somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

মৃত্যু ভীতিকে জয় করুন, এক অপার আনন্দের এক সন্ধান পাবেন

৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মৃত্যুকে নিয়ে কেন মানুষ এত ভয় পায়? এই ব্যাপারটা আমার মাথায় কখনো বুঝে আসে না। তবে যাদের অঢেল টাকা পয়সা আছে জীবনের বর্তমান সুখকে উপভোগ করতে পারছে তারাই হয়ত মৃত্যুকে ভয় পায়। অথচ এক বারো কি ভাবছেন জীবনের সুন্দর সমাপ্তি কিন্তু মৃত্যুতেই নির্বাপিত। ধরুন কিছু কাল আগে পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন মারা গেল, খুব কিন্তু বেশী বয়সে না, জীবন কে অত্যাধিক ভালোবাসত, সেই ভালোবাসা থেকে জীবন প্রলম্বিত করার ইচ্ছায় অক্সিজেন টেন্ট বানিয়ে তার মাঝে নিয়ম করে ঘুমাত, যেন জীবনের কোষগুলো টেন্টের মাঝে থেকে অক্সিজেন গ্রহন করে সজীব থাকে আর মাইকেল যেন অন্ততঃ দেড়শ বছর বেঁচে থাকতে পারে। নিয়তির পরিনতি! কি হয়েছিল, কত বছর বেঁচে ছিল সবাই জানেন।

মৃত্যু তো খারাপ কিছু না, অন্তত আমার কাছে। আপনার আমার আগে কয়েক বিলিয়ন মানুষ এই পৃথিবীর বুকে হেটে গেছে, হেসে খেলে সন্তান সন্তানি নিয়ে বেঁচে গেছে আবার নিয়ম মাফিক মাটির নীচে অথবা আগুনে পুড়ে বিলীন হয়ে গেছে।



মৃত্যুর মত অবিসংবিদিত সত্য এই ধরাধামে আর কিছুই নাই, অথচ প্রতি মুহুর্তে আমরা এটাকে অস্বীকার করে জীবনকে টেনে লম্বা করার ইচ্ছা রাখি। কিন্তু একটা উদাহরন দেখান তো যেখানে কেউ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বেঁচে ছিল! না কোন উদাহরন আপনার সামনে নাই।

মৃত্যুকে কেন আপনি জীবনের অংশ হিসাবে ভাবতে পারছেন না? কেন একে আলাদা একটা ভয়াবহ সত্ত্বা হিসাবে দেখছেন? যে মানুষটা এই মুহুর্তে মারা যাচ্ছে বা গেল, সেও কিন্তু আপনার মত জীবনকে ভালোবেসে একে চেয়েছিল আরো অন্তত এক মুহুর্ত বেশী বেঁচে থাকতে, কিন্তু সে কি পেরেছে? না পারে নি। তবে এনিয়ে আপনি আমি কেন এত ভাবব? অবশ্যাম্ভাবী এই ব্যাপারটাকে আতংক না জীবনের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসাবেই মেনে নিই না কেন?

হ্যা মৃত্যুর প্রকারভেদ আছে, কেউ খুব স্বাভাবিক ভাবে কোন এক সময় হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বন্ধ হয়ে অনন্তলোকে যাত্রা করে, আবার কেউ কেউ অনেক দিন রোগে ভুগে কষ্ট পেয়ে ওই একই লোকে যায়, আবার কেউ কেউ কোন দুর্ঘটনায় অদেখা ভুবনে যাত্রা করে, হ্যা আমার যদি কোন চাওয়া থেকেই থাকে তবে সেটা হোক যেন খুব বেশী কষ্ট না পেয়ে বা আপনজনদের কষ্টে না ফেলে পরপারে চলে যাওয়া।



কেন আপনি মৃত্যুটাকে একটা অদেখা কোন জায়গায় ভ্রমনের সুযোগ হিসাবে দেখছেন না? না, সেই অদেখা ভুবন দেখতে গিয়ে নিজ হাতে নিজের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেবার মানে নেই, যত দিন “জীবন” নামক কিছু একটা বয়ে বেড়াতে হবে ততদিন সেটাকে বয়ে এই দুনিয়ায় ভালোভাবে বেঁচে থেকে মৃত্যুকে ভয় না পাওয়ার মাঝেই আমার কাছে স্বার্থকতা।

আপনি কোথা থেকে এসেছেন? একটা ডিম্বানু অথবা শুক্রানুর মিলনের মাঝে দিয়ে, তার আগে কোথায় ছিলেন? কিভাবে ছিলেন? “জীবন” নামক বস্তুটা কি অতি ক্ষুদ্র কোন শুক্রানু ডিম্বানুর মিলনের মাঝে নিহিত? কি অদ্ভুত! জীবন যদি এত অদ্ভুত হতে পারে তবে সেক্ষেত্রে আমি তো দেখি মৃত্যুটা অতি সাধারন। কোন উত্তেজনা নেই, ধুকপুক করে চলতে থাকা হৃদযন্ত্র নামক একটা শারীরিক অঙ্গ থেমে যাওয়ার নামই মৃত্যু।



