somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেক কিভু থেকে লেক টাঙ্গানিকার বীচে-৩, বুজুম্বুরা

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুজুম্বুরার কাছে রাস্তার মান একটু ভাল, প্রায় ঘন্টা খানেক আমরা খারাপ রাস্তায় চলেছি।শহরের বাহিরে বুজুম্বুরা বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর দিয়ে ও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মী এবং এন জি ও কর্মীরা আশেপাশের দেশে যাতায়াত করে। আমরা শহরের ভেতরে ঢুকে গেলাম। রাস্তা বেশ খোলামেলা, ট্রাফিক জ্যাম তেমন নেই শহরের এই অংশে। শহরের ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে আমরা ডাউন টাউনে চলে এলাম। এর পাশেই মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। আমাদের ড্রাইভার ও রুয়ান্ডিজ মুসলিম। শহরে মোটামুটি ট্রাফিক জ্যাম আছে। দুপুর হয়ে গেছে, আমরা একটা হোটেলে এলাম। মোটামুটি থাকা যায়। হোটেলে ব্যাগ রেখে আবার পথে বের হলাম। ডাউন টাউন বুজুম্বুরা বুজুম্বুরা শহরে অনেক মানি এক্সচেইঞ্জ আছে, হোটেল থেকে বের হয়ে বেশ জ্যামে পড়লাম। তারপর বড় একটা বাজার এলাকাতে এলাম। এখানে প্রচুর ফল ও তাজা সবজি পাওয়া যায়। গাড়ি পার্ক করে আমরা টাকা বদলে নিলাম। ডলারের বিনিময়ে প্রায় ১৬৫০ ফ্রা পাওয়া গেল। মোটামুটি জমজমাট শহর। মানুষজন তাদের নিত্য দিনের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। আমরাও দেরী না করে টাঙ্গানিকা লেকের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।বুজুম্বুরা শহরের রাস্তায়
বুজুম্বুরা শহরের বেশ বড় একটা অংশ সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠেছে। পাহাড়ের উপর থেকে টাঙ্গানিকা লেক দেখতে অপূর্ব লাগে। সকালের সূর্যের আলো পাহাড়ের গায়ে শহরের উপর পড়ে তখন লেক দেখে মনে হয় তা কুয়াশার চাদরে ঢাকা। বিকেল বেলা লেকের উপর সূর্যের আলো পড়ে তখন লেকের ঢেউ তার উপর আলোর খেলা দেখতে অপূর্ব লাগে। একদিকে দুরের কঙ্গোর নীলচে পাহাড়, লেক আর অন্যপাশে সোনালি বালুর বীচ, সব মিলিয়ে লেক টাঙ্গানিকা পর্যটকদের আকর্ষণ করবেই।





রাস্তার পাশেই বীচ, সেসব বিচে সবাই যায়, তবে কিছু কিছু বীচ বেশ সাজান এবং রিসোর্টের মত বানানো। আমরা প্রথমে সাধারণ বীচে গেলাম, সেখানে অনেক মানুষের জটলা, একটা বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে বীচে, গান বাজছে, ফেরিওয়ালা ফেরী করে আইসক্রিম বিক্রি করছে, প্রাণচঞ্চল বীচ। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে বুজুম্বুরার বিখ্যাত বীচ বোরা বোরার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। ভেতরে ঢুকতে হলে কার্ড নিয়ে যেতে হয়, গেইটে দারোয়ান আছে, আমরা গাড়ি নিয়ে ভেতরে গেলাম।




সুন্দর করে সাজানো এই রিসোর্ট এলাকা। রিসিপসনের পাশেই বার একটু এগিয়ে গেলে রেস্টুরেন্ট ও সুইমিং পুল। অনেক বেড লাগান আছে পুলের পাড়ে। বাহির থেকে বীচে যাওয়ার একটা গেইটও আছে, কাঠের পাতাতন বিছিয়ে রাস্তা বানানো। এখানেও বার আছে বসার ব্যবস্থা আছে। ভেতরে বীচে গিয়ে মনটা ভাল হয়ে গেল। পরিস্কার ঠাণ্ডা বাতাস, লেকের বড় বড় ঢেউ, হলুদ বালির বীচ সব মিলিয়ে একটা সুন্দর বিকাল।




দেশী বিদেশী কিছু ভ্রমণকারী লেকে সাঁতার কাটছে, এই লেক বেশ গভীর এবং হঠাৎ খাড়া ঢাল বলে বীচ থেকে বেশিদুরে যাওয়া যায় না। বাচ্চারা বীচ এবং পানির পাশে খেলা করছে। বীচে নৌকা আছে, ইচ্ছে করলে তাতে করে লেকে বেড়ান যায়। সুন্দর প্রকৃতি আর সাজানো আয়োজনের ছবি তুললাম কিছু। বীচের পার ধরে একমনে হাঁটছি, হঠাৎ পানিতে পা ভিজাতে ইচ্ছা করল, সাথে সাথে নেমে গেলাম পানিতে, মিষ্টি পানির এই লেকে সাগরের মত ঢেউ। বালির দানাগুলো বেশ মোটা তাই একটু পরেই ঝরে পড়ে।

বীচ থেকে একদিকে বুজুম্বুরা শহর আর অন্যদিকে দূরে কঙ্গোর নীল পাহাড়ের সারি দেখা যায়। বিকেল কিছুক্ষণ সুন্দর সময় কাটিয়ে আমরা ফিরে চললাম হোটেলের দিকে। পথে গাড়ি থামিয়ে কলা আর কমলা কিনে নিলাম। ফ্রেস ফল খেতে দারুন। সন্ধ্যায় হোটেল আশেপাশের এলাকায় বেরালাম কিছুক্ষণ। ছুটির দিন তাই বারগুলোতে আফ্রিকান মিউজিক বাজছে, লোকজন বিয়ার নিয়ে আনন্দ করতে বসেছে। শুনেছি রাতে এই শহর তেমন নিরাপদ না , তাই হোটেলে ফিরে এলাম। ফরাসী ভাষাভাষী এই দেশে ভাষায় দক্ষতা না থাকলেও কাজ চালিয়ে নিলাম।

পরদিন সকালে বুজুম্বুরা শহরে সূর্যোদয় দেখলাম। প্রথমে একটু কুয়াশার মত ছিল খুব ভোরে, তারপর আস্তে আস্তে ঝলমলে রোদে শহরটা হঠাৎ রঙিন হয়ে উঠে। বেশ কিছুক্ষণ দুরের পাহাড়ের ঘরবাড়ির উপর সূর্যের আলোর খেলা মন ভোরে দেখি। বেলা হতে মানুষজনের চলাচল শুরু হয়। আমাদের ও আজ ফিরতে হবে বুকাভুতে। আবার পথে নামি। সেই একই পথে প্রথমে রুয়া বর্ডার তারপর রুসিজি ১ বর্ডার। আজ কেন যেন মনে হল বেশ তাড়াতাড়ি বাজে রাস্তাটুকু পার হয়ে এসেছি। রুয়ান্ডা ইমিগ্রেসানের সিল নিয়ে রুসিজি নদীর উপরের ব্রিজ পার হয়ে হেঁটে কঙ্গোর ভেতর চলে এলাম। এখানে এন্ট্রি সিল নিয়ে আমরা আবার বুকাভু শহরে ফিরে এলাম।

দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বুকাভু শহর দেখতে বের হলাম। স্বাধীনতা স্কোয়ার পার হয়ে আমরা পাহাড়ী রাস্তা ধরে উপরে উঠতে লাগলাম। এখান থেকে ডানে লেক কিভুর মনোরম দৃশ্য দেখলাম। বিকেলের সূর্যের আলো এখন পাহাড়ের দিক থেকে লেক আর শহরের উপর পড়ছে। শহরের বাড়িঘরের রঙিন ছাদ গুলোর উপর আলো পড়ে রঙিন পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। আমরা এখানে কিছু ছবি তুললাম। আমাদের দেখে ছোট ছোট বাচ্চারা এগিয়ে এলো তাদের সাথে ছবি তুললাম কয়েকটা। তারা বেশ খুশি। দেশের চলমান যুদ্ধ, সহিংসতা নানা সমস্যা তাদের মনকে এখনো কলুষিত করেনি। এই শিশুদের জীবন আগামীতে যেন আনন্দের হয় আল্লাহর কাছে তাই চাইলাম।

সন্ধ্যায় আমরা শহরের পেনারোমা হোটেলে এলাম, এটা কিভু লেকের পাড়ে। রাস্তা থেকে তেমন কিছু বোঝা যায়না, মনে হয় চার তালা হোটেল। ভেতরে ঢুকে নীচে আরও পাঁচ তালা, সেখানে লেকের পাড়ে বার ও সুন্দর বসার ব্যবস্থা, বাগান, শেড দেয়া এলাকা সবই আছে। একটু উপরে আছে সুইমিংপুল। পুল ও বার এলাকা থেকে লেকের দিকে তাকিয়ে সময় কেটে যায়। পড়ন্ত বিকেলে এখানে কিছু ছবি তুললাম। এখানে বুফে সিস্টেমে ডিনারের ব্যবস্থা আছে। আমরা পিজা ও কোমল পানীয়র অর্ডার দিলাম। দূরে লেকের কাল পানিতে একলা একটা ডিঙ্গি নৌকাতে বসে এক জেলে মাছ ধরছে। দেখে মনে হয় সময় তার কাছে এসে থেমে গেছে। সন্ধ্যার পর শহরের আলো আস্তে আস্তে মিটিমিটি করে জ্বলতে শুরু করেছে। দূর পাহাড়ের কাছের রুয়ান্ডার জনপদে ও আলো জ্বলছে। আমাদেরও উঠার সময় হয়ে এলো। বুকাভুর কিভু লেকের পাড়ের একটা সুন্দর সন্ধ্যা কাটানোর স্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম আমাদের বাসায়।

বুকাভুর লেক কিভুnপাড়ে আছে শান্তি,
সুবাতাস বয়ে চলে
মনেতে প্রশান্তি।

পরদিন সকাল বেলা আমরা বুকাভু থেকে কাভুমুর দিকে রওয়ানা হলাম। আবার সেই পথ। এবার লেক কিভু ডানে রেখে আমরা পাহাড়ি পথ বেয়ে চলছি। সকাল্ল বেলা লেক কিভুতে জেলেরা নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করছে। তিনটা নৌকা একসাথে বেঁধে জাল লাগিয়ে আস্তে আস্তে দাঁড় বেয়ে তারা এগিয়ে যায়। মাছ জালে আটকা পড়লে তারা তা তুলে নেয়। লেকের পানিতে প্রচুর মিথেন গ্যাস আছে তাই গভীর পানির মাছ এখানে বাঁচে না। লেকের উপরের পানিতেই ছোট মাছ ঘুরে বেড়ায়। এই অগভীর জলে তেলাপিয়া আর ক্যাটফিস বা মাগুর মাছ হয়।
লেকে এখন বেশ কিছু লঞ্চ চলতে দেখলাম। এগুলো বুকাভু থেকে গোমা আর রুয়ান্ডার মধ্যে যাত্রী ও মাল পরিবহন করে। আমরা লেক্র দৃশ্য দেখে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে গেলাম। এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে আমরা কাভুমু এসু পৌছালাম। এই জনপদ পাহাড়ি এবং অনেক উঁচুতে, তাই বেশ শীত লাগছিল সকাল বেলায়। আমাদের বিমান সময় মত উড়াল দিল, আমরা বুকাভু ছেড়ে এন্টেবির পথে আকাশপথে রওয়ানা হলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৩০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×