শিরোনাম পড়ে আমার নিকের দিকে কড়া নজরে তাকাইলে কি কোন সমাধান হবে ভাই ? বুকের উপরে হাত দিয়া বলেন তো কতবার ক্রাশ খেয়েছেন আর কতবার মন ভেংগেছে ? প্রতিবার কি রেজাল্ট হয় … হয় মেয়ে এংগেজড নাহয় বয়ফ্রেন্ড আছে। দুনিয়া তো দেখছি, মাঝে মাঝে হয় বাংলাদেশে কোন মেয়ে সিংগেল আছে এটা কাচা কঞ্চি দিয়া পিডাইলেও আমি বিশ্বাস করব না। হ্যা প্রশ্ন করতে পারেন যে ঋকি ভাই !!! আপ্নি কি বাংলাদেশের সব মাইয়ারে প্রোপোজ কইরা দেখছেন যে তারা সিংগেল কিনা ? না ভাই … ভাত রান্না হইছে এটা বোঝার জন্য হাড়ির সব গুলো ভাত টিপ দেওয়া লাগে না । যাই হোক, গোটা তিনেক ঘটনা শেয়ার করি আপনাদের সাথেঃ
১) ভার্সিটির বাসে দুইটা সিটের সারি… এক সারিতে ২ জন বসতে পারে অপর সারিতে তিনজন। কিন্তু ২ জনের যে সিটটা থাকে সেটাতে বসতে পারা আমাদের মত নিরীহ সিঙ্গগেল টাইপের পোলাপানদের বসাটা যে কতটা দূরহ … কারন কাপল গুলো পাশাপাশি বসবার জন্য এই সিটগুলো ব্যাগ কিংবা ল্যাপটপ দিয়ে বুক করে রাখে। গত পরশুদিন আমি আর আমার এক জুনিয়র (অবশ্যই ছেলে) খেয়াল করলাম ২ জনের সারিতে একটা ২ সিট ফাকা… লাফাইয়া গিয়া বসলাম। কিন্তু কপাল যা হয় আর কি … সামনে সিটেও একটা কাপল পিছনের সিটেও তাই। বুকের বামপাশে সেই পুরোনো ব্যাথাটা আবার চাগান দিয়া উঠল। নিজেরে বুঝাইলাম ওরাতো ফ্রেন্ডও হইতে পারে। যাই হোক তার নয়টা… বাস ছাড়ল যথারীতি। আমরাই প্রথমে ড্রাইভার মামারে বললাম “মামা, ভিত্রের লাইট বন্ধ কর”। আসলে অন্ধকারে বাসের মধ্যে বসে বাইরের দৃশ্য দেখতে ভালই লাগে … আর আমরা সেই নিয়তেই লাইট বন্ধ করবার কথা বলছি। কিন্তু লাইট বন্ধ হইতেই সামনের সিটের আপুটা দেখলাম তার ব্যাগ থেকে ফোন আর হেডফোন বের করল… একটা নিজের কানে গুজে অপরটি বয়ফ্রেন্ডের কানে ঢুকিয়ে দিল। নিশ্চয় তারা সেইরাম রোমান্টিক গান শুনছে, নিশ্চয় ওর বয়ফ্রেন্ডের মনে শয়তান কুমন্ত্রনা দিচ্ছে – এমন হাজারো চিন্তা আমার মাথায় উকি দিতে থাকল। কিন্তু সব সম্ভাবনার মায়েরে ঘুম পাড়ায়ে দিয়ে দেখলাম আপুটাই ভাইয়ার কাধে মাথাটা হেলায়ে দিল। আহহহ !! বুকের বামপাশে সেই চিনচিনে ব্যাথা মাইরি। খুব কষ্ট করে নিজেরে সংবরন করলাম… হঠাৎ দেখলাম আপুটা ভাইয়ার কাধ থেকে মাথা উঠায় নিল… আমি মনে মনে খুশিই হইলাম। কিন্তু পরক্ষনেই দেখি আপুর হাত ভাইয়ার কপালে … রোমান্টিক গানে উপযুক্ত সাড়া না পেয়ে কি আপু ভেবে নিল ভাইয়ার জ্বর এসেছে ? কি জানি ভাই … তার উত্তর আমার কাছে নেই। তবে ওমন একটা থার্মোমিটারকে ঐ সময় খুব মিস করছিলাম মাইরি।