মৃত্যুকে নিয়ে আমিও একটা সময় কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলাম, হয়ত কিছুটা ভীতিও আর সবার মত। কিন্তু জীবনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা সময় এই মৃত্যুকে নিয়ে ভাবার সময় পেলাম, খুব কাছ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবার সুযোগ আসল, প্রতি মুহুর্তে আতংক বিরাজ করত, এই বোধহয় মৃত্যু হয়, কিন্তু এক পর্যায়ে ভীতিটা কেটে গেল। জীবনের মানেটা মনে হয় সে মুহুর্তে বুঝে গেলাম।

আমি কেন ভয় পাচ্ছি? এটাতো এমন না যে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা পরিস্থিতিতে মানুষের মৃত্যু হয়, মৃত্যু মানুষের অমোঘ সত্য। ভয়ের কিছু নেই। আমার আগে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ এই স্বাধ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে। তার মাঝে ভালো, মন্দ, চোর, ডাকাত, সাধু, সন্ত সবাই আছে। তবে কেন এই অহেতুক ভীতি? কেন আমি স্বাভাবিক ভাবে একে আমন্ত্রন জানাচ্ছি না? জানি এখানে এসে কেউ কেউ হয়ত বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছেন। মৃত্যুকে আমন্ত্রন! না ঠিক আমন্ত্রন হয়ত হবে না, আসলে সঠিক শব্দটা আমি এই মুহুর্তে চয়ন করতে পারছি না। তবে এই উপলদ্ধি পেতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতির মাঝে দিয়ে যেতে হবে। অথবা পরিস্থিতি তৈরী করতে হবে।

আপনি কি জানেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীরা কিভাবে যুদ্ধ বন্দীদের অত্যাচার করত তা উপলদ্ধি করার জন্য কেউ কেউ টাকা দিয়ে সে অত্যাচার অনুভব করার জন্য এ ব্যাপারে সার্ভিস দেয় এমন নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অত্যাচারের সেবা নেয়। না আমি আপনাকে টাকা দিয়ে মৃত্যু বা অত্যাচারের সেবা কিনতে বলছি না। সুযোগ বা নিজে থেকে সে অবস্থায় পতিত হলে অল্প কিছু মানুষ সে অনুভুতির কাছাকাছি যেতে পারে। অনুভব করতে পারে।

মৃত্যু আপনাকে আমাকে এমন এক নতুন অনুভুতির স্বাধ দেবে যে স্বাধ আপনি একবারই নিতে পারবেন। মাত্র একবার, এবং সে স্বাধের অনুভব আপনি বলার জন্য আর ফিরে আসবেন না। কি অসাধারন একটা ব্যাপার তাই না? আচ্ছা মৃত্যুর পর কি স্বর্গ, নরক, দোযখ, বেহেশত এগুলো দেখা যাবে? মৃত্যু কি নিকষ অন্ধকার?



হ্যা এই নিকষ অন্ধকার অনুভুতি থেকেই মৃত্যুভীতি মানুষকে চালিত করে। তবে আমার কেন যেন মনে হয় মৃত্যু মানে নিকষ কোন অন্ধকার অনুভুতি না, তা সে অন্য যে কোন অনুভুতিই হোক।

সে কি অন্য কোন জগৎ? যে জগতে আপনি আবার এই জগতের মত অন্য কোন অনুভুতিতে সেটা হয়ত আমাদের চেনা কোন অনুভুতি থেকে আলাদা সেই অনুভুতিতে বাস করবেন?

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে অনেক বড় বড় মানুষের অপার কৌতুহল ছিল, যাদের জীবনাচার বা মানব সভ্যতায় তাদের অবদান আমাদের কৌতুহলী করে, রবীন্দ্রনাথ, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, নিউটন, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছাড়াও অনেক মনীষী জীবনের অপর যাত্রা যাকে আমরা মৃত্যু নামে অভিহিত করি তা নিয়ে অপার কৌতুহলী ছিলেন।

মৃত্যু ভীতিকে জয় করুন। অপার রহস্যের এক সন্ধান পাবেন। তবে মৃত্যু ভীতির সব থেকে বড় কারন দুটো। মানুষ ভেদে একঃ অঢেল টাকা পয়সা জীবন কে ভোগে মত্ত রেখে মৃত্যুকে ভয় পাওয়ায় দুইঃ ভালোবাসা, প্রিয়জনদের ছেড়ে যাবার মায়া। সামান্য চেষ্টা করলে এই দুটোর কোনটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটু ভাবুন, অথবা অন্য কিছু কিনা সেক্ষেত্রে অতি অল্প চেষ্টায়ই এথেকে মুক্ত হয়ে মৃত্যু ভীতিকে উপেক্ষা করতে পারবেন, পারবেন সময় হলে শান্ত শিষ্ট ভাবে স্মিত হেসে সবাইকে ভালোবেসে অনন্ত যাত্রায় গমন করতে। ভয় কি, আপনার আমার আগে কোটি কোটি মানুষ ওই যাত্রায় গিয়েছে, তাদের যা হয়েছে আপনার আমারো তাই হবে, নতুন কিছু না।

সময়ের সাপেক্ষে জীবনের তুলনায় মৃত্যু অনেক বেশী মহিমান্বিত, অনেক বেশি রহস্যময়। অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৫৫
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×