বিজয় দিবসের উল্লাস, ৩১টি আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বিজয় দিবসের উল্লাস, ৩১টি আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশ-শ্রমিকের ক্ষতবিক্ষত মুখ আর আমার না ঘুমোনো ভুলে যাওয়া রোগের ফিরে আসার বিতান্ত
আমারে তালা বদ্ধ রেখে
আমারে আগুনে পুড়িয়ে মেরে
প্রেস নোট শুধু প্রেস নোট আমি চাই না
বদ্ধ, দম বদ্ধ ঘরে আমারে আটক মানি না
তোমারে আটক মানি না
... .....কফিল আহমেদ
আমার পুরানো রোগ ফিরে এসেছে। গত দুই রাত ঘুমোতে পারিনি। এই রোগ আমি চিনি। এই রোগের নাম দিয়েছি ‘মধ্যবিত্ত’ বিপ্লবী বিলাসি রোগ। এই রোগে যেনো আমি না পড়ি তার জন্য আমি একটি বিরাট আর্থিক স্বচ্ছল পত্রিকায় চাকরি নিয়েছি। নিয়ম করে ঘুমোতে না গেলেও আমি কবিতা পড়া ছেড়ে দিয়েছি, গান না পারলে শুনি না। যাওবা শুনি তা রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও পুজা’র গান। কিন্তু গত দুইদিনে আমি ঘুমোতে পারিনি। আমার চোখ নেশাচুর মানুষের মত লাল হয়ে গেছে। আমার চরমপন্থী হতে ইচ্ছে করছে, আমার জঙ্গি হতে ইচ্ছে করছে, আমার ফেরার হতে ইচ্ছে করছে। শেষতক এসবের কিছুই আমি হবো না। অনেককাল আগে একবার এই রোগ আমাকে টানা সপ্তাহের পর সপ্তাহ না ঘুমিয়ে রেখেছিলো। সেবার ২০০৪ সাল ছিলো। সে বছরের আগস্ট খুব অকাল বন্যাও হয়েছিলো। সে বছরের বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোফাখকার চৌধুরীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিলো। সেবারই প্রথম লক্ষ্য করলাম আমার রোগের খবর। এরপর বার বার তেড়ে এসেছে এই রোগ আর আমি বার বার আক্রান্ত হয়েছি, প্রতিবারই আমি রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি নানারকম অজুহাতে। এরপর ২০০৮-এর জুলাই মাসে যখন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ড. মিজানুর রহমান টুটুলকে র্যাব পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যা করে সে সময়ও আমার না ঘুমানোর রোগ শুরু হয়েছিলো। সেবারও আমি রোগ সেরে সুশিল মধ্যবিত্তের ঢাকায় ফিরে এসেছিলাম। সেবার কিন্তু আমার ঢাকায় ফেরার কথা ছিলো না। টুটুল যখন নিহত হয়, ঠিক সে সময় আমি আশিতপর বৃদ্ধা ফুল বালার জমি হারানোর তথ্য টুকছিলাম উত্তরের কোনো সীমান্ত জেলায়। সেইসব দিন পার করে আমি অনেক লায়েক হয়েছি। জানি এইসব ফাচুকি রোগ এলে কিভাবে সারাতে হয়। কিন্তু আবারও আমার পুরানো রোগ ফিরে এসেছে। বিজয়ের মাস। ডিসেম্বর ১২। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার জন্য আন্দোলন করছিলেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় তিনজন শ্রমিক। চরমপন্থিদের মত শ্রমিকের লাশের কোনো দাম নেই, ধান্ধাও নেই। এই লাশ যদি হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বা আ.লীগ বিএনপির এই লাশের অনেক ধান্ধা হতো। কিন্তু মরে যেয়ে বোধ হয় তিন শ্রমিক বেচেই গেছে। আর যারা বেচে আছে? আসুন দেখি সেই বেচে থাকা কয়েক টুকরো ছবি।