
হলিউড ওয়াক অব ফেইম
পহেলা অক্টোবর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ক্যালিফোর্নিয়া ক্লিন এয়ার ডে পালন করে। সারা দিন আজ লস এঞ্জেলেসের সব মেট্রো লিংকে ফ্রি রাইড দিয়েছে। বাসে বা মেট্রোতে কোন টিকেট লাগেনি। টেপ কার্ড পাঞ্চ করার জায়গাতে ক্যালিফোর্নিয়া ক্লিন এয়ার ডে লিখা স্টিকার লাগিয়ে রাখা ছিল। সকাল বেলা খবরটা পাইনি, দুপুরের পর পেলাম। ঠিক তখনি বের হয়ে গেলাম একটু ঘোরাফেরা করার জন্য। বেশ কিছুদিন ধরে লস এঞ্জেলস শহরে আছি একটু কাজে। এখানে মেট্রোতে ১.৭৫ ডলার কাটে একবার ভ্রমণ করলে। এক কি দু ঘণ্টা এই একটা পাঞ্চে চলে এর বেশী সময় লাগলে আবার নতুন করে কার্ডে টাকা কাটে। এর মাঝে বাস বা ট্রেন বদল করলে ট্রান্সফার দেখায় টাকা কাটে না।
সকালের দিকে জন গিম লেটের লিখা ট্রাভেলস থ্রু পারাগুয়ে বইটা পড়ছিলাম। বেশ মজা পাচ্ছিলাম পড়তে গিয়ে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো সম্পর্কে আমাদের দেশে খুব কম বই আছে এবং বাংলাদেশী পর্যটক দেশগুলো নিয়ে তেমন একটা বই লিখে নি। অন্য দিকে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক পর্যটক সেসব দেশ ভ্রমণ সম্পর্কে অনেক বই লিখেছে। আমার ব্যক্তিগত সখ থেকে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের কিছু বই সংগ্রহ করে পড়া শুরু করেছি। ব্রিটিশ এই লেখক অনেক বছর ধরে পারাগুয়ে তে যাতায়াত করেছে ও বেশ অনেক দিন সেখানে বসবাস ও করেছেন। তাকে পারাগুয়ে প্রেমিক ও বলা যেতে পারে। দেশটিতে স্প্যানিশ ভাষার পাশাপাশি গুয়ারনি নামের স্থানীয় ভাষা বেশ জনপ্রিয়। দেশের প্রায় সবাই এই ভাষায় কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করে।
আজকের ভ্রমণের খবর পেয়ে বই রেখে রওয়ানা হলাম। প্রথমে বাসে করে উইলসায়ার আসলাম, এর কাছেই ইসলামিক সেন্টার। বাংলাদেশীরা এই এলাকার আশেপাশে বসবাস করে। আজকে আমাদের গন্তব্য আলাউদ্দিনের দোকান। এখানে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা অনেক জিনিস পাওয়া যায়। বাংলা খাবারের জন্য এক অনেক নাম আছে। এখানে হালাল চিকেন, বিফ ও মাছ পাওয়া যায়। দাম একটু বেশী তবে হালাল বলে কথা। অনেক মিষ্টি দেখলাম, পাউন্ড বার তেরো ডলার, বেশী ও আছে। অনেক দিন পর লস এঞ্জেলসে আসার পর করলা দেখলাম এখানে। অন্যান্য মলেও এখানে বেশী সব্জি দেখা যায় না, বিশেষ করে আমাদের পরিচিত সব্জি। বাংলাদেশের পরিচিত সব্জিগুলো এখানে পাওয়া যায়। হেঁটে ওয়ালগ্রিন মলে গেলাম, এখানে চকলেট আছে মাঝে মাঝে সেল দেয় আজ তেমন কিছু ছিল না। আমেরিকাতে বাংলাদেশের মত গুড়ো দুধ পাওয়া যায় না। আছে কেবল টিনের নিডো। দাম বেশ চড়া তবে মাঝে মাঝে দাম কিছু কমে।
এখান থেকে হেঁটে উইলসায়ার মেট্রো স্টেশনে চলে আসলাম। আজ স্টেশনের কার্ড পাঞ্চ করার গেইট খোলা। তবে মানুষ তেমন নাই, গাড়ি নিয়মিত চলছে। অনেক নীচে প্লাটফর্ম, এক্সেলেটর দিয়ে নামছি তো নামছি। এখানে দুটো প্লাটফর্ম আছে। আমরা যেটাতে যাচ্ছি তার মাঝামাঝি আরেকটা আছে। সেখান থেকে অন্য লাইনের ট্রেন চলে। আজকে বি লাইন বা রেড লাইনের শেষ ষ্টেশনে যাওয়ার ইচ্ছে হল। এই লাইনে ইউনিয়ন ষ্টেশন থেকে নর্থ হলিউড পর্যন্ত ট্রেন চলে। এর আগে এই ষ্টেশনে কখন ও আসা হয়নি। এই পথেই হলিউডের তারকাদের ছবি দেয়া বিশাল ওয়াকওয়ে আছে। এটাকে হলিউড ওয়াক অব ফেইম বলে। এখানে আগে এসেছিলাম। শেষ ষ্টেশন নর্থ হলিউডে নেমে বাইরে আসলাম। বেশ খোলামেলা ও পরিছন্ন ষ্টেশন এলাকা। এখানে বাসের জন্য বিশাল এলাকা রয়েছে। এখান থেকে শহরের নানা জায়গায় বাস চলে। সূর্যের আলো আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। আমরা এলাকা ঘুরে আবার ষ্টেশনে চলে আসলাম। পরের ট্রেন আসতে কিছু সময় লাগল। ততক্ষণ প্লাটফর্মেই কাটালাম।

আজকে ষ্টেশনে চেকিং না থাকলে ও হোমলেস বা একটু ভোলাভালা কিংবা গাঁজাখোর টাইপ মানুষ কমই উঠেছে ট্রেনে। সেপ্টেম্বর মাস ছিল নিরাপদ মেট্রো চলাচলের মাস। ষ্টেশনে অনেক সিকিউরিটির লোকজন থাকে এখন। গত বছর এই মেট্রোতে চড়া মোটেও নিরাপদ ছিল না। ষ্টেশনে ও ট্রেনের বগি গুলোতে হোম লেস ও গাঁজাখোর মানুষের আড্ডা ছিল। মেট্রোর অনেক লাইনে ছিনতাই খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। এ ছাড়া দুর্গন্ধ ও ছিল তীব্র। এখন বেশ পরিচ্ছন্ন এবং পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত প্লাটফর্ম ও বগিগুলো পরিস্কার করে। এর পাশাপাশি শেষ ষ্টেশনে ট্রেন আসার পর নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশ সবাইকে বগি থেকে বের করে দেয় ও বগি বন্ধ রাখে। পরে সময়মত নতুন করে যাত্রীদের জন্য খুলে দেয়। ফেরার পথে হঠাৎ করে একটা ষ্টেশনে ট্রেন থেমে গেল, কি যেন একটা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা সেই বগির দিকে গেল। পুলিশ উঁকি দিয়ে বগির সবাইকে একবার দেখে নিল। কিছুক্ষণ পর সব ঠিক আছে বলে ট্রেন আবার রওয়ানা হল।
আমরা কয়েকটা ষ্টেশন পর নেমে গেলাম। আবার একটা বাস নিয়ে কিছু কেনাকাটা করতে গেলাম। এর মাঝে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। দ্রুত কাজ সেরে আবার বাসে করে বাসার কাছের স্টপেজে নেমে গেলাম।
বিকেল বেলা এমনিতেই একটু হাঁটি করি, আজকে হাঁটার পাশাপাশি বাস ও মেট্রোতে বেড়ানো হল। ভালই কেটে গেল বিকেলটা।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


