নিজেকে ধার্মিক দাবী করার মত যোগ্যতা আমার নেই, তবে এব্যাপারে আমার কোন দ্বিধা নেই আমি একজন বিশ্বাসী। বিশ্বাসী বলতে আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতালায় বিশ্বাসী। সারা জীবন অনেক বইই পড়ছি, কিন্তু ইদানিং এসে খেয়াল হল ধর্ম বিষয়ে বিশেষ করে নিজের ধর্ম নিয়ে আমার জ্ঞান প্রায় শুন্যের কোঠায়। তাই কিছু বই পত্র কিনে এনেছি, পড়ার জন্য। এই পোষ্ট কোন আস্তিক নাস্তিক তর্ক না, এটা সুস্পষ্ট একটা প্রশ্ন রাখছি, যদি কারো কোন যুক্তি থাকে দয়া করে সে মন্তব্য করুন। কেউ যদি ব্যাক্তিগতভাবে অবিশ্বাসী, নাস্তিক বা সংশয়বাদী হয় তাকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই, তেমনি আমিও আশা রাখব আমার বিশ্বাসী হওয়া নিয়ে কারো কোন সমস্যা যেন না হয়, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধটাই মুল। ধর্মীয় অনুভুতি যার যার ব্যাক্তিগত।
যাই হোক আসি মুল ব্যাপারে। ইসলামে নারীদের অনেক সন্মান দিয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমি সামান্য যেটুকু পড়াশুনা করছি তাতে দেখলাম, কিন্তু এক জায়গায় এসে বার বার আটকে যাচ্ছি, সেটা হল সুস্পষ্টভাবে কোন নারীকে ইসলামে নবী হিসাবে ঘোষনা দেয়া হয় নি, অথবা হলেও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তা জানি না, এনিয়ে সামান্য পড়াশুনা শুরু করলাম, এক্ষেত্রে যাকে নিয়ে সব থেকে বেশী বিতর্ক তিনি হলেন মরিয়াম (অঃ) কে নিয়ে যিনি কিনা ঈশা (অঃ) এর মা। মরিয়াম (অঃ) কি নবী ছিলেন?
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, আবুল হাসান আশআরী, কুরতুবী, আল্লামা ইবনে হাযমের মতামত হচ্ছে নারীরা নবী হতে পারে, এক ধাপ এগিয়ে ইবনে হাযম তো এই দাবী করে বসেন যে হযরত হাওয়া, সারা, হাজেরা উম্মে মুসা (আঃ), আসিয়া এবং মরিয়াম এরা নবী ছিলেন।
অপরপক্ষে হাসান বসরী, ইমামুল হারমাইন শায়েখ আবদুল আযীয এবং কাযী আইয়াসের মতামত হচ্ছে নারীরা নবী হতে পারে না, অতএব মরিয়াম (আঃ) নবী না। যে সব আলেমের মতে নারীরা নবী হতে পারে না তারা নিজেদের মতামতের সমর্থনে পবিত্র কোরান শরীফের নিম্ন লিখিত আয়াত উপস্থাপন করেনঃ “আপনার পূর্বে আমি যতজনকে রসূল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষই ছিল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে। আমি তাঁদের কাছে ওহী প্রেরণ করতাম।” (সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০৯)
তারা বিশেষভাবে হযরত মরিয়ম (আঃ) যে নবী ছিলেন না, এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত প্রমান উল্লেখ্য করেন, “মরিয়ম-তনয় মসীহ রসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর পূর্বে অনেক রসূল অতিক্রান্ত হয়েছেন আর তার জননী একজন ওলী (সত্যবাদী মহিলা)” (সুরা মায়িদা, আয়াত ৭৫)
সুরা নিসায় কুরান মজিদ অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যাক্তিদের যে তালিকা দিয়েছেন তা এ ব্যাপারে চুড়ান্ত প্রমান। অর্থ্যাৎ সত্যবাদীদের মর্তবা নবুয়তের মর্তবার তুলনায় কম, “আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। (সুরা নিসা, আয়াত ৬৯)
আবার যে সব বিশেষজ্ঞ আলেম মহিলাদের নবী হওয়ার প্রবক্তা তারা বলেন, কুরান মযীদ হযরত সারা, উম্মে মুসা, এবং মরিয়ম (আঃ) সম্পর্কে যে সব যে সব ঘটনার বর্ননা করেছে তাতে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে আল্লাহর মালায়েকাগন ওহী সহ নাযিল হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সুস্পষ্ট সু খবর প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে নিজের পরিচয় এবং ইবাদতের হুকুম পৌছে দিয়েছেন। অতেব হযরত সারার ক্ষেত্রে সুরা হুদ এবং সুরা যারিয়াত, উম্মে মুসার ক্ষেত্রে সুরা সুরা কাসাস এবং মারিয়ামের ক্ষেত্রে সুরা আল ইমরান ও সুরা মরিয়ামে কখনো কখনো মালায়েকাদের মাধ্যমে কখনো কখনো সরাসরি আল্লাহ তাদের সম্বোধন করেছেন, আর এসব স্থানে ওহী শব্দটি যে আভিধানিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়নি তা পরিস্কার। যেমনঃ মৌমাছির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে “তোমাদের রব মৌমাছিদের ইংগিত করছেন” (সুরা নাহল, আয়াত ৬৮) এখানে ওহী শব্দটি আভিধানিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে।
