somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা জগত (দ্বিতীয় পর্ব)

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা জগত (প্রথম পর্ব)

ফোর্ড মীড এন এস এ র হেড কোয়ার্টার

প্রায় তিন হাজার সংস্থা আর সাড়ে আট লাখ কর্মী বাহিনী নিয়ে আমেরিকার সুবিশাল টপ সিক্রেট জগৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত সাংবাদিক ডানা প্রিষ্ট ও উইলিয়াম আরকিনের রিপোর্ট অবলম্বনে এখানে সেই রহস্যময় জগতের কিছু অংশ তুলে ধরা হল।

গোটা আমেরিকায় ১০ হাজার জায়গায় গোয়েন্দা সম্প্রদায় ৮ লাখ ৫৪ হাজার লোক সন্ত্রাস দমন ও অভ্যান্তরীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত আছে। তবে এটা দেখা যায় না শোনা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়।

ওয়াশিংটনের বাইরের শহরতলীতে কিছু কিছু বাড়ী আছে যার বাইরের অবস্থা দেখে কিছু বুজবার উপায় নেই। যেমন ইটের তৈরী একটা গুদাম ঘর আছে আসলে যা গুদাম ঘর নয়। আছে ক্যাফে জো সাইনবোর্ড টানানো একটা ভবন সেটা আর যাই হোক লাঞ্চ করার জায়গা নয়। দুটি নীচের দিকে ঝুলানো ছাঁদওয়ালা ভবনের মধ্যে একটা ম্যানহোলের ঢাকনি আছে আসলে সেটি কোন ম্যানহোলের ঢাকনি না। কনক্রিটের সিলিন্ডার পরিবেষ্টিত সেই ঢাকনা হল একগুচ্ছ সরকারী কেবলের প্রবেশ মুখ। সেই কেবল দিয়ে কি তথ্য প্রবাহিত হয় তা জানার সুযোগ শুধু অতি অল্প কিছু মানুষের আছে।

এসব কিছুই আছে ওয়াশিংটনের বাইরে এমন এক জায়গায় যাকে আসলে টপ সিক্রেট আমেরিকার প্রকৃত রাজধানী বলা চলে। এখানেই আমেরিকার টপ সিক্রেট সংগঠনগুলো এবং সেগুলোর পক্ষে কর্মরত বেসরকারী কোম্পানীগুলোর সমাবেশ। এধরনের অসংখ্য ভবনগুচ্ছের বেশ কয়েক ডজন স্থান গোটা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। তার মধ্যে ফোর্ট মীডের গুচ্ছটাই সব চেয়ে বড়।

এ রকম গুচ্ছ ভবন বিশিষ্ট অন্যান্য স্থানের মধ্যে রয়েছে ডালেস চান্টিলি, ডেনভার-আরোরা, টামপা। গোপন কার্যালয়ের এই গুচ্ছগুলো সন্মন্ধ্যে আমেরিকার মানুষ এত কম জানে যে, কখন যে তারা গোপন কার্যাক্রমের প্রানকেন্দ্র ফোর্ট মীডের প্রানকেন্দ্রর কাছাআছি হচ্ছে বুজতে পারে না। আর বুজতেও পারবে না, কিন্তু আপনি যদি কখন ও ফোর্ট মীডের প্রানকেন্দ্রের কাছাকাছি হওয়া মাত্র যদি দেখেন আপনার গাড়ীর ড্যাশবোর্ডের জিপিএস ভূল দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, ধরে নিবেন আপনি খুব কাছেই চলে এসেছেন কিন্তু কোন দিন সেই ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঢোকার মুখ খুজে পাবেন না যদি না আপনি যথাযথ কতৃপক্ষের নির্দেশ নিয়ে আসেন। জিপিএস আপনাকে ভূল নির্দেশ দিয়ে একের পর এক ইউ টার্ন নিয়ে আপনাকে ভুল ভুলাইয়ায় ভূতের কবলে ফেলে দেবে।

অভিজ্ঞজনরা কিন্তু এধরনের ঘটনা ঘটলে ঠিকই বুজে নেয় গ্রাউন্ড জিরো অর্থ্যাৎ ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সীর কাছাকাছি চলে আসা হয়েছে। কিন্তু সেটা কোথায় সেটা খোজার থেকে বুনো হাসের পেছনে ছোটা অনেক সহজ।

বেশীর ভাগ সুবিধাজনক অবস্থান থেকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সীর উপস্থিতি আড়াল করার জন্য রয়েছে গাছপালা, প্রাচীর বা ঢালু জায়গা। অনুমতি ছাড়া ওখানে ঢুকবার উপায় খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও নাই।

সকল বাধা অতিক্রম করে কেউ যদি মীডফোর্ড এনএসএ র মধ্যে ঢুকে পড়তে পারেন তাহলে আপনার চোখে পড়বে বিশাল বিশাল ভবন। সারির পর সারি ঘোলাটে কাছের বিস্ফোরন সহ্যক্ষমতা জানাল যেগুলোর আড়ালে ত্রিশ হাজার লোক কাজ করে চলছে। এদের অনেকেই মনিটর পাঠ করে বিশ্লেষন করে চলেছে সেই সব সংলাপ যা হয়ত আপনি ভূল করে উচ্চারন করে ফেলেছেন।

