somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা যারা সমর্থক

১৬ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারত-বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ (ফেসবুক ভার্সন) মনেহয় শেষ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশেরও জার্নি শেষ। সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে যোগ্য দলের কাছেই হেরেছে। এজন্যে আক্ষেপও নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমের এ উত্থান দেখে ভালো লাগছে। তবে, কেন যেন আমাদের সমর্থকদের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমাদের ট্রল, প্রতিপক্ষকে ব্যাঙ্গ করার ধরণ সেই প্রস্তরযুগের মতই রয়ে গেছে এখনো। ক্রিকেটারদের উন্নয়ন হলেও আমাদের উন্নয়নটা কেন যেন হয়নি আজো।

লিখতে গেলেই কোহলির জিহ্বা চোখে ভাসছে আগে। এই আচরণ মেনে নিতে পারিনি। এরকম আচরণ মেনে নেয়া সম্ভবও না। এটাতো সামান্য একটা খেলাই। তারপরেও কেন এত আগ্রাসী মনোভাব কোহলির মত একজন প্লেয়ারের, বোধগম্য না। আমরা এজন্যে কোহলি'র ওপরে বিরক্ত। কিন্তু, মজার ব্যাপার, এই "জিভ বের করা" সেলিব্রেশন যদি বাংলাদেশের কেউ করতো, আপনি কিন্তু তখন তাকেই সাপোর্ট দিতেন। তার সমালোচনা করতেন না। বলতেন, এটা সাধারণ একটা সেলিব্রেশন। এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। যে ছবি নিয়ে আমরা ট্রল করছি, সেরকম ছবি হয়তো আমাদের অনেকের ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার হিসেবেও উঠে যেতো। তাকে জাস্টিফাই করার সর্বোচ্চ চেষ্টাই আমরা চালাতাম। ভারতীয় সমর্থকেরাও এটাই ভাবছে হয়তো। আমরা ভাবছি উল্টোটা। আমরা কোহলিকে জিভ বের করা কুকুরের ছবির সাথে কোলাজ করে "close enough" লিখে ট্রল করছি। এটাই বিষয়, আপনি 6 দেখবেন না 9 দেখবেন, তা আসলে নির্ভর করছে, আপনি কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন, পুরোমাত্রায় তার উপরে। কোহলির এই উদ্ধত সেলিব্রেশন নিয়ে ফেসবুকে কাল থেকে তো অনেক বিপ্লব করলেন। এবার বন্ধ করুন।

আপনি এদেশ থেকে কোহলি'কে কুকুরের সাথে বসিয়ে ট্রল করছেন, ওদেশ থেকেও ট্রল বানিয়ে ইটের বদলে পাটকেল মারা হচ্ছে বহুকাল ধরেই। একটা ট্রল দেখলাম গতকাল। সেখানে লেখা, "কাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি সায়ার ফিতা পায়ে বেঁধে খেলতে নামে।" প্রচণ্ড খারাপ লেগেছে এই ট্রল দেখে। মাশরাফি তো আমাদের আবেগের নাম। ওকে নিয়ে ট্রল আমরা সহ্য করতে পারিনা, স্বাভাবিক। কিন্তু, কিছু তো বলারও নাই। কোহলিও তো ওদের আবেগের নাম। আপনি ওদের দেশের প্লেয়ারের সাথে কুকুরের ছবি মিক্স করবেন, মাশরাফির মাথা কেটে একটা ছেলের মাথায় লাগিয়, কোহলির মাথা কেটে আরেকটা মেয়ের মাথায় লাগিয়ে তাদেরকে "আজ পাশা খেলবোরে শ্যাম" গানের সাথে কোমর দুলিয়ে নাচাবেন, তখন এরকম ট্রল তো শুনতেই হবে, দেখতেই হবে। আমরা কি এগুলো ডিজার্ভ করিনা। খাল কেটে কুমীর আর নিজে ট্রল করে অন্যকে ট্রল করার ইন্ধন তো আমরাই দিচ্ছি।

