somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩য় নয়ন

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মতিন সাহেব ইদানিং একটা সমস্যায় পরে গেছেন।তার বাম হাতের তর্জনীর আগায় একটা চোখ গজাইসে। এই চোখটা তিনি মানুষ কে দেখাতে চাইছেন না।লোকজন কি ভাববে?কেউ হয়ত তাকে জিন ভুত ভাবতে পারে।আবার কেউ কেউ হয়ত তাকে আল্লাহর আজব সৃষ্টি বলে ছবি টবি তুলে ব্লগে ফেসবুকে আস্তিক নাস্তিক দ্বন্দ্ব লাগায় দিতে পারে। এই জিনিসটা মতিন সাহেব খুব ভয় করেন।এই আস্তিক নাস্তিক দ্বন্দ্বের ব্যপারটা।আর ডাক্তাররা পাইলে তো মাশাল্লাহ,কথাই নাই।টিপতে টিপতে তার ৩ নম্বর চোখটা গাইলা ফেলবে।একবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হইসিলেন। সে কি কষ্ট।এর মধ্যে চেংরা ডাক্তার গুলা আইসা বহুত পেইন দিসে।

এমনিতে খুব নির্ভেজাল মানুষ মতিন সাহেব। কারো সাতে পাঁচে নাই। নামাজ কালাম করেন। রাজনৈতিক কথা বার্তা এড়িয়ে চলেন। ছেলে মেয়েদের মূল্যবোধ নীতি নৈতিকতা শিক্ষা দেন।সুখেই ছিলেন কিন্তু এখন তার সমস্যা হল এই ৩য় চোখ।

এই চোখের কোন পাতা নাই। কোথাও লাগলে খুব ব্যথা পান। সবচে বড় সমস্যা যেটা হইসে সেটা হল টয়লেট করতে গেলে এখন এর বাম হাতটা ব্যবহার করতে পারছেন না।কি ভয়ংকর......।চোখটার পাতা থাকলেও একটা কথা ছিল, টয়লেটে গিয়ে ব্যবহারের সময় চোখটা বন্ধ রাখা যেত কিন্তু পাতা না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

আজ সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার পথে মতিন সাহেব সমস্যায়ই পরলেন। লিফটে উঠেছেন......গাদা গাদি অবস্থা। বামহাতটা সামলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। মানুষের পাছার সামনে রাখতে পারছেন না আবার উপরেও তুলে রাখতে পারছেন না।হঠাৎ বামহাতটা পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের পকেটে ঢুকে গেল।পকেটের ভেতরের দৃশ্য দেখে মতিন সাহেব অবাক :O ‘একি...... এত টাকা?? এই লোক এত টাকা কই পাইল??দেইখা তো এত পাত্তিআলা মনে হয় না।নিশ্চয় ঘুস দিতে আসছে’। মতিন সাহেব ঠিক করলেন ওই লোকের পেছন পেছন যাবেন। গিয়ে দেখবেন সে কি করে। যেই ভাবা সেই কাজ। ওই লোক বড় সাহেবের রুমে ঢুকসে। কিন্তু সমস্যা হল মতিন সাহেব ভেতরে ঢুকে দেখবেন কি করে? হঠাৎ তার ৩য় নয়নের কথা মনে পরে গেল।আঙ্গুল রাখলেন দরজার কি হোলে, ‘আরে হেব্বি তো। সব পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।বাহ এই চোখের একটা উপকারিতা পাওয়া গেল।এত সৎ মানুষের ভাব ধরে থাকে শালা ভণ্ড’

নিজের রুমে ফিরে উনার মনে হল ড্রয়ার এর ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখবেন।আঙ্গুল দিয়ে অনেক টুকিটাকি জিনিশের ভেতর বহুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া একটা ছবি খুঁজে পেলেন।এটা তার ক্লাস ফাইভের একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি।ছবিটা নষ্ট হয়ে জাচ্ছিল বলে লেমিনেট করার জন্য অফিসে এনেছিলেন।খুশীতে মনটা ভরে উঠল মতিন সাহেবের।

পাশের রুমে রফিক সাহেবের কথা শোনা যাচ্ছে দেখিতো একটু। চেয়ার এর উপর দাড়ালেন। আঙ্গুল রাখলেন ভেন্টিলেটরে। একি?? :O রফিক সাহেব অফিসের আয়া কে জোর করে ধরে ......... ছি ছি ......... দ্রুত নামতে গিয়ে চেয়ার থেকে পরে গেলেন মতিন সাহেব। কোমরে ব্যথা পেলেন উফ ফ ফ। এটা আমি কি দেখলাম?? বসে ভাবছেন মতিন সাহেব।ঘৃণা ধরে যাচ্ছে রফিক সাহেবের উপর...... ছি ছি ছি ছিহ...... আজ এর অফিসের কাজে মন দিতে পারছেন না।আগে আগে বাড়ী ফেরার জন্য রওয়ানা দিলেন।

