somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

......ড: আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ব: , নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ত্রিভুজের লিখা একটি পোস্টের জবাব এটি । উনি বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেন ঢাকা বিশ্ব: প্রতিষ্ঠার বিরোধীতাকারী রবীন্দ্রনাথকে সম্মান করবে, 'কোট' করবে । এরকম মন্তব্য আজকাল এই ব্লগে খুব চোখে পড়ে । বলা বাহুল্য, আমরা জানি এর গভীর অন্তর্নিহীত উদ্দেশ্য ।
আমাদের মনে আছে ১৯০৫ এ যখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন হয় তখন তা রদ করতেও একটি শক্তিশালী কোলাকাতা কেন্দ্রীক আন্দোলন হয় । এর ফলে ১৯১১-য় তা রদও হয় । ১৯০৫-এ যখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন হচ্ছে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ মদদে, তখন আমাদের স্বপ্ন হলো আমাদের মত সরকারের, একটি রাজধানীর, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের । এই প্রেক্ষিতেই জন্ম হল মুসলিম লীগের, ১৯০৬-এ ঢাকায় ('৪৭ পরবর্তী প: পাকিস্তানে নয়) । অন্যদিকে কংগ্রেস তথা দিল্লী-কোলকাতার লোকজন এটাকে ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল-এর চিরাচরিত কৌশল হিসেবে বিবেচনা করল । রাজীনীতির দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে তাদের এ ধারনাকে পুরোপুরি অমুলক বলা যায়না । ব্রিটিশরা আমাদের জন্য অন্ত:প্রান ছিলেন এমন ভাবার কারন নেই ।
রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ চাননি । তিনি এটাকে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ বলে মনে করতেন । নিজের জন্মভুমিকে তিনি মা হিসেবেই ভাবতেন, যেমনটি আমরাও ভাবি । এ মায়ের বুকের উপর ছুরি চালিয়ে দু'টুকরো করে বিবদমান দুই ভাইকে ভাগ করে দেয়া তিনি মানতে পারেননি । এজন্য প্রথাবদ্ধ রাজনীতি-বিমুখ হয়েও এসময় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন । বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তার এই অবস্থান তাৎক্ষনিকভাবে ঢাকা কেন্দ্রীক ব্রিটিশদের সব চিন্তার বিরোধী হয়ে উঠেছিল। তার এই অবস্থান আমাদের স্বার্থের পরিপন্থি ছিল । কিন্তু তাই বলে তার বাংলা মাকে বৃহত্তর-অখন্ড দেখতে চাওয়া আর ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল-এর বিরুদ্ধাচরন করা অমার্জনীয় অপরাধ হতে পারেনা । ব্যপারটি বিবেচনা করতে হবে সামগ্রীক প্রেক্ষাপটে ।
রবীন্দ্রনাথ প্রজাবৎসল ছিলেন বলে তার জমিদারীতে সেচ, কৃষি ঋন, সড়ক-নৌপথ নির্মাণ করেছিলেন । এসব তো পূর্ব বাংলায় । জীবনের বেশীর ভাগ সময় তিনি এই পূর্ব বাংলায় কাটিয়েছেন, অন্যান্য বিলাসী জমিদারদের মত কোলকাতায় নয় । নিজের অক্লান্ত প্রচেস্টায় গড়েছেন শান্তিনিকেতন । কখনও ভাবেননি মায়ের ভাষা বাংলা ফেলে হিন্দী বা ইংরেজীতে সাহিত্য রচনা করবেন (আজকাল অনেক বিলেতী শিক্ষিতরাই তা করছেন) । জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে উনি নাইট উপাধি ছুড়ে ফেললেন । শুধুমাত্র বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কারনেই তাকে আমাদের ত্যাজ্য করতে হবে? আমি কিন্তু আজও ভাবি, নজরুল যদি ১৯৪০-এ এসে অমন ভাষাহীন-চলৎশক্তিহীন হয়ে না পড়তেন, রবীন্দ্রনাথ যদি '৪১ থেকে '৪৭ মাত্র আর কয়েকটা বছর বেঁচে থাকতেন, বাংলার ইতিহাস আজ অন্যভাবে লিখা হতে পারত । বাংলা মায়ের জন্য অমন ভালবাসা, কোটি বাংগালীকে জাগিয়ে তোলার অমন ক্ষমতা তখন যে কেবল এদেরই ছিল ।

আজকাল দেখি কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথ কে হিন্দু কবি আর এক সময়ের নাস্তিক নজরুলকে ইসলামি কবি হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করান । কি পরিহাস নজরুল, কি দু:খ তোমার ! বেচে থাকতে এরা তোমাকে মানবতাবাদী হতে দেয়নি, একটুও শান্তিতে থাকতে দেয়নি তোমায় ফতোয়ায় আর ফতোয়ায় । কমিউনিস্ট ছিলে বলে তোমাকে এল.এম.এ বানায়নি, প্রমিলা দেবীকে বিয়ে করেছিলে বলে কোলকাতার মৌলভিরা তোমার বাসায় নেমন্তন্ন নেয়নি । আজ মরে গিয়েও তোমাকে মানবতাবাদী হতে দেবেনা এরা, তোমার রক্ষা নাই । তুমি মানুষের না, তুমি সর্বভারতীয়ের না,তুমি ধর্মের; তুমি সাম্যের না, ভ্রাত্‌ত্বের না, তুমি হিংসার, সাম্প্রদায়িক বিষ-বাস্পের । নজরুল, এই যাপিত জীবন কি তোমার ছিল, এই স্মৃতি? রবীন্দ্রনাথ-নজরুল তোমরা কি মানুষ ছিলে? বাংগালী ছিলে? নাকি ছিলে হিন্দু আর মুসলিম?

.....হিন্দু না মুসলিম ওরে জিগ্গাসে কোন জন?
কান্ডারী, বল, ডুবিছে তরী
সন্তান মোর মা'র । (কাজী নজরুল ইসলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৫০
২১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×