এন এস এ যে কি বিশাল আকার ধারন করেছে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। এর ভবনগুলো প্রায় ৬৩ লাখ বর্গফুট জায়গা দখল করে রয়েছে যা প্রায় পেন্টাগনের সমান। এর চারদিকে রয়েছে ১১২ একর পার্কিং জায়গা। এরপর ও এন এস এর প্রসার ঘটে চলেছে আগামী ১৫ বছর এখানে আরো প্রায় ১০ হাজার লোকের সংকুলান হবে। ব্যায় হবে ২০০ কোটি ডলার। মীড ফোর্ড এন এস এ র ভবনের জমি দখল হবে ১কোটি ৪০ লাখ বর্গফুট।

মীড ফোর্ড সেনা ঘাটিতে রয়েছে এন এস র সদর দফতর। সেখানে আরো বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা ঘাটি রয়েছে। এন এস এ র ঠিক বাইরে এদের চৌহদ্দি শুরু হয়েছে। কোন কোন অংশে গোটা এলাকাটাই তাদের দখলে। আবার অন্যান্য জায়গায় তারা মাইল খানেক দীর্ঘ বিজনেস পার্ক তৈরী করেছে। এই পার্কগুলো প্রাইভেট সড়ক দ্বারা এন এস এর সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন অংশে হলুদ সাইনবোর্ড দ্বারা সতর্কবানী রয়েছে ট্রেস পাসারদের জন্য।

সব চেয়ে বড় বিজনেস পার্ক টি পার্ক-২৮৫। এটি বেশ কয়েক একর জায়গা জুড়ে প্রশস্ত। সেখানে ব্লকের পর ব্লক বিশাল বিশাল টাওয়ার। আর যে স্থানগুলো অধিক পরিচিত সে সব জায়গায় উদ্দেশ্যমূলক ভাবে নিজেদের উপস্থিতি খাটো করে রাখে।

রাতের বেলায় উজ্জ্বল লাল, হলদে নিয়ন আলোয় জ্বলতে থাকে- বুজ এলেন হ্যামিল্টন, এল-৩ কমিউনিকেশন, সিএসসি, নর্থরোপ-গ্রুম্যান, জেনারেল ডাইন্যামিক্স, এসএআইসি ইত্যাদি।

ফোর্ড মিডের এই গুচ্ছে আড়াইশ র বেশী কোম্পানী আছে। টপ সিক্রেট আমেরিকায় যত কোম্পানী আছে এগুলো তার ১৩ শতাংশ। কোন কোন কোম্পানীর একাধিক অফিস রয়েছে। যেমন নর্থম্যান-গ্রুম্যানের অফিস ১৯টি। আর SAIC র রয়েছে ১১টি। ফোর্ড মীডের প্রায় ৬৮১টি স্থানে এই সব কন্ট্রাকটররা টপ সিক্রেট কাজে নিয়োজিত।

এখানকার কর্মচারীদের কঠিন নিয়মের বশবর্তী হতে হয়। নিয়মিত লাই ডিটেকটরে পরীক্ষা দিতে হয়। কারো কাছে কিছু প্রকাশ করবে না এই মর্মে অসংখ্য ফর্মে সই করতে হয়। বিদেশে গেলে বিশাল রিপোর্ট পেশ করতে হয়। কৌতুহলী প্রতিবেশি উৎসাহী বন্ধুদের কিভাবে সামলাতে হয় এব্যাপারে তাদের আছে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষন। কেউ কেউ ছদ্মপরিচয় ধারন করার জন্য ট্রেনিং প্রাপ্ত।

অত্যাধিক মদপান বা অতিরিক্ত টাকা পয়সা ধার করার জন্য এরা কিন্তু সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স হারাতে পারেন। এই ক্লিয়ারেন্স কিন্তু বেশ মূল্যবান। এই ক্লিয়ারেন্স হল ন্যাশনাল সিকিউরটি এজেন্সীতে চাকুরী করার ছাড়পত্র।

এন এস এতে বিভিন্ন পেশার লোক চাকুরী করে। তবে এখানে মুলত গনিতবিদ দের জয় জয়কার। এখানে আছে ভাষাতত্ত্ববিদ, প্রযুক্তিবিদ, ক্রিপটোলোজিষ্ট, অনেকে আবার আই এস টি জ়ে নামেও পরিচিত যাদের কাজ অনুধাবন, চিন্তা, বিচার বুদ্ধি প্র্য়োগ করে প্রায় অদৃশ্য বিষয় কে দৃশ্যমান করা। এখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাধর কিছু ব্রেইন। যাদের গড়পড়তা আই কিউ সাধারনের থেকে অনেক উপরে।

চলবে

কৃতজ্ঞতাঃ টপ সিক্রেট আমেরিকা
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×