somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি কোমল হৃদয়ের ভালোবাসা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পঃ আকস্মাত ভালোবাসা
.
সকালে আম্মুর ঝাঁঝালো ডাকে আমার ঘুম ভাংল, ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই বুঝে গেছি আম্মুর ডাক এত হাইব্রিড টাইপের হল কেন। যাই হোক তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমে যাই। রেডি হওয়ার জন্য হাতে পাঁচ মিনিট সময় ছিল। দাঁত ব্রাশ না করে চোখে মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে চলে আসলাম। সময় সল্পতার জন্য সব কিছু অগোছালো ভাবে করেছিলাম। যাই হোক এত দিনে আম্মুকে বুঝাতে পারলাম যে আমিও সবার মত অনেক ফাস্ট। সেদিন আমার কলেজ এডমিশন ছিল যার জন্য এত তারাহুরো। সো কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আম্মু আর আমি বাসে উঠলাম। বাসে ছিট স্বল্পতার জন্য আম্মু আর আমি পিছনে গিয়ে বসলাম। এক সাথে দুটো সিট না পাওয়ায় আম্মু আর আমাকে দুটো সেপারেট সিটে বসতে হল। আম্মুর পাশে বসেছিলো এক অপরুপ সুন্দরী মেয়ে কিন্তু অসম্ভব নয়। মেয়েটাকে দেখে এক রকম সেন্সলেস অবস্থা আমার। কারন এরকম মেয়ে এর আগে আমি কখনও দেখিনি। মনে হল স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। যাই হোক আমি ভাবছি আম্মুকে কিভাবে ওই মেয়ের কাছ থেকে সরানো যায় যাতে করে আমি ওই মেয়ের পাশে বসতে পারি। সৃষ্টিকর্তা হয়ত আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। একটু পর দেখি বাসটা কোন এক বাসস্টপে দাঁড়িয়েছে এবং সামনে থেকে কিছু লোক নেমে যাচ্ছে। আম্মুকে বললাম তুমি এবার সামনে চলে যাও। পিছনে বাসের ঝাঁকিতে তোমার কষ্ট হয়তেছে। আম্মু আমার দিকে মৃদু হেসে সামনে চলে গেল এবং আমাকেও যেতে বললে আমি মাকে বললাম যে বাসের ঝাঁকুনি আমার খুব ভাল লাগে তাই আমি এখানেই কমফর্টেবল ফিল করছি। দেরি না করে মেয়ের পাশের সিটে গিয়ে বসলাম। একটু ভাব নেওয়ার জন্য বললাম " ওহ কি গরম, মানুষ গাড়িতে থাকে কিভাবে এতক্ষন " মেয়েটা নড়ে চড়ে আশে পাশে কি যেন দেখছে এবং আমাকে বুঝাতে চাইছে যে সে আমাকে কোন পাত্তা দিচ্ছে না।
যাই হোক আমি মেয়েটির পাত্তার কোন পরোয়া না করে মেয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম।
→ হেলো, শুনছেন
→ জি, বলুন
→ আপনি কোথাই যাবেন?
→ ময়মনসিংহ
→ কোথা থেকে এসছেন?
→ পাবনা
→ আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে আপনার নামটা বলবেন প্লিজ (নাম জানার কৌশল)
→ অদ্রিতা।
.
মেয়েটা আমাকে আর প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে বলল,"একটু সাইড দেন প্লিজ আমি সামনে যাব।" কিছু করার নাই যেতে দিলাম। মেয়েটা সামনের কোন একটা ভাল ছিটে বসল। আমি এতিমের মত পিছনে একা একা বসে রইলাম। বাসে যতক্ষন ছিলাম শুধু মেয়েটার কথাই ভাবলাম। মাঝে মাঝে সামনে গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলতাম মেয়েটাকে দেখার উদ্দেশ্যে। অনেক্ষন পর বাসটা এবার থামল, বুঝতে পারলাম আমরা চলে এসেছি। বাস থেকে নেমে আশে পাশে অনেক খোঁজাখুজি করলাম বাট মেয়েটাকে আর দেখতে পেলাম না। হয়ত কোথাও চলে গেছে ভেবে আমি আর আম্মু কলেজের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। কলেজে গিয়ে আমি ভাল ভাবে ভর্তি হয়ে যাই। ভর্তি শেষে চলে আসব এমন সময় শুনতে পেলাম কোকিল কন্ঠী একটা মেয়ের আওয়াজ। কৌতুহলের সাথে পিছনে ফিরলাম। এর পর যা দেখলাম এতে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে যাই, "আরে এতো সেই মেয়েটি যাকে দেখার পর পুরো পৃথিবীটা আমার কাছে রোমান্টিক হয়ে গেছে, যাকে নিয়ে বাসের মধ্যে তিন ঘন্টা যাবৎ ফিল্ম তৈরী করেছি।
যাই হোক মেয়েটা আমাকেই যেন কিছু বলছে-
→ হেলো, আপনি কি এই কলেজেই এডমিশন হইছেন।
→ জি, হ্যা (ভদ্র ভাবে)
→ আপনি কোন বিভাগে আর আপনার রোল কত?
→ সায়িন্স, রোল- ২৯৮। আপনার?
→ ২৮৪
.
যাই হোক মেয়েটির সাথে এরই মধ্যে আমার অনেক কথাবার্তা হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মেয়েটি আমার ফোন নাম্বার নিলো তার কলেজ ফ্রেন্ড হিসেবে। আর কথা না বাড়িয়ে সেদিনের মত বাড়ি চলে আসি।
মেয়েটা প্রায় সময় আমাকে ফোন দিত, ফোন দিয়ে সে কলেজ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করত। আস্তে আস্তে আমাদের ফোনে কথা বলা বেড়ে যায়। কলেজের পাশাপাশি আমরা নিজেদের সম্পর্কে কথা বলা শুরু করে দিই। দিনে দুই তিন ঘন্টা কথা বলতাম আর রাতে হোয়াটস এ্যাপে সারারাত চ্যাট করতাম। অদ্রিতা আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছিল আর আমিও। কিন্তু ভালবাসার কথাটা আজও কারো বলা হল না। আমি অনেকবার অদ্রিতাকে বলতে গিয়ে ফিরে এসেছি। খুব ভয় হতো যদি আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।
এভাবে কলেজের দুটি বছর আমাদের কেটে যায়। বিদায় অনুষ্ঠানের পর দেখি মোবাইলে অদ্রিতার অনেকগুলো মিস কল। তক্ষুনি আমি অদ্রিতাকে ফোন ব্যাক করি। অদ্রিতার কন্ঠটা কেমন কাঁপা কাঁপা হয়েছিল। " জলদি ক্যান্টিনে আসো, কথা আছে" এই কথা বলে ফোনটা কেটে দিল।
.
ক্যান্টিনে দুজন সামনা সামনি বসলাম। আমি শুরু করলাম-
→ কি বলবা বলো?
→ তুমি বুঝনা আমি কি বলতে চাই।
→ আরে বাবা, না বললে কিভাবে বুঝব।
.
আমি জানতাম অদ্রিতা কি বলতে চায়, তারপরও অর মুখ থেকে শুনতে খুব ইচ্ছা করছিল।
অদ্রিতার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার মত অবস্থা। মেয়েটা ছিল অভিমানী । তাই আর কিছু না বলে সোজা ওখান থেকে চলে গিয়েছিল।
আমি অনেকবার ফোন দিলাম বাট ফোনের সুইচ অফ করা। সো কিছু করার নেই দেখে বাড়ি চলে আসি। তিন মাস ধরে অদ্রিতার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই।
.
তিন মাস পর হঠাৎ অদ্রিতার ফোন, ফোনটা রিসিভ করলাম বাট মুখ দিয়ে যেন কোন কথা বের হতে চাইছে না।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আমাদের কুশল বিনিময় হলো। এর পর আমি বললাম, সে দিন তুমি কি বলতে চেয়েও বলতে পারনি, একটু বলবা। অদ্রিতা বলল তোমার গণিত বইয়ের শেষ পৃষ্ঠাটা চেক কর।
বইটা খোলার পর, আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। সেখানে অদ্রিতার সুন্দর হাতে লেখা ছিল।
I Love U, Shuvo
.
.
.
Writer: প্রতিভাহীন লেখক(Shuvo)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×