somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ে ভেঙে গেল, দায় কি মেয়ের?

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাজ সাজ আয়োজন। বাড়িজুড়ে বিয়ের তোড়জোড়। হঠাৎ খবরটি কানে এল, ছেলের নাকি অন্য কোনো সম্পর্ক আছে। মুরব্বিদের গুরুগম্ভীর আলোচনা। সিদ্ধান্ত হলো, এ বিয়ে হবে না। হইহুল্লোড়ে ভরা বাড়িতে নেমে এল সুনসান নীরবতা। পুরো ঘটনায় কোনো ভূমিকা না রেখেও বিয়ের কনেকে বিয়ে ভাঙার দায় নিতে হলো। সব জায়গায় তাঁকে নিয়ে আলোচনা। এমনকি পরিবারের সবার মধ্যেও একা হয়ে গেলেন মেয়েটি। মনে মনে ভাবেন, কী দোষ আমার? শেষ পর্যন্ত এই বিয়ে না হওয়ার দায় কেন আমার? এর উত্তর মেলে না।
এটি কোনো গল্প নয়। অনসুয়া নামের মেয়েটির জীবনের গল্প এটি। একটা সময় কাছের মানুষের আচরণ সহ্য করতে না পেরে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসে বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি মহিলা হোস্টেলের সুপারভাইজর হিসেবে কাজ করছেন। জানান, সবকিছু পেছনে ফেলে তিনি ভালো আছেন।
শুধু পারিবারিকভাবে সম্বন্ধ করা বিয়েতেই এমন হয় আর প্রেমের বিয়েতে এমন হয় না, বিষয়টি তেমন নয়। স্কুল জীবন থেকেই একসঙ্গে লেখাপড়া করেছেন সোহেলী-শরিফ (ছদ্মনাম)। পাশাপাশি বাড়িতে বেড়ে ওঠা। সহপাঠী হয়ে গেলেন বন্ধু। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। দুই পরিবারের সম্মতিও ছিল। একসময় ছেলে-মেয়ে দুজনেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন। বিয়ের কথাবার্তাও হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারলেন, তাঁদের এই দীর্ঘ সম্পর্কের পরিণতি না ঘটাই ভালো। তাঁদের পারস্পরিক বোঝাপড়া আগের মতো নেই। দুজনের মতবিরোধ হচ্ছে। সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য কেউ কাউকে ছাড় দিতে পারছেন না। তাঁরা সিদ্ধান্তে এলেন, বিয়েটা না হওয়াই ভালো। কিন্তু দুই পরিবারের কেউ বুঝতে চাইল না, এত দিনের সম্পর্কের পরও কেন বিয়ে করবেন না তাঁরা? তাহলে দোষটা কি সোহেলীর? চাকরি করতে গিয়ে অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েননি তো?
এমন প্রশ্ন শুধু শরিফের পরিবার নয়, সোহেলীর পরিবার থেকেও করা হলো। ‘আমরা বুঝতে পারছিলাম, এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাহলে কেন সেটিকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাব? আমরা দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েই সবাইকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই এমন আচরণ করতে থাকল, যেন সব দোষ আমার। সে সময় নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল।’ বলেন সোহেলী। তাঁর মনের গহিন কোণে যে ব্যথার পাহাড়, সেটি কেউ বুঝতে পারল না। এত দিনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় তাঁর মনে কত কষ্ট, সেই খবর কেউ রাখল না। কষ্ট ভুলতে, সবার নেতিবাচক কথা থেকে বাঁচতে নিজের কাজে আরও বেশি মনোযোগী হলেন সোহেলী।
সব মেয়ের মনোবল অনসুয়া কিংবা সোহেলীর মতো থাকে না। বিয়ে ভেঙে যাওয়া থেকে কেউ কেউ মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হন। অনেকে দ্বারস্থ হন মনোরোগ চিকিৎসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের। তখন কী ধরনের পরামর্শ দেন তাঁরা? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ বলেন, যেকোনো কারণেই বিয়ে ভেঙে যেতে পারে। সাময়িক কষ্ট হলেও এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না; যদি না মেয়েটির পরিবার তাঁকে সব ধরনের সর্মথন দেয় এবং সহযোগিতা করে। বিপর্যস্ত মেয়েটিকে শুধু নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি বোঝাতে হবে।
আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু একটা দায় মেয়েটির ওপরই পড়ে। অনেক সময় মেয়ের পরিবারকেও সামাজিকভাবে হেয় করা হয়। চেনাজানা দুটি মানুষের মধ্যে মতের অমিল, অহংবোধ কিংবা ভালো না লাগা কাজ করতেই পারে। আবার সম্বন্ধের বিয়েতে পানচিনির (বাগদান) অনুষ্ঠানের পরও কারও কোনো নেতিবাচক মন্তব্য, কোনো উড়ো খবর বা গোপন কোনো খবরে শেষ অবধি বিয়ের সানাই বাজল না; কিংবা দুই পরিবারের ভুল বোঝাবুঝিতেও ভেঙে যায় বিয়ে। সেই দায়ভার সমাজ বা পরিবার থেকে মেয়েটির ওপর চাপিয়ে তারা যেন নিজেদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করে।
প্রায় ২২ বছর ধরে বিয়ের সম্বন্ধকারী প্রতিষ্ঠান ‘মনিকাস বাঁধন’ পরিচালনা করছেন মনিকা পারভীন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মনে করেন, সমাজে মেয়েরা এমনিতেই নাজুক অবস্থায় থাকেন। তাঁদের এটি নিয়ে আর হেয় করা উচিত নয়। একটা বিয়ে শেষ পর্যন্ত না হতেই পারে। সেটাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।
বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় মেয়েটির মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না। স্বপ্নভঙ্গের চাপে এমনিতেই কুঁকড়ে যান। তাঁকে সেই মুহূর্তে আর কোনো বাড়তি চাপের মধ্যে ফেলা উচিত নয়। একটি সম্পর্কের ভাঙনের সঙ্গে মেয়েদের জীবনের সব শেষ হতে পারে না। অনেকে লোকলজ্জার কথা ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে আবার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন। এটিও ঠিক নয়; বরং মেয়েটিকে সে সময় নিজের মতো করে থাকতে দেওয়া উচিত। তাঁকে মানসিকভাবে সমর্থন দিতে হবে। সময় দিতে হবে। যেকোনো কাজে মেয়েটি যেন ব্যস্ত থাকেন, সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাঁকে বোঝাতে হবে, এমনটা হতেই পারে। জীবনে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত সময় আসে। সেসব জোরালোভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আর এসব দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকেই। আত্মীয়স্বজন কিছু বললেও সেদিকে কর্ণপাত না করে মেয়েটির পাশে থাকতে হবে সবার। বিশেষজ্ঞরা এমনটিই মনে করেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×