somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম দেখা। (মুগ্ধ)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*আমাদের সম্পর্কটা শুরু হওয়ার পর একবারও মনে হয়নি ও আমার দূরের কেউ। প্রতিটি দিনরাত প্রতিটি সময় মনে হচ্ছিল সে আমার খুব প্রিয় কেউ।যার সাথে সবকিছু শেয়ার করা যায় যা কিছু ইচ্ছা তাই বলা যায়।

**আমাদের দেখা করার কথা ছিল বেশ আগেই।কিন্তু নানা কারণে আর হয়ে উঠছিল না। শেষপর্যন্ত দেখা করার সবকিছু চূড়ান্ত করে নিলাম।আগে তেমন একটা টেনশন কাজ না করলেও দুই-তিনদিন ধরে আমি খুব নার্ভাস ফিল করছিলাম। জানি আমরা একজন আরেকজন দেখতে কেমন তা নিয়ে কখনই মাথা ঘামাব না। তবু কেন জানি ভয় হচ্ছিল।

***দেখা করার আগের রাতে আমি খুবই ক্লান্ত ছিলাম। কথা বলতে গেলে হলই না।সকালে আমি মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ৬.৩০এ।সাধারণত আমি ঘুম থেকে ৮-৯টার আগে উঠি না। ইদানীং প্রতি সকালে সে ঘুম থেকে তুলে আমাকে।তবু ঐদিন নিজেই উঠলাম।অপেক্ষা করছিলাম ওর ফোনের জন্য। ও ফোন দিল ৭.৩০টার দিকে।আমি অবশ্য ওকে বুঝাইনি আমি আগেই উঠেছিলাম।যে অধিকারটা ওকে দেওয়া তা তাকেই রাখতে দিতে মন চাচ্ছিল।কথা হল অল্পকিছু। সে বলল রেডি হতে। সমস্যা হল ও ফোন রাখার পর আমি খুব বেশী নার্ভাস হয়ে পড়লাম।চুপচাপ আবার শুয়ে ছিলাম।সকালে নাস্তা করতেও ইচ্ছা হচ্ছিল না।নাস্তা না করেই বের হলাম ৮.৩০টায়। সে টিএসসিতে অপেক্ষা করছে তখন।আমি সবসময় চাইতাম দেখা হবার সময়টা নির্জন থাকুক। বেশ শীত পড়ুক।মানুষ যেন কম থাকে আশেপাশে।প্রকৃতি বোধহয় আমার আকুতিটা শুনেছিল। সপ্তাহ জুড়ে রোদ থাকার পরও ঐদিন হঠাৎ করেই সকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়তে লাগল।রাস্তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা নির্জন বলা চলে।

****টিএসসিতে নেমে ওকে দেখার পর একটা কথাই মনে হয়েছিল ছবির চেয়েও সুন্দর এই মেয়েটা শুধুই আমার! এই মেয়েটার প্রেমে তো আমি আরও হাজারবার পরতে পারি!
আমি কাছে যেতেই সে গোলাপ দিল হাতে। আমি একটু চমক খেলাম কারণ সে ফুল-টুল তেমন একটা পছন্দ করে না তাই।আমাদের প্রথম দেখা তবুও একবারও তা মনে হচ্ছিল না। আমার ঠোটে লেগে থাকা বিস্কিট এর গুড়ো সে যত্ন করে মুছে দিচ্ছিল। আমার স্যান্ডেল সে পায়ে লাগাচ্ছিল খুবই স্বাভাবিকভাবে।

*****সে বলল সোহরাওয়ার্দী পার্কে গিয়ে বসার জন্য। আমি আর সে পাশাপাশি হাঁটছিলাম গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে। আমার তখন হৈমন্তী গল্পের সেই ডায়ালগটা মনে পরছিল আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম!

