somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আ বিউটিফুল মাইন্ড এবং ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আ বিউটিফুল মাইন্ড মুভিটি যারা দেখেছেন বা জীবনের কোন পর্যায়ে যারা গেম থিওরী পড়েছেন তাদের কাছে জন ন্যাশ নিশ্চয় অপরিচিত নাম নয়। জন ন্যাশ একজন গনিতবিদ যিনি গেম থিওরীতে অবদানের কারনে অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম এর ধারনা তারই দেয়া যা এখনো গেম থিওরীর প্রধান তাত্বিক ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেধার সবটুকু কাজে লাগাতে না পারা ন্যাশের একাডেমিক আর ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছু উঠে এসেছে আ বিউটিফুল মাইন্ড ছবিটিতে। ছবির বানিজ্যিক স্বার্থে কিছু পরিবর্তন ও করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।


মজার ব্যাপার হচ্ছে, মুভিতে যে দৃশ্যে ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম এর ধারনা দেয়া হয়েছে সেটা আদৌ ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম নয়। দৃশ্যটা এরকম। ন্যাশ আর তার তিন বন্ধু বারে গেছে। তাদের সবার চোখ চলে গেল এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচটি মেয়ের দিকে। সবাই সুন্দরী, তবে সোনালী চুলের মেয়েটি "সেইরকম" (এই শব্দটি নতুন শেখা)। বাকি চারজনের চুল বাদামী। সবাই স্বর্নকেশীর সাথে নাচতে চায়। সবাই যদি তার ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা করে আলাদাভাবে তাহলে সবাই স্বর্নকেশীকে নাচের প্রস্তাব করবে। এডাম স্মিথের থিওরী অনুযায়ী এভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবচেয়ে ভাল ফলাফলটি বের হয়ে আসার কথা। হঠাত ন্যাশের মনে হল, এডাম স্মিথ ভুল! প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবচেয়ে ভাল ফল আসবে না। সবাই যদি স্বর্নকেশীকে প্রস্তাব করে বসে তাহলে কেউই তার সাথে নাচতে পারবে না কারন তারা একজন তখন আরেকজনকে ব্লক করবে । তখন তারা যাবে বাকি বাদামী চুলদের কাছে। ওরাও তখন নাচতে রাজি হবেনা ইগোর কারনে। কেউই দ্বিতীয় পছন্দ হতে চায় না। তাহলে প্রতিযোগিতা করার ফলে সবাই ব্যর্থ হবে। কিন্তু তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অন্যদের কথাও চিন্তা করে তাহলে বুঝতে পারবে স্বর্নকেশীকে প্রস্তাব করলে কাউকেই পাওয়া হবেনা। তাই তারা সবাই বাদামী চুলদের সাথে নাচার প্রস্তাব করবে। আর স্বর্নকেশী পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে একা, সেইরকম সৌন্দর্য নিয়েও কোন অফার ছাড়াই।