উপরের ছবিতে এরকম বেচে থাকা একজনের ছবি আমার না ঘুমোনোর রোগ ফিরিয়ে এনেছে। র্যাবের বুট মেয়েটির শরীর, প্রতিবাদের শরীর কিভাবে থেতলে দিচ্ছে। হয় ঈশ্বর! তোমার আসমান জমিনে কত মায়া! মায়ার আকাশ এসে উব হয়ে মেয়েটিকে রক্ষা করতে পারলো না। ইতিহাস বলে কোনোদিন পারেনি।বিজয়রে দিবসে প্রধানমন্ত্রী লম্বা চউড়া ভাষন দিবেন। স্বাধীনতার বানী সমুন্নত রাখতে বলবেন। আর সেই বানী মালিকশ্রেনীর মুনাফার হার ঠিক রাখার জন্য তাদের সেবাদাসেরা এইরকম প্রতিবাদকারী বহ্ণিশিখাদের পিটিযে লাশ বানিয়ে দিবে। আর বাইনচোত টিভি পত্রিকার মিডিয়াকোররা মৌলবাদী সন্ত্রাস, বিদেশী যড়যন্ত্রের বেহুদা গন্ধ খুজবে।আমার খুব ইচ্ছে করছে চরমপন্থি হতে, মৌলবাদী জঙ্গি হতে। চরমপন্থিরা যেমন ভোতা দা দিয়ে মজুতদারের গলা কাটে ঐইরকম গলা গেটে রক্তের নহরে গোসল করতে খুব ইচ্ছে করছে। জানি দেশে সেরকম কোনো চরমপন্থি নেই, এই দেশে সব গান্ধিভক্ত মানুষ।এই দেশে চরমপন্থি নাই, এই দেশে কমিউনিস্ট নাই, এই দেশে জঙ্গিবাদীরা নাই, মুসলমান হিন্দু নাই। যারা আছে সবাই শান্তি চায়। র্যাবের বুটের তলা থেকে সেই শান্তি ধেয়ে আসবে, অমলও ধবলও পাড় ভেঙ্গে শান্তি আমাদের রবী ঠাকুরের গান শোনাবে। আমরা বিকৃত অমৃশ্যকারী হয়ে মধ্যবিত্ত উচাটন মন নিয়ে ‘বিকৃত’ লালন সাইজিকে ধরার জন্য স্টার সিনেপেলেক্সে মনের মানুষের খোজে যাবো।এ দেশে চরমপন্থি থাকলে মালিকরা জবাই হতো। এ দেশে কমিউনিস্টরা থাকলে শ্রমিকরা শক্তি পেতো প্রত্যাঘাতের, এ দেশে জঙ্গিরা থাকলে মার্কিনরা আঘাত করতো বোমারু বিমানে। এ দেশে মুসলমানরা থাকলে শুক্রবারের নামাজ বন্ধ রাখতো, কেননা জালেমের দেশে জুম্মার নামজ হয় না। শুধু ঢাকা শহরের অসংখ্য মসজিদ, সেখানে শুক্রবারে দলবেধে চোখে সুরমা দিয়ে, গায়ে আতর মেখে নামাজ পড়তে চায় সংঘবদ্ধ ডাকাতের দল। তাদের খুব ইচ্ছে বেহেশত যাবে, মদ খাবে আর হুর গেলমানদের সাথে সহবাস করবে।যদি হিন্দু থাকতো, থাকতো বৌদ্ধ ভিক্ষুরা, যদি থাকতো লালন সাইজি তাহলে ফকির সন্নাস বিদ্রোহ হতো। কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। সমুহে শুধুই মধ্যবিত্ত চিন্তার, আকারের ’গরিব’ মানুষ। স্বপ্নের কোনো ফেরিওয়ালা নেই।বিজয়ের দিবসে গালভরা বুলি শোনা যাবে। সেখানে অনুচ্ছারিত কণ্ঠে কেউ কেউ ঘেউ ঘেউ করবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গণতন্ত্র শান্তি সাম্য নিয়ে।আনু মুহাম্মদের বরাতে জানা গেলো শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশুকে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মিশু আপাকে কি ক্রসফায়ারে ওরা হত্যা করবে? জানি না, করতে পারে। তাকে হয়তো শ্রমিকদের ইন্ধনদাতা হিসেবে ১০১ মামলা করতে পারে, পারে আরও অনেক কিছু। আমরা তখন কি করবো?আজ কমরেড তৌফিক লেমনের জন্মদিন। ও বেচে থাকলে বলতো, ‘আমরা তখনো কিছুই করবো না। খাবো দাবো ঘুমো আর সঙ্গমের জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ দিবো এরকম মায়াময় শীত উপহার দেবার জন্য।’আমিন!
