডি ও সাদান্স কিড ওয়াইওমির টিপটনে ইউনিয়ন প্যসিফিকের ট্রেন ডাকাতি করে। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর নেভাডার ফার্ষ্ট ন্যাশনাল ব্যংক থেকে লুট করে ৩২ হাজার ৬৪০ ডলার। ওই বছরই মন্টানার গ্রেট নর্দান ব্যংক লুট করে পায় ৬৫ হাজার ডলার। এরপর সরকার এদের বিরুদ্বে কঠোর পদক্ষেপ নিলে দলের অধিকাংশ সদস্য মারা গেলে এই দুজন পালিয়ে আর্জেন্টিনা চলে আসেন। সেখানে তাদের সঙ্গে ছিলেন সাদান্স কিডের বান্ধবী ইটা প্লেস।মাঝে আরো কিছু ঘটনা ঘটিয়ে ১৯০৯ সালে তারা বলিভিয়ার স্যান ভিন্সেন্ট ব্যাংক ডাকাতি করতে যেয়ে মারা যান বলে অনেকে মনে করেন। অন্য আর একদল বলেন ১৯১১ সালে উরুগুয়ের মার্সিডিসে ব্যাংক ডাকাতি করতে যেয়ে মারা যান। কিন্ত কোনক্ষেত্রেই পুলিশ তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারেনি। বুনো পশ্চিমের দুর্ধর্ষ দুই চরিত্র সর্বশেষ অভিমত হল তারা দুজন উরুগুয়ে থেকে পালিয়ে আমেরিকায় চলে আসে এবং আমেরিকাতেই স্বাভাবিক মৃত্যু বরন করে।



বুনো পশ্চিমেরসেলুন ছিল আর এক অত্যাবশকীয় জায়গা, পাবলিক প্লেস। আসলে সেলুনের কথা মনে আসলেই ধারনা জন্মে দুটো ব্যাট উইং ঠেলে কোমরে হোলষ্টার ঝুলিয়ে নায়কের আগমন আস্তে আস্তে থেমে যাচ্ছে কোলাহল গুঞ্জন, থেমে গেছে উদ্দাম নৃত্য, মাতালদের খিস্তি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, জুয়ারীদের তাস খেলা থমকে গেছে। থেমে থেমে সিগারেটের ধোয়া কুন্ডলি পাকিয়ে উঠছে, কি খুব চেনা দৃশ্যৃ মনে হচ্ছেনা? যারা ওয়ের্ষ্টান পড়ছেন কিংবা নিদেনপক্ষে দু একটা মুভি দেখছেন তাদের কাছে এটা অতি পরিচিত সেলুনের ছবি।



ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮২২ সালে ওয়াইমিংয়ে প্রথম সেলুন স্থাপন করা হয়, কলোরাডোর উটাহ সিমান্তের কাছে স্বর্ন্ সন্ধানী আড্ডাপ্রিয় মার্কিনিদের কাছে সেলুন জনপ্রিয় হতে সময় নেয়নি। ক্রমেই সেলুন জনপ্রিয় হতে থাকে কলোরাডো, মন্টানা, অ্যারিজোনা, কানসাস, টেক্সাসসহ বিভিন্ন শহরে। মার্কিনিদের কাছে সেলুন কেমন জনপ্রিয় ছিল – তার প্রমান মন্টানার লিভিংষ্টোন শহরের সেলুনের কথা শুনলে, ১৮৮৩ সালে লিভিংষ্টোনে লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৩০০০ অথচ এই ছোট্ট শহরের সেলুন ছিল ৩৩ টি। একসময় শহরের আলচ্য ঘটনাগুলো হয়ে ওঠে সেলুন কেন্দ্রিক। এই সব সেলুন কেন্দ্রিক ঘটনা কেন্দ্র করে ১৯৫০-৬০ এর দশকে যুক্ত্রারাষ্ট্রের টেলিভিশনে বেশ কিছু জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল তৈরী হয়। পরে বেশ কিছু মুভিও তৈরী হয় যা ব্যাপক জনপ্রিয় পায়।

কৃতজ্ঞতাঃ হাসান খুরশীদ রুমির একটি প্রবন্ধ

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১০
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×