somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

হাছন রাজার কোড়া শিকার ও একটি গায়ের নামকরন

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাছন রাজার পরিচয় নতুন করে কিছু দেবার নেই, তাই তার পরিচয় দেবার আগে তাকে নিয়ে একটি অপ্রচলিত গল্প নিবেদন করি।

হাছন রাজা সাহেবর অন্যতম শখ ছিল কোড়া শিকার। কোড়া শিকারে এতই মত্ত থাকতেন যে কোন পাইক পেয়াদা যখনই বর্ষা মৌসুমে খবর দিতেন কোথাও কোন হাওড়ে কোড়া দেখা দিছে, তিনি আর কাল বিলম্ব না করে নিজের পানশি, নিজের পোষা শিকারী কোড়া পাখি নিয়ে অনতিবিলম্বে সেখানে রওনা দিতেন।



আমি জানিনা আপনারা কোড়া পাথি দেখছেন কিনা? কিন্তু আমাদের ছোট কালে আমার খেয়াল আছে যত্রতত্র কোড়া পাখি দেখা যেত। মনে আছে যখন বরিশাল বি এম কলেজের সামনে বাসা ছিল তখন একটি কোড়াকে দেখতাম তার সংসার নিয়ে নির্ভয়ে বাসার সামনে হাটা চলা করছে। কোড়া কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ও আড়ালে-আবডালে থাকতে ভালবাসে। কিন্তু তাদেরকে কখনো কখনো উন্মুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়। ডাকপ্রিয় পাখি হিসেবে এদের পরিচিতি রয়েছে। বিশেষ করে উষা ও গোধূলীলগ্নে এরা খাবারের সন্ধানে ডেকে চলে। পুরুষ কোড়ার ডাক চালাচালি—সেটা প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দেয়ার জন্য। পোষা কোড়াদের সামনে আয়না ধরলে প্রতিপক্ষ ভেবে দারুণভাবে খেপে যায়—সে এক দেখার মতো দৃশ্য বটে! এদের ছোট বাচ্চাদের দেখতেও লাগে খুব সুন্দর। দুটো বুনো পুরুষ কোড়ার লড়াইও দারুণ উপভোগ্য দৃশ্য। লড়াইরত দুটি পাখিকেই ধরে ফেলা সম্ভব। বর্ষা-শরতই কোড়াদের বাসা বাঁধার মৌসুম, ডিম-ছানা তোলার মৌসুম। এ সময় আনন্দে ডাকে পুরুষ কোড়া। নিজের রাজত্বের ঘোষণা দিতেও ডাকে।



এমনি এক বর্ষাকালে তিনি একদিন দোয়ারা বাজার ইউনিয়ন ও থানার নিকটবর্তী হাওড়ে ও ঘাসপূর্ন জলাভূমিতে তার শিকারী পোষা কোড়া ছেড়ে দিলেন জংলী কোড়ার সাথে যুদ্ধ করার জন্য। জংলী কোড়াটি খুব হুশিয়ার ছিল তাই পোষা কোড়ার যুদ্ধ আহ্বানে সাড়া দিচ্ছিল না। এদিকে সাকাল গড়িয়ে দুপুর হল, দুপুর গড়িয়ে বিকালের দিকে যাবার পথে পোষা কোড়ার অনবরত আহ্বানে জংলী কোড়াটি যুদ্বে সাড়া দিল। মরনপন যুদ্বে অবশেষে রাজা সাহেবের কোড়াটির জয় হয়। দ্রুত হাছন রাজা জংলী কোড়াটিকে বন্দী করে ফেললেন।



ওদিকে বিকাল হয়ে গেছে। সকাল থেকে কোড়া শিকারের উত্তেজনায় রাজা সাহেবের পেটে কোন দানা পানিও পড়েনি, সাথে পানশির মাঝি ছাড়া আর কেঊ নাই। ক্ষিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছিল হাছন রাজার, অদূরেই দেখলেন এক পর্ন কুটির, যেখানে এক বিধবা বাস করত। তার কাছে যেয়ে রাজা সাহেব সর্নিবন্ধ অনুরোধ করলেন তাকে যেন কিছু খাবার দেয়া হয়। হত দরিদ্র বিধবার কাছে তখন সামান্য ভাত ছিল। বিধবা লজ্জিত হয়ে বললেন তার কাছে শুধু ভাত আছে। রাজা বললেন তাই সই। তাই দাও। ওই সামান্য ভাত আর তেলে ভাজা সামান্য লতাপাতা সহযোগে রাজা পেট পুরে আহার করলেন। আর বিধবাকে বললেন পরদিন রাজবাড়ী যেতে।