২) ঢাকা থেকে খুলনা গামী চিত্রা এক্সপ্রেস। গত মাসের ঘটনা। আমার পাশের সিটে একটা কাপল… আমি তো ভাবলাম ওরা বিবাহিত। কিন্তু পরক্ষনেই সেই ভুল ভাংগ মেয়েটার ফোনে কথা বলা শুনে … “আম্মু আমি তো চিনিনা, তুমি চিন্তা করোনা ভাইয়া তো আছে আমার সাথে। ভাইয়া চিনে , সমস্যা নাই”। যাক , মনে একটু শান্তি লাগল যে জেলাস হওয়া লাগবে না, বুকে চিনচিনে ব্যাথাও হবে না। কিন্তু একটু রাত গড়াতেই ঘটল অঘটন, আপুটা মাথা ঢুকিয়ে দিল ভাইয়াটার বুকের ওপর। ওমা !!! এইডা কুনো কথা !!! পরে দেখলাম ভাইয়াও রেসপন্স করছে, মাথায় হাত বুলায়ে দিচ্ছে। বুকের ব্যাথা উদাও … হা করে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে। একটু আগে যে শালী ওর আম্মারে বলল ঐডা ভাইয়া, আর এখন এইডা করে । আরো কয়েক ঘন্টার পর্যালোচনা শেষে ফলাফলে উপনিত হইলাম যে, ঐ ছেলেটা মেয়েটার পাড়াত ভাই। এবং তাদের ভিতরে রিলেশানও আছে … কিন্তু মেয়ের বাপ-মা সেইটা জানেনা।
৩) আমি মোটামুটি মিউজিশিয়ান … মানে গিটারিষ্ট সাথে গানটাও গায় আরকি। কিছুদিন আগে অডিটোরিয়ামে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল… ফ্যাকাল্টির ১২ বছর পূর্তি, বেশ হাইফাই আয়োজন। তো আমার একটা গান ছিল … তাহসানের ‘এংরি বার্ড’ টেলিফিল্মের “প্রেম তুমি”। যাই হোক, ব্যান্ডের সাথে করার কথা থাকলেও পরে সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি একুয়িষ্টিক গিটারেই সলো পারফর্ম করব। সৌভাগ্য বশত গানটা ভালো হয়েছিল … আর অডিয়েন্সদেরও প্রচুর সাড়া পেয়েছিলাম। আমার পারফর্মের পরের দিন, দুপুরে আমি খেতে যাচ্ছি। সামনে তিনটা মেয়ে হেটে আসছে, আর আমি সাধারন এই রকম সাধারন পরিস্থিতিতে মেয়েদের দিকে তাকায় না (এইটা কিন্তু সিরিয়াস)। পাশে আসার পরেই তিন জনের একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল “গানটা কিন্তু অস্থির ছিল …”। তখন আমি খেয়াল করলাম, তিনজনের কাউরেই আমি চিনিনা, আর কে এই কমেন্টটা করেছিল আমি সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। যাই হোক, সেইরাম খুশি হইলাম। ঐদিন দুপুরে ডিম ভুনা খাবার নিয়ত ছিল, আনন্দে হোটেলে গিয়ে হেলিকপ্টারই (মুরগীর রান পাজর সহ বিশেষ একটা পিস) খেয়ে ফেললাম। কিন্তু অভাগা যেদিকে যায়, হিসি লাগলেও শুখিয়ে যায়। ঐতিনটা মেয়ের দুজন রে পরে ক্যাম্পাসে বয়ফ্রেন্ড সহ ঘুরতে দেখেছি … এখন একজন বাকি। কি আর হবে… দেখব হয়ত দুই পাশে দুইটা ছেলে নিয়া ঘুরছে।
তো এই হল ভাই কাহিনি। এমন হর হামেশাই ঘটছে … দেখছি, বুকের বামপাশে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে আর রাইতে একবুক হতাশা নিয়ে কোলবালিশটা পাশে নিয়া ঘুমায়ে পড়ছি (উপরে না কিন্ত)। মাঝে মাঝে ভাবি যদি বেচে থাকি বিয়াতো একদিন করা লাগবে। সবছেলেরই একটা স্বপ্ন থাকে … তার একটা রাজকুমারী থাকবে। আমারো ছিল ভাই সেই স্বপ্ন, কিন্তু যা পরিস্থিতি দেখতেছি কুমারী পাব কিনা তাই সন্দেহ, আবার রাজকুমারী !!! ১৮-২২ বছর পর্যালোচনা করে দেখলেন ভাগ্যে সিংগেল মেয়ে জুটল না, আবার ৩০ বছর বয়েসে গিয়ে আপনার পিছনে মেয়ে পক্ষের লাইন পড়ে গেল – ভাই !!! ঘাপলা তো একটা আছেই। রাতে ঘুমানোর আগে এইডা একটু চিন্তা করে ঘুমায়েন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪৫