পরদিন সকাল বেলা কুনমিং শহরে মার্কেট দেখতে গেলাম। আমাদের হোটেল থেকে এক ঘণ্টার পথ। বিশাল মার্কেট , ম্যাপ দেখে এর নানা জায়গাতে যেতে হয়। সিঁড়ি , এক্সেলেটর লিফট সবই আছে। এটা বিশাল একটা পাইকারি বাজার। কি না পাওয়া যায় এখানে। জামা কাপড় , জুতা কেডস, ব্যাগ সব জিনিসপত্র সবই আছে এখানে। এক জায়গাতে কোন কিছু পছন্দ হলে তা না কিনে একটু ঘুরে দেখতে গেলেই পথ হারানোর সম্ভবনা শতভাগ। দুই একবার এভাবে ঘুরে পছন্দ হলে তখনই কিনে ফেললাম।
এর পাশেই ইলেক্ট্রনিক মার্কেট, সেখানে যাওয়ার সময় হয়নি। আজকে আমাদের গন্তব্য দাইচি লেক। বাজার শেষ করে রওয়ানা হলাম। এটা শহরের আরেকদিকে। আবহাওয়া বেশ ভাল, আলোকিত দিন, না শীত না গরম হালাকা বাতাস আছে। দাইচি লেকের পাশে রাস্তা। পাশে সুন্দর ফুটপাত এরপাশে বাগান ও ছোট ঝোপ। সিঁড়ি দিয়ে লেকের পাড়ে উঠতে হয়। পার বাঁধানো, অনেক প্রসস্থ ওয়াকওয়ে। মাঝে মাঝে শেড দেয়া বসার জায়গা, খোলা জায়গাতে বেঞ্চ পাতা। সব মিলিয়ে পরিস্কার পরিছন্ন এলাকা। লেকের মাঝামাঝি জায়গাতে একটা জেটি আছে। এখান থেকে লেক ক্রুইজে যাওয়া যায়। বেশ কিছু বোট আছে লেকে ভ্রমনের জন্য।
দাইচি লেক- কুনমিং
লেকের অন্য পড়ে পাহাড়, সেদিকে হালকা কুয়াশার মত দেখা যায়। বেশ বড় পাহাড়ের সারি। লেক এলাকাতে হালকা খাবারের দোকান আছে, সেখান থেকে জুস ও আইসক্রিম কিনলাম। লেকের পাড়ে ওয়াক ওয়েতে বেশ সুন্দর একটা ভাস্কর্য আছে, সেখানে ছবি তুললাম। এখানে আজকে কোন বিদেশিকে দেখলাম না। সব চীন দেশের মানুষ, তারা তাদের নিজেদের দেশ, শহর দেখতে বের হয়েছে। কিছুক্ষণ লেকের পাড়ে থেকে আমরা ফেরার জন্য তৈরি হলাম। আমাদের ড্রাইভার সিটি সেন্টারে যাব কিনা জানতে চাইল। এখানে প্রতিটা স্পটে যেতে আলাদা আলাদা চার্জ লাগে, আমরা রাজি হয়ে গেলাম সাথে টাকার মিটারও ঘুরল।
বিকেল বেলা আমরা ডাউন টাউনে এসে পৌঁছালাম। গাড়ি পার্ক করে আমরা চারপাশ দেখতে বের হলাম। সিটি সেন্টার সুন্দর করে সাজান। শহরের মাঝে মোজাইক করা বেশ বড় একটা এলাকা নিয়ে এই সিটি সেন্টার। এখানে দুপাশে দুটো সুন্দর চীনা কারুকাজ দিয়ে সাজান গেইট আছে। এর সামনে দিয়ে রাস্তা , মাঝামাঝি একটা টি জাংসান, সেখানে বিলবোর্ড ও লতা দিয়ে সাজান। এই খোলা এলাকায় রোবটের মত অস্ত্র হাতে নিয়ে পুলিস ডিউটি করছে। দুইজন পুলিস মূর্তির মত নাড়াচাড়া না করে দাঁড়িয়ে থাকে।
ডাউন টাউন –কুনমিং
এখানে হস্তশিল্পের বেশ বড় বাজার। এই বাজারে স্থানীয় এবং এই প্রদেশের নানা জায়গা থেকে হাতে বানানো জিনিষপত্রের দোকান আছে। অনেক পাথরের জিনিষ এখানে পাওয়া যায়। দোকানিরা বেশিরভাগ মহিলা। চীনের নানা জাতীয় চা, হারবাল ঔষধ ইত্যাদির ও দোকান আছে। বেশ সুন্দর সুন্দর জিনিষ তবে এখান থেকে এখন কিছু কেনা যাবে না। আমদেরকে আরও কিছু দিন যেহেতু চীন দেশে থাকতে হবে তাই বোঝা বাড়াতে চাইনা। আমরা এক ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে হোটেলে ফিরে এলাম।
পরদিন আমাদেরকে ট্রেনে করে বেইজিঙের পথে রওয়ানা হতে হবে। সন্ধ্যা বেলায় কাছের বড় একটা স্টোরে গিয়ে পথে খাবার জন্য ফল ,জুস , বিস্কিট, ব্রেড ইত্যাদি কিনলাম। রাতে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
কুনমিং রেলওয়ে স্টেশান
বেশ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। নাস্তা সেরে সাড়ে সাতটার দিকে কুনমিং স্টেশনের পথে রওয়ানা হলাম। স্টেশনে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা লাগল ।বেশ সুন্দর সাজানো স্টেশান, ভেতরে ঢুকতেই টিকেট চেকের ব্যবস্থা। অনেকগুলো কাউন্টারে চেকার বসে আছে। টিকেট দেখিয়ে নিদিষ্ট পথ দিয়ে ভেতরে যেতে হয়। টিকেট না থাকলে প্লাটফর্ম টিকেট কিনতে হয়। ভেতরে ঢুকে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে আমাদের ট্রেনের প্লাটফর্ম নাম্বার দেখলাম। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হল। এখানে স্ক্যানার মেসিনে ব্যাগ চেক করে, পাসপোর্ট ও টিকেট দেখে প্লাটফর্মে ঢুকার অনুমতি দেয়। আমাদের টি ২৪০ ট্রেনের যাত্রীদের জন্য ২৯-৩০ নাম্বার বে তে বসার ব্যবস্থা আছে। সব সুন্দর করে সাজান।প্লাটফর্মের এই জায়গাতে বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি কেনাকাটার জন্য দোকান আছে। সেখান থেকে পানি আর বিস্কিট কিনলাম পথে খাবার জন্য। দাম একটু বেশি হলেও পরিবেশ বেশ সুন্দর। প্রায় এক ঘণ্টার উপর আমরা প্লাটফর্মে অপেক্ষা করলাম, বসার ব্যবস্থা ভাল কাজেই কোন সমস্যা হয়নি। সময় মত ট্রেনে উঠার ঘোষণা দিল।