প্রথম আলোর বরাতে আরেকটা তথ্য দেখলামঃ একটা কুকুরের গায়ে ভারতের পতাকা জড়িয়ে ফটোশপ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেটাকে নিয়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ ভারতের পত্রিকাগুলো। ভারতীয় সাংবাদিকেরা সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয়। তাদের বরাতে এ ট্রল ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্বে। গোটা বিশ্বের কাছেই পজেটিভ সাপোর্টার হিসেবে আমাদের একটা সম্মান বরাবরই ছিলো। সে সম্মান কমে যাচ্ছে নিয়মিত বিরতিতে, টুকরো টুকরো ত্রুটিতে। আপনি একটা দেশের খেলা নিয়ে ট্রল করতে পারেন, খেলোয়াড়দের নিয়েও পারেন, জাতীয় পতাকা নিয়ে ট্রল করা মানে তো সে দেশকে অপমান করা। একটা সাধারণ ক্রিকেট ম্যাচকে কেন্দ্র করে একটা দেশের পতাকাকে অপমান করার ক্ষমতা, অধিকার আপনাকে, আমাকে কে দিয়েছে? আমাদের এত বিদ্বেষ কেন? এটা কী শুধুই খেলার জন্যে? না, এর পেছনে আরো কোনো কারণ আছে? উত্তর অজানা।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে ইন্ডিয়া+পাকিস্তান দুই দেশেরই বেশ ভালো পরিমাণ সমর্থক আছে। এরা একটা মজার ব্যাপার করে। বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার খেলার দিন, এক শ্রেণির সমর্থক খড়গহস্ত হাতে ইন্ডিয়াকে মাটিতে মেশানো শুরু করে। যেন, ফেসবুকে বিপ্লব করেই সে ইন্ডিয়াকে "রেন্ডিয়া" বানিয়ে ফেলবে। অথচ, পাকিস্তানের খেলার দিন, সে আত্মগোপনে চলে যায়। সেদিন সে কিছুই লেখেনা। লিখলেও, ব্যালেন্স করে দেয়। যেন, পেয়ারে পাকিস্তানের কোনো সমস্যা না হয়। হুবহু একই ঘটনা ঘটে ইন্ডিয়ান সাপোর্টারদের ক্ষেত্রেও। তারাও ঠিক একই কাজ করে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের এত প্রেম কোথা থেকে আসে, উৎস কী, সেটা রহস্যজনক। ভীষণ হতাশাজনকও।

তাসকিনের হাতে ধোনির কাটা মুণ্ডু ধরিয়ে গত বিশ্বকাপে বেশ ভালোই আলোড়ন তুলেছিলো এ দেশের সমর্থক সমাজ। প্রশ্ন আসতে পারে, আমি কী শুধুই বাংলাদেশেরই ট্রলগুলোই দেখি? আমাদের নিয়ে অন্য দেশগুলো যে ট্রল করে ক্রমাগত , সেগুলো কী আমার চোখে পড়ে না? অবশ্যই চোখে পড়ে। কিন্তু, কবিতার এই লাইনটিও তো আপনার বেশ ভালো ভাবেই জানাঃ
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়...

এখন নেড়ি কুকুর আপনাকে কামড় দিলে, আপনিও কুকুরের পা কামড়ে ধরে কামড়াকামড়ি শুরু করে মাটিতে গড়াগড়ি খাবেন, তাহলে কুকুরের সাথে আপনার তফাৎ রইলো কই?