বিশেষ করে সুরা মারিয়ামে হযরত মারিয়াম (আঃ) সম্পর্কে যেভাবে বর্ননা দেয়া হয়েছে তাতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে তিনি নবী ছিলেন, কেননা নবী রাসুল দের সম্পর্কে কোরান মজীদে যেভাবে আলোচনা হয়েছে এখানে একইভাবে হযরত মারিয়াম কে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমনঃ
এই কিতাবে ইদ্রীসের কথা আলোচনা করুন, তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী। (সুরা মরিয়াম, আয়াত, ৫৬)
এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন, তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রসূল, নবী। ((সুরা মরিয়াম, আয়াত, ৫৪)
এই কিতাবে মূসার কথা বর্ণনা করুন, তিনি ছিলেন মনোনীত এবং তিনি ছিলেন রাসূল, নবী। (সুরা মরিয়াম, আয়াত, ৫১)
আপনি এই কিতাবে ইব্রাহীমের কথা বর্ণনা করুন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবী। (সুরা মরিয়াম, আয়াত, ৪১)
এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।(সুরা মরিয়াম, আয়াত, ১৬)
অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল। (সুরা মরিয়াম, আয়াত, ১৭)
সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, (সুরা মরিয়াম, আয়াত, ১৯)
মরিয়াম (আঃ) কে কোরান মযিদে যারা “সত্যবাদী” হিসাবে বর্ননা করায় নবী হিসাবে অন্তরায় হিসাবে দেখেন তাদের উত্তর দিতে গিয়ে যারা তার নবী হবার স্বপক্ষে তারা বলেন, যদিও কুরান মযীদে মরিয়ামকে সিদ্দীকা হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে তবে তা নবী হওয়ার পক্ষে কোন অন্তরায় না, যেমন হযরত ইউসুফ (আঃ) সর্ব সমর্থিতভাবে একজন নবী তা সত্ত্বেও তাকে বলা হয়েছে তাকেও সত্যবাদী হিসাবে কোরানে বর্ননা করা হয়েছে। যদি “সত্যবাদী” সম্বোধন ইউসুফ (আঃ) এর নবী হবার পক্ষে অন্তরায় না হয় তবে মরিয়াম (আঃ) এর পক্ষেও তা অন্তরায় না। আর যিনি নবী তিনি নিশ্চয়ই সিদ্দীক বা সিদ্দীকা, এর বিপরীত হবার কোন কারন নেই।
মুসলিম উম্মাহর যে সব বিশেষজ্ঞ আলিম নারীদের নবী হবার পক্ষে মত দিয়েছেন তার মাঝে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাসম (রহঃ) তার “কিতাবুল ফাসল” এ সম্পর্কে সুবিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এখন আমি কিতাবুল ফাসল এর বাংলায় অনুবাদ বা এটা কি বাংলা কিনা জানতে চাচ্ছি, এবং পেলেই কিনে পড়ব।
ধর্ম আমার কাছে বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের মাঝেও আলোচনা হতে পারে, যদি সে ধর্ম নিয়ে সম্যক জ্ঞান রাখে, আমি নিজে প্রায় কিছুই জানি না তাই এ নিয়ে আলোচনার সাহস ও রাখি না। তবে পড়া শুরু করছি। কারো ব্যাক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত দেয়া আমার কাছে চুড়ান্ত অনুচিত। আমার কাছে ধর্ম একটা সুশৃঙ্খল জীবনের চাবি কাঠি। কোন ধর্মই কাউকে খারাপ হতে শেখায় না, যারা এটা ব্যাবসা করতে চায় তারাই ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মন বিষিয়ে দেয়। তাদের থেকে শত হাত দূরে থাকা উত্তম বলেই বিবেচনা করি।
যাই হোক যে আলোচনার জন্য এই পোষ্ট দিয়েছি, কারো কোন যুক্তি বা বিশ্লেষান থাকলে দিলে বাধিত থাকব। ফাতাহুল বারীর, ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৮ তে এ নিয়ে কিছু আলোচনা আছে তবে পোষ্ট বড় হয়ে যাবে বিধায় টানলাম না। দয়া করে কেউ কিছু জানলে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১৪