----- মৃত্যুর পরে স্রষ্টা আমাকে সরাসরি নরকে পাঠিয়ে দিলেন..কিছুদিন পরে তিনি কইলেন..দ্যাখ,তুই দুনিয়াতে আকাম যেমন করছস,ভালা কামও কিছু কিছু করছস..তোরে দুইটা অপশন দিতাছি,বাইচ্ছা ল…
ক. আজীবন নরকে পচবি
খ. শের-ই-বাংলা থেকে গ্রাজুয়েশন... করে আসবি..
হাসিহাসি মুখে যখন ‘খ’ অপশনটি বেছে নিচ্ছিলাম তখন নিজেও জানতাম না এটা আমার জীবনে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান পেতে যাচ্ছে….!!
বিধাতাও বুঝতে পারলেন,ব্যাটা নিজেকে যতই ব্রিলিয়ান্ট ভাবুক না কেন…ব্যাটা আসলে একটা বোকস ছাড়া আর কিসু না…!
ক্লাস শুরু…প্রথম ক্লাস।বহুত মান্জা-টান্জা মাইরা ক্লাসে আসলাম, জানি আমার ট্যালেন্টে ধারে কাছেও কেউ আসতে পারবে না।মনে মনে কল্পনা করে নিলাম,স্যারদের সব প্রশ্ন যখন ও স্মার্টলি ঝটাঝট অ্যানসার দি্বো তখন ক্লাসের মেয়েগুলো ক্যামন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে সেই সাথে ইর্ষান্বিত ছেলেগুলোও।
স্যার ক্লাসে এসেই রোলকল করলেন…এরপর সবার নাম আর বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করলেন। বাসা কইলাম গাইবান্ধা..স্যার সাথেই কইলেন,বাসা গাইবান্ধা এইটা না বললেও হইত..এইটা তোমার গরুটাইপ চেহার দেইখাই বুঝা যায়..এইটা কি টিজ না কমপ্লিমেন্ট বুঝতে না পেরে মদনমার্কা একখান হাসি দিয়া বইসা পরলাম।
বেশিক্ষন বসতে পারলাম না ,রোলকল শেষ হতেই স্যার দাড় করায়া প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল,সহজ প্রশ্ন শুইনা হাসব কি কাদব বুঝতে পারলাম না….এই প্রশ্ন কিনা আমারে জিগায়!!!কিন্তু ওই যে একটু সময় দেরী করসি সেইখানেই বাধল গ্যান্জাম..স্যার মনে করল উত্তরটা পারিনা…বিরাট চেইতা গেল স্যার।হায়রে,গাধা-গরু বইলা একাকার অবস্থা!শেষমেষ কিনা ক্লাস থেকে বের করেই দিল..
বের হওয়ার সময় আড়চোখে দেখতে পেলাম ক্লাসের সবগুলো মেয়েই তাকিয়ে আছে,তবে সে যে দৃষ্টির কথা ভেবেছিলাম সে দৃষ্টিতে নয়..কিছুদিন পড়াশোনার পরেই বুঝতে পারলাম, গ্রাজুয়েশন আমার জন্য নয়…!!ফলাফল,লাষ্ট দুইটা ক্লাসটেষ্টে তিন এর উপরে মার্ক উঠাতে পারিনি…!
এইভাবে দেখতে না দেখতেই ফাইনালও চলে এল..আর তখনি বুঝতে পারলাম গযব কতপ্রকার ও কি কি ...!!অবশ্য এর মাঝে শিট নামক এক বস্তুর সন্ধান পেলাম যেটা পড়লে নাকি নিশ্চিত থাকা যায়…পরীক্ষার আগে ঘুরে টুরে বিভিন্ন জায়গা থেকে জোগার করে সে যখন পড়তে বসলাম তখন পরীক্ষার বাকি আর এক দিন…!
পরীক্ষায় তিন এর নিচে জিপিএ পেয়ে আবারও প্রমান করে দিলাম..ট্যালেন্টরা কখনই এইসব তথাকথিত পরীক্ষায় ভাল করেনা…।
…মনের দুখে সে টিউশনি করা শুরু করলাম..একেবারে প্রফেশনালি..
কিন্তু ওই যে,কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না…পড়াইতে গিয়া ক্লাস ৯এর ছাত্রীর দিকে তাকায়া থাকতাম ড্যাবড্যাব কইরা…ততদিনে সে বয়লারের সংজ্ঞা শিখতে শুরু করেছে এবং বুঝলাম..চলমান বয়লারের উদাহরন হিসেবে ছাত্রীর নামটি সহজেই দিয়ে দেওয়া যায়…
এইসব কষ্টকর জীবনের মাঝে মজাও যে ছিলনা তাও নয়ঃএকটা সেমিনারে অংশগ্রহন করলাম, একটা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলাম,দুই মিনিট দেওয়ার পরেই সবাই হাততালি থামায়া দিতে চাইসিলো…তাতেও ভ্রুক্ষেপ না করে চালাইতে থাকলাম আরও মিনিটখানে্ক বক্তব্য দেওয়ার পর যেসব গালি আসতে থাকল অডিয়েন্স থেকে তাতে উপস্হাপক নিজেই জোর করে স্টেজ থেকে নামাইয়া দিল।
আসতে আসতে বুঝতে পারলাম,…"বুঝল না..এই শের-ই-বাংলায় কেউ আমার প্রতিভার মুল্যটা বুঝল না… "
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমি এখন গ্রাজুয়েশনের ৩য় লেভেলে …আর কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে যাব চিরশান্তির আবাস..নরকে।তবে হয়ত চলে যাব…কিন্তু রয়ে যাবে টাওয়ারের দেয়ালে আমার কাপা কাপা হাতের লেখা..”কষ্টে আছি”!!!
....................................(সমাপ্ত)