somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলুন জয় করে আসি মাউন্ট এভারেস্ট !!! (একটি ভার্চুয়াল ট্যুর......... ছবি ব্লগ)

২৯ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙ্গালী সার্ভেয়ার রাধানাথ শিকদারই ত্রিকোণমিতিক পরিমাপ করে সর্বপ্রথম সারা পৃথিবীকে জানিয়ছিলেন এই রাজাধিরাজের কথা। ১৯৫৩ সালে মানুষের পদানত হবার পর এভারেস্টের চূড়োয় বাংলাদেশী পদচিহ্ন পড়তে সময় লাগে আরও ৫৭ বছর। এতো সবে শুরু ! দুঃসাহসী বঙ্গসন্তানেরা কি থেমে থাকছে? অবশ্যই না। তাই আসুন আমরাও দু’মিনিটে জয় করে আসি মাউন্ট এভারেস্ট (অবশ্যই ভার্চুয়ালি B-)B-))


আমাদের রুট
সর্বপ্রথম কাজ - টাকাপয়সা যোগাড় করে, চৌদ্দগোষ্ঠীর কাছ থেকে বিদায়-টিদায় নিয়ে চড়ে বসলাম কাঠমান্ডুর প্লেনে। (আমরা জনপ্রিয় সাউথ কোল ট্রেইলেই উঠতে যাচ্ছি এভারেস্টে !! তিব্বত হয়ে ওঠার খরচ কম, কিন্তু হ্যাপা অনেক) মনসুন আসার আগেই আমাদের ঘুরে আসতে হবে, তা নাহলে রাজাধিরাজের পাত্তা পাওয়া যাবে না।


ট্রাভেল এজেন্টের সাথে সবকিছু ফাইনাল করে আমরা চলে এসেছি লুকলা। ২,৮৬০ মিটার - ৯,৩৮৩ ফুট উচ্চতায় এখানে আছে এক চিলতে এয়ারস্ট্রীপ, নাম হলো “হিলারী তেনজিং এয়ারপোর্ট”। আবহাওয়া ভালো, হাল্কা অটার প্লেনটা আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে কাঠমান্ডু।


লুকলা থেকে আমরা এসে পড়লাম নামচি বাজার............ ৩,৪৪০ মিটার - ১১,২৮৬ ফুট উচ্চতায় এখানে এক্লামাটাইজেশন (উচ্চতার সাথে শরীরের খাপ খাইয়ে নেয়া) করার জন্য দিন তিনেক থাকতে হবে।
চলুন, যাত্রা শুরু করি ! লক্ষ্য এভারেস্ট বেজ ক্যাম্প, এটার হাইট ৫,৩৮০ মিটার - ১৭,৭০০ ফুট !!!


এভারেস্ট বেজ ক্যাম্প বলতেই ভাবতাম হেডকোয়ার্টার টাইপের কিছু, যেখানে বিশাল বিশাল যন্ত্র থাকবে, স্যাটেলাইট রিসিভার আরও কত হ্যান তান........., কিন্তু একি !!!

এভারেস্ট বেজ ক্যাম্প
এখানে এক্লামাটাইজেশন (উচ্চতার সাথে শরীরের খাপ খাইয়ে নেয়া) করার জন্য সপ্তাহ দুয়েক থাকতে হবে।


বেস ক্যাম্প থেকে খুম্বু গ্লেসিয়ারের বিখ্যাত খুম্বু আইসফল পেরিয়ে চলতে হচ্ছে। জায়গাটা ঝুঁকিপূর্ণ, এখানে বেশকিছু প্রাণহানির ঘটনা আছে। আমাদের লক্ষ্য ক্যাম্প - ১।


পৌছে গেছি ক্যাম্প -১ এ......... এখানে হাইট ৬,০৬৫ মিটার - ১৯,৯০০ ফুট !!! সমুদ্রপৃষ্ঠে বা স্বাভাবিকভাবে আমাদের রক্তে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে ৯৮-৯৯%। বেস ক্যাম্পের হাইটে সেটা নেমে আসে ৮৬-৮৭% এ। এখানে তো আরো কম !!! অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া গতি নেই।


আবার পথ চলা শুরু। এবার যাত্রা ক্যাম্প -১ থেকে ক্যাম্প -২। এটাকে অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প (এবিসি) বলে।


পৌছে গেছি ক্যাম্প -২, এবিসি’তে। এখানে হাইট ৬,৫০০ মিটার - ২১,৩০০ ফুট


যাত্রা শুরু আবার ক্যাম্প -৩ এর উদ্দেশ্যে। সেটার হাইট ৭,৪৭০ মিটার - ২৪,৫০০ ফুট। সম্ভবত এখান থেকেই মানুষ ছাড়া আর কোন জীব দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।


ক্যাম্প -৩

ক্যাম্প -৩ থেকে ক্যাম্প -৪ এর পথে


আমরা চলে এলাম ক্যাম্প -৪ এ। এখানে ব্যাপক ঠান্ডা............ হাইট ৭,৯২০ মিটার - ২৬,০০০ ফুট।


ক্যাম্প -৪ এ বসে তাকিয়ে দেখি............ ঐ দাঁড়িয়ে সাগরমাতা !!! (মাউন্ট এভারেস্টের নেপালী নাম সাগরমাতা, তিব্বতী নাম চোমলুংমা)


এবারে আমরা প্রবেশ করলাম ডেথ জোন............ ৮,০০০ মিটারের উপরে হাইটের এই ভয়াবহ অঞ্চলে। এখানে মানুষের টিকে থাকার মেয়াদ ২/৩ দিন। এর মধ্যেই বাকী ৮০০ মিটার পেরিয়ে সামিট করে আসতে হবে, তা নাহলে নীচের ক্যাম্পে নেমে যেতে হবে। এই জায়গাটার নাম “করনিশ ট্র্যাভারস”। সরু পথের বাম দিকে যদি পিছলে যাই, সোজা গিয়ে পড়বেন ২,৪০০ মিটার - ৮,০০০ ফুট নিচে, আর ডানে? সেখানে গভীরতা ৩,০৩০ মিটার, ১০,০০০ ফুট ! সুতরাং চোখ বুজে সোজা এগোন :|:|


ট্রেইলের মধ্যে এরকম বীভৎস লাশের মুখোমুখি হলেও চমকে যাবার কিছু নেই। এটাই ডেথ জোন। মৃত্যু এখানে পদে পদে হাতছানি দেয়, সাহসীরা তার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যায়। ১৯২০-২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত এভারেস্ট প্রায় ২১৬ জন অভিযাত্রীর জীবন গ্রহণ করেছে।


এই পাথরময় জায়গাটা হিলারী স্টেপ, চূড়োর ঠিক নীচে (উচ্চতা ৮,৭৬০ মিটার - ২৮,৭৪০ ফুট )। এখানে অনেক সময়ই ট্র্যাফিক জ্যাম লেগে যায়, সরু জায়গাটা বেয়ে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ঐ দেখুন, হিলারী স্টেপে অভিযাত্রীদের ট্র্যাফিক জ্যামের কি অবস্থা !!! (উপরে বাম পাশে)


এই হলো এভারেস্ট............ পায়ের নীচে এভারেস্ট...... !!! আপনার সামনে যে লোকটা বসে আছে তার নাম আপা শেরপা। সবচেয়ে বেশিবার চূড়োয় ওঠার রেকর্ড তার, মাত্র ২১ বার !!!!! ২০১০ পর্যন্ত মাত্র ৩,১৪২ জন মানুষের ভাগ্য হয় এভারেস্ট চূড়ায় পা রাখবার।


চূড়োয় দাঁড়িয়ে একবার দেখে নিন চারিদিকে............... আপনার চেয়ে উঁচু আর কিছু নেই এ পৃথিবীতে ! তবে ঐ যে, নিচে কিন্তু ট্র্যাফিক জ্যাম লেগে আছে। আধা ঘন্টারও কম সময় দাড়াতে পারবেন চূড়োয়।


এবার নেমে আসার পালা, খুব সাবধান !!! দীর্ঘ এ অভিযানের পরিশ্রমে শরীর ভেঙ্গে আসছে............ পাহাড়-পর্বতে সবচেয়ে বড় আর মারাত্নক অ্যাক্সিডেন্টগুলো কিন্তু নেমে আসার সময়ই ঘটে থাকে। আরও একবার দেখে নিন রাজাধিরাজকে......... !!!


চিনে রাখুন এই দুই মহারথীকে - স্যার এডমন্ড হিলারী এবং তেনজিং নোরকে। কিউই অভিযাত্রী স্যার এডমন্ড হিলারী যখন ছোট, তখন তার মা তাকে কিছুতেই একতলা বাসার ছাদে উঠতে দিতেন না; কারণ তার ছিলো উচ্চতাভীতি। সেই ছেলে পৃথিবীর ছাদে দাঁড়াবে, মা কি কখনও ভেবেছিলেন!


এই পাগলটিকেও দেখুন, তার নাম রেইনহোল্ড মেসনার............ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী। কল্পনাকেও হার মানিয়ে কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই একা একা তিনি উঠে যান এভারেস্টে, ১৯৭০ সালে। তাছাড়াও। জগতে ৮,০০০ মিটার উচ্চতার পর্বত আছে মোট ১৪টা, সবগুলোকেই পদানত করেন ৬৭ বছর বয়স্ক এই ইতালিয় ভদ্রলোক।

ভালো কথা, ভার্চুয়ালি এভারেস্ট জয় করতে তো আর টাকা-পয়সা লাগলো না, আসলে কত লাগবে? নির্ভর করবে আপনার প্যাকেজট্যুরের উপর। তবে তা মোটামুটি ৪০,০০০ - ৮০,০০০ ডলারের মধ্যেই !!! ডলারটা টাকায় কনভার্ট করুন, ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কেনা সম্ভবও হইতে পারে :P:P:P

নিজে যাইতে পারবো কি না জানিনা, তবে আমাদের চার অভিযাত্রীকে স্যালুট.................. আর তার চেয়েও বড় স্যালুট আগামীর সে সব অজানা দুঃসাহসীদের যারা এই ঝুকি নিতে যাচ্ছে অকাতরে।

তবে সত্যি কথাটা কি, জীবন সংগ্রামে নানা দুর্ভোগে টিকে থাকা বাংলার কোন অতিক্ষুদ্র মানুষের ক্ষুদ্র কোন সফলতার আনন্দ, মাউন্ট এভারেস্ট সামিটের চেয়েও বেশি কঠিন, আরাধ্য এবং সুখের..................
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×