আমাদের প্লেয়ারদের দেখেন। আগে প্রায় সব ম্যাচই আমরা হারতাম। তারমধ্যেও দুয়েকটা ম্যাচ দুম করে জিতে গেলে প্লেয়াররা কী সেলিব্রেশনটাই না করতো! কোনো প্লেয়ার হাফসেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি করলে সে ও প্রচণ্ড উচ্ছ্বসিত হয়ে যেতো। অথচ, আজকাল দেখেন, আমরা ম্যাচ জেতাকে অভ্যাস বানিয়েছি। এখন জিতলেও আমরা অতটা সেলিব্রেশন করিনা। কারন, জিতবো, এটাই স্বাভাবিক। ঐদিন নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ'র সেঞ্চুরির পরে কোনো সেলিব্রেশন দেখেছিলেন? দেখবেন কীভাবে, ম্যাচুরিটি চলে এসেছে আমাদের প্লেয়ারদের।

অথচ, আমরা যারা সাপোর্টার আছি তাদের দেখেন। মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা একেকজনের। তারচেয়েও কুরুচিপূর্ণ একেকজনের মানসিকতা, পচে যাওয়া মস্তিষ্ক। সে মস্তিষ্ক থেকে বেরোচ্ছে একেকটা সস্তারুচির ট্রল। যে ট্রলে ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে ভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক। আমরা ট্রল করতেও জানি না। ওরা করে, তাই আমাদেরও করতে... যেন যুদ্ধে নেমেছি আমরা সবাই, যেন মৃতপ্রায় মা মাথার দিব্যি দিয়েছে, "কথা দে বাবা, এ ট্রলের জবাব তুই দিবিই দিবি।"

খেলা শুরু হলে কিছু গুজবও ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। যার জন্যে, চারপাশে ব্যাঙেরছাতার মত গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোই বহুলাংশে দায়ী। ভারত-বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের আগেই গুজব উঠলো, বিরাট কোহলি নাকি শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনাকে কল দিয়ে কথা বলেছে, এজন্যে বিরাট কোহলি নিষিদ্ধও হয়েছে? গত বিশ্বকাপে দেখেছিলাম, ভারতের কোহলি নাকি রাবারের ব্যাট দিয়ে খেলে, এজন্যে চার-ছয় বেশি হয়। কী হাস্যকর! অথচ দুঃখজনক ব্যাপার, চারপাশের পরিচিত অনেক শিক্ষিত মানুষ এগুলোকে সত্যি ভেবে দেদারসে শেয়ার করছে প্রতিনিয়ত । অবাক হই? এরকম উদ্ভট তথ্য মানুষ খুব সহজে বিশ্বাস করে কীভাবে? খুব অবাক হই।

বেলাশেষে, কোহলির জিহ্বা কেউ দেখেনা, দেখে তার অপরাজিত থেকে ইন্ডিয়াকে জিতিয়ে দেয়া। দিনশেষে, সাকিব বেয়াদব কী না, সাকিবের বৌ পর্দা করে কী না, কেউ দেখেনা। দেখে, সাকিবের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের পকেটে থাকা ম্যাচকে ব্যাটের আঘাতে খুবলে নিয়ে আসা। আপনার, আমার এরকম "উর্বর মস্তিষ্কের ট্রল" কিছু অপদার্থকেই সাময়িক শান্তি দেয়। দিনশেষে, এর কোনো ফলাফল নেই, গুরুত্ব নেই, তাৎপর্য নেই, শুধুমাত্র বৈরিতা, তিক্ততা, রিক্ততা বাড়ানো ছাড়া।

ইন্ডিয়াকে "রেন্ডিয়া", পাকিস্তানকে "ফাকিস্তান", শ্রীলঙ্কাকে "শীটলঙ্কা" বলা আমাদেরকে বাইরের দেশ ডাকে "কাংলাদেশ।" আমরা বিরাট কোহলিকে ডাকি "বিরাট কুলি", আমাদের মুশফিকুর কে ওরা ডাকে "মুশফাকার", সাকিব কে "সাকি বাল হাসান..."

তাহলে, দিনশেষে জিতলো কারা? কেউ কি আদপেই জিতলো?

আমাদের টীম তো ওয়ার্ল্ডক্লাস হয়ে গেছে, সাপোর্টাররা কবে হবে? আদৌ কী হবে? ম্যাচুরিটি আসা তো উচিত। এখন না আসলে আর কখন?

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×