শুনতে যত কনভিন্সিং শোনাক না কেন, মুভির ন্যাশ এর সমাধান কিন্তু বাস্তবের ন্যাশ এর ইকুইলিব্রিয়াম নয়। সেটা দেখার জন্য প্রথমে ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম কি সেটা একটু দেখে নেই একটা উদাহরন দিয়ে। মনে করুন দুজন প্লেয়ার, রহিম আর করিম। দ্রুত হেঁটে যাওয়ার সময়
করিডোরে সামনাসামনি হয়ে গেল। এতই সরু করিডোর যে একজন আরেকজনকে কাটিয়ে যেতে হলে একজনকে ডানে সরতে হবে, আরেকজনকে বামে। তাহলে একেকজনের দুটো করে স্ট্র্যাটেজি, "ডান" আর "বাম"। দুজনেই যদি বামদিকে অথবা দুজনেই যদি ডানদিকে সরে
যায় তাহলে ধাক্কা লাগা নিশ্চিত। তাহলে করিম যদি ডানদিকে যায়, রহিম বামে যেতে চাইবে। আবার করিম বামদিকে গেলে রহিম যেতে চাইবে ডানে। কিন্তু তারা এত দ্রুত আসছে যে, আরেকজন কি করছে সেটা দেখার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে কোনদিকে যাবে। মনে করুন তারা সিদ্ধান্ত নিল, রহিম গেল ডানে আর করিম গেল বামে। এটা ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম হলো। কারন করিম বামে গেলে রহিমের জন্য ডানে যাওয়া সবচেয়ে ভাল (বেস্ট রেস্পন্স), আবার রহিম ডানে গেলে করিমের বামে যাওয়া সবচেয়ে ভাল। আরেকটা ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম হচ্ছে যেখানে রহিম বামে আর করিম ডানে যাবে। এই দুই ক্ষেত্রেই আরেকজনের স্ট্র্যাটেজির বিপরীতে একজন প্লেয়ার তার স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে চায় না। অন্যদিকে দুজনেই ডানে গেলে সেটা ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম হবে না। কারন করিমের স্ট্র্যাটেজি যদি ডান হয়, তাহলে রহিমের বেস্ট রেস্পন্স ডান হয়, সে স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করে বামে যেতে চাইবে। তাহলে দুজন প্লেয়ারের জন্য ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়ামের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যেতে পারে, "১ নং প্লেয়ারের স্ট্র্যাটেজি X এর বেস্ট রেস্পন্স যদি ২ নং প্লেয়ারের স্ট্র্যাটেজি Y হয়, এবং ২ নং প্লেয়ারের স্ট্র্যাটেজি Y এর বেস্ট রেস্পন্স যদি ১ নং প্লেয়ারের স্ট্র্যাটেজি X হয়, তাহলে (X,Y) কে ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম বলা যায়"। দুইয়ের অধিক খেলোয়াড় থাকলেও একইরকম হবে, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকে প্লেয়ার অন্য সকল প্লেয়ারের স্ট্র্যাটেজির বেস্ট রেস্পন্স খেলবে।



এখন দেখি মুভিতে দেখানো সমাধান কোথায় ভুল। সেখানে দেখানো হচ্ছে সবার ইকুইলিব্রিয়াম স্ট্র্যাটেজি বাদামী চুলের সাথে নাচা। মনে করুন আপনি জন ন্যাশ। আপনার তিন বন্ধুর স্ট্র্যাটেজি যদি হয় বাদামী চুলের সাথে নাচা, তাহলে আপনার বেস্ট রেস্পন্স কি? ভেবে দেখুন, ওরা যদি সবাই বাদামী চুলের সাথে নাচতে যায়, তাহলে আপনি স্বর্নকেশীকে প্রস্তাব করামাত্র রাজি হয়ে যাবে। আর সেইরকম সুন্দরীর সাথে নাচার সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় বলুন। আপনার বন্ধুরা কি ঝামেলা করবে? না, তাদের কেউ যদি স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে যায়, তাহলে আপনার সাথে তার প্রতিযোগিতা হবে, আপনারা একজন আরেকজনকে ব্লক করবেন, আর দুজনেই স্বর্নকেশীকে হারাবেন, আপনার বন্ধুটি বাদামী চুলকেও হারাবে। তাই আপনার বন্ধুরাও ঝামেলা করতে চাইবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, জন ন্যাশ স্বর্নকেশীর সাথে, আর তিন বন্ধু তিন বাদামী চুলের সাথে নাচবে, এটা একটা ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম। এখানে আসলে ন্যাশের কোন বিশেষত্ব নেই, অন্য কোন বন্ধুর স্ট্র্যাটেজি যদি হয় স্বর্নকেশীর সাথে নাচা, আর ন্যাশ সহ অন্যদের স্ট্র্যাটেজি যদি হয় বাদামী চুলের সাথে নাচা তাহলে সেটাও ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম হবে।



মোটকথা, একজন স্বর্নকেশীর সাথে আর বাকি তিনজন তিন বাদামী চুলের সাথে নাচলেই সেটা ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম হবে। কিন্তু মুভিতে যেমন দেখানো হয়েছে সবাই বাদামী চুলের সাথে নাচবে, সেটা কখনোই ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম নয়। কারন, এক্ষেত্রে যেকোন একজন তার স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করে স্বর্নকেশীর সাথে নাচলে অন্যরা সেটা ব্লক করবে না। তাই অন্তত একজন প্লেয়ার এক্ষেত্রে তার স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে চাইবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:১৯
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×