বাসায় ফিরে দেখেন দিলরুবা বানু মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কি হয়েছে জানতে চাইলে দিলরুবা বানু বলল তার গলার চেইনটা খুঁজে পাচ্ছে না।সব জায়গায় খোজা শেষ। কোথাও নেই। মতিন সাহেব স্ত্রী কে সান্ত্বনা দিয়ে নিজে খুঁজতে লাগ্লেন। ২ মিনিট এর ভেতরে আল্মারির নীচে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খুঁজে বের করে আনলেন সোনার চেইন। দিলরুবা তো মহাখুশি।বহুদিন পর আজকের রাতটা ভালোই যাবে মনে হচ্ছে। মতিন সাহেব অনাগত রাতের কথা ভেবে এই মাঝ বয়সেও পুলক অনুভব করেন এবং মনে মনে এই ৩য় নয়ন টাকে ধন্যবাদ দিলেন।

পরদিন সকাল বেলা অফিস যাবার পথে বাসের মধ্যে বিশাল গেঞ্জাম লেগে গেল।মতিন সাহেবের পাশের সিটের ভদ্রলোকের পকেট মেরে দিয়েছে কে যেন।কিন্তু সেই লোক পকেটমার সন্দেহে এক ভালো মানুষ কে আক্রমন করল।মতিন সাহেব ৩য় চোখে দেখেছেন পকেটমার কে কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।তিনি ঠিক করলেন ধীরে ধীরে ওই পকেট মারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওই মানিব্যাগ বের করে আনবেন।অতি সন্তর্পণে তিনি হাত ঢুকিয়ে আবিষ্কার করলেন ওই বেটার পকেট ছেড়া এবং ছেড়া পকেটের ফাক দিয়ে ভয়াল দর্শন কি যেন একটা দেখা যাচ্ছে :O .........মতিন সাহেব লাফ দিয়ে উঠলেন.........তৎক্ষণাৎ ওই লোক মতিন সাহেবের হাত পাকড়ে ধরে চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করল এবং বাসের সবাই মিলে মতিন সাহেব কে আচ্ছা মতো ধোলাই করল।ব্যথার চোটে মতিন সাহেব গত রাতের সুখস্মৃতি ভুলে গেলেন। ভাবলেন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় কি?

১ মাস পর
মতিন সাহেবের মেয়ের আজ জে এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। অফিস থেকে ফেরার পথে রেজাল্ট দেখে যেতে বলেছে দিলরুবা। রেজাল্ট দেখতে গিয়ে মতিন সাহেব দেখেন বিরাট ভিড়, চিন্তা করলেন ইন্টারনেট এ নিশ্চয় দিয়েছে। ক্যাফে তে গিয়ে দেখেন সেখানেও ভিড়। কি আর করা পেছন থেকে বাম হাত টা বাড়িয়ে দিলেন, ‘কিন্তু একি :O ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছি না কেন?’ ভাবছেন মতিন সাহেব।অনেক কষ্টে রেজাল্ট দেখলেন, রেজাল্ট ভালো।

খুব টেনশন হচ্ছে মতিন সাহেবের। চোখের চশমা আঙ্গুলের সামনে ধরলে ভালো দেখতে পাচ্ছেন কিন্তু চশমা ছাড়া কষ্ট হচ্ছে দেখতে। এখন উপায়??

প্রচণ্ড কষ্টে বাসায় গিয়ে বিছানা নিলেন মতিন সাহেব। কেউ তাকে আর বিছানা থেকে নামাতে পারছে না। তার স্ত্রীও না ।তার মেয়ে সায়রা বানুও না।দিন যায় মাস যায়......সবাই ভাবে মতিনসাহেব পাগল হয়ে গেছে। দিলরুবা বানু পাশের মসজিদের ইমাম সাহেব কে নিয়ে আসেন। ইমাম সাহেব সব শুনে পাণি পড়া দিয়ে যান। দিলরুবা বানু পাণি পড়া মতিন সাহেব কে খাওয়াতে পারেন না। কোনোভাবেই না। মতিন সাহেব বাম হাতের তর্জনী গ্লাসে ডুবিয়ে বসে থাকেন।

একদিন হঠাৎ মতিন সাহেবের মনে হয় ‘৩য় চোখের জন্য একটা চশমা বানায় নিয়ে আসি না কেন??’ ২ মাস ২৩ দিন পর মতিন সাহেব বিছানা থেকে নামলেন। গেলেন এক চশমার দোকানে।কিন্তু কীভাবে কথাটা বলবেন বুঝতে পারছেন না। অনেক কষ্টে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার পর দোকানদার তাকে নিয়ে হাসা শুরু করল তখন মতিন সাহেব আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারলেন না। দোকানিকে কষিয়ে চড় লাগালেন। সবাই মিলে আবার মতিন সাহেব কে ধোলাই করল।

আঘাতে জর্জরিত মতিন সাহেব ঠিক করলেন এই চোখ আর তিনি রাখবেন না। ফুটপাতে ডাব বিক্রেতা মনাই এর কাছে দিয়ে মিনতি করলেন, ‘ভাই আমার আঙ্গুল টা কাইটা দেন’

‘হুর মিয়া আন্নে হাগলনি কোন?’

ডাব বিক্রেতা কে জড়িয়ে ধরে মিনতি করেন মতিন সাহেব।মনাই উঠে দৌড় লাগায়...............।

হাতে ডাব কাটার ধারাল দাঁ নিয়ে মতিন সাহেব তার ৩য় নয়নের দিকে জ্বল জ্বলে চোখে তাকায় থাকে......।।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×