****পার্কে বসে একটা জিনিস ভেবে খুব মজা পেলাম। আমি ভার্চুয়ালি তেমন একটা মিশুক না এবং চুপচাপ থাকলেও বাস্তবে তার ঠিক উল্টো। হৈ চৈ করে কাটাই সারাদিন। সেও ঠিক তাই।দুজন বসে গল্প করছি খুবই মজা করে। সে হাত পা নাড়িয়ে চাড়িয়ে, চেঁচিয়ে।আমি অবাক হয়ে বলছি এই তুমি কি রাজনীতি কর নাকি? ঘটনা হচ্ছে ওকে এরকম করতে দেখে আমিও শুরু করলাম বাঁদরামি। ওখানে আসা অন্য কাপলরা খুব মজা পাচ্ছিল আমাদের কান্ড দেখে কারণ সবাই আমাদের দুজনকে বারবার দেখছিল তা আমি লক্ষ্য করছিলাম।এর মাঝে তার হাতটা আমার হাতে।আমি গেঞ্জি পড়তে পারি না সার্টের নীচে। তাই পাতলা সার্ট পড়ে শীত লাগছিল।হালকা কাঁপছি দেখে সে তার শালটা খুলে দিয়ে দিল আমার গায়ে।
এর নামকি ভালোবাসা?প্রিয় মানুষটার কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা?
আমি প্রকাশ্যে কখনই থ্যাংকস বলি না। ওকেও তেমন একটা না। কিন্তু ঐ সময় ইচ্ছে হচ্ছিল চেঁচিয়ে সবাইকে বলি এই মেয়েটা আমার। সারাটা জীবন আমি তাকে আগলে রাখব যেন কোনও কষ্ট তাকে না ছুতে পারে।

***আমার মানিব্যাগ নাই জেনে সে একটা মানিব্যাগ নিয়ে এসেছিল আমার জন্য।রাতে বাসায় ফিরে অবশ্য মানিব্যাগ থেকে আরও চমক বের হল।
ভালোবাসা বোধহয় এই। প্রিয় মানুষটার সব অভাব বোধ পূরণ করার তাগিদ।

**নিউমার্কেট এ হালকা কিছু কেনাকাটার পর দুপুরে আমরা লাঞ্চ করতে গেলাম নীরবে।সবচেয়ে সেরা সময়টা বোধহয় ওখানেই কাটালাম। সে আমার পাতে ভাত দিল। ওর পাত থেকে বেগুন ভাজা ভেঙ্গে খাওয়াল।একই গ্লাস থেকে বোরহানি খাওয়া!
ভালোবাসা তো এমনি। সবসময় পাশাপাশি থাকা! সবকিছু শেয়ার করা!
নীরব থেকে বের হওয়ার সময় আরও চমক। সে আমার মতই চঞ্চল তা ততক্ষণে ভালো করেই জানা আমার।কিন্তু পিছন থেকে হঠাৎ যখন লাফিয়ে আমার কাঁধের উপর দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরল তখন মনে হয়েছিল আর যাই হোক এই সম্পর্কটাতে কোনোদিনই একগুঁয়েমি,ক্লান্তি,বিষন্নতা প্রবেশ করতে পারবে না।

*ওর বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে আসছিল। বাস স্ট্যন্ড এ যখন আমি তখন আমার খুবই মন খারাপ। বুঝাতে চাচ্ছি না ওকে তাই হাসি হাসি মুখ তখনও। তখন আমি টের পেলাম অভিনয়ে আমি খুব কাচা। কারণ সে ঠিকই টের পেয়ে গেছে মেকি হাসি-হাসি ভাবটা আমার।কিছুটা সান্ত্বনা তার।

♥এর মাঝে অবশ্য হুট করে আমার ছোট ভাই এর সাথে ওর দেখা।তিনজন মিলে দিলাম কতক্ষণ আড্ডা।রাতে আমার ভাই ফোন করে বলল ভাই উনার হাসিটা সুন্দর। আমি আমার ভাইকে লজ্জায় বলতে পারছিলাম না এই হাসি দেখেই একা একা ২৫টি বছর কাটিয়েও শেষমেশ ভালোবাসার জালে বন্দী হলাম আমি!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×