দূর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যা
৩১ টি লাশ বনাম রাষ্ট্রযন্ত্র
সাভারে হামিম গ্রুপে নিহতের সংখ্যা ৩১ বলছে সংবাদমাধ্যম। বিশ্বাস হয় না। যাদের শুধুমাত্র লাশ পাওয়া যাবে তার্দেটি কেবল হিসাব হবে নিহতের তালিকায়। কিন্তু যে সব লাশ আগুনে ছাইভস্ম হয়ে গেছে তাদের কোনো হিসেবে রাখবে না মালিকশ্রেণী না ঈশ্বর খোদা আল্লা। শুধু তাদের স্বজনেরা একটি প্রিয় মুখের আশায় এ জীবন পার করে দেবে।প্রত্যাক্ষদর্শীর বরাতে জানতে পারছি হামিম গ্রুপের ওই গার্মেন্টসে আগুন লাগার পর সেখানকার গেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ, যদি দরিদ্র মানুষ লুটপাট করে। তার অর্থ দাড়ায় বড়লোক, পাজেরোওয়ালার লুটপাট করে না। কিন্তু আমাদের দেশের সব থেকে বড় চোর, ডাকাত, লুটেরাদের একাধিক মার্সিডিজ বেঞ্জ বা তার থেকে বেশি দামি গাড়ি আছে আমরা জানি।
তাদের কারো বাড়ি জামালপুর, কারোবা ফরিদপুর। তবে তাদের এখন কোনো ঠিকানা নেই। লাশের কোনো ঠিকানা থাকে না, থাকতে নেই। লাশ কথা বলতে পারলে আমাদের গলা চেপে ধরতো। চিৎতার বলতো, জীবিত থাকতে স্বীকার করোনি আমাদের প্রাণ আছে তোমাদের মত, আজ মরে যাবার পর অগনিত লাশ হয়ে গেলো মাত্র ৩১টি! ভণ্ডের দল কোথাকার। তোমাদের গণতন্ত্রের খ্যাতা পোড়াই
যদি গেট বন্ধ না করে দেয়া হতো তাহলে একজন মানুষও মারা যেতো না বলে মনে করছেন প্রত্যাক্ষদর্শীরা। কিন্তু গেট বন্ধ করার কারণে নিহতের পরিমান শুধু বাড়ছেই। এই অগ্নিকাণ্ড নিছক দূর্ঘটনা না। দূর্ঘটনার পরে মানুষগুলোকে নিশ্চিন্তে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা। এই হত্যার দায়ভার কে নিবে?আমরা জানি না, আমাদের স্মরণে পড়ে না আগুন লেগে এ পর্যন্ত যত শ্রমিক নিহত হয়েছে, তার জন্য কোনো মালিকের শাস্তি হয়েছে কিনা। কিন্তু অধিকার আদায়ের জন্য সাংবিধানিক গনতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করার কারণে শ্রমিক নেত্রি মোশরেফা মিশুকে একটা পুরানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে পুলিশ রিমান্ড। এই এক চোখা বালছেড়া আইনকে আমরা প্রতিনিয়ত মেনে চলি, সম্মান দেখায়। কই, একজন মালিককেতো রিমান্ডে নেয়া হয়নি?!রাষ্ট্র বলে একটা পরকালের ঈশ্বরের মায়ার ভুত আমাকে দাবড়ে বেড়াতো। সে জিনিষ খায় না মাথায় নেয় টাইপের। আমি ম্যানহোলের ঢাকনার মধ্যে রাষ্ট্র খুজি পাইনা, দেখি বরকন্দাজ বন্দুক হাতে দাড়িয়ে আছে। আমি ব্যাংকের লকার খুলে ডাকাতি করতে চাই দেখি বরকন্দাজ দাড়িয়ে আছে। সেই বন্দুক রাষ্ট্র শ্রমিক নিহতের বেলায় কাশছেন না। তার কি ঠাণ্ডা লাগে না? এতো মানুষের কান্নার আওয়াজ কি তার কানে পৌছায় না?
................
যারা লাশ হয়েছে, যারা আগুনে পুড়ে, র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হবেন তারা কি ফেসবুক করে? তারা কোন জাতের মানুষ? তারা কি লাক্স সাবান গায়ে নেয়? তারা কি বাসা থেকে বের হবার সমায় সুগন্ধি মাখে? তারা কি শীতের রাত জেকে বসলে ‘রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ’ ঢেলে আকাশের এক ফালি চাঁদ নিয়ে কাব্য করে উঠতি বয়সের মেয়েদের মন ভজাতে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। যদি তারা সহজ জীবন ভালোবেসে নির্বিকার চিত্তে ভবদহে কালিকে করে পার আর নিরাকার ঈশ্বরকে আর তাদের প্রতিনিধি খালেদা হাসিনা নিজামিকে নাই করে দিয়ে ক্রসফায়ার আগুন বুকে নিয়ে বহ্ণিশিখা হয়ে জলে, তবে আমাদের মত আর অভাগা কে আছে এই আকুল পাথারে? আমাদের দিন নাই, আমাদের মন নাই, আমাদের কোনো জীবন নাই। এ জীবন পশুর জীবন, বড় আনস্মাট জীবন। তবু দিব্যি এই জীবন ভালোবাসার কত অভিনয় না আমরা করি!
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তির কোরাস দল
ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!
নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী
আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্ব কবি
বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।
কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।
সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।
যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন