somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালমান শাহঃ সেলুলয়েডের সুপারস্টার

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালমান শাহঃ সেলুলয়েডের সুপারস্টার
------------------------------------------------------------------------------------
আমরা যারা লিখি, তাদের কাছে কলমই তরবারি, কলমই আবার ঢাল। আমাদের অনুভূতি, হতাশা, যাপিত জীবনের ক্ষোভ...সবকিছুই আমরা উগরে দিই কলমের ডগা দিয়ে। কলমও আগুনের মত গ্রাস করে নেয় সবকিছু। এই সর্বগ্রাসী, সর্বভুক কলমের মুখোমুখি আজ শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, যাকে বাঙ্গালী চিনতো "সালমান শাহ" নামে। রূপোলী পর্দার এই নক্ষত্রকে নিয়ে দু'কলম লেখার ধৃষ্টতা দেখানোর দিন আজ।

টাইমমেশিনে করে যদি দুই যুগ আগের এই দিনে সালমান শাহের ইস্কাটনের বাসায় চলে যাওয়া যেতো, দেখা যেতো বেডরুমের সিলিং থেকে ঝুলছে একটা লাশ, সেই লাশের নাম "সালমান শাহ।" তাঁর মৃত্যু এখনো আপামর বাঙ্গালী জাতির কাছে একটা রহস্য, নানা গুজবও ছড়িয়েছে তাঁর মৃত্যু নিয়ে। নানা জনের নানা মত, নানা রহস্য, ঘোলা জল, সে ঘোলা জলে আবার মাছ শিকার... অনেক রাজনীতি। যদিও আজকের লেখা সালমান শাহ'র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক নৈবেদ্য, তবুও আজ তাঁর মৃত্যু নিয়ে খুব বেশি কিছু লিখবো না। প্রয়াণ দিবসে যে শুধু মৃত্যু নিয়েই কথা বলতে হবে এমন তো কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বরং, রূপোলী পর্দার এই ক্ষণজীবী মানুষটির আকাশসম জনপ্রিয়তা, দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে দুয়েকটা কথা বলি আজ।

একটা সময় ছিলো, এ দেশে টিভির ব্রান্ড বলতে ছিলো "National" আর চ্যানেল বলতে ছিলো "বিটিভি।" সেই বিটিভিতে প্রতি শুক্রবার দুপুরে প্রচারিত হতো বাংলা চলচ্চিত্র। সেদিন যেনো উৎসবের দিন। সবাই সবার কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে চাটাই, পাটি বিছিয়ে বসে পড়তো সাদা-কালো টিভিসেটের সামনে। ঘোষক যখন হাসিমুখে জানাতো, অমুক চলচ্চিত্রটা আজ সম্প্রচারিত হবে, সবাই তখন হিসেব মেলাতে বসতো, এই সিনেমাটা আগে দেখা হয়েছে কী না, কাহিনী কেমন, কে কে অভিনয় করছে... নানারকম জটিল সমীকরণ মিলিয়ে তখন টিভির সামনে উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে দর্শকশ্রোতা। সব হিসেবই গড়মিল হয়ে যেতো, এক নায়কের নাম এলে। বলা বাহুল্য, নামটা সালমান শাহ। "সালমান শাহ" নাম শুনলেই দর্শক টিভির সামনে জমে যেতো শীতে জমে যাওয়া নারকেলের তেলের মত। সালমান শাহ কখনো পর্দা মাতাতেন প্রেমিক হয়ে, ফাঁসির আসামী হয়ে, কখনো বড় অফিসার, খেয়ার মাঝি, বখাটে ছাত্র আবার কখনোবা ভাবির আদরের দেবর হয়ে। সিনেমায় তাঁর কৃত্রিম কষ্ট দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়ে ব্যথিত করতো টিভির সামনে বসে থাকা সবাইকে।

তাঁর জন্মও বড় অদ্ভুত সময়ে, দেশে তখন যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে বিকট স্বরে। সেই অস্থির সময়ে সিলেটে জন্ম নেয় পরবর্তীতে "সালমান শাহ" নামে বিখ্যাত হওয়া এক ফুটফুটে শিশু, মৃত্যুর দুই যুগ পরে যিনি আজও প্রাসঙ্গিক, আজও আমরা তাকে মনে রাখি, তাঁর জন্যে আজও হয়তো নিভৃতে চোখের জল ফেলে কেউ কেউ। জন্ম একাত্তরে, মৃত্যু ছিয়ানব্বইয়ে। মাত্র ২৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনেই যার ভক্তসংখ্যা গুনতে গেলে শেষ হবেনা। কতটা সম্মোহনী ক্ষমতা থাকলে একজন মানুষ এত ক্ষীণ সময়কালে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় উঠে যেতে পারে, ভাবতে গেলে হিসেবে গড়মিল হয়ে যায় বরাবরই। তবুও না মেলা গণিত মিলিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সময় অপচয় করে যায় কেউ কেউ।

খুব কম সময়ে কেউ মারা গেলে, একটা ব্যাপার হয়। তাঁর বয়েসটা আর বাড়েনা। মৃত্যুর সাথে সাথে তার বয়সটাও যেন জমে যায়, স্থির হয়ে যায় ব্যাটারি শেষ হওয়া দেয়ালঘড়ির মত। কিশোর কবি সুকান্ত সারাজীবন কিশোরই রয়ে গেলেন,বয়স বাড়লো না সালমান শাহেরও। মাত্র ২৭টা সিনেমাতেই স্থায়ী আসন গেড়ে বসলেন বাঙ্গালীর স্মৃতিপটে, এ ভাগ্য হয় কয়জনের! "কেয়ামত থেকে কেয়ামত", "সুজন সখী", "সত্যের মৃত্যু নেই", "এই ঘর এই সংসার"... তাকে পরিণত করলো তখনকার স্টাইল আইকনে। সে সময়ের সবচেয়ে স্টাইলিশ, সবচেয়ে স্মার্ট হিরো ছিলেন তিনিই। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরাও ছিলেন তাঁর থেকে যোজন যোজন দূরে। এতটা প্রকট ছিলো তার প্রভাব, এতটাই বিশাল ছিলো তাঁর ব্যাপ্তি।

বেঁচে থাকলে হয়তো আরো জনপ্রিয় হতেন তিনি, জনপ্রিয়তার আরো কোনো উচ্চতায় হয়তো তিনি যেতেন, তবে তাঁর মৃত্যুতে একদিক দিয়ে ভালোও হয়েছে। বেঁচে থাকলে হয়তো এখন তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গস্পর্শী থাকতোনা। বেলাশেষের আলোতে, বেঁচে থাকার তাগিদেই হয়তো তাকে নামতে হতো সাবান, কোমল পানীয়, সীমকোম্পানির বিজ্ঞাপণে। সিনেমায় নায়ক হতেন না, হতেন নায়ক-নায়িকার অক্ষম বাবা, বস্তাপচা টিভিসিরিয়ালেও হয়তো তাকে দেখা যেতো ষড়যন্ত্রকারী, কুটিল কোনো চরিত্রে। তার চেয়ে, এই ভালো। তিনি নায়ক হয়েই রইলেন আজীবন, তিনি নায়ক হয়েই থাকবেন সবসময়। অনেক খ্যাতিমান নায়ক/নায়িকাকেই এখন দেখা যায়, অর্থের কাছে নিজেদের সর্বস্ব বিকিয়ে দিতে। সালমান শাহ, আমাদের স্টাইল আইকন, আমাদের নায়ক তাই মরে গিয়েই হয়তো বেঁচে গেলেন। হয়তো বেঁচে গেলেন ক্লেদাক্ত বাণিজ্যিক যুগের নোংরা হাত থেকে। এটাও কম কী!

কলম শুরু হলে থামতে চায় না, এটা একটা সমস্যা। লেখাটা ছোট করতে চেয়েছিলাম, বরাবরের মতই ব্যর্থ হয়েছি। তবে, আফসোস নেই। অনেককে নিয়েই তো অনেককিছু লিখি সবসময়, সালমান শাহকে নিয়ে কোনোদিন সেভাবে কিছুই লেখা হয়নি, অপরাধবোধ কাজ করছিলো ভেতরে ভেতরে। আজ সেই অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হলাম।

প্রয়াণদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি, শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, সেলুলয়েডের সুপারস্টার। আপনাকে চাইলেও হয়তো ভোলা যাবেনা, হয়তো সেটা সম্ভবও না। তাছাড়া ভুলতেও বা চায় কে! সালমান শাহকে ভুলে গেলে আমাদের আর থাকলোই বা কে?
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×