বিধবা তার বাড়ী গেলে তাকে তিনি ওই বসত বাড়ীসহ বিশ বিঘা জমির মালিকানা কাগজ পত্র দিয়ে দিলেন। সামান্য ভাত আর কিছু সব্জীর বিনিময়ে বিধবা ওই বিরাট ভূসম্পত্তির মালিক হন।এবং হাছন রাজার পছন্দ মত ওই গায়ের নাম হল ‘বেটির গাও’। যা আজো বিদ্যমান।

হাসন রাজার জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১) সেকালের সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে। হাসন রাজা জমিদার পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। হাসন রাজা তাঁর তৃতীয় পুত্র। আলী রাজা তার খালাতো ভাই আমির বখ্‌শ চৌধুরীর নিঃসন্তান বিধবা হুরমত জাহান বিবিকে পরিণত বয়সে বিয়ে করেন। হুরমত বিবির গর্ভেই হাসন রাজার জন্ম। হাসনের পিতা দেওয়ান আলী রাজা তাঁর অপূর্ব সুন্দর বৈমাত্রেয় ভাই দেওয়ান ওবেদুর রাজার পরামর্শ মত তাঁরই নামের আকারে তাঁর নামকরণ করেন অহিদুর রাজা।

উত্তারিধাকার সূত্রে হাছন রাজা বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন। প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন ভোগবিলাসী এবং সৌখিন। রমণী সম্ভোগে তিনি ছিলেন অক্লান্ত। তাঁর এক গানে নিজেই উল্লেখ করেছেন-

"সর্বলোকে বলে হাসন রাজা লম্পটিয়া"



হাসন রাজা দাপটের সঙ্গে জমিদারী চালাতে লাগলেন। কিন্তু এক আধ্যাত্নিক স্বপ্ন-দর্শন হাছন রাজার জীবন দর্শন আমূল পরিবর্তন করে দিল। হাসন রাজার মনের দুয়ার খুলে যেতে লাগলো। তাঁর চরিত্রে এলো এক সৌম্যভাব। বিলাস প্রিয় জীবন তিনি ছেড়ে দিলেন। ভুল ত্রুটিগুলো শুধরাতে শুরু করলেন। জমকালো পোশাক পড়া ছেড়ে দিলেন। শুধু বর্হিজগত নয়, তার অন্তর্জগতেও এলো বিরাট পরিবর্তন। বিষয়-আশয়ের প্রতি তিনি নিরাসক্ত হয়ে উঠলেন। তাঁর মনের মধ্যে এলো এক ধরনের উদাসীনতা। এক ধরনের বৈরাগ্য। সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া হয়ে উঠলো তাঁর প্রতিদিনের কাজ। আর সকল কাজের উপর ছিল গান রচনা। তিনি আল্লাহ্‌র প্রেমে মগ্ন হলেন। তাঁর সকল ধ্যান ধারণা গান হয়ে প্রকাশ পেতে লাগলো। সেই গানে তিনি সুরারোপ করতেন এ ভাবেঃ

লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ী ভালা নায় আমার
কি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝার
ভালা করি ঘর বানাইয়া, কয় দিন থাকমু আর
আয়ন দিয়া চাইয়া দেখি, পাকনা চুল আমার।

এভাবে প্রকাশ পেতে লাগলো তাঁর বৈরাগ্যভাব। হাসন রাজা সম্পূর্ণ বদলে গেলেন। জীব-হত্যা ছেড়ে দিলেন। কেবল মানব সেবা নয়, জীব সেবাতেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করলেন। ডাকসাইটে রাজা এককালে 'চন্ড হাছন' নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি হলেন 'নম্র হাছন'। তাঁর এক গানে আক্ষেপের হাহাকার ধ্বনিত হয়েছেঃ

ও যৌবন ঘুমেরই স্বপন
সাধন বিনে নারীর সনে হারাইলাম মূলধন
পরিণত বয়সে তিনি বিষয় সম্পত্তি বিলিবন্টন করে দরবেশ-জীবন যাপন করেন।

সহায়তাঃ

কোড়া শিকারের কাহিনী আমি আমার খুব প্রিয় বন্ধু জোয়াহের রাজার মুখ থেকে শুনছিলাম। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×